নমস্কার!
দেশ রক্ষার সঙ্গে যুক্ত এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে আমার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শ্রদ্ধেয় রাজনাথ সিং-জি, প্রতিরক্ষা দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী শ্রী অভয় ভট্টজি, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সমস্ত আধিকারিকগণ, আর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হওয়া সকল বন্ধুগণ!
আজ থেকে দু’দিন আগেই নবরাত্রির এই পবিত্র উৎসবের মাঝে, মহাষ্টমীর দিনে আমার দেশের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যানিং বা সংহত পরিকল্পনার সম্পূর্ণ প্রকল্প ‘প্রধানমন্ত্রী গতিশক্তি’ জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করার সৌভাগ্য হয়েছে, আর আজ বিজয়া দশমীর এই পবিত্র উৎসবের দিন দেশকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার জন্য, জাতিকে অজেয় করে তোলার জন্য যাঁরা দিন-রাত এক করে তটস্থ থাকেন, সীমান্তে মোতায়েন থাকেন, তাঁদের সামর্থ্যকে আরও উন্নত করতে, তাঁদের সামরিক সরঞ্জামে আরও আধুনিকতা আনতে একটি নতুন লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। এই সুযোগ আমাদের সামনে এসেছে; বিজয়া দশমীর পবিত্র উৎসবের দিনে যা আমাদের মন ও মস্তিষ্কে শুভ সঙ্কেত নিয়ে এসেছে। এই কর্মসূচির গোড়াতেই ভারতের মহান পরম্পরা অনুসরণ করে অস্ত্র পুজো করা হয়েছে। আমরা শক্তিকে সৃষ্টির মাধ্যম বলে মনে করি। এই ভাবনা নিয়েই আজ দেশ তার সামর্থ্য সৃষ্টি করছে, আর আপনারা সবাই আজ দেশের এই সঙ্কল্পগুলি বাস্তবায়নের রথের সারথী হয়ে উঠেছেন। আমি আপনাদের সবাইকে, আর গোটা দেশকে এই অবসরে আরেকবার বিজয়া দশমীর আন্তরিক শুভকামনা জানাই।
বন্ধুগণ,
আজকের দিনে ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি, ভারতরত্ন, শ্রদ্ধেয় ডঃ এ পি জে আব্দুল কালামজির জন্মজয়ন্তীও। কালাম সাহেব যেভাবে তাঁর সম্পূর্ণ জীবন শক্তিশালী ভারত গড়ে তোলার জন্য সমর্পণ করেছিলেন, তা আমাদের সবাইকে প্রতিনিয়ত প্রেরণা যোগায়। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আজ যে নতুন সাতটি কোম্পানি তাদের যাত্রা শুরু করছে, তারা আমাদের শক্তিশালী রাষ্ট্রের সেই সঙ্কল্পগুলিকে বাস্তবায়নের অভিযানকে আরও শক্তি যোগাবে, আরও মজবুত করবে।
বন্ধুগণ,
এ বছর ভারত তার স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষে পা রেখেছে। স্বাধীনতার এই অমৃতকালে দেশ একটি নতুন ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য নতুন নতুন সঙ্কল্প গ্রহণ করছে, আর যে কাজগুলি অনেক দশক ধরে অসম্পূর্ণ ছিল বা ঝুলে ছিল, সেগুলির কাজও সম্পূর্ণ করছে। ৪১টি অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরিকে নতুন স্বরূপে আধুনিকীকরণের সিদ্ধান্ত, পাশাপাশি, সাতটি নতুন কোম্পানির এই শুভ সূচনা দেশের এই সঙ্কল্প বাস্তবায়ন যাত্রাপথের অংশ। এই সিদ্ধান্ত বিগত ১৫-২০ বছর ধরে ঝুলে ছিল। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, এই সাতটি কোম্পানি আগামীদিনে ভারতের সৈন্যশক্তির এক একটি বড় ভিত্তি হয়ে উঠবে।
বন্ধুগণ,
আমাদের দেশের অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরিগুলিকে এক সময়ে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী কোম্পানিগুলির মধ্যে ধরা হত। এই ফ্যাক্টরিগুলির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসে ১০০-১৫০ বছরেরও বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে। দু-দুটি বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতের অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরিগুলির উৎপাদন ক্ষমতা ও উৎপাদিত অস্ত্রের উৎকর্ষ সারা পৃথিবী দেখেছে। আমাদের দেশেও উন্নত সম্পদ তৈরি হত। বিশ্বমানের দক্ষতা ছিল। স্বাধীনতার পর সেই ফ্যাক্টরিগুলিকে আধুনিকীকরণের প্রয়োজন ছিল। নতুন নতুন প্রযুক্তি প্রয়োগ করার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, সেদিকে কোনও লক্ষ্য দেওয়া হয়নি। ফলস্বরূপ, সময়ের চাহিদা অনুসারে ভারত ক্রমে তার সামরিক প্রয়োজন মেটাতে বিদেশি অস্ত্রশস্ত্র ও সমর সরঞ্জামের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতির পরিবর্তন আনতে আজ শুরু হওয়া এই সাতটি নতুন প্রতিরক্ষা কোম্পানি অনেক বড় ভূমিকা পালন করবে।
বন্ধুগণ,
আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের মাধ্যমে ভারতের লক্ষ্য দেশকে নিজের ক্ষমতায় বিশ্বের অন্যতম বড় সৈন্যশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে, দেশে এই আধুনিক সৈন্য সরঞ্জাম ও সমরাস্ত্র শিল্পোদ্যোগের বিকাশ হচ্ছে সময়ের চাহিদা মেনে। বিগত সাত বছরে দেশ ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র মন্ত্র নিয়ে তার এই সঙ্কল্পগুলি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। আজ দেশের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে যতটা ট্রান্সপারেন্সি বা স্বচ্ছতা রয়েছে, যতটা ট্রাস্ট বা আস্থার সৃষ্টি হয়েছে আর টেকনলজি-ড্রিভেন অ্যাপ্রোচ বা প্রযুক্তি-চালিত দৃষ্টিকোণ তৈরি হয়েছে - তা আগে কখনও ছিল না। স্বাধীনতার পর প্রথমবার আমাদের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে এত বড় সংস্কারসাধনের কাজ হচ্ছে। কোনও প্রকল্প থামিয়ে রাখা বা ঝুলিয়ে রাখার নীতির জায়গায় ‘সিঙ্গল উইন্ডো সিস্টেম’ বা ‘এক জানালা’ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এর ফলে, আমাদের শিল্পোদ্যোগগুলির প্রত্যয় অনেক বাড়ছে। আমাদের দেশের নিজস্ব কোম্পানিগুলি প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও সমরাস্ত্র উৎপাদন শিল্পোদ্যোগের ক্ষেত্রে নিজেদের সম্ভাবনার অন্বেষণ শুরু করেছে, আর এখন বেসরকারি ক্ষেত্র ও সরকার - উভয় মিলে দেশ রক্ষার মিশন বা লক্ষ্যে এগিয়ে চলার অভিযান শুরু করেছে।
উত্তরপ্রদেশ এবং তামিলনাড়ু ডিফেন্স করিডর দুটির উদাহরণ আমাদের সামনে রয়েছে। এত কম সময়ে বড় বড় কোম্পানিগুলি এই ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ মন্ত্রের প্রতি তাদের উৎসাহ দেখিয়েছে। এর ফলে দেশের নবীন প্রজন্মের জন্য নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে আর সরবরাহ শৃঙ্খল রূপে অনেক অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগের জন্যও নতুন নতুন সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। দেশের সরকার যে নীতিগত পরিবর্তনগুলি এনেছে এর পরিণামস্বরূপ বিগত পাঁচ বছরে আমাদের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে রপ্তানি ৩২৫ শতাংশেরও অধিক বৃদ্ধি পেয়েছে।
বন্ধুগণ,
কিছুদিন আগেই আমাদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এমন ১০০টিরও বেশি সামরিক সরঞ্জামের তালিকা ঘোষণা করেছিল যেগুলি এখন আর বিদেশ থেকে আমদানি করা হবে না। এই নতুন কোম্পানিগুলিকে দেশ শুরুতেই ৬৫ হাজার কোটি টাকার সমরাস্ত্র ও যুদ্ধ সরঞ্জামের বরাত দিয়েছে। এটাই আমাদের সরকারের দেশীয় প্রতিরক্ষা শিল্পোদ্যোগের প্রতি বিশ্বাসের উদাহরণ। এতে তাঁদের প্রতি আমাদের ক্রমবর্ধমান আস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে। একটি কোম্পানি অস্ত্রশস্ত্র এবং বিস্ফোরক উৎপাদনের প্রয়োজন মেটাবে, আরেকটি কোম্পানি সেনাবাহিনীর জন্য প্রয়োজনীয় যানবাহন উৎপাদন করবে। এভাবে বিভিন্ন অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র এবং সাজসরঞ্জাম, ট্রুপস কমফর্ট আইটেমস বা প্রতিকূল পরিবেশে দীর্ঘকালীন যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য অর্জন করতে সেনাবাহিনীর জন্য প্রয়োজনীয় অত্যাধুনিক পোশাক-আশাক, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক সমস্ত কিছু উৎপাদন, অপটিক্যাল ইলেক্ট্রনিক্স উৎপাদন কিংবা প্যারাস্যুট উৎপাদন ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতের এই এক একটি কোম্পানি আরও বিশেষজ্ঞতা অর্জন করুক, আর তারা এক একটি গ্লোবাল ব্র্যান্ড হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সুনাম অর্জন করুক। কম্পিটিটিভ কস্ট বা প্রতিযোগিতামূলক ব্যয়ে উৎকৃষ্ট ও সুলভ সরঞ্জাম উৎপাদন হোক আমাদের মূল শক্তি। উৎকর্ষ এবং নির্ভরযোগ্যতা আমাদের পরিচয় হয়ে ওঠা উচিৎ।
বন্ধুগণ,
আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই নতুন ব্যবস্থার মাধ্যমে আমাদের দেশে অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরিগুলির যে মেধা ও অভিজ্ঞতা রয়েছে, যাঁরা নতুন কিছু করতে চান, তাঁরা নিজেদের প্রতিভা দেখানোর সম্পূর্ণ স্বাধীনতা পাবেন। এ ধরনের বিশেষজ্ঞরা সময়ের চাহিদা অনুযায়ী যদি নতুন নতুন উদ্ভাবনের সুযোগ পান, নতুন কিছু করে দেখানোর সুযোগ পান, তখন তাঁরা অসাধারণ কিছু করে দেখান। আপনারা নিজেদের অভিজ্ঞতা ও বিশেষজ্ঞতার মাধ্যমে যে পণ্য তৈরি করে দেখাবেন তা ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের ক্ষমতা তো বাড়াবেই, স্বাধীনতার পর থেকে এত বছরে যে একটি বিরাট শূণ্যতার সৃষ্টি হয়েছিল, সেটিও দূর করবে।
বন্ধুগণ,
একবিংশ শতাব্দীতে কোনও দেশ কিংবা কোনও কোম্পানি তার গ্রোথ বা অগ্রগতি এবং ব্র্যান্ড ভ্যালু তার গবেষণা ও উৎপাদনের মাধ্যমেই হাসিল করে। সফটওয়্যার থেকে শুরু করে মহাকাশ ক্ষেত্র পর্যন্ত ভারতের অগ্রগতি, ভারতের নতুন পরিচয় গড়ে ওঠা এর সবচাইতে বড় উদাহরণ। সেজন্য আজ যাত্রা শুরু করা এই সাতটি কোম্পানির প্রতি আমার বিশেষ অনুরোধ যে আপনারা অবশ্যই গবেষণা ও উদ্ভাবনকে নিজেদের কর্মসংস্কৃতির অঙ্গ করে তুলুন। এগুলিকেই অগ্রাধিকার দিন। তাহলেই দেখবেন আপনারা শুধু বিশ্বের বড় বড় কোম্পানিগুলির সমতুল হয়ে উঠবেন না, ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও নেতৃত্ব দিতে পারবেন। সেজন্য আপনাদের নতুনভাবে ভাবার প্রয়োজন রয়েছে, নতুন চিন্তাভাবনাকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। গবেষণায় আগ্রহী নবীন প্রজন্মকে বেশি করে সুযোগ দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। তাদের স্বাধীনভাবে ভাবনা-চিন্তার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। আমি দেশের স্টার্ট-আপগুলিকে বলব, আপনারা এই সাতটি কোম্পানির মাধ্যমে দেশ যে নতুন যাত্রা আজ শুরু করেছে তার অংশ হয়ে উঠুন। আপনাদের গবেষণা, আপনাদের উৎপাদিত পণ্যগুলি কিভাবে এই কোম্পানিগুলির সঙ্গে পরস্পরের ক্ষমতা থেকে উপকৃত হতে পারে - তা নিয়ে আরও ভাবনা-চিন্তা করুন।
বন্ধুগণ,
সরকার সমস্ত কোম্পানিগুলিকে একটি উন্নত প্রোডাকশন এনভায়রনমেন্ট বা উৎপাদনের আবহ প্রদানের পাশাপাশি সম্পূর্ণ ফাংশনাল অটোনমি বা সম্পাদনের ক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করছে। পাশাপাশি, এটাও সুনিশ্চিত করছে যে এই ফ্যাক্টরিগুলির কর্মচারীদের হিত যেন সম্পূর্ণরূপে সুরক্ষিত থাকে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, দেশ আপনাদের বিশেষজ্ঞতা ও নতুন ভাবনা-চিন্তার মাধ্যমে অনেক উপকৃত হবে, আর আমরা সবাই মিলে আমাদের আত্মনির্ভর ভারতের সঙ্কল্পকে বাস্তবায়িত করতে পারব।
এই ভাবনা নিয়ে আরেকবার আপনাদের সবাইকে শুভ বিজয়া দশমীর অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ!