মহামান্য রাষ্ট্রপতি মহোদয়, মাননীয় উপ-রাষ্ট্রপতি মহোদয়, মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, প্রহ্লাদজী এবং সকল সম্মানিত জনপ্রতিনিধিবৃন্দ।
কিছু দিন এবং কিছু উপলক্ষ এমন হয়, যা অতীতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে শক্তিশালী করে তোলে। আমাদের উন্নত ভবিষ্যৎ এবং উন্নত লক্ষ্য নিয়ে কাজ করার জন্য প্রেরণা যোগায়। আজ এই ২৬শে নভেম্বরও তেমনই একটি ঐতিহাসিক দিন। ৭০ বছর আগে আমাদের পূর্ব পুরুষরা বিধিবদ্ধ রূপে একটি নতুন রঙ ও রূপে সংবিধানকে গ্রহণ করেছিলেন। পাশাপাশি, আজ ২৬শে নভেম্বর এক শোক পালনের দিনও। ভারতের মহান উচ্চ পরম্পরা হাজার হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, বসুধৈব কুটুম্বকম্ – এর ভাবনা নিয়ে বেঁচে থাকা এই মহান ঐতিহ্যকে আজকের দিনেই মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসবাদী শক্তি ঝাঁঝরা করে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। আমি আজ সেই সন্ত্রাসবাদী আক্রমণে নিহত মানুষদের আত্মাকে প্রণাম জানাই। সাত দশক আগে এই সংসদের সেন্ট্রাল হল – এ এতটাই পবিত্র শব্দের গুঞ্জরণ ছিল, সংবিধানের প্রতিটি অনুচ্ছেদ নিয়ে চুল চেরা গভীর আলোচনা হয়েছে, তর্ক হয়েছে, তথ্য সন্নিবিষ্ট হয়েছে, নানা ভাবনা যুক্ত হয়েছে, আস্থা, বিশ্বাস, স্বপ্ন এবং অনেক সংস্কল্প নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এভাবে এই সংসদ এই পবিত্র জ্ঞানের মহাকুম্ভে পরিণত হয়েছিল, যেখানে ভারতের প্রত্যেক প্রান্তে স্বপ্নগুলিকে শব্দাবলীতে রূপান্তরিত করার প্রচেষ্টা হয়েছে। ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ, ডঃ ভীমরাও বাবাসাহেব আম্বেদকর, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল, পণ্ডিত নেহরু, আচার্য সুকরাণী, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, পুরুষোত্তম দাস ট্যান্ডন, সুতেনা কৃপলানী, হংসা মেহতা, এলডি কৃষ্ণস্বামী আয়ার, এন গোপালাস্বামী এঙ্গার, জন মাথাই – এরকম অসংখ্য মহাপুরুষ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ অবদানের মাধ্যমে আমাদের এই মহান ঐতিহ্যকে দেশবাসীর হাতে তুলে দিয়েছেন। আজ এই উপলক্ষে আমি সেই মহান বিভূতিদের স্মরণ করি এবং তাঁদের সাদর প্রণাম জানাই।
আজকে আমার বক্তব্যের শুরুতেই আপনাদের সবাইকে সংবিধান অঙ্গীকার করার একদিন আগে ২৫শে নভেম্বর ১৯৪৯ তারিখে সংবিধান কমিটির পক্ষ থেকে বাবাসাহেব আম্বেদকরের শেষ ভাষণের বক্তব্য সম্পর্কে কিছু কথা বলতে চাই। বাবাসাহেব দেশকে স্মরণ করিয়েছেন যে, ভারত প্রথমবার ১৯৪৭ সালেই স্বাধীন হয়েছে, তা নয়। ভারত আগেও স্বাধীন ছিল এবং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন গণতন্ত্র ছিল। কিন্তু আমাদের পূর্বপুরুষেরা নিজেদের ভুলে অতীতে স্বাধীনতা হারিয়েছেন, গণতান্ত্রিক চরিত্রও হারিয়েছেন। এই প্রেক্ষিতে বাবাসাহেব দেশকে সতর্ক করে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আমরা যে স্বাধীনতা পেয়েছি, গণতান্ত্রিক দেশে পরিণত হয়েছি কিন্তু এই গণতন্ত্র কি আমরা বজায় রাখতে পারবো? আমরা কি অতীত থেকে শিক্ষা নিতে পারি? আজ যদি বাবাসাহেব থাকতেন, তা হলে তাঁর থেকে বেশি খুশি হয়তো কেউ হতেন না। কারণ, ভারত এত বছর ধরে শুধু তাঁর প্রশ্নগুলির উত্তরই দেয়নি, নিজের স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রকে আরও সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী করেছে। সেজন্য আজ এই উপলক্ষে আমি আপনাদের সবাইকে বিগত সাত দশকের সংবিধানের ভাবনাগুলিকে অক্ষুণ্ন রাখার জন্য সমস্ত আইনসভা, প্রশাসন এবং বিচার-বিভাগে কর্মরত সমস্ত ব্যক্তিদের গর্বের সঙ্গে স্মরণ করছি, প্রণাম জানাচ্ছি। আমি বিশেষভাবে, ১৩০ কোটি ভারতবাসীর সামনে নতমস্তক, যাঁরা কখনও ভারতীয় গণতন্ত্রের প্রতি আস্থাকে কম হতে দেয়নি। তাঁরা সংবিধানকে সর্বদাই একটি পবিত্র গ্রন্থ রূপে, একটি আলোকবর্তিকা রূপে গ্রহণ করেছেন।
সংবিধানের ৭০তম বর্ষপূর্তি আমাদের জন্য ‘হর্ষ’, ‘উৎকর্ষ’ এবং ‘নিষ্কর্ষ’ – এর মিলিত ভাবনা নিয়ে এসেছে। ‘হর্ষ’ – এজন্য যে, সংবিধানের ভাবনা অটল ও অবিচলিত। একে ক্ষুণ্ণ করার যে কোনও প্রচেষ্টাকে দেশবাসী সমবেতভাবে অসফল করে দিয়েছে, সংবিধানে আঁচ আসতে দেননি। ‘উৎকর্ষ’ – এজন্য যে, আমাদের সংবিধান শক্তিশালী হওয়ার ফলেই আমরা এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত – এর দিকে এগিয়ে যেতে পারছি। আমরা সংবিধানের পরিধির মধ্যে থেকেই সমস্ত সংস্কার-সাধন করেছি। আর ‘নিষ্কর্ষ’ হ’ল – এই বিশাল ও বৈচিত্র্যময় দেশের উন্নয়নের জন্য সোনালী ভবিষ্যতের জন্য এবং নতুন ভারতের জন্য আমাদের সামনে শুধু এবং শুধুই সংবিধান, এর মর্যাদা, এর ভাবনাই একমাত্র পথ এবং ধর্ম। পাশাপাশি, অনেক সমস্যার সমাধানেরও উপায়। আমাদের সংবিধান এত ব্যাপক এজন্য যে, এতে বহিরাগত জ্ঞানের আলোর জন্য সমস্ত জানালা খোলা রয়েছে। পাশাপাশি, অন্তরের আলোকে আরও প্রজ্জ্বলিত করার অবকাশও রয়েছে।
আজ এই উপলক্ষে বক্তব্য রাখছি, কিন্তু ২০১৪ সালে প্রথমবার দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে আমি লালকেল্লার প্রাকার থেকেই বলেছিলাম যে, এই কথা আমি বারবার বলবো, সরল ভাষায় সংবিধানের ব্যাখ্যা করবো যে, এটি হ’ল – সমস্ত ভারতীয়র জন্য আর ভারতের ঐক্য ও সংহতির জন্য মর্যাদার প্রতীক। এই দুটি মন্ত্রই আমাদের সংবিধান বাস্তবায়িত করেছে। নাগরিকদের মর্যাদাকে সবার উপরে রেখেছে এবং সম্পূর্ণ ভারতে ঐক্য ও সংহতিকে অক্ষুণ্ন রেখেছে। আমাদের সংবিধান আন্তর্জাতিক গণতন্ত্রের সর্বোৎকৃষ্ট প্রতীক। এটি শুধুই জনগণের অধিকারের প্রতি সজাগ নয়, আমাদের কর্তব্য সম্পর্কেও সচেতন করায়। এক দৃষ্টিতে আমাদের সংবিধান বিশ্বের সর্বাধিক ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান। আমাদের কী করতে হবে, কত বড় স্বপ্ন দেখতে হবে আর কোথায় পৌঁছতে হবে, তার জন্য কোনও প্রকার বাধা-নিষেধ নেই। সংবিধানেই অধিকারের কথা লেখা আছে এবং সংবিধানেই কর্তব্য পালনের প্রত্যাশা আছে। আমরা কি একজন ব্যক্তি হিসেবে একটি পরিবার রূপে একটি সমাজের অঙ্গ হিসাবে আমাদের কর্তব্যগুলি নিয়ে ততটাই সচেতন, যতটা আমাদের সংবিধান, আমাদের দেশ, আমাদের দেশবাসীদের স্বপ্ন আমাদের থেকে প্রত্যাশা করে! শ্রদ্ধেয় রাজেন্দ্র বাবু যেমন বলেছিলেন, সংবিধানে যা লেখা রয়েছে, সেগুলিকে আমাদের ‘কনভেনশন’ রূপে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে, আর এটাই ভারতের বৈশিষ্ট্য। বিগত দশকগুলিতে আমরা আমাদের অধিকারগুলি প্রতিষ্ঠায় জোর দিয়েছি, আর এটা প্রয়োজনও ছিল, যথার্থ পদক্ষেপ। কারণ, সমাজে এমন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল, যেখানে একটি বড় অংশকে অধিকারগুলি থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছিল। তাঁদের অধিকারগুলির সঙ্গে পরিচয় না করিয়ে এই বড় অংশের মনে সাম্য, সমতা এবং ন্যায়ের অনুভব সঞ্চার করা সম্ভব ছিল না। কিন্তু আজ সময়ের দাবি হ’ল – যখন আমাদের অধিকারগুলির পাশাপাশি, একজন নাগরিক হিসাবে নিজেদের কর্তব্য এবং দায়িত্বগুলি নিয়ে চিন্তাভাবনা করতেই হবে। কারণ, দায়িত্ব পালন না করলে আমরা নিজেদের অধিকারগুলি সুরক্ষিত রাখতে পারবো না।
অধিকারগুলি এবং কর্তব্যগুলির মাঝে একটি অটুট সম্পর্ক রয়েছে এবং এই সম্পর্ককে মহাত্মা গান্ধীজী অত্যন্ত সুন্দর শব্দমালা দিয়ে বুঝিয়েছিলেন। আজ যখন দেশ পূজনীয় বাপুর ১৫০তম জন্ম জয়ন্তী বর্ষ পালন করছে, তখন তাঁর এই শব্দাবলী অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। তিনি বলতেন, ‘অধিকার মানেই হ’ল কর্তব্যগুলির সুসম্পাদন’। তিন এক জায়গায় লিখেওছিলেন যে, আমি আমার অশিক্ষিত কিন্তু জীবন সম্পর্কে অভিজ্ঞ মায়ের কাছে শিখেছিলাম যে, নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করা সমস্ত কর্তব্য থেকেই অধিকার পাওয়া যায়। বিগত শতাব্দীর গোড়ার দিকে গোটা বিশ্ব অধিকার সম্পর্কে কথা বলছিল, তখন গান্ধীজী এক কদম এগিয়ে বলেছিলেন – আসুন, আমরা নাগরিকদের কর্তব্য নিয়ে কথা বলি। ১৯৪৭ সালে ইউনেস্কোর মহানির্দেশক ডঃ জুলিয়ান হাসক্লে বিশ্বের ৬০ জন জ্ঞানী-গুণী মানুষকে একটি চিঠি লিখে তাঁদের কাছ থেকে পথ-প্রদর্শনের আবেদন রেখেছিলেন। তিনি তাঁর লেখা চিঠিতে লিখেছিলেন যে, “ওয়ার্ল্ড চার্টার অফ হিউম্যান রাইটস্’ রচনার ভিত্তি কী হওয়া উচিৎ? বিশ্বের অধিকাংশ জ্ঞানী-গুণী মানুষের জবাব থেকে মহাত্মা গান্ধীর জবাব স্বতন্ত্র ছিল। মহাত্মাজী লিখেছিলেন যে, আমরা নিজেদের জীবনের অধিকারগুলি তখনই অর্জন করতে পারি, যখন নাগরিক হিসাবে নিজেদের কর্তব্যগুলি নিষ্ঠা সহকারে পালন করবো। অর্থাৎ, কর্তব্যের মধ্যেই অধিকারগুলির রক্ষা কবচ রয়েছে। এত বছর আগে মহাত্মা গান্ধী এই অভিমত রেখেছিলেন। আমরা যখন দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা বলি, তখন কিছু ছোট ছোট দায়িত্ব পালনের জন্য রাষ্ট্র রূপে আমাদের সংকল্প সিদ্ধ হয়। আমাদের এটা অত্যন্ত স্পষ্টভাবে খেয়াল রাখতে হবে যে, কর্তব্য এবং সেবার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। কখনও কখনও আমরা সেবাকেই কর্তব্য বলে মনে করি। সেবা ভাব ও শিষ্টাচার প্রত্যেক সমাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু, সেবা ভাব থেকেও কর্তব্য যে একটু আলাদা, সেটা আমরা অনেক সময়েই ভেবে দেখি না। আপনি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন, কোনও ব্যক্তিকে সাহায্য করার প্রয়োজন দেখে আপনি যখন এগিয়ে যান, তখন এটাকে সেবা ভাব বলে। এই সেবা ভাব যে কোনও সমাজকে, মানবতাকে অত্যন্ত শক্তি যোগায়। কিন্তু কর্তব্যভাব এরচেয়ে একটু আলাদা। পথের মধ্যে বিপদে পড়া কাউকে সাহায্য করছেন – খুব ভালো কথা। কিন্তু ট্রাফিক নিয়ম পালন করে অন্যদের সমস্যার সৃষ্টি না করে আপনি কারও দিকে সাহায্যের হার বাড়িয়ে দেবেন – এটাই হ’ল কর্তব্য। আপনি যা কিছু করছেন, তার সঙ্গে যদি আমরা একটি প্রশ্ন জুড়ে দিই, তা হলে দেখতে পাই যে, আমার কৃতকর্মের মাধ্যমে দেশ শক্তিশালী হচ্ছে কিনা। পরিবারের সদস্য হিসাবে আমরা যা কিছু করি, তাতে যেমন পরিবারের শক্তি বৃদ্ধি পায়, তেমনই নাগরিক হিসাবে আমরা যা কিছু করবো, তাতে আমাদের দেশের শক্তি বাড়বে, আমাদের রাষ্ট্র শক্তিশালী হবে।
একজন নাগরিক যখন নিজের সন্তানকে স্কুলে পাঠান, তখন বাবা-মা নিজেদের কর্তব্য পালন করেন। কিন্তু সেই বাবা-মা যখন সচেতনভাবে নিজের সন্তানকে মাতৃভাষা শেখাতে চান, তখন তাঁরা একজন নাগরিকের কর্তব্য পালন করেন, দেশ সেবার কর্তব্য পালন করেন। এরকম অনেক ছোট ছোট জিনিস, যেমন – বিন্দু বিন্দু জল সাশ্রয় করলেও আমরা নাগরিক কর্তব্য পালন করি। সরকারের টিকাকরণ অভিযানে সামিল হয়ে নিজের পরিবার ও প্রতিবেশী পরিবারগুলির সন্তানদের টিকাকরণ সুনিশ্চিত করার মাধ্যমে আমরা কর্তব্য পালন করি, যাতে টিকাকরণ কর্মীদের আর বাড়ি বাড়ি এসে মনে না করাতে হয়। যথাসময়ে কর প্রদানের মাধ্যমে আমরা কর্তব্য পালন করি। এরকম অনেক দায়িত্ব রয়েছে, যা একজন নাগরিক রূপে আমরা যদি সহজভাবে পালন করি, নিজেদের শিষ্টাচারের অংশ করে তুলি, তা হলে আমরা দেশকে অতি দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো। এই প্রশ্ন যতক্ষণ পর্যন্ত দেশের প্রতিটি নাগরিকের মনে তাঁর চেতনায় অগ্রাধিকার না পাবে, আমাদের নাগরিক কর্তব্য ক্রমশ দুর্বল হতে থাকবে। আর কোনও না কোনোভাবে অন্যদের অধিকার খর্ব করবে। সেজন্য অন্যদের অধিকার যাতে খর্ব না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেও আমাদের কর্তব্য পালন করা হ’ল আমাদের দায়িত্ব। একজন জনপ্রতিনিধি রূপে আমাদের দায়িত্ব একটু বেশি হয়, দ্বিগুণ থাকে। আমাদের সাংবিধানিক মূল্যগুলিকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি, নিজেদেরকেও আদর্শ রূপে তুলে ধরার প্রয়োজন রয়েছে। সমাজে সার্থক পরিবর্তন আনার জন্য এই কর্তব্য পালনের দায়িত্ব রয়েছে। আমাদের চেষ্টা থাকতে হবে যে, নিজেদের প্রতিটি কর্মসূচিতে প্রত্যেক বক্তব্যে আমরা যেন দায়িত্ব ও কর্তব্যকে অগ্রাধিকার দিই। জনগণের সঙ্গে বার্তালাপের সময় তাঁদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করার কথা কখনও না বলি। আমাদের সংবিধান শুরু হয় ‘আমরা ভারতের জনগণ’ – এই শব্দগুলিতে শক্তি রয়েছে। আমরাই এর প্রেরণা আর আমরাই এর উদ্দেশ্য।
আমি যা কিছু হয়েছি, তা সমাজের জন্য হয়েছি, দেশের জন্য হয়েছি – এই কর্তব্য ভাব আমাদের প্রেরণার উৎস হয়ে উঠুক। আমি আপনাদের সবাইকে আহ্বান জানাই যে, আসুন, আমরা সবাই এই সংকল্প শক্তি নিয়ে মিলেমিশে ভারতের একেক জন দায়িত্বশীল নাগরিক রূপে নিজেদের কর্তব্য পালন করি। আসুন, আমাদের গণতন্ত্রকে আমরা কর্তব্যের মাধ্যমে ওতপ্রোতভাবে নতুন সংস্কৃতির দিকে নিয়ে যাই। আসুন, আমরা সবাই দেশের নবনাগরিক হয়ে উঠি, সৎ নাগরিক হয়ে উঠি। আমি কামনা করি, এই সংবিধান দিবসে আমরা সবাই সংবিধানের আদর্শগুলিকে অক্ষুণ্ন রাখতে এবং রাষ্ট্র নির্মাণে অবদান রাখার জন্য নিজেদের দায়বদ্ধতাকে গুরুত্ব দেব, আমাদের সংবিধান রচয়িতারা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা পূরণ করার জন্য শক্তি অর্জন করি। এই পবিত্র ভূমিতে, যেখানে এই সংবিধান রচনার আগে প্রতিটি বিষয় নিয়ে মন্থন হয়েছিল, আজও তা গুঞ্জরিত হচ্ছে। এই প্রতিধ্বনি আমাদের অবশ্যই আশীর্বাদ দেবে, এই প্রতিধ্বনি আমাদের অবশ্যই প্রেরণা দেবে, এই প্রতিধ্বনি আমাদের অবশ্যই শক্তি দেবে, এই প্রতিধ্বনি আমাদের অবশ্যই সঠিক লক্ষ্যপথে পরিচালিত করবে। এই ভাবনা নিয়ে আরেকবার আজ সংবিধান দিবসের পবিত্র অবসরে বাবাসাহেব আম্বেদকর-কে প্রণাম জানাই, সকল সংবিধান রচয়িতাদের প্রণাম জানাই আর দেশবাসীকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
ধন্যবাদ।