মিঃ মাইকেল ব্লুমবার্গ, শিল্প জগতের কর্ণধার, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ যাঁরা ব্লুমবার্গ নতুন অর্থনীতি ফোরামে এসেছেন,

আমি প্রথমেই মাইকেল এবং ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিজে কর্মরত তাঁর দলের লোকেদের দুর্দান্ত কাজের প্রশংসা করছি। এই দলটি ভারতের স্মার্ট সিটিজ মিশনের জন্য যে পরিকল্পনা করেছিল তা চমৎকার।

 

বন্ধুগণ,

আমরা আমাদের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে রয়েছি। বিশ্বের অর্ধেকের বেশি নাগরিক বর্তমানে শহরাঞ্চলে থাকেন। আগামী দুই দশকে, ভারত এবং আফ্রিকার কোনও কোনও দেশ নগরায়নের দিকে বিরাটভাবে এগিয়ে যাবে। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে পৃথিবীর সামনে এই মুহূর্তে বিরাট কিছু চ্যালেঞ্জ এসে দাঁড়িয়েছে। দেখা যাচ্ছে, আমাদের শহরগুলি, যেগুলি আসলে আমাদের উন্নয়ন চালিকাশক্তি, সেগুলি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। চূড়ান্ত মন্দাভাবের পর পৃথিবীর অনেক শহর নিজেদের আর্থিকভাবে অত্যন্ত খারাপ অবস্থায় থাকার কথা ঘোষণা করেছে। এখান থেকে যে প্রশ্নটি  বেরিয়ে আসে সেটি হল একটি শহরে থাকার যৌক্তিকতা। সম্প্রদায়গতভাবে জমায়েত হওয়া, খেলাধূলা, শিক্ষা, বিনোদন এগুলি এখন আর আগের মতো নেই। সবথেকে বড় যে প্রশ্ন পৃথিবীর সামনে এসে দাঁড়িয়েছে  সেটি হল কিভাবে আবার সবকিছু শুরু করা যাবে? পরিবর্তন ছাড়া আবার নতুন করে শুরু করা সম্ভব নয়। চিন্তাভাবনার পরিবর্তন, পদ্ধতির পরিবর্তন এবং অভ্যাসের পরিবর্তন।

 

বন্ধুগণ,

আমার মনে হয়, দুটি বিশ্বযুদ্ধর পর ঐতিহাসিক পুনর্গঠনের সুযোগ এখন আমরা আবার পেয়েছি আর এর মধ্য দিয়ে আমাদের কাছে অনেকগুলি বিষয় পরিষ্কার হচ্ছে। বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে গোটা পৃথিবী নতুন একটি বিশ্ব গড়ে তোলার জন্য কাজ করেছিল, নতুন নতুন নিয়ম তৈরি করা হয়েছিল এবং পৃথিবী নিজেই পরিবর্তিত হয়েছে। কোভিড-১৯ আমাদের সামনে নতুন নতুন নিয়ম তৈরি করার সেই সুযোগ আবারও এনে দিয়েছে। পৃথিবীর এই সুযোগ গ্রহণ করা উচিৎ। যদি আমরা একটি প্রাণবন্ত ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে চাই, তাহলে তা খুবই জরুরি। কোভিড-পরবর্তী সময়ে বিশ্বের চাহিদাগুলি কি হবে আমাদের সেগুলি ভাবনা-চিন্তা করা উচিৎ। আমাদের শহরাঞ্চলগুলির প্রাণসঞ্চারের জন্য নতুনভাবে ভালো কিছু শুরু করা প্রয়োজন।

 

বন্ধুগণ,

এখানে আমি ভারতীয় শহরগুলির ইতিবাচক দিকগুলি আপনাদেরকে জানাতে চাই। সঙ্কটের এই সময়ে ভারতীয় শহরগুলি অভূতপূর্ব একটি উদাহরণ আমাদের সামনে তুলে ধরেছে। বিশ্বজুড়ে লকডাউনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগঠিত হয়েছে। কিন্তু ভারতীয় শহরগুলি লকডাউনের  প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাকে যথাযথভাবে মেনে চলেছে। এর কারণ হল, আমাদের জন্য আমাদের শহরের বড় বড় ভবনগুলি কংক্রিটেরই তৈরি নয়, সেটি আসলে এক একটি সম্প্রদায়। এই মহামারী আমাদের সমাজ ও ব্যবসা বাণিজ্যকে জনসাধারণের জন্য সব থেকে বড় সম্পদ বলে গুরুত্ব দিয়েছে। কোভিড-পরবর্তী সময়ে এই ভাবনাগুলিকেই কাজে লাগাতে হবে যার মধ্য দিয়ে সম্পদের উৎস খুঁজে পাওয়া যায়। শহরগুলি উন্নয়নের প্রাণবন্ত চালিকাশক্তি। তারা বহু প্রতীক্ষিত এই পরিবর্তনের মূল শক্তির আধার। 

জনসাধারণ প্রায়শই শহরমুখী হয়, কারণ শহর তাঁদের কাজ দেয়। কিন্তু এখনও কি সময় আসেনি যে আমরা শহরগুলিকে জনসাধারণের জন্য তৈরি করব? কোভিড-১৯ আমাদের কাছে সেই সুযোগ এনে দিয়েছে যাতে জনসাধারণের কাছে শহর আরও বেশি করে বাসযোগ্য হয়ে ওঠে। আবাসনের সুবিধা, উন্নত কাজের পরিবেশ, কম সময়ে দ্রুত যাতায়াত করার সুবিধা – এগুলি সবই এর মধ্যে রয়েছে। লকডাউনের এই সময়ে অনেক শহর পরিচ্ছন্ন হ্রদ, নদী এবং মুক্ত বায়ুর অভিজ্ঞতা পেয়েছে। আমরা অনেকেই পাখির কলতান শুনতে পেয়েছি যা আমরা আগে কখনও খেয়াল করিনি। আমরা কি শহরগুলিকে এরকমভাবে গড়ে তুলতে পারি যেখানে এই বৈশিষ্ট্যগুলিই স্বাভাবিক হবে, অর্থাৎ ব্যতিক্রম হবে না? আমরা ভারতে উদ্যোগ নিয়েছি শহরের কেন্দ্র গড়ে তুলব যেখানে গ্রামের ভাবনাও থাকবে আর সেইসঙ্গে শহরের সমস্ত সুযোগ-সুবিধাও থাকবে।

 

বন্ধুগণ,

মহামারীর এই সময়ে আমাদের নিরবচ্ছিন্ন কাজের ক্ষেত্রে প্রযুক্তি সাহায্য করেছে। ভিডিও কনফারেন্সের মতো একটা সামান্য জিনিসকে এর জন্য ধন্যবাদ। আমি অনেকগুলি মিটিং-এ যোগ দিতে পারি। এর ফলে দূরত্ব ঘুচবে এবং আপনাদের সকলের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ তৈরি হবে। কিন্তু এখানেও একটা দারুণ প্রশ্ন উঠে আসছে। এই প্রশ্নটি কোভিড-পরবর্তী সময়ের জন্য। কোভিডের সময়ে ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মতো বিভিন্ন ব্যবস্থাকে আমরা কি পরবর্তীকালেও বজায় রাখব? নাকি আমরা একটা সম্মেলনে যোগ দিতে এক মহাদেশ থেকে আর এক মহাদেশে যাব? শহরাঞ্চলের ব্যবস্থা আমাদের ক্লান্তিকে কমাবে কিনা সেটি নির্ভর করবে আমরা কোন বিষয়টিকে বেছে নিচ্ছি।

এই বাছাই করার মধ্য দিয়ে ভালো কাজ করা, জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি রয়েছে। আজকের পৃথিবীতে মানুষ যে কোনও জায়গা থেকে কাজ করতে পারেন, যে কোনও জায়গায় থাকতে পারেন, যে কোনও অঞ্চল থেকে আন্তর্জাতিক সরবরাহ শৃঙ্খলে উপাদান সরবরাহ করতে পারেন। আর তাই আমরা প্রযুক্তি এবং জ্ঞান-ভিত্তিক পরিষেবার জন্য সহজ-সরল কিছু নীতি-নির্দেশিকা ঘোষণা করেছি। এর ফলে, ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম' এবং 'ওয়ার্ক ফ্রম এনিহোয়্যার' – এগুলির সুবিধা মানুষ পাবে।

 

বন্ধুগণ,

স্বল্পমূল্যের আবাসনের সুযোগ ছাড়া আমাদের শহরগুলির সমৃদ্ধি হবে না। এই বিষয়টি উপলব্ধি করে ২০১৫ সালে আমরা 'সকলের জন্য আবাসন প্রকল্প' – হাউজিং ফর অল শুরু করেছিলাম। আমি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে এই কাজে আমরা এগিয়ে চলেছি। শহরাঞ্চলে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্থাৎ, ২০২২ সালের আগেই আমরা ১ কোটি বাড়ি যে সমস্ত পরিবারের প্রয়োজন, সেগুলি তাঁদের হাতে  তুলে দিতে পারব। মহামারীর ফলে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে আমরা স্বল্পমূল্যে ভাড়া বাড়ি পাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। এর জন্য আমরা রিয়েল এস্টেট নিয়ন্ত্রণ আইন তৈরি করেছি। রিয়েল এস্টেট ক্ষেত্রে এর ফলে সংস্কার আসছে আর এই আইনের মাধ্যমে উপভোক্তা-কেন্দ্রিক স্বচ্ছ ব্যবস্থা গড়ে তোলা যাবে।

 

বন্ধুগণ,

প্রাণবন্ত শহরের জন্য স্থিতিশীল পরিবহণ ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি। ২৭টি শহরে মেট্রো রেলের কাজ চলছে। ২০২২ সালের মধ্যে আমরা দেশে ১ হাজার কিলোমিটার মেট্রো রেলের কাজ শেষ করার দিকে এগিয়ে চলেছি। আমাদের 'মেক ইন ইন্ডিয়া' উদ্যোগ উৎপাদন ক্ষেত্রে দেশীয় পণ্যের জন্য দারুণ সুযোগ এনে দিয়েছে। একইভাবে, যোগাযোগ ব্যবস্থাপনাতেও নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে স্থিতিশীল পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আমাদের সুবিধা হচ্ছে।

 

বন্ধুগণ,

ছোট, সমৃদ্ধশালী এবং প্রাণবন্ত শহর গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রযুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। প্রযুক্তির মাধ্যমে একটি শহরকে দক্ষভাবে পরিচালনা করা যায় এবং সকলের মধ্যে যোগাযোগ গড়ে তোলা যায়। আমরা এমন এক ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে চাইছি যেখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দোকান-বাজার, খাদ্যসামগ্রী কেনাকাটার বিষয়গুলির বেশিরভাগই অনলাইনের মাধ্যমে করা যাবে। আমাদের শহরগুলি ব্যক্তিগত এবং ডিজিটাল উভয় পদ্ধতিতেই কাজের জন্য প্রস্তুত হয়ে রয়েছে। ডিজিটাল ইন্ডিয়া এবং স্টার্ট-আপ ইন্ডিয়া মিশনের মতো আমাদের কর্মসূচি এই ক্ষমতা গড়ে তুলতে সাহায্য করছে। আমরা দুটি পর্যায়ে ১০০টি স্মার্ট সিটি গড়ে তোলার জন্য উদ্যোগ নিয়েছি। দেশ জুড়ে সহযোগিতামূলক এবং প্রতিযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর দর্শনের মাধ্যমে আমরা এই কাজ সম্পন্ন করব।

এই শহরগুলির জন্য প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকা বা ৩ হাজার কোটি ডলারের প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ১ লক্ষ ৪০ হাজার কোটি টাকা বা ২ হাজার কোটি ডলারের কাজ হয় শেষ হয়েছে না হলে শেষ হওয়ার দিকে। প্রযুক্তির সমস্ত সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে সমন্বিতভাবে বিভিন্ন শহরে কম্যান্ড নিয়ন্ত্রণ কক্ষ গড়ে তোলা হয়েছে। এই কেন্দ্রগুলি বর্তমানে কোভিড পরিস্থিতির মোকাবিলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ হিসেবে কাজ করছে।

সবশেষে আমি আপনাদের আবারও মনে করিয়ে দিতে চাই, আপনারা যদি নগরায়নের জন্য বিনিয়োগ করতে উৎসাহী হন, ভারতে সেই সুযোগ আপনাদের রয়েছে। আপনারা যদি পরিবহণ ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে চান, ভারতে সেই সুযোগ আপনাদের রয়েছে। আপনারা যদি উদ্ভাবন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে চান, ভারতে সেই সুযোগ আপনাদের রয়েছে। আপনারা যদি স্থিতিশীল সমাধানের জন্য বিনিয়োগ করতে উৎসাহী হন, ভারতে সেই সুযোগ আপনাদের রয়েছে। একটি প্রাণবন্ত গণতন্ত্র, ব্যবসা-বাণিজ্য-বান্ধব পরিবেশ, বিরাট বড় বাজারের জন্য এই সুযোগগুলি তৈরি হয়েছে। ভারতকে আন্তর্জাতিকভাবে বিনিয়োগের কেন্দ্রে পরিণত করার জন্য সরকার সবরকমের চেষ্টা চালাচ্ছে।

 

বন্ধুগণ,

নগরায়নের দিকে ভারত এগিয়ে চলেছে। সুশীল সমাজ, শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান, শিল্প এবং সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ আমাদের নাগরিক ও বিভিন্ন সম্প্রদায় অর্থাৎ, সংশ্লিষ্ট সকলের সাহায্যে আমরা প্রাণবন্ত ও সমৃদ্ধশালী আন্তর্জাতিক মানের শহর গড়ে তুলতে পারব বলে আমি নিশ্চিত।

ধন্যবাদ।

Explore More
৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪

জনপ্রিয় ভাষণ

৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪
When PM Modi Fulfilled A Special Request From 101-Year-Old IFS Officer’s Kin In Kuwait

Media Coverage

When PM Modi Fulfilled A Special Request From 101-Year-Old IFS Officer’s Kin In Kuwait
NM on the go

Nm on the go

Always be the first to hear from the PM. Get the App Now!
...
Under Rozgar Mela, PM to distribute more than 71,000 appointment letters to newly appointed recruits
December 22, 2024

Prime Minister Shri Narendra Modi will distribute more than 71,000 appointment letters to newly appointed recruits on 23rd December at around 10:30 AM through video conferencing. He will also address the gathering on the occasion.

Rozgar Mela is a step towards fulfilment of the commitment of the Prime Minister to accord highest priority to employment generation. It will provide meaningful opportunities to the youth for their participation in nation building and self empowerment.

Rozgar Mela will be held at 45 locations across the country. The recruitments are taking place for various Ministries and Departments of the Central Government. The new recruits, selected from across the country will be joining various Ministries/Departments including Ministry of Home Affairs, Department of Posts, Department of Higher Education, Ministry of Health and Family Welfare, Department of Financial Services, among others.