নমস্কার। আমার প্রিয় বাংলার ভাই ও বোনেরা! ইংরাজী নববর্ষের আন্তরিক শুভকামনা এবং আসন্ন মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে আপনাদের শুভেচ্ছা।
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল শ্রদ্ধেয় জগদীপ ধনকরজী, আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদের সহযোগী মনসুখ মান্ডভিয়াজী, এখানে উপস্থিত ভারত সরকারের অন্যান্য মন্ত্রিগণ, সাংসদগণ এবং বিপুল সংখ্যায় আগত আমার পশ্চিমবঙ্গের ভাই ও বোনেরা।
মা গঙ্গার সান্নিধ্যে গঙ্গাসাগরের কাছে দেশের জল শক্তির এই ঐতিহাসিক প্রতীকে এই সমারোহে অংশগ্রহণ করা আমাদের সকলের জন্য এক অনন্য সৌভাগ্যের বিষয়। আজকের এই দিন কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট এবং তার সঙ্গে যুক্ত সকলের জন্য যাঁরা এই সংস্থায় আগে কাজ করেছেন, সেই বন্ধুদের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। ভারতে বন্দর স্থাপনা উন্নয়নকে নতুন প্রাণশক্তি যোগাতে এরচেয়ে বড় কোনও উপলক্ষে হতে পারে না। প্রতিষ্ঠার দেড়শো বছরে প্রবেশ করার জন্য আমি কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত বন্ধুদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা জানাই।
বন্ধুগণ, কিছুক্ষণ আগে আজ এখানে এই মুহূর্তের সাক্ষী হিসাবে ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়েছে। পাশাপাশি, এই ট্রাস্টের কর্মচারী এবং কয়েক হাজার অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীর পেনশনের জন্য ৫০১ কোটি টাকার একটি চেক-ও হস্তান্তর করা হয়েছে। বিশেষ করে, শতবর্ষাধিক আয়ুর প্রবীণ অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের সংবর্ধনা প্রদানের সৌভাগ্য আমার হয়েছে। কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের মাধ্যমে দেশ সেবা করে যাচ্ছেন এরকম সমস্ত মহানুভব এবং তাঁদের পরিবারবর্গকে আমি প্রণাম জানাই এবং তাঁদের উন্নত ভবিষ্যৎ কামনা করি।
বন্ধুগণ, এই বন্দরের সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণের জন্য আজ কয়েকশো কোটি টাকার পরিকাঠামো প্রকল্পের লোকার্পণ ও শিলান্যাস করা হয়েছে। আদিবাসী কন্যাদের শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য ছাত্রাবাস ও দক্ষতা উন্নয়ন কেন্দ্র নির্মাণেরও শিলান্যাস করা হয়েছে। উন্নয়নের এই সকল পরিষেবার জন্য আমি পশ্চিমবঙ্গের সকল নাগরিককে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
বন্ধুগণ, কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট কেবলই জাহাজ আসা-যাওয়ার বন্দর নয়, এটি তার সঙ্গে একটি সম্পূর্ণ ইতিহাসেরও সাক্ষী। এই বন্দর ভারতকে বিদেশি শাসকের কবল থেকে স্বাধীনতা পেতে দেখেছে। সত্যাগ্রহ দেখে স্বচ্ছাগ্রহ পর্যন্ত এই বন্দর দেশকে পরিবর্তিত হতে দেখেছে। এই বন্দর নিছকই পণ্যবাহকদের স্থান নয়, দেশ ও বিশ্বে নিজেদের অস্তিত্ব প্রকাশ করা জ্ঞানবাহকদের চরণও এই বন্দরে পড়েছে। অনেক মণীষী বহুবার এখান থেকে বহির্বিশ্বে নিজেদের সফর শুরু করেছেন। একদিক থেকে কলকাতা বন্দর ভারতের শিল্পোদ্যোগ, আধ্যাত্মিক ও আত্মনির্ভরতার আকাঙ্খার জীবন্ত প্রতীক। এই প্রেক্ষিতে যখন এই বন্দর দেড়শো বছরে পা রাখছে, তখন একে নতুন ভারত নির্মাণেরও একটি প্রাণবন্ত প্রতীক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।
পশ্চিমবঙ্গ তথা দেশের এই ভাবনাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের নাম, ভারতের শিল্পোদ্যোগের প্রাণপুরুষ বাংলার বিকাশের স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকা এবং ‘এক দেশ, এক আইন’ – এর জন্য আত্মত্যাগী ডঃ শ্যামা প্রসাদ মুখার্জীর নামে নামাঙ্কিত করার ঘোষণা করছি। এখন থেকে এই বন্দর ডঃ শ্যামা প্রসাদ মুখার্জী পোর্ট নামে জানা যাবে।
বন্ধুগণ, বাংলার সুপুত্র ডঃ মুখার্জী দেশের শিল্পোদ্যোগের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ কারখানা, হিন্দুস্থান এয়ারক্র্যাফট্ কারখানা, সিন্দ্রি সার কারখানা এবং দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের মতো অনেক বড় প্রকল্পের উন্নয়নে ডঃ শ্যামা প্রসাদ মুখার্জীর অনেক বড় অবদান রয়েছে। আজ এই উপলক্ষে আমি বাবাসাহেব আম্বেদকরকেও স্মরণ করছি। তাঁকেও প্রণাম জানাই। ডঃ মুখার্জি ও বাবাসাহেব আম্বেদকর উভয়ই স্বাধীনোত্তর ভারতের জন্য নতুন নতুন নীতি প্রণয়ন করেছেন। নতুন দিক-নির্দেশ করেছেন।
ডঃ মুখার্জী রচিত প্রথম শিল্পোদ্যোগ নীতিতে দেশের জলসম্পদের সঠিক ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল। তেমনই, বাবাসাহেব দেশের প্রথম জলসম্পদ নীতি এবং শ্রমিক আইন রচনার সময় নিজের অভিজ্ঞতা প্রয়োগ করেছেন। দেশের নদী উপত্যকা পরিকল্পনাগুলি, বাঁধগুলি এখানে বন্দর নির্মাণের কাজ ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে এই দুই মহান সুপুত্রের অবদান রয়েছে। এই দুই ব্যক্তিত্ব দেশের সম্পদগুলির শক্তি বুঝেছিলেন, সেগুলিকে দেশের প্রয়োজন অনুসারে ব্যবহার করার ওপর জোর দিয়েছিলেন।
এই কলকাতাতেই ১৯৪৪ সালে নতুন জল নীতি নিয়ে আয়োজিত সম্মেলনে বাবাসাহেব বলেছিলেন যে, ভারতের জলপথ নীতি ব্যাপক হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। এতে সেচ, বিদ্যুৎ ও পরিবহণের মতো প্রত্যেক বিষয়ের অন্তর্ভুক্তি হওয়া উচিৎ। কিন্তু এটা দেশের দুর্ভাগ্য যে, সরকার থেকে ডঃ মুখার্জী এবং বাবাসাহেব সরে যাওয়ার পর তাঁদের পরামর্শগুলিকে যতটা গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন ছিল, ততটা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
বন্ধুগণ, ভারতের বিশাল সমুদ্রসীমা প্রায় ৭ হাজার ৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ। ভারতকে বিশ্বে সমুদ্রতটের সঙ্গে যুক্ত থাকা বড় শক্তি বলে মানা হয়। স্থলবন্দী দেশগুলি কখনও কখনও নিজেদের অসহায় বোধ করে। কিন্তু প্রাচীনকাল থেকেই এই সুবিস্তীর্ণ তটরেখা ভারতের বড় শক্তি। গুজরাটের লোথাল বন্দর থেকে শুরু করে কলকাতা বন্দর পর্যন্ত যদি দেখি, এত দীর্ঘ তটরেখার মাধ্যমে গোটা বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্য হতো আর সভ্যতা, সংস্কৃতির প্রসারও হতো। ২০১৪সালের পর ভারতের এই শক্তিকে আবার শক্তিশালী করার জন্যে নতুনভাবে ভাবা হয়েছে, নতুন প্রাণশক্তি নিয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে।
বন্ধুগণ, আমাদের সরকার এটা মনে করে যে ভারতের বন্দরগুলি ভারতের সমৃদ্ধির প্রবেশদ্বার। সেজন্যে সরকার তটবর্তী অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং পরিকাঠামো আধুনিকীকরণের জন্যে সাগরমালা কর্মসূচী শুরু করেছে। সাগরমালা প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের বন্দরগুলির আধুনিকীকরণ এবং একটি নতুন বন্দর উন্নয়নের কাজ চলছে। সড়কপথ, রেলপথ, আন্তঃরাজ্য জলপথ এবং তটবর্তী পরিবহন ব্যবস্থাকে সংহত করা হচ্ছে।এই প্রকল্প তটবর্তী পরিবহন এর মাধ্যমে পণ্য পরিবহন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৬ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগে ৫৭৫টিরও বেশি প্রকল্প চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগে ২০০টিরও বেশি প্রকল্পের কাজ চলছে আর প্রায় ১২৫টিরও বেশি কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গেছে।
বন্ধুগণ, সরকার চায় যে পরিবহণের সম্পূর্ণ পরিকাঠামো আধুনিক এবং সংহত হোক। আমাদের দেশে পরিবহণ নীতিতে যে ভারসাম্যহীনতা ছিল, সেটাকেও দূর করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে পূর্ব ভারত এবং উত্তর-পূর্ব ভারতকে অন্তর্দেশীয় জলপথ বা নদীপথ-ভিত্তিক প্রকল্পগুলির মাধ্যমে যুক্ত করার কাজ চলছে। আগামীদিনে জলশক্তির মাধ্যমে গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতকে যুক্ত করার নেটওয়ার্ক ভারতের উন্নয়নে একটি সোনালী পৃষ্ঠারূপে উঠে আসতে চলেছে।
ভাই ও বোনেরা, কলকাতা তো জলপথ উন্নয়নের ক্ষেত্রে অত্যন্ত ভাগ্যবান। কলকাতা বন্দর নদীতটে অবস্থিত দেশের সমুদ্র বন্দরগুলির অন্যতম। এভাবে দেশের ভেতর এবং বাইরে জলপথের একটি সঙ্গমস্থলও বটে।
আপনারা সবাই খুব ভালোভাবেই জানেন যে হলদিয়া ও বেনারসের মধ্যে গঙ্গা নদীপথে জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। আর আমি কাশীর সাংসদ রূপে এর সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই যুক্ত হয়ে পড়েছি। দেশের এই প্রথম আধুনিক আন্তর্দেশীয় জলপথকে সম্পূর্ণভাবে আধুনিকীকরণের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।
এ বছর হলদিয়ায় মাল্টি-মোডাল টার্মিনাল এবং ফরাক্কায় নেভিগেশনাল লক গড়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে গঙ্গায় যাতে বড় জাহাজ চলতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় গভীরতা বৃদ্ধির কাজ এগিয়ে চলেছে। পাশাপাশি, গঙ্গাকে অসমের পাণ্ডুতে ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গে যুক্ত করে অন্তর্দেশীয় জলপথ-২-এ পণ্যবাহী জলযান চালু করা হয়েছে। নদী জলপথ পরিষেবা চালুর হওয়ায় কলকাতা বন্দর পূর্ব ভারতের শিল্পোদ্যোগের কেন্দ্রগুলির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পাশাপাশি, নেপাল, বাংলাদেশ, ভুটান এবং মায়ানমারের মতো দেশগুলির সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আরও সহজ হয়েছে।
বন্ধুগণ, দেশের বন্দরগুলিতে আধুনিক পরিষেবা নির্মাণ, যোগাযোগের উন্নত ব্যবস্থা, ব্যবস্থাপনায় সংস্কারের মতো বেশ কিছু পদক্ষেপের ফলে কার্গো ক্লিয়ারেন্স এবং পরিবহণ ব্যবস্থায় সংশ্লিষ্ট সময় অনেক হ্রাস পেয়েছে।
টার্ন অ্যারাউন্ড টাইম বিগত পাঁচ বছরে কমতে কমতে প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে। এটা অন্যতম বড় কারণ যে জন্য ‘ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস’-এর র্যাঙ্কিং-এ ভারত ৭৯ ধাপ উন্নতি করেছে।
বন্ধুগণ, আগামীদিনে জলপথ যোগাযোগ ব্যবস্থার বিস্তারের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ অনেক উপকৃত হবে। কলকাতা লাভবান হবে। এ রাজ্যের কৃষক, শিল্পোদ্যোগী এবং শ্রমিকদের লাভ হবে। এখানকার মৎস্যজীবী ভাই-বোনেদের লাভ হবে।
আমার মৎস্যজীবী ভাই-বোনেরা যাতে জলসম্পদের সম্পূর্ণ ব্যবহার করতে পারেন সেদিকে লক্ষ্য রেখে সরকার ‘নীল বিপ্লব’ প্রকল্প চালু করেছে। এর মাধ্যমে তাঁদের এক্ষেত্রে মূল্য সংযোজন ছাড়াও ট্রলারগুলির আধুনিকীকরণে সাহায্য করা হচ্ছে। কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে মৎস্যজীবীদের এখন ব্যাঙ্ক থেকে সস্তা ও সহজ ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একদিকে আমরা স্বতন্ত্র জলশক্তি মন্ত্রক গড়ে তুলেছি তাকে শক্তি প্রদানের জন্য এবং তার মাধ্যমে অধিকতম লাভের জন্য স্বতন্ত্র মৎস্যপালন মন্ত্রকও গড়ে তোলা হয়েছে। অর্থাৎ, উন্নয়নকে আমরা কোথায় নিয়ে যেতে চাই, কোন লক্ষ্যে নিয়ে যেতে চাই, তার সঙ্কেতও এই মন্ত্রকগুলি গঠনের মধ্যে সমাহিত।
বন্ধুগণ, বন্দর স্থাপনা উন্নয়নের জন্য একটি ব্যাপক বাস্তু ব্যবস্থা বিকশিত করে। এটি পর্যটন উন্নয়নে জলসম্পদের ব্যবহার, সামুদ্রিক পর্যটন, নদী জল পর্যটনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আজকাল মানুষ ক্রুজে চেপে বিদেশে চলে যায়। এসব ব্যবস্থা আমাদের দেশে সহজেই বিকশিত করা সম্ভব। এটা অত্যন্ত আনন্দের কথা যে গতকালই পশ্চিমবঙ্গে কলা ও সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত চারটি ঐতিহ্যশালী ভবন সংস্কারের পর সেগুলি জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করার সৌভাগ্য হয়েছে। আর আজ এখানে জল পর্যটনের বড় প্রকল্প চালু হয়েছে। রিভার ফ্রন্ট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গে পর্যটন শিল্প পুনরুজ্জীবিত হতে চলেছে। এখানে ৩২ একর জমির ওপর যখন গঙ্গা দর্শনের জন্য আরামদায়ক পরিষেবা গড়ে উঠবে, তখন এর মাধ্যমেও পর্যটকরা লাভবান হবেন।
ভাই ও বোনেরা, শুধু কলকাতাতেই নয়, গোটা দেশের বন্দরগুলির সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন শহর এবং ক্লাস্টারগুলিতে অ্যাকোরিয়াম, ওয়াটার পার্ক, সমুদ্র সংগ্রহশালা, ক্রুজ এবং জল ক্রীড়ার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় সরকার ক্রুজ-ভিত্তিক পর্যটনকে উৎসাহ যোগাচ্ছে। দেশে ক্রুজ জাহাজের সংখ্যা এখন ১৫০-এর কাছাকাছি। আমরা এই সংখ্যাকে এক হাজারে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে চলেছি। এই বিস্তারের মাধ্যমে শুধু যে পশ্চিমবঙ্গ উপকৃত হবে তাই নয়, বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত দ্বীপগুলিও উপকৃত হবে।
বন্ধুগণ, পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নের জন্যও কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে যথাসম্ভব প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে বিশেষ করে, দরিদ্র, দলিত, বঞ্চিত, শোষিত এবং পিছিয়ে পড়াদের উন্নয়নের জন্য অনেক ঐকান্তিক প্রয়াস নেওয়া হচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ৯০ লক্ষ গরিব বোনকে উজ্জলা যোজনার মাধ্যমে রান্নার গ্যাস সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ লক্ষেরও বেশি বোনেরা দলিত এবং আদিবাসী পরিবারের মানুষ।
রাজ্য সরকার যখনই আয়ুষ্মান ভারত যোজনা এবং পিএম কিষাণ সম্মান নিধির জন্য স্বীকৃতি দেবে; আমি জানি না যে দেবে কি দেবে না, কিন্তু যদি দেয়, তাহলে এখানকার মানুষও এই প্রকল্পগুলির মাধ্যমে উপকৃত হতে শুরু করবেন।
আর এমনিতে আপনাদের বলি যে আয়ুষ্মান ভারতের মাধ্যমে দেশের প্রায় ৭৫ লক্ষ গরিব রোগী ইতিমধ্যেই বিনামূল্যে চিকিৎসায় কঠিন অসুখ থেকে মুক্তি পেয়েছেন। আর আপনারা কল্পনা করতে পারেন, যখন গরিবরা অসুখের সঙ্গে লড়াই করে তখন তাঁদের মনে বেঁচে থাকার আশা চলে যায়। আর যখন গরিব মানুষ রোগ থেকে বাঁচার উপায় পান, তখন তাঁদের আশীর্বাদ অমূল্য হয়। আজ আমি শান্তিতে ঘুমোতে পারি কারণ দেশে এরকম অসংখ্য গরিব পরিবার লাগাতার আমাকে আশীর্বাদ করতে থাকেন।
এভাবেই, পিএম কিষাণ সম্মান নিধির মাধ্যমে দেশের ৮ কোটিরও বেশি কৃষক পরিবারের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রায় ৪৩ হাজার কোটি টাকা সরাসরি ডায়রেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফারের মাধ্যমে জমা করা হয়েছে। কোন দালাল নেই, কোন কাটমানি নয়, কোন সিন্ডিকেট নয়; যখন টাকা এভাবে সরাসরি পৌঁছয়, কাটমানি পাওয়া যায় না, সিন্ডিকেট চলে না, তখন কে এই প্রকল্প চালু করবে?
দেশের ৮ কোটি কৃষকের এত বড় সাহায্য, কিন্তু আমার হৃদয়ে সব সময়েই কষ্ট থেকে যাবে, আমি চাইব, ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করব যে নীতি-নির্ধারকদের সৎবুদ্ধি দিন। আর গরিবদের অসুস্থতার সময় সাহায্যের জন্য আয়ুষ্মান ভারত যোজনা এবং কৃষকদের জীবনে সুখ ও শান্তির পথ স্থায়ী করার জন্য প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধির দ্বারা আমার বাংলার গরিব কৃষকরা উপকৃত হোক সেটাই চাই। আমি আজকের বাংলার জনগণের মেজাজ খুব ভালোভাবেই জানি। বাংলার জনগণের এমন শক্তি রয়েছে যে এখন আর তাঁদেরকে এই প্রকল্পগুলির সুফল থেকে দীর্ঘদিন বঞ্চিত রাখা যাবে না।
বন্ধুগণ, পশ্চিমবঙ্গের অনেক বীর সুপুত্র ও সুকন্যা গ্রাম ও গরিবের জন্য যে আওয়াজ তুলেছেন, তাঁদের উন্নয়ন আমাদের অগ্রাধিকার থাকা উচিৎ। এটা কোন একজন ব্যক্তি, কোন একটি সরকারের দায়িত্ব নয়। সমস্ত ভারতবর্ষের সামগ্রিক সঙ্কল্প, সামগ্রিক দায়িত্বও বটে এবং সকলকে একত্রে কাজ করে যেতে হবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে একবিংশ শতাব্দীর নতুন দশকে বিশ্ব যখন একটি বৈভবশালী ভারতের জন্য প্রতীক্ষা করছে, তখন আমাদের সামগ্রিক প্রচেষ্টা বিশ্বকে কখনও নিরাশ করবে না। আমাদের এই প্রচেষ্টা অবশ্যই সফল হবে।
এই আত্মবিশ্বাস নিয়ে ১৩০ কোটি জনগণের সঙ্কল্পশক্তি এবং তার সামর্থ্যে অপ্রতীম শ্রদ্ধা থাকার ফলে আমি ভারতের উজ্জ্বল ভবিষ্যতকে নিজের চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি।
আর এই বিশ্বাস নিয়েই আসুন আমরা কর্তব্যের পথে এগিয়ে যাই, আপনারাও নিজেদের কর্তব্য পালনের জন্য এগিয়ে আসুন। ১৩০ কোটি ভারতবাসী যখন নিজেদের কর্তব্য পালন করেন তখন দেশ দেখতে দেখতে নতুন উচ্চতার পর উচ্চতা অতিক্রম করে।
এই বিশ্বাস নিয়ে আরেকবার কলকাতা পোর্টার ট্রাস্টের ১৫০ বছর উদযাপনের জন্য এবং বিবিধ উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে আমি আপনাদের সবাইকে, গোটা পশ্চিমবঙ্গকে, এখানকার মহান ঐতিহ্যকে প্রণাম জানিয়ে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
আমার সঙ্গে এই মাটি, প্রেরণার মাটি, দেশের সামর্থ্য জাগ্রত করার মাটি থেকে সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে আমাদের স্বপ্নগুলিকে সংহত করে আমরা জয়ধ্বনি দেব। দু’হাত ওপরে তুলে, মুষ্টিবদ্ধ করে সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে বলব –
ভারতমাতা কি জয়
ভারতমাতা কি জয়
ভারতমাতা কি জয়
অনেক অনেক ধন্যবাদ।