নমস্কার!
আমি আপনাদের সবাইকে, দেশের সমস্ত মহিলাদের আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। এই উপলক্ষে আপনারা, দেশের মহিলা সন্ন্যাসী এবং সাধ্বীরা এই অভিনব কর্মসূচির আয়োজন করেছেন। আমি আপনাদের সবাইকে অভিনন্দন জানাই।
আমার প্রিয় মা ও বোনেরা,
কচ্ছ-এর যে মাটিতে আপনাদের আগমন হয়েছে, সেই মাটি অনেক শতাব্দী ধরে নারীশক্তি এবং সামর্থ্যের প্রতীক। এখানে মা আশাপুরা স্বয়ং মাতৃশক্তি রূপে বিরাজ করেন। এখানকার মহিলারা গোটা সমাজকে কঠোর প্রাকৃতিক সমস্যার মধ্যে, সমস্ত প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে বাঁচতে শেখান, লড়াই করতে শেখান এবং জিততে শেখান। জল সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কচ্ছ-এর মহিলারা যে ভূমিকা পালন করে আসছেন, ‘পানী সমিতি’ গড়ে তুলে তাঁরা যে অসাধারণ কাজ করেছেন, তার জন্য তাঁদেরকে অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা সম্মানিত করেছে। কচ্ছ-এর মহিলারা তাঁদের অসীম পরিশ্রমের মাধ্যমে কচ্ছ-এর সভ্যতা ও সংস্কৃতিকেও জীবন্ত বানিয়ে রেখেছেন। কচ্ছ-এর রং, বিশেষ করে এখানকার হস্তশিল্প এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এই কলানৈপূণ্য আর এই দক্ষতা এখন গোটা বিশ্বে একটি নিজস্ব স্বতন্ত্র পরিচয় গড়ে তুলছে। আপনারা এই সময়ে ভারতের পশ্চিম সীমান্তের সর্বশেষ গ্রামে রয়েছেন। অর্থাৎ, গুজরাটের এবং ভারতের সীমান্তবর্তী সর্বশেষ গ্রাম। তারপর আর কোনও জনবসতি নেই। এরপর থেকে অন্য দেশ শুরু হয়ে যায়। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে, সেখানকার মানুষকে দেশের স্বার্থে বিশেষ দায়িত্ব পালন করতে হয়। কচ্ছ-এর বীরাঙ্গনা নারীরা সর্বদাই এই দায়িত্ব খুব ভালোভাবে পালন করেছেন। এখন আপনারা গতকাল থেকে ওখানে রয়েছেন। হয়তো আপনারা কারোও না কারোর কাছ থেকে শুনেছেন, ১৯৭১ সালে যখন পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ চলছিল, সেই যুদ্ধে শত্রুরা ভুজ বিমানবন্দর আক্রমণ করেছিল। এয়ারস্ট্রিপে ভারী বোমাবর্ষণ করেছিল। ভুজ বিমানবন্দরে আমাদের যে রানওয়ে ছিল সেটাকে তারা নষ্ট করে দিয়েছিল। সেই সময় তাদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা করার জন্য আরও একটি রানওয়ের প্রয়োজন ছিল। আপনারা সবাই শুনে গর্বিত হবেন যে তখন কচ্ছ-এর মহিলারা তাঁদের নিজেদের জীবনের পরোয়া না করে, সারা রাত সবাই মিলে কাজ করে এক রাতেই এয়ারস্ট্রিপ তৈরি করার কাজ সম্পূর্ণ করেছিলেন। তারপরেই ভোরবেলা ভারতীয় বিমানবাহিনী সেই রানওয়ে থেকে যুদ্ধবিমান আকাশে উড়িয়ে শত্রুকে আক্রমণ করতে পেরেছে। স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। সেই সময়কার অনেক মা ও বোন আজও আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে দেখা হলে আপনাদের খুব ভালো লাগবে। তাঁদের বয়স এখন অনেক। কিন্তু তবুও অনেকবার আমার তাঁদের সঙ্গে দেখা করে কথা বলার সৌভাগ্য হয়েছে। তো সেই মহিলারা তাঁদের অসাধারণ সাহস এবং সামর্থ্য দিয়ে দেশকে রক্ষা করেছিলেন। এই মাটিতেই আমাদের মাতৃশক্তি আজ সমাজের জন্য একটি সেবাযজ্ঞ শুরু করছে।
মা ও বোনেরা,
আমাদের বেদগুলিতে “পুরন্ধিঃ য়োষা” – এই মন্ত্র দিয়ে মহিলাদের আহ্বান করা হয়েছে। অর্থাৎ, মহিলারা তাঁদের নগর, তাঁদের সমাজের দায়িত্ব পালনে সমর্থ হয়ে উঠুন, মহিলারা দেশকে নেতৃত্ব দিন। আমাদের দেশের নারীরা নীতি, নিষ্ঠা, নির্ণয়শক্তি এবং নেতৃত্বের প্রতিবিম্ব হন, এগুলির প্রতিনিধিত্ব করেন। সেজন্য আমাদের বেদগুলিতে, আমাদের পরম্পরায় এই আহ্বান করা হয়েছে যাতে নারীশক্তি সক্ষম হয়, সমর্থ হয় আর দেশকে নতুন দিশা প্রদান করে। আমরা কখনও একটি কথা বলি – “নারী তু নারায়ণী!” অর্থাৎ, নারী তুমি নারায়ণী। কিন্তু আরও একটি কথাও হয়তো আমরা শুনেছি, এটা অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে শোনার মতো কথা। আমাদের দেশে বলা হয় – “নর করণী করে তো নারায়ণ হো যায়!” অর্থাৎ, মানুষ ভালো কাজ করলে নারায়ণে পরিণত হয়। অর্থাৎ, ‘নর’কে ‘নারায়ণ’ হওয়ার জন্য কিছু করতে হবে। “নর করণী করে তো নারায়ণ হো যায়!” কিন্তু নারীর জন্য বলা হয়েছে – “নারী তু নারায়ণী!” অর্থাৎ, তাঁদের কিছু করার প্রয়োজন নেই। এমনিতেই তাঁরা নারায়ণী। এখন দেখুন, ভাবনায় কতটা পার্থক্য। আমরা বলতে থাকি, কিন্তু যদি একটু ভাবি যে আমাদের পূর্বজরা কতটা গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করে পুরুষদের জন্য বলেছেন - “নর করণী করে তো নারায়ণ হো যায়!” আর মা-বোনেদের জন্য বলেছেন - “নারী তু নারায়ণী!”
মা ও বোনেরা,
ভারত বিশ্বের এমন বৌদ্ধিক পরম্পরার বাহক, যার অস্তিত্ব তার দর্শনে কেন্দ্রিভূত আর এই দর্শনের ভিত্তিতেই তার সমস্ত আধ্যাত্মিক চেতনার মন্থন। এই আধ্যাত্মিক চেতনাই তার নারীশক্তিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। আমরা হাসি মুখে, মহানন্দে, ঈশ্বরীয় সত্ত্বাকেও নারী রূপে স্থাপন করেছি। যখন আমরা ঈশ্বরীয় সত্ত্বাকে এবং ঈশ্বরীয় সত্ত্বাগুলিকে স্ত্রী এবং পুরুষ – উভয় রূপে দেখি, তখন স্বভাবতই প্রথম অগ্রাধিকার নারী সত্ত্বাকেই দিই; তা সে সীতা-রাম হোক, রাধা-কৃষ্ণ হোক, গৌরী-গণেশ হোক অথবা লক্ষ্মী-নারায়ণ হোক। আপনাদের থেকে ভালো করে কারা আমাদের এই পরম্পরার সঙ্গে পরিচিত? আপনাদের থেকে বেশি করে কারা এই পরম্পরার গূঢ় তাৎপর্য বোঝেন? আমাদের বেদগুলিতে ‘ঘোষা, গোধা, অপালা এবং লোপামুদ্রা’র মতো বহুবিধ নাম রয়েছে - যাঁরা আমাদের দেশের প্রতিষ্ঠিত ঋষিকাদের অন্যতম। গার্গী এবং মৈত্রেয়ীর মতো বিদুষীরা বেদান্তের সংস্কারকে দিশা প্রদান করেছিলেন। ভারতের উত্তর প্রান্তের মীরাবাঈ থেকে শুরু করে দক্ষিণ প্রান্তে সন্ন্যাসিনী ‘অক্কা মহাদেবী’ পর্যন্ত, ভারতের দেবীরা ভক্তি আন্দোলন থেকে শুরু করে জ্ঞান দর্শন পর্যন্ত সমাজে সংস্কার এবং পরিবর্তনকে স্বর দিয়েছেন। গুজরাট এবং কচ্ছ-এর এই মাটিতেও ‘সতী তোরল’, ‘গঙ্গা সতী’, ‘সতী লোয়ণ’, ‘রামবাঈ’ এবং ‘লীরবাঈ’-এর মতো অনেক দেবীদের নাম আমরা জানি, আপনারা সৌরাষ্ট্রে যান, বাড়িতে বাড়িতে ঘুরুন, এরকম আপনারা প্রত্যেক রাজ্যের, প্রত্যেক এলাকায় যান। এ দেশে হয়তো এমন কোনও গ্রাম নেই, এমন কোনও এলাকা নেই যেখানে কোনও না কোনও ‘গ্রাম দেবী’ কিংবা ‘কুল দেবী’ সেখানকার আস্থার কেন্দ্রে বিরাজ করেন না। এই দেবীরা এই দেশের সেই নারী চেতনার প্রতীক যাঁরা সনাতন কাল থেকে আমাদের সমাজকে সৃষ্টি করে এসেছেন। এই নারী চেতনাই স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়েও দেশের সন্তানদের মনে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষার আগ্নেয়গিরি প্রজ্জ্বলিত রেখেছেন। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, ১৮৫৭ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা। ১৮৫৭ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা মনে করলে, আজ যখন আমরা স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব পালন করছি, তখন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রেক্ষিত গড়ে তুলতে আমাদের দেশের ভক্তি আন্দোলনের অনেক বড় ভূমিকা ছিল। ভারতের প্রত্যেক কোণা থেকে কোনও না কোনও ঋষি-মুনি, সন্ন্যাসী-আচার্য আবির্ভূত হয়েছেন যাঁরা ভারতের চেতনা প্রজ্জ্বলিত রাখার অদ্ভূত কাজ করে গেছেন। তাঁদের কাজের আলোতে সেই চেতনার রূপায়ণের মাধ্যমেই দেশবাসী স্বাধীনতা আন্দোলনে সফল হয়েছেন। আজ আমরা একটি এমন সময়ে পৌঁছেছি, যখন স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্ণ হয়েছে, কিন্তু আমাদের আধ্যাত্মিক যাত্রা চলতে থাকবে। আমাদের সামাজিক চেতনা, সামাজিক সামর্থ্য, সামাজিক বিকাশ, সমাজে পরিবর্তন, সমাজের সময়ের সঙ্গে প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ববোধ যুক্ত হয়েছে। আজ যখন এত বড় সংখ্যক সন্নাসী পরম্পরার মা ও বোনেরা একত্রিত হয়েছেন, তখন আমি মনে করি, আমার আপনাদের সঙ্গে সে কথাও বলা উচিৎ, আর আজ আমার সৌভাগ্য যে নারী চেতনায় সমৃদ্ধ, এরকম জাগ্রত মানবীদের সামনে কথাগুলি বলতে পারছি।
মা ও বোনেরা,
যে দেশ এই মাটিকে ‘মা’ বলে মানে, সেখানে মহিলাদের উন্নয়ন দেশের ক্ষমতায়নকে সব সময়ই বলীয়ান করে। আজ মহিলাদের জীবনকে উন্নত করা দেশের অগ্রাধিকার। আজ দেশের অগ্রাধিকার ভারতের উন্নয়ন যাত্রায় মহিলাদের সম্পূর্ণ অংশীদারিত্ব সুনিশ্চিত করা। সেজন্য আমাদের মা ও বোনেদের নানা সমস্যা কম করার লক্ষ্যে আমরা আরও জোর দিয়ে কাজ করছি। আমাদের দেশে এমন পরিস্থিতি ছিল যে কোটি কোটি মা ও বোনেদের শৌচকর্মের জন্য বাড়ির বাইরে খোলা মাঠে যেতে হত। বাড়িতে শৌচালয় না থাকার কারণে তাঁদের কত কষ্ট সহ্য করতে হত, তা আমার আপনাদের সামনে শব্দ দিয়ে বর্ণনা করার প্রয়োজন নেই। আমাদের সরকার দায়িত্ব নিয়ে মহিলাদের এই কষ্টকে অনুধাবন করে তা দূর করার চেষ্টা করেছে। দেশের দায়িত্ব নিয়ে প্রথম বছরেই ১৫ আগস্টে লালকেল্লার প্রাকার থেকে আমি এই সমস্যার কথা দেশের সামনে রেখেছি, আর আমি সারা দেশে ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন’ আন্দোলন শুরু করে তার মাধ্যমে ১১ কোটিরও বেশি শৌচালয় নির্মাণ করিয়েছি। এখন অনেকেই হয়তো ভাববেন, এটা আর এমন কী কাজ! কিন্তু এটাই বাস্তব যে এই কাজটাই আগে কেউ করতে পারেননি। আপনারা সবাই দেখেছেন যে, গ্রামে গ্রামে মা ও বোনেরা চেলাকাঠ, খড়কুটো এবং গোবর দিয়ে উনুন জ্বালিয়ে রান্না করতেন। ধোঁয়ার সমস্যাকে মহিলারা নিজেদের নিয়তি বলে মনে করতেন। এই সমস্যা থেকে মুক্তি প্রদানের জন্যই আমরা দেশের ৯ কোটিরও বেশি মহিলাকে ‘উজ্জ্বলা যোজনা’র মাধ্যমে রান্নার গ্যাস সংযোগ দিয়েছি, আর তাঁদেরকে ধোঁয়া থেকে মুক্তি দিয়েছি। আগে মহিলাদের, বিশেষ করে গরীব মহিলাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও ছিল না। এর ফলে তাঁদের আর্থিক শক্তি সব সময়েই দুর্বল থাকত। আমাদের সরকার ২৩ কোটি মহিলাকে ‘জন ধন’ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ব্যাঙ্কের সঙ্গে যুক্ত করেছে। না হলে, আগে আমরা জানি, মা ও বোনেরা কিভাবে রান্নাঘরে গমের ডাব্বায় বা অন্য কোনও মশলার কৌটোয় টাকা-পয়সা লুকিয়ে রাখতেন। চালের ডাব্বার নিচে চাপা দিয়ে রাখতেন। আজ আমরা এমন ব্যবস্থা করেছি, যাতে মা ও বোনেরা তাঁদের জমানো টাকা ব্যাঙ্কে জমা করতে পারেন, আর সুদ পান। আজ গ্রামে গ্রামে মহিলাদের স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি করে, ছোট ছোট শিল্পোদ্যোগের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিকেও গতি প্রদান করা হচ্ছে। আমাদ্র দেশের মহিলাদের মধ্যে দক্ষতার কোনও অভাব নেই, কখনও ছিলও না। কিন্তু এখন সেই দক্ষতাই তাঁদের এবং তাঁদের পরিবারের শক্তি বাড়িয়ে তুলছে। আমাদের বোন ও মেয়েরা যাতে এগিয়ে যেতে পারে, আমাদের মেয়েরা যাতে তাঁদের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে পারে, তাঁদের ইচ্ছানুসারে নিজেদের মতো করে কিছু কাজ করতে পারেন, সেজন্য সরকার অনেক মাধ্যমে তাঁদের আর্থিক সহায়তাও প্রদান করছে। আজ ‘স্ট্যান্ড-আপ ইন্ডিয়া’র মাধ্যমে ৮০ শতাংশ ঋণ আমাদের মা ও বোনেদের নামেই দেওয়া হচ্ছে। ‘মুদ্রা যোজনা’র মাধ্যমে প্রায় ৭০ শতাংশ ঋণ আমাদের বোন ও মেয়েদের নামে দেওয়া হয়েছে, আর এই ঋণের পরিমাণ হল কয়েক হাজার কোটি টাকা। আরও একটি বিশেষ কাজ হয়েছে, যার কথা আমি আপনাদের সামনে অবশ্যই উল্লেখ করতে চাই। আমাদের সরকার ‘পিএম আবাস যোজনা’র মাধ্যমে ২ কোটিরও বেশি বাড়ি তৈরি করে দিয়েছে। কারণ, আমাদের একটা স্বপ্ন হল ভারতের প্রত্যেক গরীবের মাথা ওপর ছাদ থাকবে, নিজের একটি পাকা বাড়ি থাকবে। মাথার ওপর পাকা ছাদ থাকবে, আর বাড়িটাও চার দেওয়ালের বাড়ি নয়। এমন বাড়ি হবে যাতে শৌচালয় থাকবে, এমন বাড়ি হবে যেখানে নলের মাধ্যমে জল আসবে, এমন বাড়ি হবে যেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকবে, এমন বাড়ি যার ভেতরে আপনাদের সমস্ত প্রাথমিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে, রান্নার গ্যাসের সংযোগের মতো সমস্ত সুবিধা বাড়ির মধ্যেই থাকবে। আমরা সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর ২ কোটিরও বেশি গরীব পরিবারের জন্য ইতিমধ্যেই ২ কোটি বাড়ি তৈরি করে দিয়েছি। এই পরিসংখ্যান অনেক বড়। এখন ২ কোটি বাড়ি তৈরি করে দেওয়া কম কথা নয়! একটি বাড়ি তৈরি করতে কত টাকা লাগে? আপনারা হয়তো ভাবছেন, কতো আর লাগে - ১ লক্ষ ৫০ হাজার, ২ লক্ষ, ২ লক্ষ ৫০ হাজার, ৩ লক্ষ টাকা! ছোট একটা বাড়ি হওয়ার মানেই গরীব মানুষের লক্ষপতি হওয়া। তার মানে, যে ২ কোটি মহিলার নামে এই সরকারের তৈরি করে দেওয়া বাড়ির মালিকানা দেওয়া হয়েছে, সেই ২ কোটি গরীব মহিলা অবলীলায় লক্ষপতি হয়ে উঠেছেন। যখন আমরা ‘লক্ষপতি’ শব্দটি শুনি, তখন কত বড় বলে মনে হয়, কত ধনী মনে হয়। কিন্তু একবার গরীবদের প্রতি সমবেদনা তৈরি হলে, মনে কাজ করার ইচ্ছা থাকলে কিভাবে কাজ হয়, তার প্রমাণ আজ এই ২ কোটি মা ও বোনেরা বাড়ির মালিকানার অধিকার পেয়েছেন। একটা সময় ছিল, যখন মহিলাদের নামে কোনও জমি থাকত না, কোনও দোকান হত না, কোনও বাড়ি হত না। কোথাও গিয়ে জিজ্ঞাসা করুন, এই বাড়ি কার নামে? তখন মহিলারা জবাব দিতেন, আমার স্বামীর নামে, আমার ভাইয়ের নামে কিংবা আমার ছেলের নামে। দোকান কার নামে? একই জবাব - স্বামীর নামে, ছেলের নামে কিংবা ভাইয়ের নামে। বাড়ির জন্য গাড়ি কেনা হোক কিংবা স্কুটার, কার নামে? স্বামীর নামে, ছেলের নামে কিংবা ভাইয়ের নামে। মহিলাদের নামে কোনও বাড়ি থাকত না, গাড়ি থাকত না, কিছুই থাকত না। আমরাই প্রথমবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে সম্পত্তির মালিকানা মা ও বোনেদের নামে হবে। সেজন্যই আমরা এরকম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছি আর এতে যখন আইনি মালিকানা আসে, তখন তাঁদের মনে যে শক্তি আসে, এটাকেই বলে ‘এমপাওয়ারমেন্ট’ বা ক্ষমতায়ন। এখন যখন বাড়িতে আর্থিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রশ্ন আসে, তখন মা ও বোনেরা এতে অংশগ্রহণ করেন। তাঁদের অংশীদারিত্ব এখন অনেক বেড়েছে। না হলে আগে কী হত? বাড়িতে ছেলে আর বাবা কিছু ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে কথা বলত, আর মা যদি রান্নাঘর থেকে এসে কোনও মতামত রাখতেন, তৎক্ষণাৎ তাঁকে বলে দেওয়া হত – যাও যাও, তুমি রান্নাঘরে কাজ করো। আমি তো ছেলের সঙ্গে কথা বলছি! অর্থাৎ, এই সমাজে মেয়েরা কিছু নয়, এমন স্থিতি আমরা দেখেছি। আজ মা ও বোনেরা ‘এমপাওয়ার্ড’ বা ক্ষমতায়িত হয়ে বলেন, না এটা ভুল করছ! এমনভাবে করলে লোকসান হবে। এইভাবে কর। এইভাবে করলে লাভ হবে। আজ তাঁদের অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। মা ও বোনেরা, মেয়েরা আগেও এতটাই সক্ষম ছিলেন, কিন্তু আগে তাঁদের স্বপ্নগুলির সামনে পুরনো ভাবনাচিন্তা এবং অব্যবস্থার বন্ধন ছিল। মেয়েরা কোনও কাজ করলে, চাকরি করলে, তাঁদের অনেক সময় গর্ভবতী হওয়ার কারণে চাকরি ছাড়তে হত। যে সময় তাঁদের জীবনে সবচাইতে বেশি অবকাশ ও বিশ্রামের প্রয়োজন, টাকারও প্রয়োজন, সেই সময়েই তাঁদেরকে বাধ্য হয়ে চাকরি ছাড়তে হত। তাতে তাঁদের মনে যে কষ্ট হত, সেটা তাঁদের গর্ভের যে সন্তান তাদের স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব ফেলত। কত মেয়েদের যে ‘মহিলা অপরাধ’ বা কর্মক্ষেত্রে যৌন শোষণের ভয়ে কাজ ছাড়তে হতো! আমরা এই সমস্ত পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা মাতৃত্বকালীন অবকাশকে ১২ সপ্তাহ থেকে বাড়িয়ে ২৬ সপ্তাহ করে দিয়েছি। অর্থাৎ, ৫২ সপ্তাহে যে বছর হয় তার অর্ধেক, ২৬ সপ্তাহের ছুটি মঞ্জুর করে দিচ্ছি। আমরা কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য কড়া আইন প্রণয়ন করেছি। আমাদের দেশে আমাদের সরকার ধর্ষণের বিরুদ্ধে অনেক কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে। ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধে ফাঁসির মতো সাজার ব্যবস্থাও করেছে। এভাবে মেয়ে এবং ছেলেকে এক সমান মনে করে সরকার মেয়েদের বিয়ের বয়সকেও বাড়িয়ে ২১ বছর করার চেষ্টা করছে। সংসদের সামনে আমরা এই প্রস্তাব রেখেছি। আজ দেশের সেনাবাহিনীগুলিতেও মেয়েদের বড় ভূমিকাকে উৎসাহ যোগানো হচ্ছে, সৈনিক স্কুলগুলিতে মেয়েদের ভর্তি করা শুরু হয়েছে।
মা ও বোনেরা,
নারীশক্তির ক্ষমতায়নের এই সফরকে দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া আমাদের সকলের দায়িত্ব। আপনাদের সকলের এত ভালোবাসা আমার ওপর রয়েছে, আপনারা এত আশীর্বাদ দিয়েছেন, আপনাদের মধ্যেই তো আমি লালিত-পালিত হয়েছি। আপনাদের মধ্যে থেকেই তো আমি উঠে এসেছি। সেজন্য আজ ইচ্ছা হয় আপনাদেরকে কিছু অনুরোধ জানাই, কিছু বিষয়ের জন্য আপনাদেরকে বলব, আপনারাও আমাকে সাহায্য করুন। এখন কী করতে হবে? আমি আপনাদের কাছে কিছু দায়িত্ব পালনের অনুরোধ রাখব। আমাদের যে ক’জন মন্ত্রীমশাই এখানে এসেছেন, আমাদের কর্মকর্তারাও রয়েছেন, তাঁরাও হয়তো কিছু বলেছেন, অথবা পরবর্তী সময়ে বলবেন। আমার বক্তব্য হল অপুষ্টি নিয়ে। আমরা যেখানেই থাকি না কেন, আমরা গৃহস্থ হই কিংবা সন্ন্যাসী, কিন্তু ভারতের সন্তান-সন্ততিরা যদি অপুষ্টিতে ভোগে আমাদের মনে তা নিয়ে যন্ত্রণা নিশ্চয়ই হয়। যন্ত্রণা হওয়া উচিৎ কি উচিৎ না বলুন? আমরা কি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এই সমস্যার সমাধান করতে পারি, নাকি পারি না? আমরা কি সামান্য দায়িত্ব নিতে পারি না? সেজন্য আমি বলব, অপুষ্টির বিরুদ্ধে দেশে একটি বড় অভিযান চলছে। সেই অভিযানে আপনাদের কাছ থেকেও বড় সাহায্য চাই। আমি জানি যে ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ অভিযানকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আপনাদের বড় ভূমিকা রয়েছে। অধিক সংখ্যক মেয়েরা নিয়মিত স্কুলে যায়, তারা যাতে পড়াশোনা মাঝখানে ছেড়ে না দিয়ে তাদের শিক্ষা সম্পূর্ণ করে, সেজন্য আপনাদের লাগাতার তাদের সঙ্গে কথা বলা উচিৎ। স্কুলছুট ছেলে-মেয়েদের ডেকে এনে তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। আপনারা মঠে, মন্দিরে যেখানেই তাদের পাবেন, তাদেরকে প্রেরণা যোগাবেন। এখন সরকার আরও একটি অভিযান শুরু করতে চলেছে, যাতে মেয়েদের স্কুল প্রবেশের উৎসব পালন করা হবে। এক্ষেত্রেও আপনাদের সক্রিয় অংশীদারিত্ব অনেক সাহায্য করবে। এমনই আরও একটি বিষয় হল – ‘ভোকাল ফর লোকাল’-এর। আপনারা হয়তো আমার মুখ থেকে বারবার এই শব্দবন্ধটি শুনেছেন। আপনারা আমাকে বলুন, মহাত্মা গান্ধী আমাদেরকে বলে গিয়েছিলেন, কিন্তু আমরা সবাই ভুলে গেছি। আজ বিশ্বের যে অবস্থা আমরা দেখছি, আজ বিশ্বে সেই দেশই এগিয়ে যেতে পারবে, যারা নিজেদের পায়ে দাঁড়িয়ে আছে। যারা বাইরে থেকে জিনিস কিনে এনে দিন কাটায়, তারা কিছু করতে পারবে না। আর সেজন্যই আমার এই ‘ভোকাল ফর লোকাল’-এর আহ্বান। আমাদের অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখন উঠে এসেছে। সেটির সঙ্গে নারী ক্ষমতায়নেরও অত্যন্ত গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আমরা যদি নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করি, তাহলে দেখতে পাব যে অধিকাংশ স্থানীয় পণ্যের শক্তি মহিলাদের হাতে থাকে। সেজন্য আপনারা নিজেদের সম্বোধনে, নিজেদের সচেতনতা অভিযানে মানুষকে স্থানীয় পণ্য ব্যবহার করার জন্য অবশ্যই উৎসাহিত করবেন। মানুষ যেন নিজেদের বাড়িতে স্থানীয় পণ্য ব্যবহার করেন। আপনাদের যত ভক্তরা রয়েছেন, তাঁদেরকে বলুন, ভাই, তোমার বাড়িতে বিদেশি পণ্য কতগুলি রয়েছে আর ভারতে তৈরি পণ্য কতগুলি রয়েছে? হিসাব করে বল। একটু ভালোভাবে দেখলেই বোঝা যাবে, আমাদের প্রত্যেকের বাড়িতেই অনেক ছোট ছোট বিদেশি জিনিস ঢুকে গেছে। আমাদের দেশের মানুষ কি এই জিনিসগুলি বানাতে পারেন না, নাকি আমাদের দেশে এগুলি উৎপাদিত হয় না। যেমন অনেকের বাড়িতেই বিদেশি ছাতা রয়েছে। এই ছাতা তো আমাদের দেশেও তৈরি হয়। অনেক শতাব্দী ধরে আমাদের দেশে ছাতা তৈরি হয়। বিদেশি ছাতা কেনার কি প্রয়োজন? সম্ভবত এমনও হতে পারে যে, আমাদের দেশে তৈরি ছাতা কিনলে ২-৪ টাকা বেশি লাগবে, কিন্তু এতে আমাদের কত গরীব মানুষের অন্ন সংস্থান হবে বলুন তো? সেজন্যই আমি বলছি, বাইরে থেকে আনা জিনিস কেনার শখ ছাড়ুন। আপনারা এমন জীবন বাছুন, এমন সব জিনিস ব্যবহার করুন, যেগুলি দেশে তৈরি, আর যেগুলি কিনলে দেশের শ্রমিকরা, হস্তশিল্পীরা উপকৃত হবেন। এভাবে আপনারা আপনাদের ভক্তদের প্রেরণা যোগাতে পারেন। সাধারণ মানুষকে আপনারা পথ দেখাতে পারেন। এর কারণ ভারতের মাটিতে তৈরি হওয়া পণ্যগুলি, ভারতের মাটি দিয়ে তৈরি জিনিসগুলি, যেগুলিতে ভারতের শিল্পীদের পরিশ্রম ও ঘাম মিশে থাকে, এমন জিনিসগুলির স্বার্থে যখন আমি ‘ভোকাল ফর লোকাল’ বলি, তখন অনেকেই মনে করেন, দীপাবলিতে মাটির প্রদীপ কিনলেই বুঝি স্বদেশী পণ্য কেনা হয়ে গেল। শুধু দীপাবলির প্রদীপ কিনলে হবে না ভাই, বাড়িতে ব্যবহার করা প্রতিটি জিনিসের দিকে আপনারা তাকান! শুধু দীপাবলির প্রদীপের কথা ভাববেন না। সব ধরনের দেশি জিনিস যদি আপনারা কেনেন, আমাদের তাঁতি মা ও বোনেদের তৈরি, আমাদের হস্তশিল্পীদের তৈরি জিনিস এখন ভারত সরকারের জিইএম পোর্টালেও ন্যায্যমূল্যে পেয়ে যাবেন। আপনারা জিইএম পোর্টাল সম্পর্কে সবাইকে বলুন। ভারত সরকার এরকম একটি পোর্টাল তৈরি করেছে, যার সাহায্যে যে কোনও মানুষ দূরদুরান্তের যে কোনও অঞ্চল থেকে তাঁর প্রয়োজনের জিনিস আনাতে পারেন, কিংবা নিজেদের উৎপাদিত পণ্য সরকারকে বিক্রি করতে পারেন। এটা একটা অনেক বড় কাজ হচ্ছে। আমার অনুরোধ, যখনই আপনারা সমাজের ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণীর মুখোমুখি হবেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলবেন, তখন নাগরিকদের কর্তব্যের ওপর জোর দেওয়ার কথা অবশ্যই বলা উচিৎ। নাগরিক ধর্মের কথা তাঁদের মনে করিয়ে দেওয়া উচিৎ। আপনারা তো এমনিতেই মানুষকে তাঁদের পিতৃধর্ম, মাতৃধর্ম সম্পর্কে বলতে থাকেন। এবার দেশের জন্য প্রয়োজনীয় নাগরিক ধর্মের কথাও বলুন। সংবিধানে নিহিত এই ভাবনাকে আমাদের মিলেমিশে শক্তিশালী করে তুলতে হবে। এই ভাবনাকে শক্তিশালী করেই আমরা নতুন ভারত নির্মাণের লক্ষ্য অর্জন করতে পারব। আমার পূর্ণ বিশ্বাস যে দেশবাসীকে আধ্যাত্মিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেওয়ার সময় আপনারা প্রত্যেক মানুষকে রাষ্ট্র নির্মাণের এই সফরের সঙ্গে যুক্ত করবেন। আপনাদের আশীর্বাদ এবং পথ প্রদর্শনের মাধ্যমে আমরা নতুন ভারতের স্বপ্নগুলি দ্রুত বাস্তবায়িত করতে পারব। আপনারা দেখেছেন, ভারতের এই সীমান্তবর্তী গ্রামটির দৃশ্য আপনাদের মনে কতটা আনন্দ সৃষ্টি করছে। হয়তো আপনাদের মধ্যে অনেকেই ‘শ্বেত রান’ ঘুরে দেখতে গিয়েছেন। কেউ কেউ হয়তো আজ যাবেন। এই রান-এর একটি নিজস্ব সৌন্দর্য রয়েছে আর সেখানে অনেকের আধ্যাত্মিক অনুভবও হয়। কিছুক্ষণ সময় একা, কিছুটা দূরে গিয়ে বসুন। একটি নতুন চেতনা অনুভব করবেন। আমার এই অভিজ্ঞতা আছে। কারণ, একটা সময় আমি সেখানে দীর্ঘকাল এভাবে থেকে নিজের মনে শান্তি পেয়েছি। আমি তো দীর্ঘ সময় ধরে এই মাটির সঙ্গেই যুক্ত থাকা একজন ব্যক্তি। আপনারা যখন এখানে এসেছেন, তখন আপনারা অবশ্যই দেখবেন যে, সেখানে একটা বিশেষ অভিজ্ঞতা, বিশেষ অনুভব অবশ্যই হয়। সেই অনুভবের অভিজ্ঞতা আপনারা অর্জন করুন। আমি আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। আমার কিছু বন্ধু ওখানে রয়েছেন। আপনারা তাঁদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কথা বলুন। সমাজের জন্যও আপনারা এগিয়ে আসুন। স্বাধীনতা আন্দোলনে সন্ত পরম্পরা অনেক বড় ভূমিকা পালন করেছিল। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরও দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সন্ত পরম্পরাকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। নিজেদের দায়িত্বকে আপনারা সামাজিক দায়িত্ব রূপে পালন করুন। আপনাদের প্রতি আমার এটাই প্রত্যাশা। আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।