নমস্কার!
আজকের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ভূপেন্দ্রভাই প্যাটেলজি, আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য শ্রী মনসুখ মাণ্ডব্যজি, শ্রী পুরুষোত্তমভাই রুপালাজি, শ্রদ্ধেয় দর্শনা বেন, লোকসভায় আমার সাংসদ বন্ধু এবং গুজরাটে ভারতীয় জনতা পার্টির অধ্যক্ষ শ্রী সি আর পাটিলজি, সৌরাষ্ট্র প্যাটেল সেবা সমাজের অধ্যক্ষ শ্রী কানজি ভাই, সৌরাষ্ট্র প্যাটেল সেবা সমাজের সমস্ত সম্মানিত সদস্যগণ আর এই অনুষ্ঠানে বিপুল সংখ্যায় আগত আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা!
সৌরাষ্ট্র প্যাটেল সেবা সমাজ দ্বারা আজ বিজয়া দশমীর পুণ্য তিথিতে একটি পুণ্য কাজের শুভারম্ভ হচ্ছে। সেজন্য আমি আপনাদের সবাইকে এবং গোটা দেশকে বিজয়া দশমীর আন্তরিক শুভকামনা জানাই।
বন্ধুগণ,
রামচরিত মানস-এ প্রভু শ্রীরামের ভক্তদের সম্পর্কে এবং তাঁর অনুসরণকারীদের সম্পর্কে টিকা সহ অত্যন্ত বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। রামচরিত মানস-এ বলা হয়েছে –
“প্রবল অবিদ্যা তম মিটি জাই।
হারহিঁ সকল সলভ সমুদাঈ।।”
অর্থাৎ, ভগবান রামের আশীর্বাদে তাঁর অনুসরণকারীদের মন থেকে অবিদ্যা, অজ্ঞান এবং অন্ধকার মিটে যায়। যতসব নেতিবাচক শক্তি রয়েছে সেগুলি পরাজিত হয়, আর ভগবান রামকে অনুসরণ করার অর্থ হল – মানবতাকে অনুসরণ, জ্ঞানকে অনুসরণ! সেজন্য গুজরাটের মাটিতে বাপুজি রামরাজ্যের আদর্শ অনুসরণ করে চলা সমাজের কল্পনা করেছিলেন। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে গুজরাটের জনগণ সেই মূল্যবোধকে মজবুতভাবে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন, সেগুলিকে আরও শক্তিশালী করে তুলছেন। সৌরাষ্ট্র প্যাটেল সেবা সমাজ দ্বারা শিক্ষাক্ষেত্রের উন্নতিতে আজকের এই উদ্যোগ সমাজকে এগিয়ে নিয়ে চলারই একটি অংশ। আজ এখানে ছাত্রাবাসের প্রথম পর্যায়ের ভূমিপূজন সুসম্পন্ন হল।
আমাকে বলা হয়েছে যে, ২০২৪ সালের মধ্যে এই ছাত্রাবাস নির্মাণের উভয় পর্যায়ের কাজ সম্পূর্ণ করা হবে। এটি সম্পূর্ণ হলে অসংখ্য যুবক-যুবতী এখানে থেকে পড়াশোনা করবে এবং তারা জীবনে একটি নতুন লক্ষ্যের সন্ধান পাবে। তাদের নিজের নিজের স্বপ্নগুলি বাস্তবায়নের সুযোগ পাবে। আমি এই সমস্ত উদ্যোগের জন্য সৌরাষ্ট্র প্যাটেল সেবা সমাজকে এবং বিশেষভাবে এর অধ্যক্ষ শ্রী কানজি ভাইকে ও তাঁর টিমের সমস্ত সক্রিয় সদস্যদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। আমি এটা ভেবে অত্যন্ত আনন্দিত যে এই সেবার কাজে সমাজের প্রত্যেক শ্রেণীকে সঙ্গে নিয়ে চলার চেষ্টা রয়েছে। এটা অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ।
বন্ধুগণ,
যখন আমি ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে এই ধরনের সেবার কাজ দেখি, তখন আমার গর্ব হয়। গুজরাট কিভাবে সর্দার প্যাটেলের ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে – তা ভেবে গর্বিত হই। সর্দার সাহেব বলেছিলেন … … আর সর্দার সাহেবের বাক্যগুলি আমাদের নিজেদের জীবনে বাঁধিয়ে রেখে অনুসরণ করার মতো। সর্দার সাহেব বলেছিলেন, “জাতি এবং ধর্মকে আমাদের অগ্রগতির পথে বাধা সৃষ্টি করতে দিলে চলবে না। আমরা সকলেই ভারতের পুত্র এবং কন্যা। আমাদের সকলের মনেই দেশের প্রতি প্রেম থাকতে হবে, পারস্পরিক ভালোবাসা এবং সহযোগিতার মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণ করতে হবে।” আমি নিজে এর সাক্ষী; আমি অনুভব করেছি, সর্দার সাহেবের এই ভাবনাগুলি কিভাবে গোড়া থেকেই গুজরাটের উন্নয়নকে মজবুত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। দেশ সবার আগে! – এটাই আজ সর্দার সাহেবের সন্তানদের জীবনের মন্ত্র। আপনারা বিশ্বের যে কোনও জায়গাতেই যান না কেন, আপনারা সব জায়গায় গুজরাটবাসীদের এই জীবন-মন্ত্র মেনে চলতে দেখতে পাবেন।
ভাই ও বোনেরা,
ভারত এই সময় তার স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষে পদার্পণ করেছে। এই অমৃতকাল আমাদের নতুন নতুন সঙ্কল্পের পাশাপাশি সেই মনীষীদেরও মনে করার প্রেরণা যোগায়, যাঁরা গণচেতনা জাগ্রত করার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেছে। আজকের প্রজন্মকে তাঁদের সম্পর্কে অবহিত করা অত্যন্ত প্রয়োজন। আজ গুজরাট যে উচ্চতায় পৌঁছেছে তার পেছনে এরকম অনেক মানুষের তপস্যা, ত্যাগ এবং তিতিক্ষা রয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষাক্ষেত্রে এমন সব ব্যক্তিত্ব পথ দেখিয়ে গেছেন, যাঁরা গুজরাটের শিক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
আমরা সবাই হয়তো একজন মহাপুরুষ সম্পর্কে জানি। উত্তর-গুজরাটে তাঁর জন্ম। আজ গুজরাটের প্রত্যেক প্রান্তে তিনি এক প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তি। সেই মহাপুরুষের নাম শ্রী ছগনভা। ছগনভার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে, শিক্ষাই সমাজের সশক্তিকরণের সবচাইতে বড় মাধ্যম। আপনারা কল্পনা করতে পারেন, আজ থেকে ১০২ বছর আগে ১৯১৯ সালে তিনি কডী-তে সর্ববিদ্যালয় কেলভণী মণ্ডল স্থাপন করেছিলেন। এটি অত্যন্ত দূরদৃষ্টিসম্পন্ন কাজ ছিল। ছগনভার জীবনের মন্ত্র ছিল – “ভালো করুন, ভালো হবে।” এই প্রেরণা থেকেই তিনি পরবর্তী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ গঠনের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। ১৯২৯ সালে যখন গান্ধীজি ছগনভা-জির সর্ববিদ্যালয় কেলভণী মণ্ডল সফরে এসেছিলেন, তখন তিনি বলেছিলেন, “ছগনভা অনেক বড় সেবার কাজ করছেন!” তিনি জনসাধারণের কাছে আবেদন রেখেছিলেন, যাতে তাঁরা বেশি করে নিজেদের ছেলে-মেয়েকে ছগনভার প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য পাঠান!
বন্ধুগণ,
দেশের পরবর্তী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ গঠনের জন্য নিজের বর্তমানকে সমর্পণ করা এরকম আরেকজন মনীষীর কথা আমি বলতে চাইব, তিনি ছিলেন ভাইকাকা। ভাইকাকা আনন্দ এবং খেরার চারপাশের এলাকায় শিক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য অনেক কাজ করেছিলেন। ভাইকাকা নিজে ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। তাঁর পেশা খুব ভালোই চলছিল। কিন্তু সর্দার সাহেবের ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি চাকরি ছেড়ে দেন আর আমেদাবাদ মিউনিসিপালিটিতে কাজ করার জন্য চলে আসেন। কিছুদিন পর তিনি চরোতর চলে যান। চরোতর-এর আনন্দ-এ তিনি চরোতর এডুকেশন সোসাইটির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে তিনি চরোতর বিদ্যামণ্ডলের সঙ্গেও যুক্ত হয়েছিলেন। সেই সময় ভাইকাকা একটি গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন দেখেছিলেন। এটি একটি এমন বিশ্ববিদ্যালয়, যেটি গ্রামেই গড়ে উঠবে, আর যার শিক্ষা ব্যবস্থার কেন্দ্রে থাকবে গ্রামোন্নয়ন ও গ্রামীণ ব্যবস্থা। এই ভাবনা থেকে প্রেরণা নিয়েই তিনি সর্দার বল্লভভাই বিদ্যাপীঠ নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। এরকমই আরেকজন এগিয়ে থাকা মানুষ ছিলেন ভিখাভাই প্যাটেল। তিনি ভাইকাকা এবং সর্দার প্যাটেলের সঙ্গে সহযোগী হিসেবে কাজ করেছিলেন।
বন্ধুগণ,
যাঁরা গুজরাট সম্পর্কে কম জানেন, তাঁদেরকে আজ বল্লভভাই বিদ্যানগর সম্পর্কেও জানাতে চাই। আপনাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো জানেন যে এই স্থানটি রয়েছে করমসদ-বাকরোল এবং আনন্দ-এর মাঝখানে। রাজ্যে শিক্ষার প্রসারের জন্য এই অঞ্চলটিকে বিকশিত করা হয়েছিল। গোটা এলাকার গ্রাম বিকাশের কাজ দ্রুত করা হয়েছিল। বল্লভভাই বিদ্যানগরের সঙ্গে সিভিল সার্ভিসের বিখ্যাত আধিকারিক এইচ এম প্যাটেলজিও যুক্ত ছিলেন। সর্দার সাহেব যখন দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ছিলেন, তখন এইচ এম প্যাটেলজি তাঁর অনেক ঘনিষ্ঠ প্রশাসক ছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি জনতা পার্টি সরকারের সময় কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থমন্ত্রীও হয়েছিলেন।
বন্ধুগণ,
এরকম অনেকের নাম আমার আজকে মনে পড়ছে। সৌরাষ্ট্রের কথা যদি বলি, তাহলে আমাদের মোহনলাল লালজিভাই প্যাটেলের কথা বলতে হয় - যাঁকে আমরা মোলা প্যাটেল নামে জানতাম। মোলা প্যাটেল সৌরাষ্ট্রে একটি বিশাল বিদ্যায়তনিক পরিসর তৈরি করেছিলেন। একদিকে মোহন ভাই বীরজিভাই প্যাটেলজি আজ থেকে ১০০ বছর আগে ‘প্যাটেল আশ্রম’ নামক একটি ছাত্রাবাস স্থাপন করে আম্রেলির শিক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার কাজ করেছিলেন। জামনগরে কেশাবাজি ভাই আরজিভাই ভিরানি এবং করশন ভাই বেচরভাই ভিরানি – এঁরা অনেক দশক আগে রাজ্যের কন্যাসন্তানদের শিক্ষিত করার ইচ্ছা নিয়ে বিদ্যালয় এবং ছাত্রাবাস তৈরি করেছিলেন। আজ নাগিনভাই প্যাটেল, সাকলচন্দ প্যাটেল, গণপতভাই প্যাটেলের মতো মানুষদের আপ্রাণ প্রচেষ্টায় গুজরাটের নানা স্থানে অনেকগুলি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। আজকের এই পবিত্র দিনটিতে এই মহাপুরুষদের কথা মনে করার উপযুক্ত দিন। আমরা এরকম সমস্ত ব্যক্তিদের জীবনগাথা যদি দেখি, তাহলে বুঝতে পারব যে কিভাবে ছোট ছোট প্রচেষ্টার মাধ্যমে তাঁরা বড় বড় লক্ষ্য বাস্তবায়নের পথ দেখিয়েছেন। তাঁদের বিভিন্ন উদ্যোগের এই সামগ্রিকতা দেশে ও বিশ্বে বড় বড় সাফল্য অর্জনের পথ দেখিয়েছে।
বন্ধুগণ,
আপনাদের সকলের আশীর্বাদে আজ আমার মতো অত্যন্ত সামান্য ব্যক্তিও জীবনের পথে এগিয়ে যেতে পেরেছি, যার কোনও পারিবারিক বা রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ছিল না, কোনও জাতিবাদী রাজনীতির সুযোগ ছিল না। এরকম সামান্য ব্যক্তিকেও আপনাদের আশীর্বাদ ২০০১ সালে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ দিয়েছে। আপনাদের আশীর্বাদের শক্তি এতটাই বড় যে, আজ ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমার প্রথমে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে, আর তারপর দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশকে সেবা করার সৌভাগ্য হয়েছে।
বন্ধুগণ,
‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’- এর সামর্থ্য কেমন হয় এটা আমি গুজরাট থেকেই শিখেছি। এক সময় গুজরাটে ভালো স্কুলের অভাব ছিল। ভালো শিক্ষার জন্য শিক্ষকেরও অভাব ছিল। উমিয়ামাতার আশীর্বাদ নিয়ে, খোরলধাম দর্শন করে আমি এই সমস্যার সমাধানের জন্য জনগণের সাহায্য চাই, জনগণকে নিজের সঙ্গে যুক্ত করি। আপনাদের হয়তো মনে আছে, এই পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য গুজরাটে আমি ‘প্রবেশোৎসব’-এর সূত্রপাত করেছিলাম। স্কুলগুলিতে শিক্ষাদানের উৎকর্ষ বৃদ্ধির জন্য ‘সাক্ষরদীপ’ এবং ‘গুণোৎসব’ও শুরু করেছিলাম।
তখন গুজরাটের স্কুলগুলিতে মেয়েদের ড্রপ-আউট একটা বড় সমস্যা ছিল। একটু আগেই আমাদের গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্রভাই প্যাটেলজি একথা সবিস্তারে বলেছেন। এর বেশ কিছু সামাজিক কারণ তো ছিলই, কিছু ব্যবহারিক কারণও ছিল। যেমন মেয়েরা চাইলেও অনেকে স্কুলে যেতে পারত না, কারণ স্কুলগুলিতে মেয়েদের জন্য শৌচালয় ছিল না। এই সমস্যা সমাধানের জন্য গুজরাটের পঞ্চশক্তি থেকে আমি প্রেরণা সংগ্রহ করি। এই পঞ্চশক্তিকে আমরা পঞ্চামৃতও বলতে পারি। এই পঞ্চশক্তি হল – জ্ঞানশক্তি, জনশক্তি, জলশক্তি, জ্বালানীশক্তি এবং রক্ষাশক্তি! রাজ্যের স্কুলগুলিতে মেয়েদের জন্য শৌচালয় তৈরি করা হয়। বিদ্যালক্ষ্মী বন্ড, সরস্বতী সাধনা যোজনা, কস্তুরবা গান্ধী বালিকা বিদ্যালয় – এরকম নানা প্রচেষ্টার পরিণামে গুজরাটে শিক্ষার উৎকর্ষ বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি, স্কুলছুটের হারও দ্রুতগতিতে হ্রাস পায়।
আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে আজ মেয়েদের পড়াশোনার জন্য, তাঁদের ভবিষ্যৎ গঠনের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়মিত বাড়ছে। আমার মনে পড়ে, সমস্ত গুজরাটের মধ্যে আপনারাই সুরাটে প্রথম ‘বেটি বাঁচাও’ অভিযান শুরু করেছিলেন। আমার এটাও মনে আছে, সেই সময় আমি আপনাদের সমাজের মানুষদের মধ্যে আসতাম, আর এই ধরনের তিক্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করতাম। আপনারা খুশি হয়ে শুনতেন কি রাগ করে শুনতেন, সেদিকে লক্ষ্য না দিয়ে আমি মেয়েদের জীবনরক্ষার স্বার্থে, তাঁদের জীবনের উন্নতির স্বার্থে অনেক কড়া কথা বলেছি। আজ আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে আপনারা সবাই আমার কথা মেনে চলেছেন, আর আপনারা সুরাটে যে আন্দোলনের শুভ সূচনা করেছিলেন, সেটি আজ সমগ্র গুজরাটে ছড়িয়ে পড়েছে। আপনারা সমাজের প্রত্যেক প্রান্তে মেয়েদের রক্ষার জন্য মানুষকে শপথ নিতে প্রেরণা যুগিয়েছেন। আমিও আপনাদের এই মহাপ্রয়াসে আপনাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। আপনারা অনেক বড় উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সুরাটে ‘রক্ষাশক্তি ইউনিভার্সিটি’ গড়ে উঠেছে। একটু আগেই মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্রভাই অত্যন্ত বিস্তারিতভাবে এই বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে বলছিলেন। আমি এ বিষয়ে কিছু কথা বলতে চাই, যাতে আজ আমাদের দেশের মানুষ, যাঁরা এই অনুষ্ঠান দেখছেন - তাঁরাও জানতে পারেন। গুজরাট অনেক কম সময়ের মধ্যে ‘রক্ষাশক্তি ইউনিভার্সিটি’ গড়ে তোলে; এটি বিশ্বের প্রথম ফরেন্সিক সায়েন্স ইউনিভার্সিটি। এর পাশাপাশি, ল’ ইউনিভার্সিটি বা আইন বিশ্ববিদ্যালয়, দীনদয়াল এনার্জি ইউনিভার্সিটি বা জ্বালানী বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্বের প্রথম চিলড্রেন্স ইউনিভার্সিটি বা শিশু বিশ্ববিদ্যালয়, টিচার্স ট্রেনিং ইউনিভার্সিটি বা শিক্ষক শিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়, স্পোর্টস ইউনিভার্সিটি বা ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয়, কামধেনু ইউনিভার্সিটি – এরকম ব্যতিক্রমী উদ্ভাবনের শুভ সূচনা করে গুজরাট দেশকে নতুন পথ দেখিয়েছে। আজ এ সকল উদ্যোগের ফলে গুজরাটের নতুন প্রজন্ম উপকৃত হচ্ছে। আমি জানি, আপনাদের মধ্যে অধিকাংশই এগুলি সম্পর্কে জানেন, আর একটু আগেই ভূপেন্দ্রভাইও বলেছেন। কিন্তু আজ আমি আপনাদের সামনে আবার বললাম, কারণ, যেসব উদ্যোগে আপনারা আমাকে সাহায্য করেছেন, আর আমার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হেঁটেছেন, আপনারা কখনও পিছন ফিরে তাকাননি। এসব উদ্যোগের অভিজ্ঞতাই আজ দেশে বড় বড় পরিবর্তন আনছে।
বন্ধুগণ,
আজ নতুন জাতীয় শিক্ষানীতির মাধ্যমে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকেও আধুনিক করে তোলা হচ্ছে। নতুন জাতীয় শিক্ষানীতিতে বিভিন্ন পেশাগত পাঠ্যক্রমে স্থানীয় ভাষা বা মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের বিকল্প দেওয়া হয়েছে। অনেক কম মানুষ এটা বুঝতে পারছেন যে এর ফলে সমাজে কত বড় পরিবর্তন আসতে চলেছে। গ্রামের গরীব বাড়ির শিশুরাও এখন লেখাপড়া করে বড় হয়ে তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে পারবে। ভাষার কারণে তাদের জীবনে এখন আর কোনও প্রতিকূলতা আসবে না! এখন পড়াশোনার মান আর ডিগ্রি অর্জন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নেই। কারণ, পড়াশোনাকে দক্ষতা উন্নয়নের সঙ্গেও যুক্ত করা হচ্ছে। দেশ তার পারম্পরিক পেশার দক্ষতাগুলিকেও এখন নানা আধুনিক সম্ভাবনার সঙ্গে যুক্ত করছে।
বন্ধুগণ,
দক্ষতার গুরুত্ব কী, কারা এই গুরুত্বকে আরও বেশি করে বুঝতে পারেন? এক সময় আপনাদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষ সৌরাষ্ট্রে নিজেদের বাড়ি ছেড়ে, নিজেদের চাষের খেত ছেড়ে, বন্ধুবান্ধব ছেড়ে হীরের খনিতে গিয়ে কাজ করতেন, কিংবা হীরে ঘষার কাজ করার জন্য সুরাটে পৌঁছেছিলেন। একটি ছোট ঘরে ৮-১০জন করে অনেক কষ্টে থাকতেন। কিন্তু আপনাদের দক্ষতাই আজ আপনাদের এত উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে, আর পাণ্ডুরংগ শাস্ত্রীজি, সেজন্যই তো আপনাকে ‘রত্ন কলাকার’ বলা হয়েছে। আমাদের কানজি ভাই নিজেই এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তিনি নিজের বয়সের চিন্তা না করে পড়াশোনা চালিয়ে যান, নতুন নতুন দক্ষতা অর্জন করতে থাকেন, আর হয়তো আজও দেখা হলেই জিজ্ঞাসা করবেন – “ভাই পড়াশোনা করছেন? নিশ্চয়ই কিছু না কিছু করছেন।” এই বিদ্যোৎসাহ অনেক বড় কথা।
বন্ধুগণ,
দক্ষতা এবং বাস্ত ব্যবস্থা – এই দুটিকে মিলিয়ে আজ নতুন ভারতের ভিত্তি স্থাপন করা হচ্ছে। ‘স্টার্ট-আপ ইন্ডিয়া’র সাফল্য আমাদের সামনে রয়েছে। আজ ভারতের স্টার্ট-আপগুলি সারা বিশ্বে নিজেদের পরিচিতি স্থাপন করছে। আমাদের ইউনিকর্নগুলির সংখ্যা রেকর্ড স্থাপন করেছে। করোনার কঠিন সময় পেরিয়ে এসে আমাদের অর্থনীতি এত দ্রুত পুনরুদ্ধার হয়েছে যে সারা পৃথিবীতে ভারতকে নিয়ে আশার সঞ্চার হয়েছে। সম্প্রতি একটি বিশ্ব সংস্থা বলেছে যে ভারত আবার বিশ্বের সর্বাপেক্ষা দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলা অর্থনীতির দেশ হয়ে উঠতে চলেছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, দেশ গঠনের ক্ষেত্রে গুজরাট নিজেদের প্রচেষ্টার মাধ্যমে বরাবরের মতোই সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান দখল করে থাকবে, সবচাইতে ভালো কাজ করবে। এখন তো ভূপেন্দ্রভাই প্যাটেলজি এবং তাঁর গোটা টিম একটি নতুন প্রাণশক্তি নিয়ে গুজরাটের উন্নয়নের এই অভিযানে সামিল হয়েছেন।
বন্ধুগণ,
এমনিতে ভূপেন্দ্র ভাইজির নেতৃত্বে নতুন সরকার গড়ে ওঠার পর আজ প্রথমবার আমি এত বিস্তারিতভাবে গুজরাটের জনগণকে সম্বোধন করার সুযোগ পেয়েছি। একজন বন্ধু কর্মকর্তা হিসেবে ভূপেন্দ্রভাই-এর সঙ্গে আমার পরিচয় ২৫ বছরেরও বেশি হয়ে গেছে। এটা আমাদের সকলের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয় যে ভূপেন্দ্রভাই এমন একজন মুখ্যমন্ত্রী, যিনি প্রযুক্তি সম্পর্কে জানেন এবং মাটি সম্পর্কেও ততটাই জানেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, তাঁর এই ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করার অভিজ্ঞতা গুজরাটের উন্নয়নে অনেক কাজে আসবে। কখনও একটি ছোট্ট পুরসভার সদস্য হিসেবে কাজ শুরু করে তারপর নগরপালিকার অধ্যক্ষ, তারপর আমেদাবাদ মহানগরের কর্পোরেটর, তারপর আমেদাবাদ মহানগর পৌরসভার স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান। তারপর ঔদা-র মতো প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান রূপে প্রায় ২৫ বছর ধরে অখণ্ডরূপে তিনি তৃণমূলস্তরে প্রশাসনকে দেখেছেন, কাজ করেছেন, বিভিন্ন স্তরে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আমি আনন্দিত যে আজ এরকম একজন অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তি এ রাজ্যের উন্নয়ন যাত্রাকে দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য গুজরাটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
বন্ধুগণ,
আজ প্রত্যেক গুজরাটি এ বিষয়টি নিয়ে গর্ব অনুভব করেন যে এত দীর্ঘ সময় ধরে সার্বজনিক জীবনযাপন সত্ত্বেও, এত বড় বড় পদে কাজ করা সত্ত্বেও, ২৫ বছর ধরে এ ধরনের কাজের অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও ভূপেন্দ্রভাই-এর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নিয়ে কোনও অভিযোগ কিম্বা বিবাদ নেই। ভূপেন্দ্রভাই অনেক কম কথার মানুষ, কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে কোনও ত্রুটি রাখেন না। একজন নীরব কর্মীর মতো কাজ করে যাওয়া তাঁর কর্মপদ্ধতির অংশ। অনেক কম মানুষই জানেন যে ভূপেন্দ্রভাই-এর পরিবার সর্বদাই আধ্যাত্মবাদের প্রতি সমর্পিত। তাঁর বাবাও আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এমন উত্তম শিষ্টাচার-সম্পন্ন ভূপেন্দ্রভাই-এর নেতৃত্বে গুজরাট সমস্ত ক্ষেত্রে উন্নতি করবে।
বন্ধুগণ,
আমার একটি অনুরোধ রয়েছে। যাঁরা আজ স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব পালন করছেন তাঁদের প্রতি অনুরোধ। আসুন, এই অমৃত মহোৎসবে আমরা সবাই কিছু সঙ্কল্প নিই, দেশকে কিছু দেওয়ার অভিযান শুরু করি। এই মিশন এমন হবে, যার প্রভাব গুজরাটের কোণায় কোণায় পরিলক্ষিত হওয়া উচিৎ। যত সামর্থ্য আপনাদের মধ্যে রয়েছে, আমি জানি আপনারা সবাই মিলে এটা অবশ্যই করতে পারবেন। আমাদের নতুন প্রজন্ম দেশের জন্য, সমাজের জন্য বাঁচার শিক্ষা যেন পায়, সেই প্রেরণাও আপনাদের বিভিন্ন উদ্যোগের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠা উচিৎ। তবেই সেবার মাধ্যমে সিদ্ধির মন্ত্র নিয়ে চলতে থাকা আমাদের গুজরাটকে, আমাদের দেশকে নতুন নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিতে পারবেন। দীর্ঘ ব্যবধানের পর আপনাদের মাঝে আসার সৌভাগ্য হয়েছে। এখানে আমি প্রযুক্তির মাধ্যমে ভার্চ্যুয়ালি আপনাদের সবাইকে দেখতে পাচ্ছি। সমস্ত পুরনো চেহারা আমার সামনে রয়েছে।
আপনাদের সবাইকে শুভকামনা জানাই। সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।