ভারত মাতা কি জয়! ভারত মাতা কি জয়! ভারত মাতা কি জয়! উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল শ্রদ্ধেয় শ্রী রাম নায়েক, জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথজি, আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার মাননীয় রেলমন্ত্রী শ্রী পীযূষ গোয়েলজি, সংসদ সদস্য শ্রী মহেন্দ্র পাণ্ডেজি, উত্তরপ্রদেশ মন্ত্রী পরিষদের মাননীয় মন্ত্রীগণ, এখানে উপস্থিত বিধায়কগণ, বিধানসভার অধ্যক্ষ মহোদয় এবং বিপুল সংখ্যায় উপস্থিত আমার রায়বেরিলির প্রিয় ভাই ও বোনেরা।
আজ আমি সেই মাটিতে এসেছি যেখানে আধ্যাত্ম থেকে স্বাধীনতা সংগ্রাম, সাহিত্য থেকে রাজনীতি – সকল ক্ষেত্রে দেশকে দিক নির্দেশকারী মহাপুরুষরা জন্মগ্রহণ করেছেন। মহাঋষি জমদগ্নি সহ অনেক মুনি-ঋষির তপোভূমি, ভীরা পাসি, রাণা বেণীমাধব বক্স সিং-এর বলীদানভূমি, জায়সি আর মহাবীর প্রসাদ দ্বিবেদির মন কাড়া কবিতার সৃষ্টিভূমি। এই মাটি থেকেই পণ্ডিত আমোল শর্মা কৃষক আন্দোলন শুরু করেছিলেন। শ্রদ্ধেয় রাজনারায়ণের রাজনৈতিক জীবনের সূত্রপাতও এই ভূমি থেকেই। আমি রায়বেরিলির এই মহান পূণ্যভূমিকে সাদর প্রণাম জানাই।
বন্ধুগণ, এই গৌরবময় ইতিহাস, এই অঞ্চলের উন্নয়নের প্রতি উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকার সমর্পিতপ্রাণ। এই ভাবনা থেকেই একটু আগেই এখানে সড়কপথ, গৃহনির্মাণ, মেডিকেল কলেজ ইত্যাদি প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পসমূহের উদ্বোধন কিংবা শিলান্যাস করা হয়েছে। এই সকল পরিষেবার জন্য আমি আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
বন্ধুগণ, এখানে আসার আগে কাছেই একটি আধুনিক রেল কোচ ফ্যাক্টরিতে এ বছরে নির্মিত ৯০০টি কামরাকে সবুজ পতাকা দেখানোর সৌভাগ্য হয়েছে। যে গতিতে তারা এই কাজ সম্পন্ন করেছে, পূর্ববর্তী সরকারের ঢিমেতেতাল কর্মসংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে এই সাফল্য সত্যিই প্রশংসনীয়। একবার ভাবুন, ২০০৭ সালে এই কোচ কারখানা মঞ্জুর হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল, বছরে ১ হাজারটা কোচ নির্মাণ। ২০১০ সালে এই কারখানা চালু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তারপর চার বছর কাপুরথালা থেকে কোচ এনে সেগুলিতে প্যাচ লাগানো এবং রং করার কাজ করা হয়েছে। নতুন কোচ তৈরি হয়নি। মেশিনগুলি অকেজো পড়ে থাকায় ২০১৪-য় আমরা যখন সরকারের দায়িত্ব নিলাম তখন মাত্র ৩ শতাংশ মেশিন উৎপাদনক্ষম ছিল।
আমরা এই পরিস্থিতি বদলে পরবর্তী তিন মাসে রায়বেরিলির এই কারখানা থেকেই কোচ উৎপাদন শুরু করালাম। এখন সমস্ত মেশিন তার পূর্ণ ক্ষমতা নিয়ে কাজ করছে। নতুন এবং আধুনিক মেশিন লাগানোর কাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। আমাদের কর্মসংস্কৃতির ফলস্বরূপ এই ৯০০টি কোচ তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে বিগত ১ বছরে এই ৭১১টি। আমরা আগামী ১ বছরে ১,৪০০-রও বেশি কোচ নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছি।
বন্ধুগণ, যেভাবে এই কারখানায় আধুনিকীকরণের কাজ হচ্ছে, আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে এখান থেকে বছরে ৩ হাজারেরও বেশি কোচ নির্মিত হবে। আর আমাদের চেষ্টা থাকবে বছরে ৫ হাজার কোচ নির্মাণের উপযোগী পরিকাঠামো গড়ে তোলা। ততদিনে রায়বেরিলির এই কোচ নির্মাণ কারখানা বিশ্বের সর্ববৃহৎ রেল কোচ নির্মাণ কারখানা হয়ে উঠবে। ভাই ও বোনেরা, আমি ছোট করে ভাবার কথা ভাবতেই পারি না। অদূর ভবিষ্যতে এই কারখানা থেকে সারা দেশের জন্য প্রয়োজনীয় মেট্রো রেল এবং সেমি হাইস্পিড ট্রেনগুলির উপযোগী কোচ তৈরি হবে। অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে আধুনিক এবং হালকা ওজনের মজবুত কোচ নির্মিত হবে।
ভাই ও বোনেরা, এই বিস্তারের মাধ্যমে শুধু কোচ ফ্যাক্টরিই নয়, এখানকার সাধারণ মানুষের জীবনেও অনেক পরিবর্তন আসবে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। ২০১৪-র আগে এই কোচ কারখানার জন্য রায়বেরিলির স্থানীয় বাজার থেকে বছরে ১ কোটি টাকারও কম জিনিস কেনা হত। আর আপনারা শুনলে অবাক হবেন যে গত ১ বছরে আমাদের সরকার স্থানীয় বাজার থেকে এখন পর্যন্ত ১২৫ কোটি টাকার সরঞ্জাম কিনেছে। এই প্রকল্প বিস্তারিত হলে এই সরঞ্জাম কেনার পরিসংখ্যানও আকাশ ছোঁবে। আমাকে বলা হয়েছে যে আগামীদিনে রেল মন্ত্রক এবং উত্তরপ্রদেশ সরকার যৌথভাবে এখানে একটি রেল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক গড়ে তুলবে। এর মাধ্যমে রেল কারখানার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ প্রক্রিয়া সরল হবে আর এখানকার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ উপকৃত হবে।
বন্ধুগণ, আজ আরেকটি তথ্য আপনাদের জানাতে চাই, এই কারখানা নির্মাণের সময় পূর্ববর্তী সরকার ঘোষণা করেছিল যে, এখানে পাঁচ হাজার কর্মচারী নিয়োগ করা হবে। কিন্তু ২০১৪ সালে আমরা দায়িত্ব নেওয়ার আগে একজনকেও নিয়োগ করেনি। কপুরথলা থেকে আসা কর্মচারীরাই এখানে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর ইতিমধ্যে দুই হাজার নতুন কর্মচারী নিয়োগ করেছি। ২০১৪-র আগে অস্থায়ী কর্মচারী ছিল মাত্র ২০০, আর এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫০০। আজ আমি গর্বের সঙ্গে ব্লতে পারি যে রেল কোচ নির্মাণের ক্ষেত্রে রায়বেরিলি গ্লোবাল হাব হয়ে উঠতে চলেছে।
বন্ধুগণ, দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থা সুদৃঢ় করার জন্য রেল ছাড়াও মহাসড়ক পথ, আকাশপথ, জলপথ এবং আই-ওয়ে সকল ক্ষেত্রে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। একটু আগেই সাড়ে পাঁচশো কোটি টাকা বিনিয়োগে নির্মিত জাতীয় মহাসড়ক উদ্বোধন হল। এর ফলে, রায়বেরিলি, লালগঞ্জ থেকে ফতেপুর হয়ে সোজা বান্দা পৌঁছনো যাবে। প্রায় ১২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কপথ চিত্রকূট ধামে যাতায়াতের পথও সহজ করে তুলবে।
বন্ধুগণ, পরিকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি সরকার জনগণের স্বাস্থ্য উন্নয়নের ক্ষেত্রেও দায়বদ্ধ। আজ এখানে ৪২৫ কোটি টাকা বিনিয়োগে মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল এবং হস্টেলের উদ্বোধন কিংবা শিলান্যাস করা হয়েছে। মুন্সিগঞ্জে নির্মীয়মান এই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এইম্স-এর অংশ হিসেবে গড়ে উঠবে। রায়বেরিলি সহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলির মানুষ এর দ্বারা উপকৃত হবেন। ২০২২ সালের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার দেশের প্রত্যেক দরিদ্র পরিবারকে পাকা বাড়ি বানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। সেই বাড়িগুলিতে পানীয় জল, বিদ্যুৎ এবং রান্নার গ্যাসের সংযোগ থাকবে, আর অবশ্যই ‘ইজ্জত ঘর’ শৌচালয় থাকবে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মাধ্যমে ইতিমধ্যেই সারা দেশে ১ কোটি ২৫ লক্ষেরও বেশি গৃহ নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে, আর ইতিমধ্যেই ২৩ হাজারেরও বেশি সুবিধাভোগী গরিব মানুষের হাতে সেই বাড়িগুলির চাবিও তুলে দেওয়া হয়েছে। একটু আগেই আরও ৫০০টি নতুন ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করা হল।
ভাই ও বোনেরা, ১৯৭১ সালে আজকের দিনে ভারতের বীর সৈনিকরা আতঙ্ক, অত্যাচার এবং অরাজগতার প্রতীক বিদেশি শক্তিকে পরাজিত করেছিলেন। সেই যুদ্ধে যত সৈনিক অংশগ্রহণ করেছেন, শহীদ হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই উত্তরপ্রদেশের বীর সন্তান। আমি তাঁদের ১৩০ কোটি ভারতবাসীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানাই। সেনাবাহিনীর শৌর্য এবং সমর্পণের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আসুন আমরা সবাই একবার হাত উঁচু করে বলি ভারত মাতা কি জয়! ভারত মাতা কি জয়! ভারত মাতা কি জয়!
ভাই ও বোনেরা, ভারত মায়ের জয়গান গেয়ে আপনারা যেমন গর্ববোধ করেন, অনেকে তেমনই লজ্জা অনুভব করে। তারা আমাকে যতই গালি দিতে চান, গালি দিন। কিন্তু আমি জানতে চাই, দেশের নিরাপত্তা নিয়ে ছেলেখেলা করার অধিকার আপনাদের কে দিয়েছে?
ভাই ও বোনেরা, আজকে দেশের সামনে দুটি পক্ষ। একটি সত্যের ও নিরাপত্তার। এই সরকার পক্ষ চায় যে আমাদের সেনার শক্তি বৃদ্ধি হোক। আর অন্য পক্ষ দেশকে দুর্বল করে তুলতে চায়। আপনারাই বলুন ভাইরা, আমাদের দেশের সেনাবাহিনী শক্তিশালী হওয়া উচিৎ কি উচিৎ নয়। তাদের হাতে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র থাকা উচিৎ কি উচিৎ নয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আজ দেশবাসী দেখছে কংগ্রেস ও আমাদের অন্যান্য বিরোধী দলগুলি আমাদের সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী হতে দিতে চায় না। তাদের এই প্রচেষ্টাকে কোন কোন সমর্থন করছে, সেটাও দেশবাসী দেখছে। আমাদের দেশের নেতারা এমন কিছু বলছেন যার সমর্থনে পাকিস্তান হাততালি দিচ্ছে। এরকম কেন হচ্ছে?
বন্ধুগণ, রামচরিতমানসে একটি চৌপাই আছে। গোস্বামী তুলসীদাসজি লিখেছেন, রামচন্দ্র কারোর ব্যক্তিত্ব বোঝাতে বলতেন, “ঝুঠই লেনা, ঝুঠই দেনা, ঝুঠই ভোজন, ঝুঠ চবেনা”। অর্থাৎ, অনেকে মিথ্যা স্বীকার করে, অন্যকে দেয়, মিথ্যা ভোজন করে এবং মিছি মিছি চিবোতে থাকে। অনেকে এই চৌপাইকে নিজেদের জীবনের মূলমন্ত্র করে তুলেছেন। সেজন্য তাদের কাছে দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকও মিথ্যা, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মিথ্যা, বিমানবাহিনীর আধিকারিকরা মিথ্যা, ফ্রান্সের সরকার মিথ্যা, আর এখন তো দেশের সর্বোচ্চ আদালতকেও তাদের মিথ্যা বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু বন্ধুগণ, সত্যের কোন শৃঙ্গারের প্রয়োজন হয় না। মিথ্যার কোন প্রাণ থাকে না। আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়েছে, “জয়েৎ সত্যেন চানৃতম্” অর্থাৎ, সত্যবাদীতার মাধ্যমেই মিথ্যা বলার প্রবৃত্তি থেকে জয়লাভ করে।
আমি দেশবাসীকে স্পষ্টভাবে বলতে চাই যে, কংগ্রেস সরকারের ইতিহাস সেনার প্রতি কি ছিল? এই মনোবৃত্তিকে দেশ কখনও ক্ষমা করবে না। কার্গিল যুদ্ধের পর আমাদের বিমানবাহিনী আধুনিক যুদ্ধবিমানের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছিল। কিন্তু কার্গিল যুদ্ধের পর, অটলজির নেতৃত্বাধীন সরকারকে হারিয়ে কংগ্রেস ১০ বছর ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু বিমানবাহিনীকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। কেন? কার চাপে?
ভাই ও বোনেরা, সেনাবাহিনীর জন্য যুদ্ধ সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রে কংগ্রেসের ইতিহাস বফর্স কেলেঙ্কারি খ্যাত কোয়াত্রাকি মামা আর হেলিকপ্টার কেলেঙ্কারি খ্যাত আঙ্কেল ক্রিশ্চিয়ান মিশেলের দ্বারা কলঙ্কিত। আমরা দেখেছি যে এই অভিযুক্তদের বাঁচাতে কংগ্রেস কত তৎপরতার সঙ্গে আদালতে নিজেদের উকিলকে পাঠিয়ে দিয়েছিল। আমি কংগ্রেসের কাছে জানতে চাই যে আপনাদের এই অভিজ্ঞতা থেকেই কি আপনারা আদালতের প্রতি অবিশ্বাস সৃষ্টির আবহ গড়ে তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
ভাই ও বোনেরা, আমাদের জন্য সর্বদাই দল থেকে দেশ বড়। আর আমরা যতদিন বেঁচে থাকব, আমাদের আগামী প্রজন্মেরও এটাই মন্ত্র হবে। আজ আমি দেশবাসীকে বলতে চাই, দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে সেনাবাহিনীর প্রয়োজন, সৈনিকদের সম্মান – এই সকল ক্ষেত্রেই বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের একটিই অগ্রাধিকার, সেটি হল রাষ্ট্রহিত এবং জনহিত। এভাবেই আমরা লালিত-পালিত হয়েছি। এটাই আমাদের সরকারের সংস্কার।
আমরা সর্বদাই সৈনিকদের সুখ-সুবিধার কথা ভাবি। যাঁরা আমাদের জন্য জীবন বাজি রেখে সীমান্তে যান, তাঁদের মায়েদের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। যে বোন তাঁর দাদাকে সীমান্তে পাঠিয়েছে, যে স্ত্রী তাঁর স্বামীকে পাঠিয়েছে, যে সন্তান তার পিতাকে পাঠিয়েছে, সেই সমস্ত পরিবারবর্গের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। সেজন্য যত কড়া সিদ্ধান্তই নিতে হোক না কেন, আমরা কখনও এক পা-ও পিছোব না।
ভাই ও বোনেরা, সৈনিকদের নিরাপত্তা নিয়ে কংগ্রেসের মনোভাব কেমন ছিল তা বোঝাতে আমি একটি উদাহরণ দেব। ২০০৯ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনী ১ লক্ষ ৮৬ হাজার বুলেট প্রুফ জ্যাকেট চেয়েছিল। কিন্তু ২০১৪ সাল পর্যন্ত তাদের জন্য সেই বুলেট প্রুফ জ্যাকেট কেনা হয়নি। আমরা সরকারে আসার পর ২০১৬ সালে ৫০ হাজার বুলেট প্রুফ জ্যাকেট কিনে সেনাবাহিনীকে দিয়েছি, আর এ বছর এপ্রিলে তাঁদের প্রয়োজন অনুসারে বাকি বুলেট প্রুফ জ্যাকেট কেনার আদেশ দেওয়া হয়েছে। এই ১ লক্ষ ৮৬ হাজার বুলেট প্রুফ জ্যাকেট একটি ভারতীয় কোম্পানি নির্মাণ করছে।
ভাই ও বোনেরা, কংগ্রেসের পাপগুলি নিয়ে যদি বলতে শুরু করি তাহলে সপ্তাহের পর সপ্তাহ লেগে যাবে। ২০১৪ সালের পরও দেশে ক্ষমতায় থাকলে তেজস যুদ্ধবিমান নির্মাণ সম্ভব হত না। এর নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত প্রতি পদক্ষেপে তারা বাধা সৃষ্টি করে গেছে। অবশেষে, আমরা ক্ষমতায় এলে ২০১৬ সালের জুলাই মাসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে তেজসকে ৪৫ স্কোয়াড্রনে যুক্ত করা হবে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৮৩টি নতুন তেজস বিমান কেনার প্রস্তাব মঞ্জুর করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এই বিমান নির্মাণের ক্ষেত্রে এইচএএল-এর ক্ষমতা দ্বিগুণ করার জন্য গত বছর ১,৪০০ কোটি টাকা মঞ্জুর করা হয়েছে।
ভাই ও বোনেরা, স্বাধীনতার পর থেকেই কংগ্রেস সরকার যত যুদ্ধ সরঞ্জাম কিনেছে, সমস্ত ক্ষেত্রেই কোন বিদেশি মামা, কাকা, ভাগ্নে কিংবা ভাইপো জড়িত ছিল। সেজন্যই যখন স্বচ্ছতা এবং সততার মাধ্যমে কোন লেনদেন হয়, তখন কংগ্রেস ক্ষেপে যায়। একটি সুপরিকল্পিত রণনীতির মাধ্যমে তারা আক্রমণ হেনে সেনাবাহিনীকে দুর্বল করে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালায়।
বন্ধুগণ, কংগ্রেসের চোখে সেনাবাহিনীর মর্যাদা কতটা তা বোঝা যায় যখন তাদের নেতা সেনা প্রধানকে গুন্ডা বলতে পারেন। যারা সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন, নিজেদের সেনাবাহিনীর থেকেও শত্রুদের তথ্যকে বেশি ভরসা করেন, তাদের থেকে এর চেয়ে বেশি কি আশা করা যেতে পারে? অবসরপ্রাপ্ত সৈনিকদের ‘এক পদ এক পেনশন’ প্রদানের ক্ষেত্রেও চার দশক ধরে টালবাহানা করে অবশেষে মাত্র ৫০০ কোটি টাকার তহবিল তারা রেখে গিয়েছিল। আমাদের সরকার এই কাজ করতে গিয়ে অবসরপ্রাপ্ত সৈনিকদের ইতিমধ্যেই বকেয়া সহ কয়েক কিস্তিতে ১১ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে।
বন্ধুগণ, কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন সরকারগুলি সৈনিকদের যেমন অবহেলা করত, কৃষকদের তেমনই অবহেলা করত। স্বাধীনতার ৭০ বছর পর এই প্রথমবার এনডিএ সরকার কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার কথা ভেবেছে। কৃষকদের প্রত্যেকটি সমস্যা এবং ভবিষ্যতের প্রয়োজন বুঝে বীজ থেকে শুরু করে বাজার পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের সরকার নতুন নীতি প্রণয়ন করেছে এবং সেই নীতি বাস্তবায়িত করেছে। আমরা অত্যন্ত সততার সঙ্গে, অনেক পরিশ্রমের মাধ্যমে কৃষকদের কৃষি সংক্রান্ত সমস্ত সঙ্কট থেকে বের করে আনার চেষ্টা করেছি। কিন্তু দেশের কৃষকদের কংগ্রেসের ইতিহাস, তাদের প্রতারণার কথা কখনও ভোলা উচিৎ নয়। দশ বছর লাগাতার ক্ষমতায় থেকেও তারা কেন স্বামীনাথন কমিটির রিপোর্ট বাস্তবায়িত করেনি? কার চাপে করেনি? ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে তারা কেন পাথর চাপা দিয়ে রেখেছিল? আমি জানি এসব প্রশ্নের জবাব কংগ্রেস কখনও দিতে পারবে না।
ভাই ও বোনেরা, আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর ন্যূনতম সহায়ক মূল্য সংক্রান্ত স্বামীনাথন কমিটির রিপোর্ট বাস্তবায়িত করেছি। ইতিমধ্যেই খরিফ এবং রবির ২২টি ফসলের ক্ষেত্রে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য সুনিশ্চিত করা হয়েছে। শুধু এই একটি সিদ্ধান্তে দেশের কৃষকদের ৬০ হাজার কোটি টাকারও বেশি লাভ হয়েছে।
ভাই ও বোনেরা, আমি কংগ্রেসের কাছ থেকে জানতে চাই যে কাদের চাপে তারা ১০০ শতাংশ ইউরিয়াকে নিম কোটিং করায়নি। ইউরিয়ার অভাবে প্রতি বছর অসংখ্য কৃষক মিছি মিছি পুলিশের লাঠি খেত, আর কংগ্রেস সরকার তামাসা দেখত।
বন্ধুগণ, কংগ্রেস সরকারের সময় কৃষকদের ফসল বিমার জন্য ১৫ শতাংশেরও বেশি কিস্তি নেওয়া হত। বিমার টাকা প্রদানের ক্ষেত্রেও তছরূপ হত। ৩০ শতাংশ ফসলের লোকসান হলে কিংবা ৪০ শতাংশ হলে তাঁদেরকে যেভাবে প্রতারিত করা হত, সেই কেলেঙ্কারিগুলি এখন ইতিহাস। আজ ভিন্ন ভিন্ন ফসলের ক্ষেত্রে মাত্র ১.৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ কিস্তির বিনিময়ে কৃষকদের ফসল বিমা প্রদান করা হয়। এই বাবদ দেশের কৃষকদের থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা বিমার অর্থ সংগৃহীত হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে ফলন প্রভাবিত হওয়ায় ইতিমধ্যেই দেশের কৃষকদের ৩৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি বিমার টাকা প্রদান করা হয়েছে।
বন্ধুগণ, বিগত অনেক বছর ধরেই কংগ্রেস ঋণ মকুব করা নিয়ে অনেক বড় বড় কথা বলছে। কিন্তু এটাও একটা প্রতারণা, একটা মিথ্যা। কর্ণাটকে কংগ্রেস কৃষকদের ঋণ মকুবের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। বলা হয়েছিল, মাত্র ১০ দিনের মধ্যে তাঁদের ঋণ মকুব করা হবে। কিন্তু তারপর ছ’মাস কেটে গেছে তাদের প্রতিশ্রুতি তারা পূরণ করতে পারেনি। এই ছ’মাসে তারা ১ হাজার কৃষকেরও ঋণ মকুব করেনি। অনেক কৃষকের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ করা হয়েছে, আর অনেকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এই সত্যিকে লুকানোর অনেক চেষ্টা করেও তারা লুকাতে পারেনি। তাদের এই ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার প্রত্যেক কৃষকের স্বার্থে কাজ করে যাবে।
বন্ধুগণ, ২০০৮ সালেও কংগ্রেস সারা দেশে কৃষকদের ঋণ মকুবের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তখন দেশের কৃষকদের ৬ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি ঋণ ছিল। কিন্তু সরকার মাত্র ৬০ হাজার কোটি টাকার ঋণ মকুব করেছিল। কত বড় ধোকা! শুধু তাই নয়, এর মধ্যে এমন ৩৫ লক্ষ কৃষকের ঋণ মকুব করা হয়েছিল যাঁরা ঋণ মকুবের আওতায় আসেন না। পেছনের দরজা দিয়ে কাজ করা হয়েছিল।
ভাই ও বোনেরা, কৃষি সংক্রান্ত অন্যান্য ক্ষেত্রেও কংগ্রেসের অবহেলা অবিদিত। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, বীজের উৎকর্ষ সংস্কার, কৃষি গবেষণা, কৃষকদের আয় বৃদ্ধির বিকল্প ব্যবস্থা এবং সেচ – এই সকল ক্ষেত্রেই কংগ্রেস সরকার যথেষ্ট সক্রিয় ছিল না।
আজ সরকার কয়েকশ’ নতুন বিজ্ঞান কেন্দ্র খুলে ১৭ কোটিরও বেশি নতুন মৃত্তিকা স্বাস্থ্য কার্ড বিতরণ করে, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে ১০০ শতাংশ প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ মঞ্জুর করে, সারা দেশে কয়েকশ’ নতুন গুদামঘর খুলে সমগ্র সরবরাহ প্রণালীকে শক্তিশালী করে কৃষকদের খরচ হ্রাস করা এবং ফসলের উচ্চ মূল্য প্রদানের প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে।
বন্ধুগণ, কেন্দ্রীয় সরকার হোক, কিংবা যোগীজির নেতৃত্বে উত্তরপ্রদেশ রাজ্য সরকার – আমাদের একটাই মন্ত্র – ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’। আমরা দায়িত্ব গ্রহণ করার পরই সারা দেশের সঙ্গে রায়বেরিলির ৮ লক্ষ দরিদ্র মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করেছি। এখানকার ১ লক্ষ ৭৫ হাজার মহিলাদের বিনামূল্যে রান্নার গ্যাস সংযোগ প্রদান করেছি। প্রায় ৫৫ হাজার বাড়িতে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করেছি।
আপনাদের সবার অভূতপূর্ব সহযোগিতায় সরকারের প্রচেষ্টাগুলি বলীয়ান হয়ে উঠছে। আপনাদের সহযোগিতায় শক্তিতে সাধারণ মানুষের জীবনে আমরা ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারছি। আগামীদিনে সমবায় এবং সহযোগিতার ভাবনা নিয়ে আমরা আরও মিলেমিশে শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে পারব। রায়বেরিলি সহ সমগ্র উত্তরপ্রদেশে দ্রুত উন্নয়নের জন্য আমাদের প্রত্যেক স্তরে মিলেমিশে এগিয়ে যেতে হবে এই বিশ্বাস নিয়ে আরেকবার এইসব উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য আপনাদের সবাইকে শুভেচ্ছা জানাই। আপনারা সবাই এখানে আমাকে আশীর্বাদ প্রদানের জন্য বিপুল সংখ্যায় এসে উপস্থিত হয়েছেন সেজন্য সবাইকে অন্তর থেকে ধন্যবাদ জানাই।
আমার সঙ্গে উচ্চকন্ঠে বলুন, ভারত মাতা কি জয়! ভারত মাতা কি জয়! ভারত মাতা কি জয়!
অনেক অনেক ধন্যবাদ।