যে যুব সম্প্রদায় এখানে বিরাট সংখ্যায় উপস্হিতরয়েছেন তাদের বলতে চাই, আমাদের মুখ্যমন্ত্রী আমাকে বলছিলেন যে আমি পাটনাবিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও অনুষ্ঠানে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে অংশগ্রহণ করছি। সেদিকথেকে দেখলে আমার মনে হয় যে আমার পূর্বসূরীরা আমার জন্য কিছু ভালো কাজ রেখে গেছেন।তাই আমি সেই কাজ করার সুযোগ পেয়েছি।
সর্বপ্রথমেই আমি এই পবিত্র ভূমিকে প্রণাম জানাই।কারণ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস দেশের উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকানিয়েছে। একটি বিখ্যাত চীনা প্রবাদে বলা হয়েছে : যদিতোমার স্বপ্ন এক বছরের হয়, তাহলে খাদ্যশস্য বপন কর। কিন্তু যদি তোমার স্বপ্ন ১০থেকে ২০ বছরের হয় তাহলে ফলের গাছ লাগাও। অন্যদিকে যদি তোমার স্বপ্ন হয় পরবর্তীপ্রজন্মের জন্য, তাহলে তোমাকে ভালো মানুষ তৈরি করতে হবে। পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় যেনএই প্রবাদকে সফল করেছে। ১০০ বছর আগে বীজ বপনের পর, এই ১০০ বছরের মধ্যে বেশ কয়েকপ্রজন্ম উঠে এসেছেন এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউরাজনীতিবিদ হয়েছেন অথবা পাঠ সমাপনের পর বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিষেবা দেওয়ার কাজ শুরুকরেছেন। আজ আমি বুঝতে পারি যে দেশের মধ্যে এমন কোনও রাজ্য হয়তো নেই যেখানে শীর্ষস্হানীয় পাঁচ জন প্রশাসনিক আধিকারিক বিহারের পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নন।
আমি সাধারণত ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের আধিকারিকদেরসঙ্গে কথা বলে থাকি। দৈনিক আমি প্রায় দু ঘন্টা ধরে ৮০ থেকে ১০০ জন মানুষের সঙ্গেকথা বলি এবং আমি বুঝতে পারি যে এইসব আধিকারিকদের মধ্যে বিরাট এক সংখ্যার মানুষেরাবিহারের। তাঁরা মা সরস্বতীর বর প্রাপ্ত। কিন্তু এখন সময় পরিবর্তন হয়েছে। বিহারেরওপর মা সরস্বতীর আশীর্বাদ রয়েছে। কিন্তু বিহারের মা লক্ষ্মীর-ও আশীর্বাদ প্রয়োজন।ভারত সরকার মা লক্ষ্মী এবং মা সরস্বতী, এই উভয় দেবীর-ই আশীর্বাদ নিয়ে বিহারকে একনতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই।
নীতীশজী বিহারের উন্নয়নের জন্য দায়বদ্ধ এবং ভারতসরকারও পূর্ব ভারতের উন্নয়নের জন্য দায়বদ্ধ। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ২০২২ সালের মধ্যেযেসময় ভারত তার স্বাধীনতার ৭৫-তম বর্ষ উদযাপন করবে, তার মধ্যে বিহারকে ভারতেরঅন্যান্য উন্নত রাজ্যগুলির পর্যায়ে উন্নীত করা।
পাটনা শহরটি মা গঙ্গার তীরে অবস্হিত। বিহারের জ্ঞানএবং ঐতিহ্য গঙ্গা নদীর মতোই প্রাচীন। ভারতের শিক্ষা ব্যবস্হার ইতিহাস নিয়ে কথাবলতে গেলে কেউই নালন্দা বা বিক্রমশীলার কথা ভুলতে পারেন না।
মানবজীবনের সংস্কারে সম্ভবত এমন কোনও ক্ষেত্র নেইযেখানে এই মাটির ছোঁয়া নেই। এই মহান ঐতিহ্যের ইতিহাস মানুষের কাছে অনুপ্রেরণার একউৎসস্বরূপ। যাঁরা এই সমৃদ্ধ ইতিহাসকে স্মরণ করতে পারেন, তাঁরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মেরকাছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন। কিন্তু যাঁরা তা ভুলে যান, তাঁরা বন্ধ্যা মানসিকতায়থেকে যান। তাই এর সৃষ্টি অত্যন্ত শক্তিশালী। এই মাটিতে এমন সব ধারনা গড়ে উঠেছেযার মধ্যে বিশ্বকে আলোকিত করার ক্ষমতা রয়েছে, কারণ এরমধ্যে রয়েছে ঐতিহাসিক এবংসাংস্কৃতিক ঐতিহ্য যা আজও জীবন্ত উদাহরণ হয়ে আছে। আমার মনে হয় অন্য কোথাও এইক্ষমতা বা সক্ষমতা আর নেই।
এমন একটা সময় ছিল যখন আমরা শেখার জন্য স্কুল এবংকলেজে যেতাম। কিন্তু এখন সেই দিন শেষ হয়ে গেছে। বর্তমানে বিশ্ব পরিবর্তিত হচ্ছে,পাল্টে যাচ্ছে ধ্যান-ধারনা এবং প্রযুক্তির সহায়তায় এমনকি জীবনযাত্রাও বদলে যাচ্ছে।এই সব তথ্যের প্রেক্ষিতে ছাত্ররাও বর্তমানে বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন। এইচ্যালেঞ্জটি নতুন কি শেখা হবে সে বিষয়ে নয়, বরং পুরনো সব বিষয় কিভাবে ভুলে যাওয়াহবে এবং নতুন বিষয়গুলি কিভাবে নতুন করে শিখতে হবে।
বিশ্ববিখ্যাত ‘ ফোর্বস ’ ম্যাগাজিন-এর মিস্টার ফোর্বস একটি আকর্ষনীয় সংজ্ঞাদিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্য হচ্ছে মগজকে খালি করা, আমাদের মনকেনতুন বিষয়ে পূর্ণ করে তোলা এবং নতুন কাজ করা। তিনি বলেছেন জ্ঞানের মাধ্যমে মগজকেখালি করতে হবে এবং চিন্তাধারাকে প্রসারিত করতে হবে। আমাদের চিন্তা ছিল আমাদেরমগজকে ভারি করে তোলা, বিভিন্ন বিষয়ে তা পূর্ণ করা। আমরা যদি প্রকৃত অর্থে পরিবর্তনআনতে চাই তাহলে আমাদের সবাইকে মানসিকতা প্রসারের জন্য উদ্যোগী হতে হবে যাতে নতুনধ্যান-ধারনা আমাদের মনে প্রবেশ করতে পারে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উচিতজ্ঞানার্জনের ব্যবস্হা করা, শুধুমাত্র শেখানো নয়। আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকেকিভাবে সেইদিকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব ?
মানবিক সংস্কৃতির বহুবছরের বিবর্তনের মধ্যে একটি ক্ষেত্রে স্হিরতা রয়েছে, সেটি হল উদ্ভাবন। প্রত্যেকযুগেই মানুষ তাদের জীবনচর্যায় কিছু না কিছু উদ্ভাবন করেছে। বর্তমানে এই উদ্ভাবনচলেছে এক প্রতিযোগিতামূলক সময়ের আবর্তে। বিশ্বের মধ্যে যেসব দেশ উদ্ভাবন ওউদ্ভাবনমূলক প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে কেবলমাত্র সেইসব দেশই এগিয়ে যেতে পারে।কিন্তু কেবলমাত্র কোনও বহিরঙ্গের পরিবর্তনকে সংস্কার বা সংশোধন হিসাবে ধরা যেতেপারে না। এই সময়ের দাবি হচ্ছে পুরনো প্রথা এবং বাতিল ধ্যান-ধারনাকে সরিয়ে ভবিষ্যতকেসুরক্ষিত করতে নতুন পথ খুঁজে বের করা। এছাড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নীতির সহায়তায় মানুষেরজীবনযাত্রার উন্নয়নের জন্য সহায় সম্পদের ব্যবস্হা করাও বিশেষ প্রয়োজন। আজকের দিনেপ্রত্যেকটি ক্ষেত্রকে প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে সংস্কার করতে হবে এবং সমাজকেওউদ্ভাবনী পদ্ধতি ব্যবহার করে এগিয়ে যেতে হবে। তাই বর্তমানে বিশ্বব্যাপীপ্রতিযোগিতার এই বাতাবরণে ভবিষ্যত প্রজন্মের চাহিদা মেটাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। বর্তমানে আমরা কেবলমাত্র আমাদের দেশের মধ্যেঅথবা প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গেই প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হইনি, এই প্রতিযোগিতা বর্তমানেবিশ্বায়িত হয়ে গেছে। তাই প্রতিযোগিতাকেও আমাদের চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিতে হবে। দেশকেযদি অগ্রগতি করতে হয়, নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে হয় এবং বিশ্বমঞ্চে আমাদের অবস্হানকেসংহত করে তুলতে হয়, তাহলে আমাদের যুব প্রজন্মকে উদ্ভাবনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতেহবে।
ভারত বিষয়ে বিশ্বেরদৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লবের রমরমার পর। তারআগে সারা বিশ্বে ভারতকে সাপুড়েদের দেশ হিসাবে দেখা হতো। ভারতকে বিশ্বের বিভিন্নস্হানে কালাজাদু, ভূত-পেত্নি এবং কু-সংস্কারের সঙ্গে যুক্ত বলে ধরা হতো। কিন্তুতথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লবের পর সমগ্র পৃথিবী আমাদের যুব প্রজন্মের প্রযুক্তিগত দক্ষতাদেখে বিস্মিত হয়েছিল। যখন ভারতের ১৮-২০ বছরের যুবকেরা তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রেতাদের দক্ষতা দেখাতে শুরু করে, তখনই বিশ্বের মানুষ অবাক হয়ে যায়। ভারত বিষয়ে তাদেরধারনা বদলে যায়।
বহুদিন আগে খুব স্পষ্টভাবেআমার তাইওয়ান সফরের কথা মনে পড়ে। সেই সময় আমি এমনকি মুখ্যমন্ত্রীও ছিলাম না এবংনির্বাচনের সঙ্গে কোনও যোগাযোগও ছিল না। আমি তাইওয়ান সরকারের আমন্ত্রণে ১০ দিনেরজন্য সেখানে গিয়েছিলাম। একজন দোভাষী আমাকে সাহায্য করতেন। ওই ১০ দিনে আমাদের মধ্যেখানিকটা বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল। ৬ অথবা ৮ দিন পর তিনি আমায় জিজ্ঞাসা করলেন যে আমাকেকোনও প্রশ্ন করা হলে, আমি কিছু মনে করবো কি না। আমি তাকে প্রশ্ন করার জন্যবলেছিলাম। তিনি অনেক ইতস্তত করেও আমাকে সেই প্রশ্ন আর জিজ্ঞাসা করতে পারেন নি। তাঁকেইতস্তত করতে দেখে আমি বলেছিলাম যে মন খুলে তিনি আমায় জিজ্ঞাসা করতে পারেন। তিনিছিলেন একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। তারপর তিনি আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, যে ভারতকি এখনও সেই সাপুড়ে, কালাজাদু এবং কু-সংস্কারের দেশ-ই আছে ! তিনি আমার দিকে তাকিয়েছিলেন। আমি তাকে বলেছিলামআমাকে দেখে আপনার কি মনে হচ্ছে। এই প্রশ্ন শুনে তিনি অপ্রস্তুত হয়ে আমার কাছেক্ষমা চান। আমি বলেছিলাম , ‘ নাভাই, এখন ভারত আর আগের মতো নেই এবং প্রকৃতপক্ষে এর এক ধরনের মূল্যায়ন হয়েছে। ’ তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন ‘ কিভাবে ?’ আমি বলেছিলাম, আমাদেরপূর্বপূরুষরা সাপ নিয়ে খেলতে অভ্যস্ত ছিলেন এবং আমাদের বর্তমান প্রজন্ম ইঁদুর নিয়েখেলতে অভ্যস্ত। তিনি বুঝেছিলেন আমি যে ইঁদুরের কথা বলছি, তা প্রাণী নয়, আসলেকম্পিউটারে ব্যবহৃত মাউস।
আমি যা বলতে চাইছি তা হলএইসব বিষয় দেশের শক্তিবৃদ্ধি করে। কখনও কখনও আমরা একটি বা দুটি প্রজেক্ট করেপুরস্কার পেতে পারি। কিন্তু সময়ের দাবি হচ্ছে ব্যাপকভাবে উদ্ভাবন করার। আমি যুবপ্রজন্মের কাছে, ছাত্রছাত্রীদের কাছে ও শিক্ষক মহাশয়দের কাছে আবেদন করতে চাই এবংপাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শতবর্ষ প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আবেদন জানাতে চাইযে বর্তমান ভারতের বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন নতুন উদ্ভাবন নিয়েএগিয়ে আসার জন্য। আমরা কি সুলভ, সস্তা, সহজ এবং সহজে ব্যবহারে উপযুক্ত প্রযুক্তিখুঁজে পাবো ? আমরাযদি এই ধরনের ছোট ছোট প্রকল্পকে উ ৎসাহিত করতে পারি, তাহলে এই প্রকল্পগুলি স্টার্ট-আপ উদ্যোগেপরিণত হবে। যুব প্রজন্ম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার জন্য এই ধরনের উদ্ভাবনকেস্টার্ট-আপ-এ উন্নীত করতে মুদ্রা যোজনায় ব্যাঙ্ক থেকে তহবিল ব্যবহার করতে পারেন।আপনারা কি কল্পনা করতে পারেন যে বর্তমানে ভারত বিশ্বের মধ্যে চতুর্থ বৃহত্তমস্টার্ট-আপ হাব হিসাবে গড়ে উঠেছে। ভারত এক্ষেত্রে শীর্ষ স্হান-ও অর্জন করতে পারে।যদি ভারতের প্রত্যেক যুবক-যুবতী স্টার্ট-আপ-এর জন্য নতুন ধারনাকে কাজে লাগাতেপারেন তাহলে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসতে পারে। তাই আমি ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকেবিশেষ করে পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়কে উদ্ভাবনকে উ ৎসাহিত করার জন্য আমন্ত্রণজানাই। আমাদের বিশ্বের মধ্যে এগিয়ে যাওয়া দরকার।
ভারতের প্রতিভার কোনও ঘাটতি নেই। ভারতের সৌভাগ্যহচ্ছে জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশ বা ৮০ কোটি ৩৫ বছরের কম বয়সের। ভারত যেন কম বয়সের এবংভারতের স্বপ্নও যেন যুবক বয়সের। আমার মনে হয়, যে দেশের মধ্যে এতো শক্তি লুকিয়েআছে, সেই দেশ যে কোনও সাফল্য অর্জন করতে পারে এবং যে কোনও স্বপ্ন পূরণ করতে পারে।
তাই নীতীশজি যে বিষয়টি এখনই বিস্তারিতভাবে সকলেরসামনে রাখায় আপনারা সকলেই হাততালি দিয়ে তার প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। কিন্তুআমার মনে হয় যে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় একটি পুরোনো ধারণা। আমি এই বিষয়টিকে আরওএকধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই এবং তাই আজ আমি এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে এসেছিআপনাদের সবাইকে আমন্ত্রন জানাতে। আমাদের দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কারের কাজঅত্যন্ত ধীরগতিতে এগোচ্ছে। আমাদের শিক্ষাজগতের মধ্যে পারস্পরিক মতপার্থক্য খুবইতীব্র। তাই প্রত্যেক পর্যায়েই সংস্কারের কাজের থেকে আরও বেশি সংখ্যায় সমস্যা উঠেআসছে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্হায় বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্হায় যে ধরনের উদ্ভাবনএবং সংস্কারের মাধ্যমে একে বিশ্বমানে উন্নীত করা যাবে তার যেন খানিকটা ঘাটতিরয়েছে। এই সরকার বেশ কিছু সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে। বেশকিছু সময় ধরে আমাদেরআই.আই.এমগুলির স্বায়ত্বশাসনের বিষয়ে বিতর্ক চলে আসছে। সরকার মনে করে এইসবপ্রতিষ্ঠানের জন্য প্রচুর অর্থ দেওয়া হয়ে থাকে কিন্তু তারা সরকারের কাছ থেকেকোনোরূপ নির্দেশ নেয়নি। আপনারা জেনে সুখী হবেন যে কয়েকবছর ধরে এ বিষয়ে বিতর্কের পরএই প্রথম আই.আই.এম-কে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে এবং পেশাদারদের জন্য খুলেদেওয়া হয়েছে। তবে অধিকাংশ সংবাদপত্রই এই বিষয় নিয়ে বিস্তারিত সংবাদ প্রকাশ করেনি।কিন্তু নিশ্চিতভাবেই এ বিষয়ে কয়েকটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এটা বেশ বড় একসিদ্ধান্ত যেমনটা পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় আই.এ.এস, আই.পি.এস. এবং আই.এফ.এস তৈরি করারজন্য সুবিদিত, অনুরূপভাবে দেশে আই.আই.এম-গুলি বিভিন্ন শিল্প সংস্হার সি.ই.ও. বাপ্রধান কার্যনির্বাহী আধিকারক তৈরি করার জন্য পরিচিত। তাই আমরা এই সমস্ত বিখ্যাতসংস্হাগুলিকে সরকারি আইনকানুন থেকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি বিশ্বাসকরি যে এখন যেহেতু আই.আই.এম গুলিকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তাকাজে লাগিয়ে এই প্রতিষ্ঠানগুলি দেশের আশা-আকাঙ্খা পূরণের লক্ষ্যে চেষ্টা চালিয়েযাবে। আমি আই.আই.এম-গুলিকে অনুরোধ করেছি যাতে প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় প্রাক্তনছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহন নিশ্চিত করা যায়।
আমি এটাও শুনেছি যে পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ধনীএবং আর্থিকভাবে সক্ষম প্রাক্তন ছাত্রদের বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের কাজের সঙ্গেযুক্ত করেছে। আপনারা নিশ্চয় দেখেছেন বিশ্বের শীর্ষস্হানীয় সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়েরপ্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকানিয়ে থাকে। এই উন্নয়ন যে শুধুমাত্র আর্থিক দিক থেকে তাই নয় মেধা, অভিজ্ঞতা,মর্যাদা এবং অবস্হানের দিক থেকেও ধরা হয়। আমরা সাধারণত প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদেরশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কিছু অনুষ্ঠানে আমন্ত্রন জানাই, তাদের মালা দিয়ে সম্মান জানাইতাদের কাছ থেকে কিছু অনুদান সংগ্রহ করি অথচ প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা নিজেরাই যেকোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য বিরাট শক্তির উৎস হয়ে উঠতে পারে। তাইবিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে তাদের যোগাযোগ শুধুমাত্র প্রতীকি না হয়ে আরও অনেক বেশিমাত্রার হওয়া উচিত।
এই কিছুক্ষণ আগে আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্রীয়বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকেই আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলছিলাম। আমি পাটনাবিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছি এই কাজে সংশ্লিষ্ট সকলকে আমন্ত্রণ জানাতে। ভারত সরকার দেশেরবিশ্ববিদ্যালয়গুলির সামনে এক স্বপ্ন তুলে ধরেছে। ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলি বিশ্বেরশীর্ষস্হানীয় পাঁচশোটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কোনও স্হান পায়নি। যে দেশের নালন্দা,বিক্রমশীলা, তক্ষশীলা এবং বল্লভীর মতো বিশ্ববিদ্যালয় ১৩০০-১৫০০ বছর আগে সমগ্রবিশ্বের ছাত্রছাত্রীদের আকর্ষন করত, সেই দেশের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের নামশীর্ষস্হানীয় পাঁচশোটি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় না থাকাটা যেন এক পরিহাসের মতো মনেহয়। আপনাদের কি মনে হয় না যে আমাদের এই কলঙ্ক মুছে ফেলে পরিস্হিতি পরিবর্তন করাউচিত ? আমাদের কেবলমাত্র পরিস্হিতিপরিবর্তন করতে হবে এবং তা বাইরে থেকে নয়। আমাদের এই কাজের লক্ষ্য স্হির করতে হবেএবং তা পূরণের লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়া উচিত। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য ভারত সরকারতাদের এক কর্মসূচীতে দশটি সরকারি এবং দশটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মোট কুড়িটিবিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানে উন্নীত করতে তাদের সরকারি নিয়মকানুন থেকে মুক্ত করারসিদ্ধান্ত নিয়েছে। এইসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে পাঁচ বছর ধরে দশ হাজার কোটি টাকাদেওয়া হবে। এই উদ্যোগ কোনও বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে ঘোষণাকরার থেকেও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কোনো রাজনীতিবিদ অথবা প্রধানমন্ত্রী বা কোনোমুখ্যমন্ত্রীর খেয়ালখুশি মতো এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে বেছে নেওয়া হবে না। সবার জন্যউন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে নির্বাচন করা হবে। দেশেরসমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে এই চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে তাদের কর্মদক্ষতা প্রমাণ করতেহবে। এই পদ্ধতিতেই দেশের শীর্ষস্হানীয় দশটি সরকারি ও দশটি বেসরকারীবিশ্ববিদ্যালয়কে নির্বাচন করা হবে। তৃতীয় পক্ষের পেশাদার সংস্হার মাধ্যমে চূড়ান্তনির্বাচিত করা হবে। রাজ্যসরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলি এই চ্যালেঞ্জ গোষ্ঠীরদায়িত্ব থাকবে। তাদের কাজের মূল্যায়ন করা হবে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে তাদের যাত্রাপথেররূপরেখার মূল্যায়ন করা হবে, এবং শীর্ষস্হানীয় দশটি বিশ্ববিদ্যালয়কে সরকারিনিয়মকানুনের কবল থেকে মুক্ত করে স্বায়ত্বশাসন প্রদান করা হবে। তারা নিজেরাই তাদেরউন্নতির পথের রূপরেখা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। এই সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকেইপাঁচ বছরে দশ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হবে। এই ধারণাটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়েরধারণা থেকেও আরও বেশ কয়েক ধাপ এগিয়ে। এটি বড় এক সিদ্ধান্ত, এবং পাটনাবিশ্ববিদ্যালয়কে এই চ্যালেঞ্জে পিছিয়ে পড়া উচিত হবে না। তাই আমি পাটনাবিশ্ববিদ্যালয়কে এই চ্যালেঞ্জ গ্রহনের জন্য আমন্ত্রণ জানাতে এসেছি। আমিবিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং তার অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের এগিয়ে এসে এই গুরুত্বপূর্ণকর্মসূচীতে এগিয়ে এসে অংশগ্রহণের জন্য অনুরোধ জানাই। আমার আশা যে মর্যাদাপূর্ণ এইপাটনা বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বমঞ্চে তাদের স্হান করে নেবে। আমি পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়কেএগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আপনাদের সহযোগিতা চাইছি। সবার জন্য আমার শুভেচ্ছা রইল।
আপনারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবার্ষিকী উদযাপনেরক্ষেত্রে আগামীদিনের জন্য যে লক্ষ্যস্হির করেছেন তা পূরণ করা উচিত। এই অনুভূতিরসঙ্গে আমি আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাই।