উত্তরাখণ্ডের রাজ্যপাল, শ্রদ্ধেয়া বেবীরানী মৌর্য, আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার সহযোগীবৃন্দ, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ত্রিবেন্দ্রসিংহ রাওয়াত, উত্তরাখণ্ডের মন্ত্রীসভার সমস্ত সদস্যবৃন্দ, সিঙ্গাপুরের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এস ঈশ্বরণজি, জাপানের এবং চেক গণতন্ত্রের মাননীয় রাজদূত, দেশ-বিদেশ থেকে সমাগত সকল শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী বন্ধুগণ, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ,
বাবা কেদারনাথের ছত্রছায়ায় চার ধামের পুণ্যার্জনে দেশ-বিদেশ থেকে সমাগত সমস্ত বন্ধুদের অনেক অনেক স্বাগত ও অভিনন্দন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে আপনারা এখানে ভারতের অর্থনৈতিক আবহের পাশাপাশি আমাদের কয়েক হাজার বছর পুরনো সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও সমৃদ্ধিকে অনুভব করবেন, এর সঙ্গে পরিচিত হয়ে একটি নতুন চেতনায় সমৃদ্ধ হয়ে এখান থেকে ফিরবেন।
বন্ধুগণ, আমরা এমন সময়ে উত্তরাখণ্ডের মাটিতে একত্রিত হয়েছি যখন ভারতে দ্রুতগতিতে আর্থিক ও সামাজিক পরিবর্তন আসছে। দেশ অনেক বড় পরিবর্তন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমরা নতুন ভারত গড়ার পথে এগিয়ে চলেছি। বিশ্বের সকল বড় সমীক্ষাকারী সংস্থা বলছে যে ভারত আগামী দশকে বিশ্বে উন্নয়নের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিতে চলেছে। আজ ভারতের অর্থব্যবস্থা আগের থেকে অনেক বেশি স্থিতিশীল। রাজস্ব ঘাটতি হ্রাস পেয়েছে, মূল্যবৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমাদের দেশে বিশ্বে সবচাইতে দ্রুতগতিতে মধ্যবিত্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ৮০কোটি থেকেও বেশি জনসংখ্যার বয়স ৩৫ বছরের নিচে, সমাজে এই যুবশক্তির তুলনামূলক সংখ্যাধিক্য আকাঙ্ক্ষার সামর্থে ভরপুর।
বন্ধুগণ, আজ ভারতে অভূতপূর্ব গতিতে এবং দক্ষতা সহকারে আর্থিক সংস্কার প্রক্রিয়া জারি রয়েছে। বিগত দুই বছরেই এই রাজ্যে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার দশ হাজার থেকেও বেশি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এই পদক্ষেপগুলির কারণেই বিশ্বে ‘ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস”-এ ভারত ৪২ ধাপ উন্নতি করেছে। এই আর্থিক সংস্কার প্রক্রিয়ায় আমরা ১৪০০র–ও বেশি আইন বাতিল করেছি।তাছাড়া ভারতে কর ব্যবস্থায় অনেক সংস্কার করা হয়েছে।কর সংক্রান্ত বিবাদ সমাধানকে আরও স্বচ্ছ ও দ্রুত করার চেষ্টা চলছে।
অসচ্ছলতা ও দেউলিয়া কোড প্রণয়নের ফলে আজ ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাও শক্তিশালী হয়েছে।জিএসটি প্রণয়নের মাধ্যমে ভারত স্বাধীনতার পর সবচাইতে বড় কর সংস্কার করেছে।জিএসটি দেশকে এক বাজারে পরিণত করেছে এবং কর ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এনেছে। আমাদের পরিকাঠামো ক্ষেত্র রেকর্ড গতিতে এগিয়ে চলেছে।গতবছরই ভারতে প্রায় ১০,০০০ কিমি জাতীয় সড়ক নির্মাণ হয়েছে।অর্থাৎ দৈনিক প্রায় ২৭ কিমি গতিতে নির্মাণের কাজ চলছে।এই গতি পূর্ববর্তী সরকারের আমলের তুলনায় দ্বিগুণ।
রেললাইন নির্মাণের কাজও দ্বিগুণ গতিতে এগিয়ে চলেছে।এছাড়া অনেক শহরে নতুন মেট্রো রেল, দ্রুতগতিসম্পন্ন রেল প্রকল্প, স্বতন্ত্র পণ্য পরিবহণ করিডর – ইত্যাদির কাজ চলছে।সরকার ৪০০টি নতুন রেল স্টেশনের আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে।
বিমান পরিবহণ ক্ষেত্রেও ভারত অভূতপূর্ব গতিতে এগিয়ে চলেছে।এই গতিকে আরও ত্বরান্বিত করতে দেশে প্রায় ১০০টি নতুন বিমানবন্দর ও হেলিপ্যাড নির্মাণের কাজ চলছে।উড়ান যোজনার মাধ্যমে দেশের টিয়ার-২, টিয়ার-৩ শহরগুলিকে বিমানপথে সংযুক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।ভারতে ১০০টিরও বেশি জাতীয় জলপথ নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলেছে।
বন্ধুগণ, এছাড়াও আজ ভারতে সকলের জন্য বাড়ি, সকলের জন্য বিদ্যুৎ, সকলের জন্য পরিবেশবান্ধব জ্বালানি, সকলের জন্য স্বাস্থ্য, সকলের জন্য ব্যাঙ্ক পরিষেবার মতো ভিন্ন ভিন্ন অনেক প্রকল্প নির্দিষ্ট লক্ষ্যপূরণের পথে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।অর্থাৎ, আজ বলা যায় যে, সার্বিক দৃষ্টিতে পরিবর্তনের এই গতি আপনাদের জন্যে ভারতে বিনিয়োগের সর্বোত্তম আবহ গড়ে তুলেছে।
সম্প্রতি শুরু হওয়া ‘আয়ুষ্মান যোজনা’ –র কর্মযজ্ঞ স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিনিয়োগের সম্ভাবনা গড়ে তুলেছে।এর ফলে দেশের টিয়ার-২, টিয়ার-৩ শহরগুলিতে নতুন নতুন হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, প্যারামেডিকেল মানবসম্পদ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে, প্যারামেডিকেল পরিকাঠামো শক্তিশালী হবে।আপনারা কল্পনা করতে পারেন যে, এই আয়ুষ্মান যোজনার মাধ্যমে দেশের ৫০ কোটি নাগরিককে বছরে ৫লক্ষ টাকা মূল্যের চিকিৎসার স্বাস্থ্যবিমার নিশ্চয়তা প্রদান করা হচ্ছে।অর্থাৎ, আমেরিকা, কানাডা আর মেক্সিকোর মিলিত জনসংখ্যার থেকে বেশি মানুষ এর দ্বারা উপকৃত হবেন।এখন এই পরিষেবা প্রদানের জন্য কতগুলি হাসপাতালের প্রয়োজন হবে, কত ডাক্তার লাগবে,কত বড় বিনিয়োগের সম্ভাবনা, আর রোগীদের চিকিৎসাবাবদ খরচের টাকা এখন থেকেই প্রস্তুত, আর সেজন্যে বিনিয়োগকারীদের টাকা উঠে আসার নিশ্চয়তা রয়েছে।এটা ভারতে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে পুঁজিনিবেশের একটি বড় সুযোগ, যা টিয়ার-২, টিয়ার-৩ শহরগুলিতে উন্নতমানের হাসপাতাল নির্মাণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলেছে।
বন্ধুগণ, আজ ভারতে পরিকাঠামো নির্মাণে যত টাকা খরচ করা হচ্ছে, আগে কখনও তা হয়নি।সেজন্যে বিনিয়োগের অসীম সম্ভাবনার পাশাপাশি লক্ষ লক্ষ নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে।সম্ভাবনা, নীতি এবং সুষ্ঠু বাস্তবায়ন, এটাই উন্নয়নের সূত্র।
নতুন ভারত বিনিয়োগের গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য আর ‘গন্তব্য উত্তরাখণ্ড’ এই পর্যায়ের একটি উজ্জ্বল অংশবিশেষ।উত্তরাখণ্ড দেশের সেই রাজ্যগুলির অন্যতম, যেখানে নতুন ভারত আমাদের জনসংখ্যা বিষয়ক লভ্যাংশের প্রতিনিধিত্ব করে। আজকের উত্তরাখণ্ড নবীন প্রজন্মের আশা- আকাঙ্ক্ষায় ভরা, প্রাণশক্তিতে ভরপুর।এই অসীম সম্ভাবনাকে সুযোগে রূপান্তরিত করতে ত্রিবেন্দ্র রাওয়াতের নেতৃত্বাধীন সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। ‘গন্তব্য উত্তরাখণ্ড’ –র এই মঞ্চ এই প্রচেষ্টারই বহিঃপ্রকাশ।এখন এই মঞ্চ থেকে যেসব কথা বলা হয়েছে, যে বিশ্বাস ব্যক্ত করা হয়েছে ,যত দ্রুত সম্ভব সেগুলি বাস্তবায়নের প্রয়োজন রয়েছে, যাতে উত্তরাখণ্ডের নবীন প্রজন্মের সর্বাধিক কর্মসংস্থান হয়।
বন্ধুগণ, শ্রদ্ধেয় অটল বিহারী বাজপেয়ীজি উত্তরাখণ্ড গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তখন পরিস্থিতি খুবই কঠিন ছিল। রাজনৈতিক অস্থিরতার পাশাপাশি উন্নত ভবিষ্যতের জন্য পাহাড়প্রমাণ সমস্যা ছিল। কিন্তু আজ উত্তরাখণ্ড উন্নয়নের পথে দ্রুতগতিতে ধাবমান।
বিগত চার বছরে ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে উৎসাহ প্রদানের জন্য, তাঁদের ক্ষমতায়ণের জন্য অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষুদ্র শিল্পকে বেশি ঋণ, সমর্থন পুঁজি, সুদে ছাড়, ন্যূনতম কর এবং উদ্ভাবনকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য এক কোটি টাকা অবধি ঋণ অত্যন্ত কম সময়ে মঞ্জুর করা হবে।
উত্তরাখণ্ডে যে কোনও প্রকল্প স্থাপনে বিনিয়োগকারীদের যাতে সরকারি দপ্তরগুলিতে জুতোর শুকতলা ক্ষয় না করতে হয় তা সুনিশ্চিত করতে অনেক ব্যবস্থাকে অনলাইন করা হয়েছে। পরিবেশ সুরক্ষা বিষয়ক ছাড়পত্র প্রদানের জন্য ‘অনলাইন ফরেস্ট ক্লিয়ারেন্স’ নামক একটি পোর্টাল কাজ করছে, যাতে ছাড়পত্র প্রদান প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুত হয়েছে।
বিগত চার বছরে উত্তরাখণ্ডে যোগাযোগ ব্যবস্থা বৃদ্ধির অনেক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মহাসড়ক, রেলপথ ও বিমানপথে যোগাযোগ উন্নত করার পাশাপাশি গ্রামগুলিতে পাকা সড়ক পৌঁছে দেওয়ার কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। শুধু তাই নয়, চারধাম ‘অল ওয়েদার রোড’ আর ঋষিকেশ – কর্ণপ্রয়াগ রেল লাইনের কাজও দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে।
বন্ধুগণ, যোগাযোগ ব্যবস্থা যত উন্নত হবে, পর্যটন তত উপকৃত হবে। এই রাজ্যের প্রাকৃতিক আকর্ষণ অতুলনীয়, তেমনি আস্থা ও সংস্কৃতির অনুপম মেলবন্ধন, নানা রোমাঞ্চকর ক্রীড়া ও অভিযান, নানা ধ্যানকেন্দ্রের সমাহারে উত্তরাখণ্ড একটি সম্পূর্ণ প্যাকেজ, একটি আদর্শ গন্তব্য। এখন তো উত্তরাখণ্ড সরকার স্বতন্ত্র পর্যটন নীতি প্রণয়ন করে পর্যটনকে একটি শিল্পের মর্যাদা প্রদান করেছে। ১৮ বছর পর প্রথমবারের মতো রাজ্যের ১৩টি জেলায় ১৩টি গন্তব্য চিহ্নিত করে উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে নিশ্চিতভাবেই, রাজ্যের যুবসম্প্রদায়ের অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে।
বন্ধুগণ, আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে রাজ্য সরকার এলাকা ভিত্তিক জৈব চাষে উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমে রাজ্যকে দ্রুত সম্পূর্ণ জৈব রাজ্য গড়ে তোলার পথে এগিয়ে চলেছে। জৈব চাষের মাধ্যমে উৎপন্ন শস্য, ফল ও শাকসব্জির বাজার সুনিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় সরকারও নানারকম ব্যবস্থা নিচ্ছে।
পাশাপাশি দেশে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ মঞ্জুর করা হয়েছে। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রেও ভারত এখন বিশ্বের অন্যতম অগ্রণী দেশ হয়ে উঠেছে। ধান, গম, ফল, সব্জি ও দুধ উৎপাদনের মতো অনেক ক্ষেত্রে ভারত বিশ্বে প্রথম তিনটি দেশের মধ্যে একটি স্থান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। আমাদের কৃষকদের এই পরিশ্রমের ফসল যাতে নষ্ট না হয়, তা সুনিশ্চিত করতে আমরা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণকে এতো গুরুত্ব দিচ্ছি। এক্ষেত্রেও উত্তরাখণ্ডের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।
আমি আপনাদের সবাইকে কৃষি ও কৃষিভিত্তিক ব্যবসায় বিনিয়োগের জন্য অনুরোধ করব। কৃষিজ পণ্যের মূল্য সংযোজন কৃষকদের আয় বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর আমি মনে করি যে আমরা যত বেশি কৃষি-ব্যবসায় বেসরকারি বিনিয়োগ করবো; খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, মূল্য সংযোজন, হিমঘর, গুদামীকরণ, পরিবহনের জন্য বিশেষ যানবাহন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ যত বৃদ্ধি পাবে, ভারতের গ্রামীণ অর্থনীতি তত শক্তিশালী হবে এবং ভারতের আর্থিক সামর্থ্য নতুন মাত্রা লাভের সম্ভাবনায় উজ্জ্বল হবে।
বন্ধুগণ, আজ পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভারত বিশ্বে নেতৃত্ব প্রদানের সামর্থ্য অর্জন করতে চলেছে। আমরা ঠিক করেছি যে ২০৩০ সালের মধ্যে আমরা মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ বিকল্প উৎস থেকে উৎপাদন করবো। শুধু তাই নয়, ২০২২ সালে আমরা যখন ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি পালন করবো, তার আগেই দেশে ১৭৫ গিগাওয়াট পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদনের লক্ষ্য স্থির করে আমরা এগিয়ে চলেছি। এর মধ্যে একটা বড় অংশ আসবে সৌর শক্তি থেকে। আন্তর্জাতিক সৌর সঙ্ঘ স্থাপনের ভাবনাও এই চিন্তা প্রক্রিয়ারই বৃহত্তর রূপ। বিশ্বের জ্বালানীর প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি পরিবেশ সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে আমাদের একটাই মন্ত্র – এক বিশ্ব, এক সূর্য, এক গ্রিড। উত্তরাখণ্ডেও পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদনের লক্ষ্যে রাজ্য সরকার নিরন্তর কাজ করে চলেছে। জলবিদ্যুৎ তো এই রাজ্যের অন্যতম প্রধান শক্তি ছিলই, এখন সৌরশক্তি উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় উত্তরাখণ্ড উদ্বৃত্ত শক্তির রাজ্য হয়ে ওঠার ক্ষমতা রাখে। উত্তরাখণ্ড ভারতকে শক্তি উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলার ক্ষমতা রাখে।
বন্ধুগণ, বিগত চার বছরে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ একটি বড় ব্র্যান্ড হয়ে উঠেছে। আমি চাই, এই ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ শুধু ভারতে নয়, সমগ্র পৃথিবীতে নাম করুক। বিশ্ববাসী আমাদের এই আমন্ত্রণ স্বীকার করেছে, ফলস্বরূপ তথ্য প্রযুক্তির পাশাপাশি ভারত এখন ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী নির্মাণের প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠছে। আজ বিশ্বের সর্ববৃহৎ মোবাইল ফোন নির্মাণ কারখানার পাশাপাশি ১২০টিরও বেশি কারখানা ভারতে উৎপাদনের কাজ করছে। বিশ্বের অনেক বড় ব্র্যান্ড এখন ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র অংশ।
তেমনই অটোমোবাইল ক্ষেত্রেও ভারত দ্রুতগতিতে উন্নতি করছে। আজকের অনুষ্ঠানে উত্তরাখণ্ডের অংশীদার হল জাপান। বন্ধুগণ আপনারা জেনে খুশি হবেন যে, জাপানের কোম্পানি, জাপানের গাড়ি আজ ভারতের কারখানায় তৈরি হচ্ছে, আর এখান থেকে উৎপাদিত গাড়ি জাপান নিজের দেশেই আমদানি করছে।
বন্ধুগণ, আজ এই অনুষ্ঠানে আমি আপনাদের সবাইকে এই সমস্ত ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে, উত্তরাখণ্ড তথা নতুন ভারতের উন্নয়নযাত্রায় অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানাই।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আগামী দু’দিনে যে মউ সাক্ষর হবে, তা অতি সত্ত্বরই বাস্তবায়িত হবে আর আমাদের রাজ্যগুলির সম্ভাবনাকে সর্বাধিক কাজে লাগাতে পারলে বিশ্বের কোনও শক্তি ভারতের উন্নয়নকে প্রতিহত করতে পারবে না! আর এটা অত্যন্ত আনন্দের কথা যে আজ রাজ্যগুলির মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। প্রত্যেক রাজ্য আজ অন্যের থেকে এগিয়ে যেতে চায়, নতুন নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে অন্যদের ছাপিয়ে যাওয়ার কথা ভাবে। আর কোনও রাজ্য যখন নিজস্ব ক্ষমতার ভিত্তিতে এগিয়ে যায়, তখন আমার মনে হয় সেই রাজ্য পিছিয়ে থাকতে পারে না। আমাদের অনেক রাজ্যের সামর্থ্য বিশ্বের অনেক দেশের থেকে বেশি।
আমার মনে পড়ে ২০০১ সালের ৭ই অক্টোবর, যেদিন প্রথম গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলাম, আমার কোনই অভিজ্ঞতা ছিল না, সরকার কী হয়, সেটাই ভালভাবে জানতাম না! একদম নতুন। সাংবাদিকরা পৌঁছে গেছে, তাঁরা আমাকে ছেঁকে ধরেছে! তাঁরা অপেক্ষায় যে আমি কোনও ভুল করলে, তেমন কোনও জবাব দিলে ভাল মতো চেয়ারে বসার আগেই আমাকে কিস্তিমাৎ করার চেষ্টা চলছিল! কেউ জিজ্ঞেস করেন, আপনি কেমন গুজরাট গড়তে চান? আপনার আদর্শ কে? কাকে দেখে আপনি এরকম কল্পনা করছেন? সাধারণতঃ এরকম সব প্রশ্নের জবাবে কেউ বলবেন, আমেরিকার মতো, অন্য কেউ হয়তো বলবেন যে, ইংল্যান্ডের মতো বানাতে চাই!
কিন্তু আমি তাদের ভিন্ন জবাব দিই। আমি তাদেরকে বলি যে, আমি গুজরাটকে দক্ষিণ কোরিয়ার মতো বানাতে চাই। তাঁরা কিছু বুঝতে না পারলে আমি বলি যে, আপনারা ক্যামেরা বন্ধ করুন, আমি ভালভাবে বুঝিয়ে বলবো! তারপর আমি ওদেরকে বলি যে, গুজরাট আর দক্ষিণ কোরিয়ার জনসংখ্যা প্রায় সমান, সেখানকার সমুদ্রতট আর আমাদের সমুদ্রতট প্রায় সমান; সে দেশের উন্নয়ন যাত্রার মানচিত্র আমি এত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করেছি যে আমার মনে হয় যে, সেই পথে চললেই আমরা এগোতে পারবো, আমরা থেমে পড়ব না!
আমি মনে করি যে ভারতের প্রত্যেক রাজ্যের নিজস্ব সামর্থ্য রয়েছে। তাঁরা বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যেতে পারে। ভারতের প্রত্যেক রাজ্য এই সামর্থ্য নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে, আমাদের নবীন প্রজন্মের সেই শক্তি আছে, সামর্থ্য আছে।
গত পরশু রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি এদেশে ছিলেন, আমরা একটি ভিন্ন ধরণের কর্মসূচিতে সামিল হয়েছি। রাশিয়ার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনি মানসিকভাবে যুক্ত, আমি যখন রাশিয়া সফরে গিয়েছিলাম, তখন আমাকে দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলেন। আমি তাকে বলি, ওই স্কুলের বাচ্চাদের একবার ভারতে নিয়ে আসুন! আমিও ভারতের কিছু বাচ্চাকে আপনাদের দেশে পাঠাতে চাই! তিনি আমার কথামতো এবার ভারতে আসার সময় ২০টি শিশুকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন। তাঁদের সঙ্গে ভারতের ২০টি বাচ্চা পাঁচ-ছ’দিন একসঙ্গে কাজ করেছে। এই পাচ-ছ’দিনের মধ্যে রাশিয়ান মন ও ভারতীয় মনের শিশুরা মিলেমিশে এমন অসাধারণ সব জিনিস বানিয়েছে যে, রাশিয়ার রাস্ট্রপতি তা দেখে অবাক হয়ে যান। আমাদের শিশুদের মধ্যে কত সম্ভাবনা রয়েছে, তারা সুযোগ পেলে অনেক কিছু করে দেখাতে পারে! আজ উত্তরাখণ্ড সেই পথে এক পা বাড়িয়েছে।
১৮ বছর বয়সের অনেক গুরুত্ব। উত্তরাখণ্ড চির-পুরাতন, কিন্তু উত্তরাখণ্ড সরকারের বয়স ১৮ বছর। ১৮ বছরের প্রাণশক্তি, ১৮ বছরের স্বপ্ন, নিজের মতো করে নতুন কিছু করে দেখানোর ইচ্ছে বিচিত্র হয়। উত্তরাখণ্ডেরও তাই এই মূল্যবান সময়কে ভালভাবে ব্যবহার করতে হবে। আর্থিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশ্বে স্পেশাল ইকনমিক জোন বা সেজ-এর ভূমিকার কথা আমরা কয়েক দশক ধরে শুনছি। কিন্তু উত্তরাখণ্ডে একটি ভিন্ন সেজ আছে, আর আমাদের মুনি-ঋষিদের শতাব্দীর পর শতাব্দী তপস্যা, মা গঙ্গা ও দেবাদিদেব হিমালয়ের উপস্থিতির ফলে এই স্পেশাল ইকোনোমিক জোন একটি স্পিরিচুয়াল ইকো জোন হয়ে ওঠায় এর সামর্থ্য লক্ষগুণ বেশি। সেদিকে লক্ষ্য রেখে উত্তরাখণ্ডের নিজস্ব প্রকল্পসমূহের বিস্তার ও উন্নয়নের কাজ করতে হবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, ত্রিবেন্দ্র সিংহ রাওয়াতের নেতৃত্বে এই ১৮ বছরের রাজ্যের সরকার এমন উন্নয়নের কাজ করবে, ১৮ বছরের প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা রাজ্যটি এমন নতুন উচ্চতা অতিক্রম করবে যে, ২০২৫ সালে আপনারা যখন রাজ্যের ২৫ বছর পূর্তি পালন করবেন, ততদিনে আপনাদের সমস্ত স্বপ্ন অবশ্যই সাকার হবে। এই মহা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একটি শুভ সূচনা হল। আমার অনেক অনেক শুভেচ্ছা আর আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই যে, কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে আপনারা পূর্ণ সহযোগিতা পাবেন।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।