আমরা ভারত ও রোয়ান্ডার অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও উচ্চস্তরে নিয়ে যেতে চাই: প্রধানমন্ত্রী মোদী
ভারত ও রোয়ান্ডা একসঙ্গে অনেক কিছু করতে পারে। এখানে গ্রামোন্নয়ন ও ক্ষুদ্র শিল্পে বেশ কিছু সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী মোদী
ভারত ও রোয়ান্ডা ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহযোগিতা করতে পারে: প্রধানমন্ত্রী মোদী
পরিকাঠামো হোক কিংবা জীবনযাত্রার মানের উৎকর্ষ, প্রশাসন হোক কিংবা অর্থনৈতিক সংবেদনশীলতা কিংবা স্বনির্ভর পরিবার – এই সমস্ত বিষয়কে একসঙ্গে নিয়ে কিভাবে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, এর একটি অত্যন্ত সুন্দর মডেল দেখে আমার মনে হয়েছে যে, অনেক দেরীতে এখানে পৌঁছেছি।
আমিই ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী যার এখানে আসার সৌভাগ্য হয়েছে। কিন্তু আমি আনন্দিত যে আমার সঙ্গে ভারত থেকে অনেক বড় বাণিজ্য প্রতিনিধিদল এসেছে। এটা প্রমাণ করে যে ভারত তো দ্রুতগতিতে উন্নতি করছেই, কিন্তু আমাদের মূলমন্ত্র যেহেতু ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’, আমাদের উন্নয়নের পাশাপাশি আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যারা চলেন, তাঁদের উন্নয়নে সহযোগিতার ক্ষেত্রেও আমরা মিলেমিশে কাজ করব।
এখানে আজ ‘ইন্ডিয়ান বিজনেস ফোরাম’ এর যে প্রতিনিধিরা এসেছেন, তাঁদেরকে বলতে চাই যে, আপনারা এটা ভাববেন না যে শুধু রোয়ান্ডা এসেছি; আজ পরিস্থিতি এমন যে রোয়ান্ডা আসা মানেই পূর্ব আফ্রিকার দরজা খুলে যাওয়া। ওই দরজার চাবিও এখানেই আছে। গোটা পূর্ব আফ্রিকায় রোয়ান্ডার উন্নয়ন মডেল, এখানকার প্রশাসন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আফ্রিকায় উন্নয়নের যে নতুন আবহ গড়ে উঠেছে, রোয়ান্ডার রাস্ট্রপতি মহোদয় তার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আপনাদের এখানে আসার মানে এক দেশের সীমায় আবদ্ধ থাকা নয়, আপনারা আরও সম্ভাবনা দেখতে পাবেন, সমস্যাও আসবে এবং ওনেক সুযোগও পাবেন। আমার মতে, আপনাদের এই ধরণের সুযোগ হাতছাড়া করা উচিৎ নয়।
আমি গতকাল থেকে লক্ষ্য করছি যে, রাষ্ট্রপতি মহোদয় বারবার আবেগ প্রবণ হয়ে পড়ছেন। সুপ্রশাসন, উন্নয়ন এবং জনগণের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি, সামাজিক শান্তি – এই সমস্ত বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেছেন। ভারতীয়দের জন্য এই সমস্ত বিষয়ই অনুকূল আর আমাদের প্রকৃতির সঙ্গে সাযুজ্য রক্ষাকারী।
আগে বিশ্ববাসী আফ্রিকার দিকে তেমন মনোযোগ দেননি। অন্য কোনও মহাদেশ থেকে এখানে কেউ আসেননি। তখন ভারতীয়রাই এই মাটিকে সবার আগে পছন্দ করেছে। গুজরাটের যোধপুর থেকে সম্ভবত ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে একটি পরিবার এখানে প্রথম এসেছিল। তারপর থেকে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ এখানে এসেছেন, এখানকার জনগণের সঙ্গে মিলেমিশে এখানকার উন্নয়নযাত্রায় অংশীদার হয়েছেন। এখন তো গোটা বিশ্ব আফ্রিকার দিকে তাকিয়ে আছে, সবাই এখানে আসতে চান। কিন্তু ভারতীয়রা তখন এসেছিলেন, যখন আফ্রিকাবাসীর প্রয়োজন ছিল। আজ আমরা সেই সম্পর্ককেই আরও নিবিড় করতে চাই, যাতে আমাদের মিলিত প্রচেষ্টা বিশ্বমানবতার প্রয়োজনে লাগে। বিশ্বে এখনও যাঁরা পিছিয়ে রয়েছেন, সেই দেশগুলির জনগণের জন্য কিছু করার ইচ্ছে নিয়ে ভারত এগিয়ে এসেছে। বিশ্ববাসীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা সেই দেশগুলির উন্নয়নের কাজ করতে চাই।
রাষ্ট্রপতি মহোদয় গুজরাট এসেছিলেন। তিনি গুজরাটে অনেক কিছু দেখেছেন। উন্নয়নশীল দেশগুলি সফরে তাঁর বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। তাঁর ভারত সফরকালে তিনি প্রত্যক্ষভাবে সবকিছু দেখে-বুঝে সংশ্লিষ্ট অনেককে তাঁর দেশে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
যেদেশের শীর্ষ নেতা উন্নয়নের প্রতি এতটা দায়বদ্ধ, নতুন নতুন জিনিস দেখা, বোঝা এবং গ্রহণ করার প্রবৃত্তি নিয়ে নিজের দেশের উন্নয়নের কাজ করতে চান, আমার মতে, সেই দেশে কাজ করতে আপনাদের কোনও অসুবিধা হবে না। অসংখ্য সুযোগ পাবেন। একটা জানালা খুললে আরেকটা জানালা পাবেন। আর আপনারা এগিয়েই যেতে থাকবেন। ভারতেও আজ কাজ করার একই রকম সম্ভাবনা রয়েছে। রোয়ান্ডার যে ব্যবসায়ীরা ভারতে গিয়ে নিজেদের ব্যবসা বৃদ্ধি করতে চান, তাঁদের জন্য ভারত সরকার সবরকম সুবিধা দিতে প্রস্তুত। আমি তাঁদের আমন্ত্রণ জানাই। কিন্তু আমি ভারতীয় ব্যবসায়ীদের অনুরোধ জানাব যে, রোয়ান্ডা যেভাবে সমাজ জীবনকে আধুনিক করে তুলতে চাইছে; পরিকাঠামো উন্নয়ন, গ্রামোন্নয়ন ও অর্থনৈতিক গতিবিধি, ক্ষুদ্র শিল্প ও কুটির শিল্পের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে চায়, এখানকার উৎপাদিত পণ্য বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতায় সামিল হতে চায় – এই সমস্ত বিষয়ে ভারতীয় ব্যবসায়ী সম্প্রদায় মিলেমিশে অনেক কিছু করতে পারে।
ভারতে এখন ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ আন্দোলন শুরু হয়েছে। এই আন্দোলনে আমরা রোয়ান্ডাকে অংশীদার করে তুলতে পারি, তাদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারি। আন্তর্জাতিক সৌরসঙ্ঘের মাধ্যমে আমরা বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা মোকাবিলায় এগিয়ে চলেছি। পাশাপাশি, আমাদের জীবনযাত্রাকে আরও সুলভ করে তুলতে সৌরশক্তির ব্যবহার বাড়াতে আমরা একটি বড় অভিযান শুরু করেছি। আমি চাই যে, রোয়ান্ডার জনগণও আমাদের সঙ্গে এগিয়ে আসুক। আজ রাষ্ট্রপতি মহোদয়ের সঙ্গে সফরকালে আমি তাঁকে ভারতে এলইডি বাল্বের বহুল প্রয়োগ সম্পর্কে বলেছি।
ভারতে এলইডি বাল্ব নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারে অনেক আর্থিক সাশ্রয় করেছে। আগের তুলনায় তিন ভাগের এক ভাগ বিদ্যুৎ বিল আসে। রোয়ান্ডায় এভাবে এলইডি বাল্বের অভিযান শুরু হলে জনগণের শক্তি সঞ্চয়ের পাশাপাশি গরিব মানুষের অনেক লাভ হবে। সৌরশক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রথাগত শক্তির প্রয়োজন হ্রাস করে, সেজন্য নতুন প্রকল্প নির্মাণের খরচ সাশ্রয় করা যেতে পারে। জনগণের নৈমিত্তিক গার্হস্থ প্রয়োজন মিটিয়ে যতটা শক্তি সাশ্রয় হবে, তা শিল্প ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যেতে পারে। দেখুন, একটা ছোট্ট বিষয় কত বড় পরিবর্তন আনতে পারে। এই লক্ষ্যে আমরা মিলেমিশে কাজ করতে পারি। এদেশে ডেয়ারি উদ্যোগ ও শ্বেত বিপ্লবের সম্ভাবনা রয়েছে। ভারত এক্ষেত্রে সাফল্যের শিখরে পৌঁছেছে। আমরা রোয়ান্ডাবাসীকে এক্ষেত্রে নানাভাবে সাহায্য করতে পারি। অর্থাৎ গ্রাম থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় স্তরে ভারতের যত সামর্থ্য আছে, ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য গোষ্ঠীগুলির যত সামর্থ্য আছে রোয়ান্ডার উন্নয়নে তার সদ্ব্যবহার করতে পারে। রোয়ান্ডা আমাদের বন্ধু দেশ। এখানকার প্রতিটি জিনিসকে আপনারা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখলে ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে অনেক মিল খুঁজে পাবেন। এখানকার মানুষকে অনেক আপন বলে মনে হবে। আর যেখানে এই আপনত্ব, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, স্বচ্ছ ও দক্ষ প্রশাসন এবং দায়বদ্ধ নেতৃত্ব রয়েছে, সেদেশে কাজ করা কতটা সহজ হবে তা আমরা ভালোভাবেই বুঝতে পারি।
আমি গতকাল বিমানবন্দরে অবতরণের পর থেকে এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ সময় তিনি আমার সঙ্গে আছেন – এরকম আমি খুব কম দেখেছি। এই উষ্ণতা আমাকে অত্যন্ত প্রভাবিত করেছে। রোয়ান্ডার সরকার আমাদের পাশে আছে। বিশ্বের অনেক দেশেই আমাদের যেতে হয়। কিন্তু একজন রাষ্ট্রপ্রধানের সফরকালে প্রতিটি মুহূর্ত কিভাবে কাজে লাগানো যায়, তা রোয়ান্ডার রাষ্ট্রপতি মহোদয়ের কাছ থেকে শিখতে হয়। আমি খুব খুশি। আরেকবার তাঁকে ধন্যবাদ জানাতে চাই আর আপনাদের সকলকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।