বিপুল সংখ্যায় আগত আমারপ্রিয় ভাই ও বোনেরা, খম্মা ঘনী, নমস্কার। দু ’ দিন আগেই ভারতের প্রত্যেক প্রান্তে মকর সংক্রান্তি পালন করা হয়েছে। মকরসংক্রান্তির পর প্রকৃতিতে একপ্রকার উৎক্রান্তি-সংকেত যুক্ত হতে থাকে। সংক্রান্তিরপর উন্নতি অন্তর্নিহিত থাকে। মকর সংক্রান্তির পর রাজস্হানের মাটিতে গোটা ভারতকেপ্রাণশক্তিতে ভরপুর করে তোলার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টা, একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ,একটি গুরুপূর্ণ প্রকল্পের কাজ আজ শুরু হচ্ছে।
এজন্য আমি শ্রদ্ধেয়াবসুন্ধরা রাজে এবং ধর্মেন্দ্র প্রধানকে অভিনন্দন জানাতে চাই যে তাঁরা কাজ শুরুকরার কর্মসূচি রচনা করেছেন। আগামী দিনে দেশে যে কোনও সরকারের যে কোনও নেতা যখনকোনও প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্হাপন করবেন, তখন মানুষ ওই প্রকল্পের উদ্বোধনেরতারিখটাও জানতে চাইবে না। এই কর্মসূচির পর গোটা দেশে সচেতনতা আসবে, শুধু শিলান্যাসকরে জনগণকে ধোঁকা দেওয়া যাবে না। প্রকল্পের কাজ চালু হলে তবেই সাধারণ মানুষবিশ্বাস করবেন।
আমি খুশি যে এই গোটা অঞ্চলেরউন্নয়নযাত্রায় সামিল হয়ে এই কর্মসূচনার সৌভাগ্য হয়েছে। একটু আগেই ভারপ্রাপ্তআধিকারিক আমাকে এই প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত বলেছেন। সব বলে দিয়ে তিনি হয়তোভেবেছেন যে প্রধানমন্ত্রীকে সবকিছু জানানো হল। আমি বললাম, আপনি আমাকে উদ্বোধনের তারিখটাবলুন। তখন তিনি আমাকে আশ্বস্ত করে তারিখও বলেন। ২০২২ সালে ভারত যখন স্বাধীনতার ৭৫বর্ষপূর্তি উদযাপন করবে, ভারতের বীরেরা, স্বাধীনতা সংগ্রামীরা যে রকম স্বাধীনভারতের স্বপ্ন দেখে ফাঁসীর মঞ্চে প্রাণ দিয়ে, বন্দে মাতরম ধ্বনিকে শক্তিময় করেছেন,নিজেদের যৌবনের দিনগুলি কারান্তরালে কাটিয়েছেন, ২০২২ সালে সেই স্বাধীনতার ৭৫ বছরপূর্তি আগে তেমন নতুন ভারত গড়ে তোলার দায়িত্ব প্রত্যেক ভারতীয়র। ১২৫ কোটিনাগরিকের কর্তব্য হল ২০২২-এর আগে সেই স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্বপ্নের ভারত গড়েতুলে তাদের চরণে সমর্পণ করা।
এই সময় সংকল্প থেকে সিদ্ধিরসময়। আজ এখানে আপনারা সংকল্প গ্রহণ করেছেন যে ২০২২-এর মধ্যেই এই তৈল শোধনাগার কাজকরা শুরু করবে। সেজন্য আমি রাজস্হান সরকারকে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্রজীরবিভাগকে, ভারত সরকারের প্রচেষ্টাকে, আমার রাজস্হানের ভাই-বোনেদের অনেক অনেকশুভকামনা জানাই।
বাড়মেরের এই মাটিতে আপনারাপাওল মল্লীনাথ, সন্ত তুলসারাম, মাতারানী ফটিয়ানী, নাগনেকী মাতা, সন্ত ইশ্বরদাস,সন্ত ধারুজীমেগ-এর মতো অসংখ্য সাধু সন্ন্যাসীর আশীর্বাদধন্য। আমি আজ সেই মাটিকেপ্রণাম জানাই।
পঞ্চপদ্রার এই ভূমি প্রয়াতস্বাধীনতা সংগ্রামী শ্রদ্ধেয় গুলাবচন্দজী সালেচার কর্মভূমি। গান্ধীজীর লবনসত্যাগ্রহের আগেই তিনি এখানে লবন-সত্যাগ্রহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাছাড়া এতদঞ্চলেপানীয় জল সরবরাহ ব্যবস্হা, রেল যোগাযোগ ব্যবস্হা চালু করা, প্রথম কলেজ স্হাপনেরজন্য সকলেই গুলাবচন্দজীকে স্মরণ করেন। আমি পঞ্চপদ্রার এই সুসন্তান-কেও প্রণামজানাই।
ভাই ও বোনেরা, আমি আজ এইমাটিতে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধেয় ভৈরোসিংহ শেখাওয়াত মহোদয়কেও স্মরণ করছি। আধুনিকরাজস্হান, সঙ্কটমুক্ত রাজস্হান গড়ে তুলতে, বাড়মের-এ এই তৈল শোধনাগার স্হাপনেরকপ্পনাও প্রথম তাঁর মাথাতেই এসেছিল, আজ আমি সেই মানুষটিকে শ্রদ্ধায় স্মরণ করি।
আজ যখন বাঢ়মেরে এসেছি,উপস্হিত সকলকে অনুরোধ করবো, আপনারা সবাই নিজের নিজের ইষ্টদেবতাকে স্মরণ করুন যেএখানকার ভূমিপুত্র শ্রদ্ধেয় জসবন্ত সিং মহোদয়ের স্বাস্হ্য অতি দ্রুত ভাল হয়ে যাকআর গোটা দেশ তাঁর প্রজ্ঞায় লাভবান হোক। আমরা সবাই তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করলে,তিনি তাড়াতাড়ি সুস্হ হয়ে অবশ্যই আমাদের মধ্যে ফিরে আসবেন।
ভাই ও বোনেরা, দুর্ভাগ্যজনকভাবেআমাদের দেশে ইতিহাসকে বিস্মৃতির আঁধারে ডুবিয়ে দেওয়ার পরম্পরা রয়েছে। বীরদের ত্যাগও বলিদানের কথা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে সঞ্চারিত করলে তাঁরাও একদিন ঐতিহাসিককাজ করার প্রেরণা পাবেন।
আপনারা হয়তো টেলিভিশনেদেখেছেন যে এখন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে এসেছেন। ১৪ বছর পর তিনি এ দেশেএসেছেন। আর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইজরায়েলে যাওয়ারসৌভাগ্য আমরা হয়েছে। আর আমার দেশবাসী, আমার রাজস্হানের ভাই ও বোনেরা, আপনারা একথাশুনলে গর্ববোধ করবেন যে, আমার সংক্ষিপ্ত ইজরায়েল সফরে হাইফায় গিয়ে প্রথমবিশ্বযুদ্ধে হাইফাকে মুক্ত করাতে গিয়ে আজ থেকে ১০০ বছর আগে যে ভারতীয় সৈনিকরাআত্মবলিদান করেছেন সেই সৈনিকদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন এই ভূমির-ই বীর সন্তান মেজরদলপত সিংহ। তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বেই ১০০ বছর আগে হাইফা শত্রুর কবল থেকে মুক্তহয়েছিল।
দিল্লীতে একটি চৌমাথার নামতিনমূর্তি। সেখানে তিনজন বীর যোদ্ধার মূর্তি রয়েছে। ইজরায়েলের প্রধামন্ত্রী এ দেশসফরে আসতেই, আমরা দু ’ জন সবার আগে ওই তিনমূর্তিচৌকে যাই, যাতে ইতিহাস মনে থাকে, মেজর দলপত সিংহ শেখাওয়াতকে মনে থাকে, আমাদের রাজস্হানেরশৌর্য পরমম্পরা মনে থাকে। দু ’ দিন আগেই সেই সৌভাগ্য আমার হয়েছে।
ভাই ওবোনেরা, এই মাটি বীরদের মাটি, আত্মিবলিদানের ভূমি। দেশে আত্মবলিদানের এমন কম ঘটনাইরয়েছে যেখানে এই ভূমির বীরদের রক্ত সিঞ্চিত হয়নি। এহেন সমস্ত বীরদের আমি এখানেদাঁড়িয়ে প্রণাম জানাই।
ভাই ওবোনেরা, আমি আগে সংগঠনের কাজে ঘন ঘন রাজস্হান আসতাম। অনেকবার এসেছি। প্রতিবেশীরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন সময়েও নানা কারণে এসেছি। আর প্রত্যেকবারই সাধারণ মানুষেরমুখে শুনতাম যে রাজস্হানে কংগ্রেস আর আকাল যমজ ভাইয়ের মতো। সেখানে কংগ্রেস যার,আকালও তাদের সঙ্গে সঙ্গে যায়। আর শ্রদ্ধেয়া বসুন্ধরাজী যখন সেবা করার সুযোগপেয়েছেন, এই ঊষর ভূমির জলকষ্ট দুর হয়।
ভাই ওবোনেরা, কিন্তু আমাদের বর্তমান পরিস্হিতে থেকে আরও এগিয়ে যেতে হবে। রাজস্হানকেএগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। রাজস্হানের উন্নয়নযাত্রা যাতে প্রতিনিয়ত দেশের উন্নয়নে নতুনমাত্রা যোগ করে এমন পরিস্হিতি গড়ে তুলতে হবে।
ভাই ওবোনেরা, আমাদের মন্ত্রী ধর্মেন্দ্রজী আর এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরাজী যেঅভিযোগ করেছেন সেটা ন্যায়সঙ্গত। কিন্তু এই ধোঁকা দেওয়ার কাজ কি শুধুই বাঢ়মের তৈলশোধনাগারে ভিত্তিপ্রস্তর স্হাপন নিয়ে হয়েছে ? কিন্তু পাথর জড়ো করে শিলান্যাস আরসংবাদমাধ্যমে ফটো ছাপিয়ে প্রচারের এই কৌশল নিয়ে গবেষণা করার জন্য আমি সারা দেশেরগবেষকদের আমন্ত্রণ জানাই। আপনারা পরীক্ষা করে দেখুন যে দেশের বিভিন্ন রাজ্যেকংগ্রেস সরকারের কর্মশৈলী কেমন ছিল ? বড় বড় কথা বলা, জনতা জনার্দনকে বিপথে পরিচালিত করা, শুধু বাঢ়মের তৈল শোধনাগার নিয়ে এই ধোঁকাবাজি হয়, এটাই তাদের কার্যশৈলী, এটা তাদের স্বভাবেরঅংশ। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করার পর দেশের বাজেট আর রেল বাজেট নিয়ে আলোচনারসময় আমি নিজের স্বভাব অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকদের জিজ্ঞেস করি, রেল বাজেটে যেএতগুলি ঘোষণা রয়েছে সেগুলি বাস্তবায়নের কী হল ? আপনারা শুনলে অবাক হবেন। ভারতের সংসদ গণতন্ত্রের মন্দির। সেখানে বসে দেশকেবিভ্রান্ত করার অধিকার কারও নেই। কিন্তু আপনারা শুনে অবাক হবেন যে আমরা দায়িত্বগ্রহণ করার পর দেখি, রেল বাজেটে ঘোষিত ১৫০০ এরও বেশি প্রকল্পের কাজ শুরুই হয়নি,এমনি কাগজে ঝুলে ছিল। একের পর এক সরকার এসেছে, কিন্তু কোনও কাজ হয়নি।
সংসদ সদস্যদের দাবিতে রেলমন্ত্রীরা যেসব প্রকল্প বাজেটে সামিলকরেন, ঘোষনা শুনে সংশ্লিষ্ট সাংসদরা সংসদের টেবিল চাপড়ে সাধুবাদ জানান, ওই ঘোষনাথেকে নিজের নিজের এলাকায় রাজনৈতিক ফায়দা তোলেন, কিন্তু কাজ কিছুই হয় না। আমরাদায়িত্ব নিয়ে ঠিক করি যথাসম্ভব অগ্রাধিকার দিয়ে ওই ঘোষিত প্রকল্পগুলি, স্হগিতপ্রকল্পগুলির কাজ করবো, যতটা সম্ভব হবে ততটাই বাজেটে থাকবে। মিথ্যে হাততালিকুড়োনের স্বার্থে বাজেট ঘোষনা করবো না। সমালোচনা হবে, কিন্তু ধীরে ধীরে দেশে সঠিককথা বলা, ঠিকঠাক কাজ করার সংস্কৃতি বেড়ে উঠবে ! আমরাএভাবেই কাজ করতে চাই।
শুধু তাই নয়, এখানে দর্শকমন্ডলীতে বসে থাকা সৈনিক ভাইয়েরা আরতাদের পরিবারজন আমাকে বলুন, চল্লিশ বছর ধরে আপনাদের ‘ একপদএক পেনশন ’ -এর দাবি নিয়ে কত টালবাহানা হয়েছে ? প্রত্যেক নির্বাচনের আগে আপনাদেরপ্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এটাই তাদের স্বভাব। কিন্তু ২০১৪ সালেও আপনারা দেখেছেন যেপ্রাক্তন সৈনিককে বসিয়ে তাদের ফটো তুলে ‘ একপদএক পেনশন ’ -এর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু আমি যখন ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সালে রেওয়াড়িতে প্রাক্তন সৈনকদেরসামনে ঘোষনা করলান যে আমাদের সরকার এলে ‘ একপদএক পেনশন ’ চালু করা হবে। সেই চাপে তখন তাড়াহুড়ো করে এই তৈলশোধনাগারের মিছিমিছি ভিত্তিপ্রস্তর স্হাপনের মতোই তাঁরা অন্তর্বতী বাজেটে ‘ একপদ এক পেনশন ’ বাবদ ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেন।
দেখুন, দেশকে এভাবে ধোঁকা দেওয়া হতো। আমরা দায়িত্ব দেখি, ‘ একপদ এক পেনশন ’ নিয়ে কোনও ক্ষেত্রসমীক্ষা ছিল না, এই টাকা কোন উস ৎ থেকে বরাদ্দ হবে, এই প্রদানের দায়িত্ব কার, কোন আধিকারিক সেই দায়িত্ব সম্পাদনকরবেন এ বিষয়ে কোনও ফাইল বা কাগজ ছিল না। এই তৈল শোধনাগারের কথা তো তবু কাগজে লেখাছিল, ‘ একপদ এক পেনশন ’ সম্পর্কে কোনও কাগজ ছিল না, কোনও তালিকা ছিল না, কোনও প্রকল্প ছিল না, শুধুনির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল।
ভাই ও বোনেরা, ওই প্রতিশ্রুতি আমিও দিয়েছিলাম, তাই আমাদের দায়বদ্ধতা ছিল,কিন্তু দ্রুত গতিতে কাগজে সমস্ত প্রয়োজনীয় তথ্য একত্রিত করতেই দেড় বছর লেগে গেল।সব ছড়ানো ছিটানো ছিল। আপনারা শুনলে অবাক হবেন যে দেশের জন্য আত্মবলিদান দেওয়াসৈনিকদের তথ্যও সরকারের কাছে গোছানো ছিল না। আমরা সব একত্রিত করে হিসেব কষে অবাকহয়ে যাই। অন্তবর্তী বাজেটে ৫০০ কোটি ঘোষনা করায় আমরা ভেবেছিলাম, খুব বেশি হলে ১০০০থেকে ২০০০ কোটি হবে। কিন্তু হিসেব করে দেখা গেল যে এই প্রকল্প চালু করতে ১২ হাজারকোটি থেকেও বেশি টাকা লাগবে। ১২ হাজার কোটি, এখন কংগ্রেস পার্টি এক পদ এক পেনশনবাবদ ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করার কথা বলেছিল ; এর মধ্যে কি কোন সততা আছে ? সত্যিই কি তারা অবসরপ্রাপ্ত সৈনিকদের কিছুদেওয়ার কথা ভেবেছিলেন ? ত ৎ কালীনঅর্থমন্ত্রী তো এতো কাঁচা ছিলেন না ! কিন্তু ৫০০ কোটি টাকার তিলক লাগিয়ে বাজেটে লিখেদিয়েছেন আর তারপর হাত উপরে তুলে দিয়েছেন।
ভাই ও বোনেরা, হঠা ৎ করে ১২ হাজার কোটি টাকা সংস্হানের চাপ এলে আমি অবসরপ্রাপ্তসৈনিকদের প্রতিনিধিদের ডেকে পাঠাই। তাদেরকে বলি, ভাই আমিতো প্রতিশ্রুতি রাখতে চাই,কিন্তু সরকারের কোষাগারে এতো ক্ষমতা নেই যে একসঙ্গে ১২ হাজার কোটি টাকা বের করেদেবে। পুর্ববর্তী সরকারতো ৫০০ কোটি টাকার কথা বলে চলে গেছেন। কিন্তু আমাকে সৎ পথে১২ হাজার কোটি টাকা বের করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনাদের সাহায্য চাই।
প্রাক্তনসৈনিক প্রতিনিধিরা আমাকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীজি, আপনি আমাকে লজ্জা দেবেন না। বলুনআমরা কি করতে পারি ?
আমিবলি, আপনারা দেশকে অনেক কিছু দিয়েছেন, এখন আমাকে সাহায্য করুন। একসঙ্গে ১২ হাজারকোটি টাকা দিতে পারবো না। দিতে হলে দেশের গরিবদের বেশকিছু প্রকল্প থেকে বের করেদিতে হবে। সেক্ষেত্রে গরিবদের প্রতি অন্যায় হবে। এই টাকাটাই আমরা কি আপনাদের চারভাগে ভাগ করে দিতে পারি ?
আমার দেশের বীর সৈনিকরা ৪০ বছর ধরে যে এক পদ এক পেনশন পাওয়ার জন্যদীর্ঘ প্রতীক্ষায় ছিলেন, তাঁরা প্রথমবার যখন এমন প্রধানমন্ত্রীকে পেলেন যে প্রতিশ্রুতিরক্ষায় সঙ্কল্পবদ্ধ। তাঁরা চাইলেন যে মোদীজি, সমস্ত সরকারই আমাদের ঠকাচ্ছে। আমরাআর অপেক্ষা করতে পারবো না। দিতে হলে এখুনি দিন ! কিন্তু তাঁরা এরকম বললেন না।
আমাদের দেশের সৈনিকরা ইউনিফর্ম ছেড়ে আসার পরও শরীর, মন এবং হৃদয়দিয়ে সৈনিক-ই থাকেন। দেশপ্রেম জীবনের শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত তাঁদের শিরা-ধমনীতেপ্রবাহিত হয়। এক মূহুর্ত অপেক্ষা না করে তাঁরা বললেন, প্রধানমন্ত্রীজি, আপনারকথাকে আমরা বিশ্বাস করি। চার ভাগে ভাগ করে দিন কিংবা ছ ভাগে, যে সিদ্ধান্ত নেবেনআমরা মেনে নেব। কিন্তু একবার দৃঢ়ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন।
ভাই ও বোনেরা, এই অবসরপ্রাপ্ত সৈনিকদের প্রাণশক্তি থেকে প্রেরণানিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আর ইতিমধ্যেই তাদের বকেয়া টাকা চার কিস্তিতে তাঁদেরব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকার-ও বেশি তাঁদেরঅ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে। বাকি টাকাও কিছুদিনের মধ্যে দিয়ে দেওয়া হবে। সেজন্যই শুধুপাথর জড়ো করা নয়, যেকোনও কাজের পরিণাম পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া বর্তমান সরকারেরঅভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
আপনারা আমাদের বলুন, চার দশক ধরে শুনে আসছেন- গরিবি হটাও গরিবিহটাও ! শুনেছেনকি না ? গরিবেরনামে নির্বাচনী খেলা অনেক দেখেছেন ! তাই নয় কি ? কিন্তু গরিবের ভালোর জন্য কোনওপ্রকল্প কি আপনাদের চোখে পড়েছে ? স্বাধীনতার ৭০ বছর পরেও তাঁরা বলবেন, যাও গর্ত খোঁড়ো। আর সন্ধ্যায় কিছু মানুষকেনিয়ে যাও, খাওয়া-দাওয়া করো। ভালোভাবে দেশের উন্নয়নের জন্য যদি চিন্তা থাকতো, তাহলেএতোদিনে আমাদের দেশের দরিদ্ররা নিজেরাই দারিদ্র দূরীকরণে শক্তি অর্জন করে নিজেরপায়ে দাঁড়িয়ে পরতেন।
আমাদের প্রচেষ্টা হলো গরিব মানুষের ক্ষমতায়ন। চার দশক আগে দেশেরব্যাঙ্কগুলি রাষ্ট্রায়ত্ত্বকরণ হয়েছিল। কিন্তু কয়েক বছর আগে পর্যন্ত সেসবব্যাঙ্কের দরজা গরিব মানুষের জন্য উন্মুক্ত ছিল না। এই গরিবদের জন্যই ব্যাঙ্করাষ্ট্রায়ত্ত্বকরণ করা হয়েছিল। কিন্তু ৩০ কোটিরও বেশি মানুষ দরজায় পা রাখতে পারেনি।
স্বাধীনতার ৭০ বছর পর আপনারা আমাদের কাঁধে শাসন ক্ষমতা তুলে দিলেআমরা ঠিক করলাম যে দেশের গরিবদেরও আর্থিক উন্নয়ন যাত্রার মুখ্য ধারায় স্হান দিতেহবে। আর আমরা প্রধানমন্ত্রী জন-ধন যোজনা শুরু করি। এর মাধ্যমে ইতিমধ্যেই দেশের ৩২কোটি দরিদ্র মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। ভাই ও বোনেরা, এই ব্যাঙ্কঅ্যাকাউন্ট খোলার সময় আমরা বলেছিলাম যে তাঁদের এক টাকাও জমা করতে হবে না। জিরোব্যালেন্স অ্যাকাউন্ট খোলা হবে। কিন্তু আমার দেশের গরিবরা যতই গরিব হন না কেনতাদের মন অনেক ধনী। আমরা এমন অনেক ধনী মানুষকে দেখেছি যাদের মন অত্যন্ত গরিব।কিন্তু আমার দেশের গরিব মানুষদের মনের ঐশ্বর্য দেখুন, জিরো ব্যালেন্স অ্যাকাউন্টখোলার কথা বলা হলেও ঐ গরিব মানুষেরা প্রধানমন্ত্রী জন-ধন যোজনার মাধ্যমে ইতিমধ্যেই৭২ হাজার কোটি টাকা তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করেছেন। ধনীরা ব্যাঙ্ক থেকেটাকা বের করতে ব্যস্ত। আর আমার দেশের স ৎ , গরিব মনুষরা তাঁদের ব্যাঙ্কঅ্যাকাউন্টে টাকা জমা করছেন। আমরা এভাবেই দারিদ্রের বিরুদ্ধ লড়াই জারি রেখেছি।
ভাই ও বোনেরা, আপনারা জানেন আগে রান্নার গ্যাসের সংযোগ পেতে হলেকতো নেতার পিছনে পিছনে ঘুরতে হতো। প্রত্যেক সাংসদ ২৫টি করে কুপন পেতেন। এক বছরেতাঁরা ২৫টি পরিবারকে গ্যাস সংযোগ দিয়ে খুশি করতে পারতেন। আর এমন অনেক সাংসদের খবরওআমরা পেয়েছি যাঁরা সেই কুপনগুলি কালোবাজারে বিক্রি করে দিতেন।
ভাই ও বোনেরা, আজকের দিনেও কি আমার গরিব মায়েরা কাঠের উনুনজ্বালিয়ে ধোঁয়ায় চোখ লাল করে রান্না করবেন ? এভাবেইকি গরিবের কল্যাণ হবে ? যে মা-বোনেরা কাঠ জ্বালিয়ে ধোঁয়ায়চোখ লাল করে রান্না করেন, একদিনে তাঁদের শরীরে ৪০০টি সিগারেটের ধোঁয়া প্রবেশ করে।বাড়ির বাচ্চাদের শরীরও সেই ধোঁয়া ঢুকে তাদের নানা রোগের শিকার করে তোলো।
ভাই ও বোনেরা, শুধু স্লোগান দিয়ে বড় বড় কথা বলে গবিরদের ভালোকরা যাবে না। তাদের জীবনে পরিবর্তন আনতে আমরা উজ্জ্বলা যোজনার মাধ্যমে তাঁদেরবাড়িতে বিনা পয়সায় গ্যাসের উনুন ও গ্যাস সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এভাবেইতিমধ্যেই ৩ কোটি ৩০ লক্ষ পরিবারের কাছে রান্নার গ্যাস সংযোগ পৌঁছে দিয়ে তাদেরকেকাঠের উনুন ও ধোঁয়া থেকে মুক্তি দিয়েছি। আপনারা আমাকে বলুন এখন সেই মায়েরা যখন রোজধোঁয়াহীন পরিবেশে গ্যাসের উনুনে রান্না করেন, তখন তাঁরা নরেন্দ্র মোদীকে আর্শিবাদকরেন কি না ! সেই মায়েরা আমাকে রক্ষা করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধথাকবেন কি না ? কারণতারা জানেন যে দারিদ্রের বিরুদ্ধে লড়াই করার এটাই সঠিক পথ।
ভাই ও বোনেরা, স্বাধীনতার ৭০ বছর পরও এদেশের ১৮ হাজার গ্রামেবিদ্যু ৎ ছিল না। এই একবিংশ শতাব্দীতে তাঁরা সন্ধ্যার পর অষ্টাদশ শতাব্দীর মতোঅন্ধকার জীবন-যাপনে বাধ্য ছিলেন। তাঁদের মনে প্রশ্ন উঠতো একেই কি বলে স্বাধীনতা ? একেই কি বলে গণতন্ত্র ? আমরাই বোতাম টিপে প্রতিনিধি পাঠিয়ে সরকার গঠন করি। স্বাধীনতার ৭০ বছর পরও সেইসরকার আমার গ্রামে বিদ্যু ৎ পৌঁছে দিতে পারে না ? ভাই ও বোনেরা, সেই ১৮ হাজার গ্রামে বিদ্যু ৎ পৌঁছানোর জন্য আমি এক হাজার দিন সময় নিয়েছিলাম।ইতিমধ্যেই ১৬ হাজার গ্রামে বিদ্যু ৎ পৌঁছে গিয়েছে। সেসবগ্রামের মানুষ এতদিনে একবিংশ শতাব্দীর জীবন-যাপনে সুযোগ পাচ্ছেন।
স্বাধীনতার৭০ বছর পরও চার কোটিরও বেশি পরিবারে বিদ্যু ৎ সংযোগ নেই। আমরা তাঁদেরবাড়িতে বিদ্যু ৎ পৌঁছে দেওয়ার কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। মহাত্মাগান্ধীর সার্ধশত জন্মবর্ষের আগেই ঐ চার কোটি পরিবারে বিনা মূল্যে বিদ্যু ৎ সংযোগ পৌঁছে দেওয়া হবে।তাঁদের ছেলে-মেয়েরা বিদ্যু তের আলোয় পড়াশোনা করতে পারবেন। দারিদ্রের বিরুদ্ধে লড়তেহলে এভাবেই গরিবদের ক্ষমতায়ন করতে হয়। আমরা এ রকমই অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি।
ভাইও বোনেরা, এই তৈল শোধনাগার-ও এখানকার ভাগ্য বদলে দেবে। এখানকার আর্থ-সামাজিকচিত্রটাই বদলে যাবে। এই মরুভূমিতে যখন এতোবড়ো শিল্প চালু হবে তখন কল্পনা করতেপারেন কতো কতো মানুষের কর্মসংস্হান হবে। শুধু যে তৈল শোধনাগারের চার দেওয়ালেরমধ্যে কর্মসংস্হান হবে এমনটি নয়। তার বাইরেও একটি সমর্থনকারী ছোট ছোট শিল্প-শৃঙ্খলাচালু হবে। এতো বড়ো শিল্পোদ্যোগের জন্য পরিকাঠামো চাই। জল, বিদ্যু ৎ, গ্যাস পৌঁছাতে হবে,অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক সংযোগ করতে হবে। এভাবেই গোটা এলাকার আর্থিক মানদন্ডপরিবর্তিত হবে।
আর যখনএ ধরণের মানুষেরা আসবেন, বাবুদের ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার উপযোগী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও নিজে থেকে গড়ে উঠবে। সারা দেশ থেকে অনেক মানুষ যেমন আসবেন, তেমনি রাজস্হানেরবিভিন্ন প্রান্তের নবীন প্রজন্মের মানুষদের কর্মসংস্হান হবে। উদয়পুর, বাঁসোয়ারা,ভরতপুর, কোটা, আলোয়ার, আজমের- সারা রাজ্য থেকেই কর্মীরা আসবেন। তাঁদের স্বাস্হ্যপরিষেবা প্রদানের জন্য এখানে যে উন্নত আরোগ্য ব্যবস্হা গড়ে উঠবে তা গোটা এলাকারমানুষের কাছে উন্নত স্বাস্হ্য পরিষেবা এনে দেবে।
সেইজন্য ভাই ও বোনেরা, আপনারা কল্পনা করতে আগামী ৫ বছরে এই অঞ্চলেকতো বড়ো পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। আজ আমি এমন একটি কর্মসূচি উদ্বোধন করতে এসেছি যাআমার জন্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে লোকসানের কাজ। বিগত সরকার যদি এই কাজটা করেযেতেন, তাহলে রাজকোষের প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হতো।
কিন্তু এই বসুন্ধরাজি রাজ পরিবারের সংস্কারের পাশাপাশি রাজস্হানেরঅন্ন-জল গ্রহণ করার মারোয়াড়ি সংস্কার নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে যতটা সম্ভবআদায় করার চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। ভারতীয় জনতা পার্টির জমানাতেই এটা সম্ভব যখন একজনমুখ্যমন্ত্রী নিজের রাজ্যের হিতে, নিজের দলের শাসনাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধেলড়াই করেন আর তিনি যা চান সেটা আদায় করে ছাড়েন।
আমি এ জন্য বসুন্ধরাজিকে শুভেচ্ছা জানাই। তিনি রাজস্হানের অর্থসাশ্রয় করেছেন আর কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প কি ভাবে সুচারু রূপে বাস্তবায়িত হয়সেই পরিকল্পনাতেও অংশগ্রহণ করেছেন। পরিণামস্বরূপ বসুন্ধরাজি এবং ধর্মেন্দ্রজিকাগজে ঝুলে থাকা এই প্রকল্পকে আজ মাটিতে নামিয়ে আনার ক্ষেত্রে সাফল্য পেয়েছেন। আমিআপনাদের দু জনকেই শুভেচ্ছা জানাই। রাজস্হানকে শুভেচ্ছা জানাই, এখানে উপস্হিত সকলকেঅনেক অনেক শুভ কামনা জানাই।
আপনারা আমার সঙ্গে সম্পূর্ণ জোর দিয়ে বলুন- ভারত মাতা কি- জয় !
বাঢ়মের-এর মাটি থেকে দেশপ্রাণশক্তি পাবে এই তৈল শোধনাগার দেশের প্রাণশক্তির প্রতিনিধিত্ব করবে আর সেইপ্রাণশক্তি এখান থেকে দেশের প্রত্যেক প্রান্তে পৌঁছে যাবে এই শুভ কামনা জানিয়েআপনাদের সকলকে-খম্মা ঘণী !