শ্রী অর্ণব গোস্বামীজী, উপস্থিত সকল মাননীয় ব্যক্তিবর্গ, রিপাবলিক টিভি রিপাবলিক ভারতের পুরো টিম, এখানে উপস্থিত সমস্ত গণ্যমান্য অতিথিগণ, বন্ধুগণ,

গতবার যখন আপনাদের মাঝে এসেছিলাম, তখন শুধু রিপাবলিক টিভি নিয়েই আলোচনা হ’ত, কিন্তু এখন আপনারা রিপাবালিক ভারতকেও স্থাপিত করে দিয়েছেন। একটু আগেই অর্ণব বলছিলেন যে, কিছুদিনের মধ্যেই আপনাদের বিভিন্ন প্রাদেশিক ভাষায় চ্যানেল চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। আর, আপনারা নিজেদের আন্তর্জাতিক উপস্থিতির জন্যও প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সেজন্য আমি আপনাদের সবাইকে শুভেচ্ছা জানাই।

বন্ধুগণ, আজ আমাদের সংবিধানের ৭০ বছর পূর্ণ হয়েছে। সেদিক থেকে আজ ঐতিহাসিক দিন। আমি আপনাদের সবাইকে এবং রিপাবলিক টিভির সমস্ত দর্শকদের এই আয়োজনের জন্য ও সংবিধান দিবসের জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।

বন্ধুগণ, আপনাদের থেকে ভালো কে বুঝতে পারেন যে, ‘নেশন ওয়ান্টস্‌ টু নো’ – থেকে যাত্রা শুরু করে ‘নেশন ফার্স্ট’ পর্যন্ত এই সফর কিভাবে অতিক্রম করেছেন। বিগত পাঁচ বছরে গোটা দেশ এই রূপান্তর দেখেছে। ৫ – ৬ বছর আগে জনগণের মধ্যে এবং সংবাদ মাধ্যমেও প্রশ্নের পর প্রশ্ন, প্রশ্নের পর প্রশ্ন, প্রশ্নের পর প্রশ্ন এসবই চলতো। আর মনে হ’ত, যেন একটি রেকর্ড করা ‘বুলেটিন’ চলছে আর মাঝে মাঝে একই কথা বারবার প্রচারিত হ’ত। সাধারণ আলোচনার বিষয় ছিল – হাজার হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারি, প্রত্যেক দ্বিতীয় সপ্তাহে লক্ষ কোটি টাকার কেলেঙ্কারি, অনেক দুর্নীতির আরোপ-, কখনও মুম্বাই কখনও দিল্লি কখনও জয়পুর, বোমা বিস্ফোরণ, কখনও উত্তর-পূর্ব ভারতে অবরোধ, কখনও আকাশ ছোঁয়া মূল্য বৃদ্ধি – এরকম একটি বুলেটিন শেষ হতে না হতেই পরদিন এরকমই নতুন বুলেটিন চলে আসতো একই রকম খবর নিয়ে। দেশ এখন সেরকম পরিস্থিতি থেকে অনেক এগিয়ে গেছে। এখন নানা সমস্যার সমাধান নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়। অনেক দশক পুরনো সমস্যাগুলিরও সমাধান আজ দেশবাসী প্রত্যক্ষ করছেন। জনগণ পরস্পরকে বলছেন যে, আমরা কখনও ভাবিনি জীবৎকালে এসব দেখতে পাবো! এর পেছনে দুটি প্রধান কারণ হ’ল – প্রথমত, ভারতের ১৩০ কোটি মানুষের আত্মবিশ্বাস, যাকে বলা যায় ‘ইয়েস ইট ইজ ইন্ডিয়াস মোমেন্ট’ – হ্যাঁ, এটাই ভারতের মুহূর্ত। আর দ্বিতীয়ত, ১৩০ কোটি জনগণের ভাবনা, যা বলে ‘নেশন ফার্স্ট‘ অর্থাৎ সবার আগে দেশ, সবার উপরে দেশ।

বন্ধুগণ, আপনাদের হয়তো মনে আছে, কয়েক বছর আগে আমি দেশের জনগণের সামনে একটি ছোট আবেদন রেখেছিলাম, আমি বলেছিলাম, সম্ভব হলে আপনারা রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি বর্জন করুন। ছোট্ট অনুরোধ কিন্তু ব্যাপক সাড়া। দেশের ১ কোটিরও বেশি মানুষ রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি বর্জন করেছেন – একেই বলে ‘নেশন ফার্স্ট‘। তেমনই আরেকটি অনুরোধ শুনে ২০১৭ সালের জুলাই মাসের পর থেকে ৬৩ লক্ষেরও বেশি প্রবীণ নাগরিক স্বেচ্ছায় রেল যাত্রায় ভর্তুকি প্রত্যাহার করেছেন – একেই বলে ‘নেশন ফার্স্ট‘। আপনাদের হয়তো মনে আছে, নিজেদের গ্রামে শৌচালয় নির্মাণের জন্য ১০৫ বছর বয়সী এক জনজাতি বৃদ্ধা তাঁর রোজগারের একমাত্র উপায় নিজের আদরের ছাগলটিকে বিক্রি করে দিয়ে সেই টাকা দিয়ে শৌচালয় নির্মাণের মাধ্যমে শৌচালয় আন্দোলন শুরু করেছিলেন – একেই বলে ‘নেশন ফার্স্ট‘। পুণের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকরা স্বচ্ছ ভারত অভিযানের জন্য নিজেদের পেনশনের একটা বড় অংশ দান করে দিয়েছিলেন – – একেই বলে ‘নেশন ফার্স্ট‘। কেউ সমুদ্রতটে পরিচ্ছন্নতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, কেউবা গরিব শিশুদের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য বিনা পারিশ্রমিকে পড়াচ্ছেন আবার কেউ গরিবদের ডিজিটাল লেনদেন শেখাচ্ছেন – এরকম অসংখ্য ভারতবাসী দেশের প্রত্যেক প্রান্তে রয়েছেন। তাঁদের প্রত্যেকের জন্য – – একেই বলে ‘নেশন ফার্স্ট‘। এই ‘নেশন ফার্স্ট’ রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য প্রত্যেক দেশবাসীর সমর্পণের অপর নাম। নিজের দেশের প্রতি দায়িত্বভাব আজ ভারতকে নতুন প্রাণশক্তি প্রদান করছে আর সেজন্য হয়তো এবার আপনারা শীর্ষ সম্মেলনে ‘থিম’ রেখেছেন ‘ইন্ডিয়াস মোমেন্ট, নেশন ফার্স্ট’ – যা দেশের জন্য আবেগ এবং উচ্চাকাঙ্খা বা সবমিলিয়ে আজকের দেশের মেজাজকে প্রতিবিম্বিত করে, প্রতিফলিত করে।

বন্ধুগণ, ‘নেশন ফার্স্ট’ – এর এই ভাবনা নিয়ে চলতে গিয়ে আমরা যা করেছি, তাতে জনগণের আস্থা কতটা, তা আপনারা এ বছর লোকসভা নির্বাচনে দেখেছেন। দেশের মানুষ জানেন ও মানেন যে, আমরা ‘নেশন ফার্স্ট’কেই আমাদের সমস্ত কাজের প্রাণভোমরা মেনে কাজ করেছি। এবার মতদানের মাধ্যমে দেশবাসী আমাদের এই আদেশ দিয়েছেন যে, জনগণের প্রয়োজন, আকাঙ্খা ও প্রত্যাশা পূরণের জন্যই সবসময় কাজ করতে হবে। এই প্রত্যাশা কী? এই প্রত্যাশা হ’ল – দেশকে অনেক দশকের সমস্যাগুলির পাঁক থেকে টেনে তুলতে হবে।

বন্ধুগণ, যখন ‘নেশন ফার্স্ট’ মূলমন্ত্র নিয়ে কাজ করি, তখন আমাদের সংকল্প বড় হয় আর তা বাস্তবায়নের প্রচেষ্টাও ব্যাপক হয়। আমি কিছু উদাহরণের মাধ্যমে নিজের বক্তব্য তুলে ধরতে চাই।

বন্ধুগণ, আপনারা সবাই জানেন, সংবিধানের ৩৭০ ধারা এবং ৩৫এ ধারা থাকার জন্য দীর্ঘকাল ধরে দেশবাসীকে কতটা ভুগতে হয়েছে! প্রথম দিন থেকেই ৩৭০ ধারাকে আমাদের সংবিধানে অস্থায়ী ধারা বলা হয়েছে। কিন্তু তবুও কিছু মানুষ কয়েকটি হাতে গোণা পরিবারের রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে এই ধারাটিকে মানসিকভাবে স্থায়ী ধারা বলে মেনে নিয়েছিলেন। এভাবে তাঁরা সংবিধানের মূল ভাবনাকে অপমান ও অবহেলা করেছেন। ৩৭০ ধারার ফলে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল, তা সেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উৎসাহিত করতো। আমাদের সরকার ৩৭০ ধারা এবং ৩৫এ ধারা বাতিল করে দেশে সংবিধানের গুরুত্বকে পুণঃস্থাপিত করেছে। এখন জম্মু, কাশ্মীর ও লাদাখে নতুন পথ খোলার সূত্রপাত হয়েছে।

বন্ধুগণ, দেশের সামনে আরেকটি বিষয় কয়েকশো বছর ধরে চলে আসছিল। কয়েক দশক ধরে ভিন্ন ভিন্ন আদালতে এর শুনানি চলছিল। আমি অযোধ্যা মামলার কথা বলছি। আগে যে দল ক্ষমতায় ছিল, তারা এই সংবেদনশীল এবং আবেগপূর্ণ বিষয়কে মেটানোর জন্য ইচ্ছাশক্তি দেখায়নি। তাঁরা এর মধ্যে নিজেদের ভোটের খোঁজে থাকতেন। সেজন্য আদালতে একে আটকানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেছে। অনেক আগেই এই বিবাদের সমাধান না হওয়ার কোনও কারণ ছিল না। কিন্তু কিছু রাজনৈতিক দল এবং সংগঠনের স্বার্থের রাজনীতির এই বিবাদকে এতদিন টেনে নিয়ে এসেছে। তাঁদের ক্ষমতা থাকলে এই বিষয়টি কখনোই সমাধান হ’ত না।

বন্ধুগণ, নিজেদের রাজনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিকে নিয়ে টালবাহানা করে কিছু মানুষ সবসময়েই দেশকে একটা কৃত্রিম ভয়ের বিতর্কে ঠেলে দিত। ভারত যদি এরকম করে তো, ওরকম হয়ে যাবে, সমস্যাটা আরও বেড়ে যাবে, এর পরিণাম খুব খারাপ হবে – এরকম অনেক যুক্তি তাঁরা দিতেন।

বন্ধুগণ, আজ ২৬/১১, মুম্বাই বিস্ফোরণের দিন। আমরা খুব ভালোভাবেই জানি যে, এই আক্রমণের পর সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে কত নরম ব্যবহার করা হয়েছিল। এখন দেশ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কিভাবে জবাব দেয় – তা কি আমার বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন রয়েছে? সন্ত্রাসবাদীদের কঠিন সমস্যা থেকে বাঁচানোর সমস্ত যুক্তি এখন ধ্বস্ত হয়ে গেছে।

বন্ধুগণ, তিন তালাকের বিষয়টিও অনেক দশক ধরে বিনা কারণে টানে আনা হয়নি। কৃত্রিম ভয়ের যুক্তি দেখিয়ে এই বিষয়টিকে যতটা টানা যায় ততটাই টানা হয়েছে। এর ফলে, গরিবদের সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সর্বদাই একটা ভ্রম সৃষ্টি করা হয়েছে। ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতি যাঁরা করেন, তাঁরা কখনও মিথ্যা সান্ত্বনা দিয়ে উস্কেছেন আবার মানুষকে ভয় দেখিয়ে নিজেদের স্বার্থ সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু কতদিন এরকম চলা সম্ভব। ৩৭০ ধারা থেকে শুরু করে অযোধ্যা, তিন তালাক কিংবা গরিবদের জন্য আসন সংরক্ষণ – দেশ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পুরনো সমস্ত সমস্যার মুখোমুখী হয়ে এগিয়ে চলেছে। এমনটা নয় যে, দেশ বিরোধী শক্তিগুলি জনগণকে ভ্রমিত করতে কোনও চেষ্টা করেনি; সমস্ত রকম চেষ্টা করেছে। কিন্তু জনগণের ‘নেশন ফার্স্ট’ মনোভাবই তাঁদের সমস্ত প্রচেষ্টাকে বিফল করে দিয়েছে। আজ সময়ের চক্র এটাও দেখছে, যখন ‘নেশন ফার্স্ট‘ মনোভাবকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, তখন দেশ বড় সিদ্ধান্ত নেয় এবং সেই সিদ্ধান্তগুলিকে স্বীকার করার ক্ষমতা দেখিয়ে এগিয়ে চলে।

বন্ধুগণ, এই পরিবর্তমান ভারতের ভাবনা আমাদের জন্য, আপনাদের জন্য এবং দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দলের জন্য একটি বড় শক্তিশালী বার্তা। দেশের জনগণ জটিলতা চান না, ঝামেলা চান না, নেতি চান না, তাঁরা শুধু এবং শুধু দেশের উন্নয়ন দেখতে চান।

বন্ধুগণ, নতুন সাফল্যের দরজা তখনই খোলে, যখন জীবনে প্রতিস্পর্ধাগুলিকে স্বীকার করে নেওয়া হয়। আপনারা অর্ণবকেই দেখুন, তাঁর টিভি শো দেখুন। এতগুলি উইন্ডো খুলে দিয়ে এত বক্তাকে একসঙ্গে রেখে অর্ণবের আদালত শুরু হয়। এটা কি কম বিপজ্জনক! অর্ণবের অতিথিরাও তাঁর শো-তে আসার ঝুঁকি নেন। যাই হোক, মজার কথা ছাড়ুন! অর্ণব প্রতিস্পর্ধা স্বীকার করেছেন বলেই আজ তিনি রিপাবলিক টিভির মতো নেটওয়ার্ক স্থাপন করতে পেরেছেন।

বন্ধুগণ, আমাদের সরকার শুধু প্রতিস্পর্ধা স্বীকার করেনি, সমস্ত সমস্যা সমাধানের জন্য ঐকান্তিক প্রচেষ্টা করেছে। আমার মনে করে, ২০১৪ সালে সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর বিগত সরকারের এনপিএস এবং সেগুলি লুকাতে অনেক দুর্নীতির রহস্য প্রকাশ পাওয়ার পর কী অবস্থা হয়েছিল?  আমরা এই কেলেঙ্কারিকে দেশের সামনে তুলে ধরে এর থেকে বেরিয়ে আসার পথ তৈরি করেছি। এখন ইনসলভেন্সি ও ব্যাঙ্করাপ্সি কোড বা আইবিসি প্রণয়নের ফলে প্রায় ৩ লক্ষ কোটি টাকা ফিরিয়ে আনা সুনিশ্চিত হয়েছে। আপনাদের হয়তো মনে আছে, এই এনপিএস নিয়ে কিছু মানুষ কিছু মানুষ কিরকম শোরগোল তুলেছিলেন। এটাও একটা ‘প্যাটার্ন’ – এর অংশ ছিল। প্রত্যেক সংসদ অধিবেশনের আগেই এরা কোনও না কোনও নতুন মিথ্যে তৈরি করে নিতেন। আর তারপর সেটিকে সবার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হ’ত। প্রত্যেক অধিবেশনের পর কোনও পছন্দসই কাগজে খবর ছাপানো হতো বা ‘ব্রেকিং নিউজ’ করে দেওয়া হ’ত আর তারপর তাঁদের বাস্তু-ব্যবস্থা তা নিয়ে উড়ে যেত। আপনারা সংবাদ মাধ্যমে যেমন ‘ব্যাকগ্রাউন্ডার প্যাকেজ’ তৈরি করেন, সমস্ত সংশ্লিষ্ট বিষয় এর সঙ্গে যুক্ত করেন! মনে করুন, এনপিএস নিয়ে এই ‘প্যাটার্ন’ চালু ছিল। ইভিএম নিয়ে এই ‘প্যাটার্ন’ চালু ছিল, রাফাল নিয়ে এই ‘প্যাটার্ন’ চালু ছিল। কিছু দিন আগে সরকার প্রথমবার যখন ঐতিহাসিক রূপে কর্পোরেট ট্যাক্স কম করেছে, তখনও এই রকম ‘প্যাটার্ন’ চালু করার চেষ্টা হয়েছিল, আর আজকাল তো ইলেকশন বোর্ড তাদের ‘ফেভারিট’ হয়ে উঠেছে।

বন্ধুগণ, দেশে স্বচ্ছ ব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা করলে, স্বচ্ছভাবে কোনও কিছু হলেই কিছু মানুষের পেট ব্যথা শুরু হয়। আপনারা আমাকে বলুন – আধার নিয়ে বিতর্ক আপনাদের সবারই মনে থাকবে। আধার-কে যাতে আইনসিদ্ধ না মানা হয়, সেই আবেদন নিয়ে তাঁরা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত চলে গিয়েছিলেন। আধার-কে বদনাম করার জন্য পূর্ণ শক্তি দিয়ে লড়াই করেছিলেন।

বন্ধুগণ, আজ আধার দেশের সাধারণ মানুষের অধিকার সুনিশ্চিত করার অনেক বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে। শুধু তাই নয়, আধার নামক বায়োমেট্রিক পরিচয়ের এই যে ডেটা আমাদের কাছে রয়েছে, তা দেখে বিশ্ববাসী অবাক! বিশ্বের এমন কোনও দেশের নেতা নেই, যিনি আমার সঙ্গে আধার ও আধার প্রক্রিয়া নিয়ে কথা বলেননি, এর পরিষেবা নিয়ে আলোচনা করেননি। এত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভান্ডার আমাদের রয়েছে, তাকে তাঁরা বিবাদাস্পদ করে তুলেছিলেন।

বন্ধুগণ, আধার চালু হওয়ার পর আমাদের দেশে কী পরিণাম এসেছে, তার একটি ছোট্ট উদাহরণ দিচ্ছি – আপনারা শুনলে অবাক হবেন যে, আমাদের দেশে কাগজে-কলমে ৮ কোটিরও বেশি এমন অনেক মানুষ ছিল, যাদের জন্মই হয়নি। যাদের জন্ম হয়নি, কাগজে-কলমে তাঁদের বিয়ে হয়েছে, বিধবা হয়েছে আর বিধবা পেনশনও চালু হয়েছে। এই ভুয়ো লোকেরা রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি পেতেন, পেনশন তুলতেন, বেতন পেতেন, ছাত্র বৃত্তি পেতেন, রাজকোষ থেকে নিয়মিত টাকা যেত। এই টাকা কোথায় যেত, তা আমার বলার প্রয়োজন নেই। আধার – এই সত্যিটা তুলে ধরতে অনেক সাহায্য করেছে। আর সেজন্য দেশের প্রায় দেড় লক্ষ কোটি টাকা, আমি আরেকবার বলছি দেড় লক্ষ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে, দুর্নীতি হ্রাস পেয়েছে। প্রতি বছর দেশের রাজকোষ থেকে দেড় লক্ষ কোটি টাকা ভুল হাতে পৌঁছে যেত। আমরা আধারের মাধ্যমে ব্যবস্থার এত বড় অপচয় বন্ধ করার কাজ করেছি। কেন? আপনারা জানেন, এজন্য কত মানুষের লোকসান হয়েছে। কতজনের মনে আমরা নিয়মিত কাঁটার মতো খোঁচা দিতে থাকি। কারণ, আমাদের অগ্রাধিকার হ’ল ‘নেশন ফার্স্ট’।

বন্ধুগণ, এরা ক্ষমতায় থাকলে জিএসটি কখনও চালু হ’ত না। অনেক জ্ঞানী-গুণী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব জিএসটি-কে একটি বড় রাজনৈতিক ঝুঁকি বলে মনে করতেন। যে দেশেই এটি চালু হয়েছে, সেখানকার সরকার পড়ে গেছে। এই ভয়ে আমরা থেমে থাকিনি। নিজেদের রাজনৈতিক লাভ-লোকসানের কথা চিন্তা না করে দেশের স্বার্থে জিএসটি চালু করেছি। আজ জিএসটি-র ফলেই দেশে একটি সৎ বাণিজ্য সংস্কৃতি গড়ে উঠছে। আর মূল্যবৃদ্ধিকেও লাগাম পরানো গেছে। আজ সাধারণ নাগরিকদের অবস্থা সংবাদমাধ্যমে দেখানো হয় না, নাজানি কেন দেখানো হয় না, কিন্তু আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, সাধারণ নাগরিকরা ব্যবহার করেন এমন ৯৯ শতাংশ পণ্যের ক্ষেত্রে আগের তুলনায় অর্ধেক কর দিতে হয়। জিএসটি আসার আগে মানুষকে সবমিলিয়ে যতটা কর দিতে হ’ত, আজ তার অর্ধেক দিতে হয়। একটা সময় ছিল, যখন রেফ্রিজারেটর, মিক্সার, জুসার, ভেকুয়াম ক্লিনার, গিজার, মোবাইল ফোন, ওয়াশিং মেশিন, ঘড়ি – এই সমস্ত পণ্যে ২১ শতাংশেরও বেশি কর দিতে হ’ত। আজ এই পণ্যগুলি কিনতে ১০ – ১২ শতাংশ কর দিতে হয়। এমনকি, আগে গম, চাল, দই, লস্যি, ছানা কিনতে গেলেও কর দিতে হ’ত। জিএসটি চালু হওয়ার পর এই সকল পণ্য কিনতে কোনও কর দিতে হয় না।

বন্ধুগণ, আমি আপনাদের একটি উদাহরণ দিতে চাই, দশকের পর দশক ধরে দিল্লিতে বসবাসকারী কয়েক লক্ষ্য পরিবারের জীবনে অনিশ্চয়তা ছিল। দেশ ভাগের পর বাধ্য হয়ে শরণার্থী হওয়া এই মানুষেরা স্বাধীন ভারতেও শান্তিতে দিন কাটাতে পারেননি। স্বাধীন ভারতের বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাঁদের জীবনে সমস্যাও বাড়তে থাকে। তাঁরা অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে এখানে বাড়ি কিনতেন কিন্তু সেই বাড়ি কখনও সম্পূর্ণ রূপে তাঁদের মালিকাধীন ছিল না। এই দীর্ঘকালীন সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের সরকার একটি সম্প্রতি একটি পদক্ষেপ নিয়েছে। আর শুধু দিল্লিতেই ৫০ লক্ষেরও বেশি মানুষ নিজস্ব বাড়ি এবং উন্নত জীবনযাপনের আশ্বাস ও ভরসা পেয়েছেন। এভাবে দশকের পর দশক ধরে আমাদের দেশে রিয়েল এস্টেট ক্ষেত্রটি যথপোযুক্ত রেগুলেশন ছাড়াই চলছিল। বিশেষ করে, দিল্লি এনসিআর – এর মানুষ এজন্য কত ভুগেছেন, তা এখানকার মানুষ ভালোভাবেই জানেন। এই সমস্যা সারা দেশেই রয়েছে। এই দীর্ঘকালীন পরিস্থিতি বদলানোর জন্য আমাদের সরকার ‘রেরা’ সহ অনেক আইন প্রণয়ন করেছে ও বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। সম্প্রতি আমাদের সরকার রিয়েল এস্টেটের অসম্পূর্ণ এবং থেমে থাকা প্রকল্পগুলিকে সম্পূর্ণ করার জন্য প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা সহায়তার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে, নিশ্চিতভাবেই অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার উপকৃত হবেন। তাঁদের রক্ত জল করা পয়সায় কেনা বাড়ির মালিকানা তাঁরা নিতে পারবেন। আগে বিল্ডাররা কিভাবে তাঁদের ব্যবসা বাড়াতেন, কিভাবে তাঁদের প্রকল্পগুলি মঞ্জুর হ’ত – তৎকালীন সিদ্ধান্তগুলি দেখলে আর আজ আমাদের সরকারের পদক্ষেপগুলি যাচাই করলে আপনাদের সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠবে, যাঁরা ‘নেশন ফার্স্ট’কে অগ্রাধিকার দেয়, তাঁদের লক্ষ্য কেমন হয়, নীতি কেমন হয় এবং ইচ্ছাশক্তি কেমন থাকে আর কিভাবে তা সাধারণ মানুষের উপকারে লাগে।

বন্ধুগণ, আজ ভারতে যে গতিতে ব্যাপক পরিমাণ কাজ হচ্ছে, তা অভূতপূর্ব। ৬০ মাসে প্রায় ৬০ কোটি ভারতবাসীকে শৌচাগারের পরিষেবা প্রদান তিন বছরেরও কম সময়ে ৮ কোটিরও বেশি বাড়িকে বিনামূল্যে রান্নার গ্যাস সংযোগ, ১ হাজার দিনেরও কম সময়ে ১৮ হাজার গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া। পাঁচ বছরে দেড় কোটিরও বেশি গৃহহীনকে নিজস্ব বাড়ি বানিয়ে দেওয়া, ৩৭ কোটিরও বেশি গরিব মানুষকে ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত করা, বিশ্বের সর্ববৃহৎ স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্প আয়ুষ্মান ভারত চালু করা, ৫০ কোটি মানুষকে ৫ লক্ষ টাকা মূল্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা বিনামূল্যে প্রদান, প্রায় ১৫ কোটি কৃষক পরিবারের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি আর্থিক সাহায্য পাঠানো – এরকমই প্রকল্প আপনারা তখনই পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করতে পারেন, যখন আপনাদের মনে এবং গোটা টিমের মনে ‘নেশন ফার্স্ট’ মন্ত্রটি জীবন মন্ত্র হয়ে ওঠে, যখন আপনারা ব্যক্তিগত স্বার্থের পরিধি থেকে বেড়িয়ে ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিসওয়াস’কে নীতি ও রাজনীতির ভিত্তি করে তোলেন।

ভাই ও বোনেরা, এই ‘নেশন ফার্স্ট’ – এর ভাবনাই উত্তর-পূর্ব ভারতে বিচ্ছিন্নতাবাদ নির্মূল করা, ঐ অঞ্চলকে দেশের উন্নয়নে নতুন ইঞ্জিনে পরিণত করতে প্রেরণা জুগিয়েছে। এই ভাবনাই আমাদের উন্নয়নের পথে সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া ১১২টি উচ্চাকাঙ্খী জেলাকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে উন্নয়নের কাজ করার শিক্ষা দিয়েছে।

বন্ধুগণ, এই ‘নেশন ফার্স্ট’ – এর ভাবনাই কয়েক দশক ধরে চালু হওয়া টিকাকরণ অভিযানকে পুনর্বিন্যাস ঘটাতে প্রেরণা যুগিয়েছে। আমরা মারাত্মক রোগ প্রতিরোধী টিকার সংখ্যা বাড়িয়েছি। মিশন ইন্দ্রধনুষের মাধ্যমে দূরদূরান্তের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলিতেও টিকাকরণ অভিযানকে পৌঁছে দিয়েছি।

বন্ধুগণ, এই ‘নেশন ফার্স্ট’ – এর ভাবনাই আমাদের মাতৃত্বকালীন ছুটিকে ১২ সপ্তাহ থেকে বাড়িয়ে ২৬ সপ্তাহ করার পথ দেখিয়েছে, যাতে মায়েরা তাঁদের নবজাতকদের  দেখভালের যথেষ্ট সময় পান। এই ভাবনাই আমাদের প্রত্যেক বিদ্যালয়ে ছাত্রীদের জন্য স্বতন্ত্র শৌচালয় নির্মাণের পথ দেখিয়েছে, যাতে ছাত্রীদের অসময়ে স্কুলছুট না হতে হয়।

বন্ধুগণ, এই ‘নেশন ফার্স্ট’ – এর ভাবনাই গরিবদের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করার জন্য ৩৭ কোটিরও বেশি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলিয়েছে, দেশের সাধারণ মানুষও সহজেই যাতে ডিজিটাল লেনদেন করতে পারেন, সেই ভাবনা থেকে রুপে কার্ড দেওয়া হয়েছে, ভীম অ্যাপ লঞ্চ করা হয়েছে। আপনারা জেনে খুশি হবেন, ইতিমধ্যেই দেশে ৫৫ কোটিরও বেশি রুপে ডেবিট কার্ড জারি করা হয়েছে আর এই কার্ড ইতিমধ্যেই ৩০ শতাংশ বাজার দখল করেছে। রুপে কার্ড ধীরে ধীরে একটি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড হয়ে ওঠার দিকে এগিয়ে চলেছে।

ভাই ও বোনেরা, এই ‘নেশন ফার্স্ট’ – এর ভাবনা থেকেই জল জীবন মিশনের সূত্রপাত হয়েছে। আগামী দিনে এই মিশন বাবদ প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ কোটি টাকা খরচ করা হবে, যাতে দেশের দূরদূরান্তের মানুষ স্বচ্ছ পানীয় জল পান। প্রত্যেক বাড়িতে যাতে জল পৌঁছয়।

বন্ধুগণ, এখন জনগণের জীবন সহজ করে তুলতে তাঁদের আয় বৃদ্ধির ইচ্ছা নিয়ে দেশের অর্থ ব্যবস্থাকে ৫ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে আজ দেশ এগিয়ে চলেছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, এই ‘নেশন ফার্স্ট’ – এর ভাবনাই আমরা প্রত্যেক সিদ্ধান্তে যথাযথ পরিণাম দেখতে পাবো আর দেশ প্রত্যেক লক্ষ্য-সাধনে সক্ষম হবে।

বন্ধুগণ, আমার আশা যে, শীর্ষ সম্মেলনে এই ভাবনা নতুন ভারতের নতুন সম্ভাবনাগুলি এবং নতুন সুযোগগুলি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। আমি আরেকবার সংবিধান দিবসে রিপাবলিক পরিবারের সঙ্গে মিলিত হতে পেরেছি। আপনাদের মাধ্যমে দেশ ও বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা আপনাদের দর্শকদের কাছে আমার কথা পৌঁছে দেওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে, সেজন্য আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আর আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।

আপনারা আমাকে এখানে এসে কথা বলার সুযোগ দিয়েছেন। সেজন্যও আমি আপনাদের প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।

অনেক অনেক ধন্যবাদ।

Explore More
৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪

জনপ্রিয় ভাষণ

৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪
Income inequality declining with support from Govt initiatives: Report

Media Coverage

Income inequality declining with support from Govt initiatives: Report
NM on the go

Nm on the go

Always be the first to hear from the PM. Get the App Now!
...
Chairman and CEO of Microsoft, Satya Nadella meets Prime Minister, Shri Narendra Modi
January 06, 2025

Chairman and CEO of Microsoft, Satya Nadella met with Prime Minister, Shri Narendra Modi in New Delhi.

Shri Modi expressed his happiness to know about Microsoft's ambitious expansion and investment plans in India. Both have discussed various aspects of tech, innovation and AI in the meeting.

Responding to the X post of Satya Nadella about the meeting, Shri Modi said;

“It was indeed a delight to meet you, @satyanadella! Glad to know about Microsoft's ambitious expansion and investment plans in India. It was also wonderful discussing various aspects of tech, innovation and AI in our meeting.”