নমস্কার,
বারানসীতে উপস্থিত আমার মন্ত্রী পরিষদের সহযোগী স্মৃতি ইরানি মহোদয়া, কার্পেট সেক্টরের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, কার্পেট বুনন শিল্পী ভাই ও বোনেরা এবং এখানে উপস্থিত অন্যান্য সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ। কাশীর পবিত্র ভূমিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সমাগত সকলকে আমি আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। আমাকে বলা হয়েছে যে, বিশ্বের প্রায় ৩৮টি দেশে ২৫০টিরও বেশি অতিথি ছাড়াও জম্মু ও কাশ্মীর, পশ্চিমবঙ্গ এবং দেশের অন্যান্য রাজ্য থেকেও কার্পেট শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষজন এখানে এসেছেন। আপনাদের সকলকে বেনারসে, বেনারসের সাংসদ হিসাবে স্বাগত জানাই।
বন্ধুগণ, দেশে এখন উৎসবের মরশুম। দশহরা, দুর্গাপুজার পর প্রথমবার প্রযুক্তির মাধ্যমে বেনারসের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সৌভাগ্য হ’ল। এখন আপনারা সবাই হয়তো ধনতেরাস এবং দীপাবলীর প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। এটা বছরের সেই সময়, যখন আপনারা সবাই সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত থাকেন। এই সময় বাকি বছরের তুলনায় কাজ অনেক বেশি থাকে, কারণ চাহিদা বেশি থাকে। আপনাদের শ্রম এবং কৃতীর পুরস্কার পাওয়ার এটাই উপযুক্ত সময়।
বন্ধুগণ, বারানসী তথা উত্তর প্রদেশে বুনন শিল্পী এবং ব্যবসায়ী ভাই-বোনদের জন্য এ বছর দ্বিগুণ খুশি এসেছে। দীনদয়াল হস্তকলা স্কুলে প্রথমবার ইন্ডিয়া কার্পেট এক্সপো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সেজন্য আপনাদের সকলকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। এখন দিল্লির পাশাপাশি বারানসীতেও ভারতীয় কার্পেট শিল্প, আমাদের বুনন শিল্পীরা, কারু শিল্পীরা, ব্যবসায়ীরা নিজেদের দক্ষতা বিশ্ববাসীর সামনে প্রদর্শনের সুযোগ পাচ্ছেন।
বন্ধুগণ, আমি আনন্দিত, যে লক্ষ্য নিয়ে দীনদয়াল হস্তকলা স্কুল নির্মিত হয়েছিল, তার লক্ষ্যপূরণের প্রতি আমরা দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছি। এটা এজন্যও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই ক্ষেত্রটি বুনন শিল্পী ও কার্পেট ব্যবসার কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। এখানে দেশের হস্ত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত প্রায় ২৫ শতাংশ বুনন শিল্পী, শ্রমিক ও ব্যবসায়ী ভাই-বোন থাকেন। বারানসী, ভদোই, মির্জাপুর – এই কার্পেট ব্যবসার কেন্দ্রগুলি এখন পূর্ব ভারত তথা দেশের বস্ত্র রপ্তানির ‘গ্লোবাল হাব’ হয়ে উঠছে। শুধু তাই নয়, দীনদয়াল হস্তকলা স্কুলও হস্ত শিল্পের ক্ষেত্রে এই আন্তর্জাতিক পরিচয়কে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করছে।
বন্ধুগণ, সরকার সরকার সর্বদাই হস্ত শিল্পের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগকে উৎসাহ প্রদানের জন্য প্রযুক্তির প্রয়োগ, প্রচার ও প্রসারের গুরুত্ব দেওয়ার খাতিরে নানা সুযোগ-সুবিধা দিতে সচেষ্ট। এবার বারানসীতে অনুষ্ঠিত এই ইন্ডিয়া কার্পেট এক্সপো এক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ। পাশাপাশি, বস্ত্র শিল্পের ক্ষেত্রে আমাদের ‘ফাইভ অ্যাপ’-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। আপনারা জানেন যে, ‘ফাইভ অ্যাপ’ বলতে আমি ‘ফার্ম টু ফাইবার, ফাইবার টু ফ্যাক্টরি, ফ্যাক্টরি টু ফ্যাশন, ফ্যাশন টু ফরেন’ বুঝি, যা কৃষক এবং বুনন শিল্পীদের সরাসরিন বিশ্ব বাজারের সঙ্গে যুক্ত করার একটি অত্যন্ত বড় প্রচেষ্টা।
আগামী চার দিনে এই এক্সপো-তে উৎকৃষ্ট থেকে উৎকৃষ্টতম কার্পেট শিল্পের প্রদর্শন হবে, কোটি কোটি টাকার লেনদেন হবে, অনেক চুক্তি সম্পাদিত হবে, ব্যবসার অনেক নতুন নতুন সুযোগ উন্মোচিত হবে। বুনন শিল্পীরা নতুন নতুন কাজের সুযোগ পাবেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, বিদেশ থেকে যে ব্যবসায়ী বন্ধুরা এসেছেন, তাঁরা আমাদের সংস্কৃতি, কাশী তথা ভারতের পরিবর্তিত ব্যবসায়ী পরিবেশের অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরবেন।
বন্ধুগণ, হস্ত শিল্পে ভারতের সুদীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। ভারতের গ্রামীণ এলাকাগুলিতে আজও সুতো কাটার ক্ষেত্রে হস্তচালিত চরকার ব্যবহার রয়েছে। এক্ষেত্রে বেনারসের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ। বেনারসের পরিচয় যত সন্ত কবীরের সঙ্গে যুক্ত ততটা হস্তশিল্পের সঙ্গে যুক্ত। সন্ত কবীর সুতো কাটতে কাটতেই বাণী উচ্চারণ করতেন। কবীরদাস বলেছেন –
কহি কবীর শুনো হো সন্তো, চরখা লখে জো কোয়।
জো ইয়হ চরখা লখি ভয়ে, তাকো অওয়াগমন ন হোয়।।
অর্থাৎ চরকাই জীবনের সার আর যিনি এটি বুঝেছেন তিনি জীবনের মর্মও বুঝেছেন। যে মাটিতে হস্তশিল্পকে জীবনের এত বড় দর্শনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে, সেখানে বুনন শিল্পীদের জীবনকে সহজ করে তুলতে এ ধরণের ব্যবস্থা যখন গড়ে ওঠে, তখন মনে খুশির সঞ্চার হয়।
বন্ধুগণ, আমাদের দেশে স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ে হস্তশিল্প ব্যবসার ঊর্ধ্বে প্রেরণার উৎস, সাবলম্বনের মাধ্যম এবং স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। গান্ধীজি, সত্যাগ্রহ এবং চরকা আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনে এই তিনের মিলনের কতটা গুরুত্ব, তা আমরা ভালোভাবেই জানি।
হস্তশিল্পের এই গুরুত্ব অনুভব করে এর মাধ্যমে শিল্পীদের সাবলম্বী করে তুলতে সরকার নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ফলস্বরূপ, আজ ভারত বিশ্বের সর্ববৃহৎ কার্পেট উৎপাদক দেশে পরিণত হয়েছে। বিগত চার-সাড়ে চার বছরে এই লক্ষ লক্ষ বুননশিল্পী, নকশা শিল্পী ও ব্যবসায়ীদের শ্রম এবং সরকারের নীতির সমাহারে আমরা হস্ত নির্মিত কার্পেট উৎপাদনে বিশ্বে প্রথম স্থান অধিকার করেছে।
বন্ধুগণ, ইতিমধ্যেই বিশ্বের কার্পেট বাজারের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি প্রায় ৩৫ শতাংশ আমরা অর্জন করেছি এবং আগামী দু-তিন বছরে এই ব্যবসা বৃদ্ধি পেয়ে বিশ্ব কার্পেট বাজারের ৫০ শতাংশে পৌঁছে যেতে পাড়ে। গত বছর আমরা ৯ হাজার কোটি টাকার কার্পেট রপ্তানি করেছি। এ বছর প্রায় ১০০টি দেশে কার্পেট রপ্তানি হয়েছে। তবে আমাদের আত্মতুষ্টিতে ভুগলে চলবে না, আরও এগিয়ে যেতে হবে, যাতে ২০২২ সালে যখন আমরা স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি পালন করব, ততদিনে আমরা কার্পেট রপ্তানির এই পরিসংখ্যান আড়াই গুণেরও বেশি বৃদ্ধি করে ২৫ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছে দিতে পারি।
শুধু রপ্তানিই নয়, দেশের অভ্যন্তরীণ কার্পেট ব্যবসাও বিগত চার বছরে ৫০০ কোটি থেকে তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ১৬০০ কোটিতে পৌঁছেছে।
এই বৃদ্ধির পেছনে দুটি স্পষ্ট কারণ রয়েছে। প্রথমটি হ’ল – দেশের মধ্যবিত্তের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা আর দ্বিতীয়টি হ’ল – কার্পেট ব্যবসার ক্ষেত্রে এর প্রচার ও প্রসারে অভূতপূর্ব সরকারি পরিষেবা।
বন্ধুগণ, এই গতিতে এগিয়ে গেলে দেশে কার্পেট শিল্প তথা বস্ত্র শিল্পের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল। আজ ভারত বিশ্বের একমাত্র দেশ, যেখানে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতম এবং বৃহৎ থেকে বৃহত্তম কার্পেট নির্মিত হয়। শুধু তাই নয়, ভারতে নির্মিত কার্পেট শিল্পের ক্ষেত্রে যত উৎকৃষ্ট, ততটাই পরিবেশ-বান্ধব। এটা আপনাদেরই মেধা ও দক্ষতার পরিণাম যে, সারা পৃথিবীতে ভারতে নির্মিত কার্পেট একটি বড় ব্র্যান্ড হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বন্ধুগণ, এই ব্র্যান্ডকে আরও শক্তিশালী করতে সরকার সমস্ত রকম প্রচেষ্টার জন্য দায়বদ্ধ। কার্পেট রপ্তানিকারীদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, তার জন্য সবরকম পরিবহণ ব্যবস্থা শক্তিশালী করা হচ্ছে। সারা দেশে গুদাম ও শো-রুম পরিষেবার কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে, যাতে যে কোনও বড় বাজারে আপনাদের উৎপাদিত পণ্য দ্রুত পৌঁছতে পাড়ে।
শুধু তাই নয়, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে ‘জিরো ডিফেক্ট, জিরো এফেক্ট’ উৎকর্ষকে সুনিশ্চিত করা হচ্ছে। ভদোই ও শ্রীনগরে কার্পেটের উৎকর্ষ যাচাইয়ের জন্য ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ কার্পেট টেকনলজিতে বিশ্বমানের গবেষণাগার স্থাপন করা হয়েছে।
কার্পেটের পাশাপাশি, অন্যান্য হস্তশিল্পজাত পণ্য বাজারজাত করা এবং বুনন শিল্পীদের অন্যান্য সুবিধা প্রদানের জন্য অনেক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে বারানসীতেই ৯টি কমন ফেসিলিটি সেন্টার, কমন সার্ভিস সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে। হাজার হাজার বুনন শিল্পী ভাই ও বোন ইতিমধ্যেই এই কেন্দ্রগুলি দ্বারা উপকৃত হয়েছেন।
বন্ধুগণ, উৎকর্ষ ছাড়াও বুনন শিল্পী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা যেন মূলধনের সংকটে না পড়েন, সেদিকে লক্ষ্য রেখে মুদ্রা যোজনার মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত গ্যারান্টি ছাড়াই ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বুনন শিল্পীদের জন্য তো মুদ্রা যোজনায় ১০ হাজার টাকা মার্জিন মানিরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এই অর্থ সাহায্য অত্যন্ত কম সময়ে তাঁদের ব্যাঙ্কের খাতায় পৌঁছে যাচ্ছে। দালালদের হাত থেকে রক্ষা করতে বুনন শিল্পীদের ‘পেহচান’ নামক পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া ভদোই, মির্জাপুর, মেগা কার্পেট ক্লাস্টার এবং শ্রীনগর কার্পেট ক্লাস্টার বুনন শিল্পীদের আধুনিক তাঁতযন্ত্রও দিচ্ছে। পাশাপাশি, সেই তাঁতযন্ত্র পরিচালনা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাঁদের দক্ষতা উন্নয়নের অনেক প্রকল্প চালু হচ্ছে।
বন্ধুগণ, আগে যখন আমি বুনন শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলতাম, তখন একটা সাধারণ মন্তব্য অবশ্যই শুনতাম যে, তাঁরা তাঁদের ছেলেমেয়েদের আর এই কাজের সঙ্গে যুক্ত করতে চান না। এর থেকে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি আর কী হতে পারে? কিন্তু আজ যখন আমরা কার্পেট শিল্পে বিশ্বে শীর্ষ স্থানে পৌঁছে গিয়েছি, তখন আগামী প্রজন্মকে ততটাই উৎসাহিত করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এই লক্ষ্য নিয়ে ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ কার্পেট টেকনলজি ভদোই-এ কার্পেট নির্মাণ শিল্পে বি-টেক পাঠ্যক্রম চালু করা হয়েছে। দেশের অন্যান্য ক্ষেত্রে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলিতেও এ ধরণের পাঠ্যক্রম চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বুনন শিল্পীদের দক্ষতা উন্নয়নের পাশাপাশি তাঁদের ছেলেমেয়েরা যাতে অবশ্যই লেখাপড়া শেখে সেদিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। সেজন্য তাঁদের ছেলেমেয়েদের ৭৫ শতাংশ পড়াশুনার খরচ সরকার বহন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বন্ধুগণ, আপনাদের কলানৈপুণ্য ও শ্রমকে রাষ্ট্রের শক্তিতে রূপান্তরিত করার জনয সরকার দায়বদ্ধ। আগামীদিনে দেশের জন্য, বেনারসের জন্য এই কলা প্রদর্শনে অনেক বড় সুযোগ তৈরি হবে।
আগামী বছর জানুয়ারি মাসে কাশীতে প্রবাসী ভারতীয় সম্মেলন আয়োজিত হবে। সেটিও আপনাদের জন্য প্রচারের একটি বড় মাধ্যম হয়ে উঠবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, সারা পৃথিবী থেকে আসা প্রবাসী ভারতীয় এবং অন্যান্য ব্যবসায়ীরা আমাদের হস্তশিল্পের পাশাপাশি দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং পরিবর্তিত কাশীকে উপভোগ করবেন।
আরেকবার আপনাদের সকলকে ধনতেরাস, দীপাবলী এবং ছট পূজার অগ্রিম শুভেচ্ছা জানাই এবং এই সফল আয়োজনের মাধ্যমে কাশীকে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রককে এবং আমার বুনন শিল্পী ভাই ও বোনেদের ধন্যবাদ জানাই। আমদানি, রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত সমস্ত ব্যবসায়ীদের কাশীতে আসার জন্য অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।