দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
আমি উত্তর প্রদেশের নির্বাচিত সাংসদ, সেজন্য সবার আগে উত্তর প্রদেশের জনপ্রতিনিধি হিসাবে আপনাদের সকলকে হৃদয় থেকে স্বাগত জানাই। আপনারা দেশের নানা প্রান্ত থেকে এসেছেন। আমি নিশ্চিত যে, আপনারা এই ঐতিহাসিক নগরী লক্ষ্ণৌর সসম্মান আতিথেয়তার আনন্দ উপভোগ করছেন। বন্ধুগণ, আপনারা সবাই এই পরিবর্তনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ, উন্নয়নের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপায়ণকারী মানুষ। কেউ মেয়র, কেউ কমিশনার আবার কেউ সিইও; আপনারা দেশের সেই শহরগুলির প্রতিনিধি, যেগুলি নতুন শতাব্দী, নতুন ভারত ও নতুন প্রজন্মের আশা–আকাঙ্খার প্রতীক। বিগত তিন বছর ধরে আপনারা আমাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কোটি কোটি মানুষের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করে তুলছেন।
কিছুক্ষণ আগে এখানে আয়োজিত প্রদর্শনীটি দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। এখানে সারা দেশে চালু প্রকল্পগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করা হচ্ছে। স্মার্টসিটি মিশনে উন্নতমানের কাজে সফল কয়েকটি শহরকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। এছাড়া, কিছু ভাই-বোন ও কন্যার হাতে তাঁদের নিজস্ব বাড়ির চাবি তুলে দেওয়া হয়েছে। সেই চাবি হাতে নিয়ে তাঁদের মুখে যে আনন্দ আমরা দেখেছি, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য আত্মবিশ্বাস তাঁদের চোখে দেখতে পেয়েছি, তা আমাদের সকলের জন্য প্রেরণার বিষয়।
এই মঞ্চে এসে এরকম অনেক সুবিধাভোগীর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়েছি। দেশের গরিব, গৃহহীন ভাই-বোনদের জীবনকে বদলানোর এই সুযোগ এবং পরিবর্তনকে প্রত্যক্ষ করা, প্রকৃত অর্থে আমার জীবনে অত্যন্ত সন্তোষ প্রদানকারী অনুভব। যে শহরগুলি পেয়েছে, সেই শহরগুলির প্রত্যেক নাগরিক আর যাঁরা নিজের বাড়ি পেয়েছেন, তাঁদের সবাইকে আমার পক্ষ থেকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
কিন্তু আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন, যখন আমি পুরস্কার দিচ্ছিলাম, একে একে সবাই আসছিলেন, তাঁদের মধ্যে শুধু দু’জন মেয়রই ছিলেন পুরুষ আর বাকিরা মহিলা। আমাদের বোনেরা যে আন্তরিকতা নিয়ে এই কাজ সম্পন্ন করেছেন, তাঁদের জন্য সবাই হাততালি দিন।
বন্ধুগণ, শহরের গরীব, গৃহহীনদের পাকা বাড়ি করে দেওয়া অভিযান থেকে শুরু করে ১০০টি স্মার্টসিটি নির্মাণের কাজ, ৫০০টি অম্রুত নগরী; কোটি কোটি দেশবাসীর জীবনকে সরল, সুগম ও নিরাপদ করে তোলার আমাদের সম্পর্ক প্রত্যেক তিন বছরে আরও শক্তিশালী হয়েছে। আজও এখানে উত্তর প্রদেশের শহরগুলিকে স্মার্টসিটি করে তোলার অনেক প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে যে, স্মার্টসিটি অভিযানের মাধ্যমে সারা দেশে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগে প্রকল্পের কাজ এখানে সম্পূর্ণ হয়েছে। আর ৫২ হাজার কোটি টাকারও বেশি প্রকল্পের কাজ এখন তীব্রগতিতে এগিয়ে চলেছে। এই প্রকল্পের লক্ষ্য হ’ল শহরে বসবাসকারী গরিব, নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত মানুষদের জীবনকে সহজ করে তোলা, তাঁদের উন্নততর নাগরিক পরিষেবা প্রদান। স্মার্টসিটিগুলিতে এই ৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পগুলি সম্পূর্ণ হয়েছে। আর ৫২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে প্রকল্পগুলির কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। এই অভিযানের লক্ষ্য হ’ল শহরে বসবাসকারী গরিব, নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত মানুষদের জীবনকে সহজ করা, তাঁদের উন্নত নাগরিক পরিষেবা প্রদান। স্মার্টসিটিতে এই পরিষেবাগুলি প্রদানের জন্য ইন্টিগ্রেটেড কমান্ড সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে, যা আত্মার মতো গোটা শহরের ব্যবস্থাসমূহ সঞ্চালিত করবে, শহরের গতিবিধির ওপর নজর রাখবে।
বন্ধুগণ, এই মিশনের মাধ্যমে নির্বাচিত ১০০টি শহরের মধ্যে ১১টিতে ইন্টিগ্রেটেড কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারগুলি কাজ করতে শুরু করে দিয়েছে। আর আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই আরও ৫০টি শহরে এই কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা চলছে। এই প্রচেষ্টার পরিণাম স্বরূপ গুজরাটের রাজকোটে কিছুটা পরিস্থিতি বদলেছে। বিগত ছ’মাসে অপরাধের হার অনেকাংশে কমেছে। সিসিটিভি ক্যামেরার তদারকিতে নোংরা ছড়ানো ও সার্বজনিক স্থানে আবর্জনা ফেলার মতো কিছু প্রবৃত্তি কমেছে।
ভোপালে সম্পত্তি কর সংগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে, আমেদাবাদে বিআরডিএস করিডরে ফ্রি ওয়াইফাই বাস চালু হওয়ার ফলে অবলীলাক্রমে বাসের যাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশাখাপত্তনমে সিসিটিভি ও জিপিএস – এর মাধ্যমে বাসগুলিকে অনলাইন ট্র্যাক করা হচ্ছে। পুণে-তে প্রায় ১২৫টি স্থানে এমার্জেন্সি কল বেল লাগানো হয়েছে, যেখানে একটি বোতাম টিপলেই নিকটবর্তী পুলিশ স্টেশন জানতে পারবে। এরকম নানা শহরে নতুন নতুন ব্যবস্থা সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছে। কিছুদিনের মধ্যেই উত্তর প্রদেশের আগ্রা, কানপুর, এলাহবাদ, আলিগড়, বারানসী, ঝাঁসি, বরেলি, সাহরানপুর, মুরারাবাদ এবং আমাদের এই লক্ষ্মৌতেও এই ধরণের অনেক পরিষেবা চালু হবে এবং আপনারা উপকৃত হবেন।
ভাই ও বোনেরা, আমাদের এই ‘ট্রান্সফরমিং দ্য ল্যান্সস্কেপ অফ আরবান ইন্ডিয়া মিশন’ – এর সঙ্গে লক্ষ্ণৌর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। লক্ষ্ণৌ দেশের নাগরিক জীবনকে নতুন দিশা দেখানো মহাপুরুষ শ্রদ্ধেয় অটল বিহারী বাজপেয়ীর কর্মভূমি ছিল। এটি দীর্ঘ সময় যাবৎ তাঁর নির্বাচনী কেন্দ্র ছিল। এখন অটলজির স্বাস্থ্য ভালো যাচ্ছে না, গোটা দেশ তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করছে। কিন্তু তিনি যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তাকে একটি নতুন উচ্চতা প্রদানের জন্য আমাদের সরকার এবং কোটি কোটি ভারতবাসী তীব্রগতিতে তাঁর সঙ্গে যুক্ত হয়ে সামনে এগিয়ে চলেছে।
বন্ধুগণ, শ্রদ্ধেয় অটল বিহারী বাজপেয়ী লক্ষ্ণৌকে দেশের নগরোন্নয়নের প্রয়োগশালা হিসাবে গড়ে তুলেছিলেন। আজ আপনারা এখানে লক্ষ্ণৌতে যে উড়ালপুল, বায়ো টেকনোলজি পার্ক এবং সায়েন্টিফিক কনভেনশন সেন্টার দেখতে পাচ্ছেন, লক্ষ্ণৌর চারপাশে প্রায় ১ হাজারটি গ্রামকে লক্ষ্ণৌর সঙ্গে যুক্ত করা সড়কপথ দেখছেন। এই সমস্ত কাজ লক্ষ্ণৌর সাংসদ হিসাবে তাঁর দূরদৃষ্টির পরিণাম। আজ দেশের ১২টি শহরে মেট্রোরেল চলছে অথবা শুরু হতে চলেছে, লক্ষ্ণৌতেও মেট্রোরেল সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়েছে। নাগরিক পরিবহণ ব্যবস্থাকে আমূল বদলে ফেলা এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন তিনি দিল্লি থেকে শুরু করেছিলেন। সেই দিল্লি মেট্রোর সাফল্য আজ গোটা দেশে নাগরিক পরিবহণ ব্যবস্থা উন্নত করার ক্ষেত্রে পথপ্রদর্শকের কাজ করছে।
বন্ধুগণ, শ্রদ্ধেয় অটল বিহারী বাজপেয়ী বলতেন, পুরনোকে সংস্কার না করলে নতুনের সংস্কার সম্ভব নয়। একথা তিনি পুরনো ও নতুন লক্ষ্ণৌর প্রেক্ষিতে বলেছিলেন। সেজন্য আমরা অম্রুত যোজনা তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নের কথা মাথায় রেখেই চালু করেছি। অম্রুত মানে ‘অটল মিশন ফর রিজুবিনেশন অ্যান্ড আরবান ট্রান্সফরমেশন’ – স্মার্টসিটি মিশনের জন্য এটিই আমাদের প্রেরণা।
এই ভাবনা নিয়েই অনেক শহরে কয়েক দশক পুরনো ব্যবস্থাকে সংস্কার করা হচ্ছে। পয়ঃপ্রণালী, পানীয় জল, রাস্তার আলো, পুকুর, দীঘি ও পার্কগুলির সৌন্দর্যায়নে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
বন্ধুগণ, শহরের বস্তিগুলিতে বসবাসকারী গরিব, গৃহহীন ভাই বোনদের নিজস্ব বাড়ি প্রদানের এই প্রকল্পও শ্রদ্ধেয় অটল বিহারী বাজপেয়ী সূচনা করেছিলেন। শুধু লক্ষ্ণৌতে এই প্রকল্পের মাধ্যমে তখন প্রায় ১০ হাজার ভাই-বোন নিজেদের পাকা মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছিলেন। আজকের প্রকল্পগুলির মূল ভাবনা একই কিন্তু আমরা এগুলি নির্মাণের গতি, পরিমাণ এবং জীবনযাত্রার মানকে অন্য স্তরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছি। সরকার ২০২২ সালের মধ্যে প্রত্যেক গৃহহীনকে গৃহ প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে, যাতে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তির সময়ে ভারতে গৃহহীন কোনও পরিবার না থাকে।
এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে বিগত তিন বছরে শহরাঞ্চলে ৫৪ লক্ষ গৃহনির্মাণের আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে। শুধু শহরেই নয়, গ্রামগুলিতেও ইতিমধ্যে ১ কোটিরও বেশি পাকা বাড়ি নির্মাণ করে জনগণের হাতে চাবি তুলে দেওয়া হয়েছে। সেই বাড়িগুলিতে শৌচালয়, সৌভাগ্য যোজনার মাধ্যমে বিদ্যুৎ, উজালা যোজনার মাধ্যমে এলইডি বাল্ব প্রদান করছে এবং এগুলির জন্য সরকার গৃহ ঋণের সুদের হার হ্রাস করেছে। আগের তুলনায় এখন নির্মীয়মান গৃহের ক্ষেত্রফল বৃদ্ধি করা হয়েছে।
বন্ধুগণ,
এই যে বাড়িগুলির চাবি তুলে দেওয়া হ’ল, তা শুধুই গৃহহীনকে গৃহ প্রদান নয়, মহিলাদের ক্ষমতায়নেরও জলজ্যান্ত উদাহরণ। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মাধ্যমে যে গৃহ নির্মাণ করা হয়েছে, সেগুলি মা ও বোনেদের নামেই হস্তান্তর করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে মহিলাদের নামে বা তাঁদের অংশীদারিত্বে প্রায় ৮৭ লক্ষ বাড়ি নিবন্ধীকৃত হয়েছে। অন্যথা আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা কেমন ছিল, যে কোনও পরিবারে যান, জায়গা, জমি ও বাড়ি পিতা, স্বামী কিংবা ছেলের নামে থাকে কিন্তু মেয়েদের নামে কিছু থাকে না।
আমরা পরিস্থিতি বদলে দিয়েছি। এই প্রকল্পের মাধ্যমে যাঁরা বাড়ি পাচ্ছেন, সেখানে এসে কেউ আর জিজ্ঞেস করবেন না যে, অমুক বাড়ির মালিক কে? জিজ্ঞেস করতে হবে মালকিন কে? সমাজের ভাবনাচিন্তায় আমরা এই পরিবর্তন আনতে পেরেছি।
আমি শ্রী আদিত্যনাথ যোগী ও তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকারকে ধন্যবাদ জানাই যে তাঁরা গরিবের জীবনযাত্রার মানকে উন্নত করার জন্য এই প্রকল্পের বাস্তবায়নের কাজ তীব্রগতিতে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। পূর্ববর্তী রাজ্য সরকারের সঙ্গেও কাজ করার অভিজ্ঞতা আমার আছে। ২০১৪ সালের পর থেকে শ্রী আদিত্যনাথ যোগী দায়িত্ব নেওয়ার আগে পর্যন্ত যে কোনও প্রকল্প রূপায়ণের জন্য আমাকে খুব ভুগতে হয়েছে। রাজ্য সরকারকে বারবার চিঠি লিখতাম, দেখা হলে অনুরোধ জানাতাম – কিছু করুন, আমরা পয়সা দিতে রাজি। কিন্তু তারা কোনও ভাবেই নিজেদের ঢিমেতেতাল কর্মপদ্ধতি ছেড়ে বেরিয়ে আসেননি। তাদের শুধু ওয়ান পয়েন্ট প্রোগ্রাম ছিল, নিজেদের বাংলো সাজানো। সেখান থেকে সময় বের করতে পারেননি বলে গরিবের বাড়ি হয়নি।
আমার উত্তর প্রদেশের ভাই ও বোনেরা, আপনারা হয়তো শুনেছেন, সম্প্রতি আমার ওপর আরোপ লাগানো হয়েছে যে, আমি চৌকিদার নই, অংশীদার। আমি এই আরোপকে পুরস্কার বলে মনে করি আর গর্ব করি যে আমি দেশের গরিবদের অংশীদার, দুঃখের অংশীদার, শ্রমজীবী মজুরদের অংশীদার, প্রত্যেক দুঃখী মায়ের যন্ত্রণার অংশীদার। যাঁরা কাঠ-কয়লা কুড়িয়ে কিংবা গোবর শুকিয়ে উনুনে আগুন জ্বালিয়ে ধোঁয়ায় নিজেদের চোখ লাল করে রান্না করতেন। আমি সেই মায়েদের উনুন বদলে দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
আমি খরা কিংবা বন্যায় কৃষকের ফসল নষ্ট হলে তাঁর যন্ত্রণা কিংবা হতাশার অংশীদার। আমি সেই কৃষককে নিরাপত্তা প্রদানের অংশীদার।
যে বাহাদুর সৈনিকরা সিয়াচেন কিংবা কার্গিল সীমান্তে হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় অতন্দ্র প্রহরায় থাকেন অথবা জয়সালমীর কিংবা কচ্ছ-এর তীব্র গরমে আমাদের মরু প্রদেশের সীমান্ত পাহারা দেন, প্রবল প্রতিকূল অবস্থায় তাঁরা যে কোনও মুহূর্তে শত্রুর মোকাবিলা করতে এবং আত্মবলিদানে পিছ পা হন না – আমি তাঁদের অংশীদার।
দেশের প্রত্যেক গরিব পরিবারে কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্য জমি-জায়গা বিক্রি করে দিতে হয়, আমি তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে কষ্ট লাঘব করতে চাই – আমি তাঁদের অংশীদার।
আমি গৃহহীনদের জন্যে গৃহ, বাড়ির মধ্যে শৌচালয়, স্বচ্ছ পানীয় জল, বিদ্যুৎ সংযোগ থাকবে। অসুস্থ হলে সস্তায় ওষুধ এবং চিকিৎসা হবে, শিশুদের শিক্ষা প্রদানের অংশীদার।
আমি অংশীদার সেই প্রচেষ্টার, যার মাধ্যমে দেশের যুবসম্প্রদায়ের দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান হবে, স্বনির্ভরতার মাধ্যমে তাঁরাও অন্যদের কর্মসংস্থান করতে পারবেন। আমাদের হাওয়াই চপ্পল পড়া সাধারণ নাগরিক হাওয়াই সফর করতে পারবেন।
আমি গর্বিত যে, আমি এক গরিব মায়ের সন্তান, দারিদ্র্য আমাকে সততা ও সাহস যুগিয়েছে। দারিদ্র্যের কষাঘাত আমাকে বাঁচতে শিখিয়েছে। দারিদ্র্যের কষাঘাত সহ্য করেছি বলেই গরিবদের দুঃখ-যন্ত্রণা বুঝতে পারি। একটি প্রবাদ আছে ‘জিসকে পাও না ফটি বিওয়াই, সো কেয়া জানে পীর পরাই’ অর্থাৎ যাঁর পা ফাটেনি, সে অন্যের যন্ত্রণা কি করে বুঝবেন। ভুক্তভোগীই যন্ত্রণাকে অনুভব করতে পারেন আর তাঁর মাটির সঙ্গে জুড়ে থাকা সমাধান খুঁজে বের করতে পারেন।
এর আগে আরোপ লাগানো হয়েছিল যে, আমি চা ওয়ালা হয়ে দেশের প্রধান সেবক কিভাবে হতে পারি! কিন্তু এই সিদ্ধান্ত তো দেশের ১২৫ব কোটি জনগণ নিয়েছেন। অংশীদারিত্বকে যাঁরা অপমান করতে চান, আমাদের আজকের সমস্যাগুলির শেকড়ে সেই ভাবনার প্রতিফলন, সেই ভাবনার দুর্গন্ধ উঠে আসে।
স্মার্টসিটির জন্য আমাদের ভাবনায় প্রেরণা ছিল আর বাস্তবায়নের জন্য সমর্থ মানুষরাও ছিলেন। প্রত্নতাত্ত্বিক খনন থেকে উঠে আসা পুরনো শহরগুলি প্রমাণ করে যে, কিভাবে আমাদের পূর্বজরা শহর নির্মাণ করতেন। হাজার হাজার বছর আগে তখনকার মতো স্মার্টসিটির রূপকার ছিলেন তাঁরা। আজ রাজনীতির ইচ্ছেশক্তির অভাব আর অদূরদর্শিতা দেশের অনেক ক্ষতি করে দিয়েছে।
স্বাধীনতার পর নতুনভাবে রাষ্ট্র গঠনের দায়িত্ব দেশের জনগণ যাঁদের ওপর ন্যস্ত করেছিলেন, আজকের মতো জনসংখ্যার চাপ না থাকায়, ভবিষ্যতের প্রয়োজন অনুসারে শহরের নক্শা তৈরি করার সু্যোগ তাঁদের ছিল। তাঁরা যদি পরিকল্পনামাফিক কাজ করতেন, তা হলে আজ নগর সম্প্রসারণে এতো সমস্যা হ’ত না। যেমন খুশি, যেভাবে খুশি পরিকল্পনাহীন শহর গড়ে ওঠার ফলে সারা দেশে কংক্রিটের জঙ্গল গড়ে উঠেছে। আজ ভারতের প্রতিটি শহর তার ফল ভুগছে।
বন্ধুগণ, একটি গোটা প্রজন্ম এই অব্যবস্থাগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করছে। কোথাও তো ২-৩ প্রজন্ম এই তিক্ত অভিজ্ঞতার বোঝা কাঁধে নিয়ে এগিয়ে চলেছে। আজ যখন দেশ ৭.৫ শতাংশ গড় উন্নয়নের হার নিয়ে এগিয়ে চলেছে, তখন দেশের অভ্যন্তরীণ গড় উৎপাদনের ৬৫ শতাংশেরও বেশি অংশীদার, যাকে গ্রোথ ইঞ্জিন বলা চলে। সেই অংশটি অব্যবস্থিত থাকলে উন্নয়নের গতি হ্রাস পেতে বাধ্য।
শহরের পথগুলিতে ঝুলে থাকা বিদ্যুতের তারের জঞ্জাল, পুঁতি গন্ধময় পয়ঃপ্রণালী, দীর্ঘ যানজট – এই সকল অব্যবস্থা একবিংশ শতাব্দীর ভারতকে পরিভাষিত করতে পারে না। এই ভাবনা নিয়েই তিন বছর আগে এই মিশনের সূচনা করা হয়েছিল। দেশের ১০০টি শহরকে বেছে নিয়ে ঠিক করা হয়েছিল যে, ২ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে এগুলির সার্বিক উন্নয়নের কাজ করা হবে। শরীর নতুন হবে কিন্তু আত্মা একই থাকবে। সংস্কৃতিকে তুলে ধরা হবে – কিন্তু জীবনযাত্রা স্মার্ট হবে। আমরা এমনই জীবন্ত শহর উন্নয়নের পথে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছি।
বন্ধুগণ, আমাদের সরকারের জন্য স্মার্টসিটি নিছকই একটি প্রকল্প নয়, এটি আমাদের জন্য একটি মিশন। দেশকে রূপান্তরণের মিশন।এই মিশন আমাদের শহরগুলিকে নতুন ভারতের নতুন নতুন সমস্যার সমাধান করতে প্রস্তুত রাখবে। একবিংশ শতাব্দীর ভারতে বিশ্বমানের মেধাবী নগরোন্নয়ন কেন্দ্রগুলি গড়ে তুলবে। এই দেশ নবীন প্রজন্মের আকাঙ্খা পূরণের দায়িত্ব পালন করবে, ভবিষ্যতের ব্যবস্থাগুলি গড়ে তুলবে। যেখানে জীবন ৫টি ‘E’ ভিত্তিক হবে। সেগুলি হ’ল – ইজ অফ লিভিং, এডুকেশন, এমপ্লয়মেন্ট, ইকনোমি এবং এন্টারটেইনমেন্ট।
যখনই আমি আপনাদের মতো কর্মবীর মানুষদের সঙ্গে মিলিত হই, আপনাদের মতো মেয়র, মিউনিসিপ্যাল কমিশনার কিংবা সিইও-র সঙ্গে কথা বলি, তখন একটি নতুন আশার কিরণ দেখতে পাই। স্মার্টসিটি মিশনের এই প্রক্রিয়ার কাঠামো গণঅংশীদারিত্ব, গণআকাঙ্খা এবং গণদায়িত্ব – এই তিনটি ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। নিজেদের শহরে এই ধরণের প্রকল্প চালু করার সিদ্ধান্ত ঐ শহরের নাগরিকরাই নিয়েছেন। তাঁদেরই ভাবনার রূপায়ণে শহরগুলিকে স্মার্টসিটি করে তোলার ভিত্তি নির্মিত হয়েছে। আর আজ দ্রুতগতিতে সেই কাজ এগিয়ে চলেছে।
আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, শুধু নতুন ব্যবস্থা গড়ে তোলা নয়, বিকল্প অর্থ সংস্থানের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। পুণে, হায়দরাবাদ ও ইন্দোর মিউনিসিপ্যাল বন্ড-এর বিক্রির মাধ্যমে প্রায় ৫৫০ কোটি টাকা তুলেছে। এখন লক্ষ্ণৌ এবং গাজিয়াবাদেও এই প্রক্রিয়া শুরু হতে চলেছে। এই মিউনিসিপ্যাল বন্ড উন্নয়নকার্যে সরকারের ওপর নির্ভরতা হ্রাস করবে। আমি অন্যান্য শহরগুলিকেও অনুরোধ জানাব এই ধরণের উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসুন।
বন্ধুগণ, শহরগুলিকে স্মার্ট করা, ব্যবস্থাকে প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত করা, জীবনযাত্রার মান সহজ করা হচ্ছে। আজ আপনারা অনুভব করতে পারছেন যে, কিভাবে সমস্ত পরিষেবা অনলাইন হওয়ার ফলে সাধারণ মানুষকে আর দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হয় না। এই দীর্ঘ লাইনেই দুর্নীতির শেকড় ছিল। আজ আপনারা যে কোনও বিলের টাকা জমা করতে কোনও পরিষেবা যেমন – শংসাপত্র, ছাত্রবৃত্তি, পেনশন, প্রভিডেন্ট ফান্ড ইত্যাদির জন্য আবেদন অনলাইনেই করতে পারছেন। শাসন ব্যবস্থা, স্মার্ট হওয়ার ফলে স্বচ্ছতাও সুনিশ্চিত হচ্ছে। ফলে দুর্নীতি হ্রাস পেয়েছে।
বন্ধুগণ, স্মার্ট, নিরাপদ, সুদূরপ্রসারী এবং স্বচ্ছ ব্যবস্থাগুলিই দেশের কোটি কোটি মানুষের পরিবর্তন আনছে, এতে উঁচু-নীচু, ধর্ম-সম্প্রদায়, ছোট-বড় কোনও সীমা নেই। এর ভিত্তি হ’ল উন্নয়ন, উন্নয়ন আর উন্নয়ন। কোনও বিভেদ নেই, ভেদভাবও নেই। গণঅংশীদারিত্ব, রাজ্যগুলির অংশীদারিত্ব, স্থানীয় প্রশাসনের অংশীদারিত্ব এই সব কিছু সম্ভব হয়। ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ এবং ‘টিম ইন্ডিয়া’র ভাবনা নতুন ভারতের সংকল্পকে সিদ্ধ করবে।
আমি আজ যখন আদিত্যনাথ যোগীর সঙ্গে কথা বলছিলাম, তখন তিনি আমাকে একটি ভালো খবর শুনিয়েছেন। দেখুন, দেশের মানুষকে ভরসা করলে, কত অদ্ভুত কাজ হতে পারে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আগে ভোট নেওয়ার আগে নেতাদের মনে পড়তো। আমরা যদি সত্যি সত্যি নাগরিকদের শক্তি এবং সদ্ভাবনা দেখি, তাহলে কেমন পরিণাম পাওয়া যায় – আদিত্যনাথ যোগীজী-র বক্তব্য তার প্রমাণ। আপনারা জানেন যে আমি একবার ১৫ আগস্টে লালকেল্লার প্রাকার থেকে সম্পন্ন মানুষদের রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি ত্যাগের অনুরোধ জানিয়েছিলাম। এদেশে ভর্তুকি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার ফলে, আগে কেউ এরকম আবেদন জানানোর সাহস পাননি। কিন্তু আমি আবেদন রাখতেই দেশের প্রায় ১ কোটি ২৫ লক্ষ পরিবার স্বেচ্ছায় রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি ত্যাগ করেছিলেন।
লালকেল্লার প্রাকার থেকে আবেদন জানিয়ে এই পরিণাম দেখেছি। কিন্তু এবার এরকম কিছু হয়নি। রেল বিভাগ কয়েক মাস আগে তাদের রিজার্ভেশন ফর্মে দেশের বয়স্ক নাগরিকদের মধ্যে যাঁরা সম্পন্ন, তাঁদের কাছে রেল যাত্রার ভর্তুকি ত্যাগের আবেদন রেখেছিল কিন্তু এর জন্য তারা বিশেষ কোনও বিজ্ঞাপন দেয়নি, আমি শুনে অবাক হয়েছি যে, দেশের ৪০ লক্ষেরও বেশি বয়স্ক নাগরিক তাঁদের রেলযাত্রায় ভর্তুকি ত্যাগ করেছেন। এই বয়স্ক নাগরিকদের জন্য দেশের গর্ব হওয়া উচিৎ।
আজ আদিত্যনাথ যোগী আমাকে বলেছেন, উত্তর প্রদেশের গ্রামে যাঁরা সরকারি আবাসন পেয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে যাঁদের আর্থিক উন্নতি হয়েছে, ছেলেমেয়েরা শহরে গিয়ে রোজগার করায় স্বচ্ছল হয়েছেন, তেমন মানুষদের উত্তর প্রদেশ সরকার আবেদন জানিয়েছিল যে, আপনারা পুরনো বাড়ি সরকারকে ফিরিয়ে দিন, তা হলে আমরা কোনও গরিবকে থাকতে দেব। আপনারা শুনলে খুশি হবেন যে, উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আমাকে বলেছেন, ছেলেমেয়ের স্বচ্ছলতার কারণে শহরে চলে আসা এরকম ৪৬ হাজার মানুষ স্বেচ্ছায় তাঁদের আবাসন ফিরিয়ে দিয়েছেন।
আমাদের দেশে এমনই মানসিকতা পরিবর্তন হচ্ছে, সবাই চোর নন, দেশের জনগণের ওপর ভরসা রাখুন, দেশ পরিচালনার জন্য আমাদের থেকে বেশি শক্তি জনগণের আছে। পরিবর্তনের অনুকূলে এখন একটি সততার আবহ তৈরি হয়েছে। আগের তুলনায় অনেক বেশি মানুষ কর প্রদানের জন্য এগিয়ে এসেছেন। ভালো পরিষেবা পেলে মানুষ কর দেন না কেন? যখন মনে ভরসা জাগে যে, আমাদের দেওয়া করের প্রতিটি পয়সা সঠিক পথে খরচ হয়, তখনই মানুষ নির্দ্বিধায় কর প্রদানের জন্য এগিয়ে আসেন।
আপনাদের সবাইকে আরেকবার এই অভিযানের জন্য অভিনন্দন জানাই। আমাদের বিশ্বাস আগামীদিনে আরও অনেক শহর এগিয়ে আসবে। যাঁরা এগিয়ে গেছেন, তাঁরা পথ দেখাবেন। নতুন শহরগুলিতেও অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। সঠিক নেতৃত্ব প্রদান করুন, সেখানকার কমিশনার, মেয়র, সিইও-রা আপ্রাণ চেষ্টা করে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানোর চেষ্টা করুন। আমি আপনাদেরকেও এভাবে সম্মানিত করার জন্য অপেক্ষায় আছি, আমাকে সুযোগ দিন আমি ভারতের সমস্ত শহরকে আমন্ত্রণ জানাই, আপনারা আমাকে সুযোগ দিন, আমি আপনাদের সম্মানিত করতে চাই। ভালো কাজ করে এগিয়ে আসুন।
আমি আরেকবার সফল নেতৃত্ব প্রদানকারী মাননীয় মেয়র, কমিশনার এবং সিইও-দের শুভেচ্ছা জানাই। অনেক অনেক ধন্যবাদ।