মঞ্চে উপবিষ্টসকল সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ আর বিপুল সংখ্যায় আগত যোগপ্রেমী ভাই ও বোনেরা,
এইঅনুষ্ঠানে দেশের নানা প্রান্ত থেকে এসে যারা সম্মিলিত হয়েছেন, তাদেরকে আমি এইলক্ষ্ণৌর মাটি থেকে প্রণাম জানাই।
যোগ মনকেস্থির রাখার একটি বিশেষ উপায়। জীবনের যে কোন উত্থান-পতনের মাঝে সুস্থ মন নিয়েজীবনধারণের শৈলী শেখায় যোগ। কিন্তু আজ আমি লক্ষ্ণৌর এই বিশাল ময়দানে হাজার হাজারমানুষকে দেখতে পাচ্ছি যাঁরা এই বার্তাও দিচ্ছেন যে জীবনে যোগের গুরুত্ব তো রয়েইছে,কিন্তু বৃষ্টি এলে নিজের ম্যাটটিকে কিভাবে মাথার ওপর তুলে ব্যবহার করা যায়,এক্ষেত্রে কিভাবে সতরঞ্চিও ব্যবহৃত হতে পারে তা ইতিমধ্যেই লক্ষ্ণৌবাসীরা সারাপৃথিবীকে দেখিয়ে দিয়েছেন। লাগাতার বৃষ্টির মধ্যেও আপনারা সবাই এখানে স্থির বসেআছেন। যোগের গুরুত্ব প্রচারে আপনাদের এই প্রয়াস অভিনন্দনযোগ্য।
ব্যক্তিথেকে সমষ্টির যাত্রাপথে যোগ নিজেই একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। একটা সময় ছিল যখন এইযোগ ছিল হিমালয়ের গুহায় তপস্যারত ঋষি, মুনি এবং মণীষীদের সাধনার পথ। যুগের পর যুগবদলে গেছে, শতাব্দীর পর শতাব্দী পেরিয়ে গেছে। আজ যোগ প্রত্যেক বাড়িতে, প্রত্যেকমানুষের জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। বিশ্বের অনেক দেশের মানুষ আমাদের ভাষা জানে না,আমাদের পরম্পরা জানে না, আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত নয়, কিন্তু যোগের কারণেগোটা বিশ্ব আজ ভারতের সঙ্গে যুক্ত হতে শুরু করেছে। যোগ – যা শরীর, মন এবং বুদ্ধিকেযুক্ত করে, সেই যোগই আজ গোটা বিশ্বকে নিজের সঙ্গে যুক্ত করার ক্ষেত্রে অত্যন্তগুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
রাষ্ট্রসঙ্ঘেসবচাইতে কম সময়ে সর্বাধিক ভোট পেয়ে আন্তর্জাতিক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণেরক্ষেত্রে যোগ রেকর্ড করেছে। সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত সম্ভবত পৃথিবীর এমন কোন দেশনেই, যেখানে এই দিনে যোগ নিয়ে কোন অনুষ্ঠান হয়নি। বিগত তিন বছরে যোগের প্রতিউত্তরোত্তর আকর্ষণ বৃদ্ধি পেয়েছে, সচেতনতাও বেড়েছে। বিগত তিন বছরে অনেক নতুন যোগপ্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। যোগ শিক্ষকদের সংখ্যা গুণিতক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।যোগ প্রশিক্ষণ একটি নতুন পেশা হিসেবে সারা পৃথিবীতে উল্লেখযোগ্য হয়ে উঠেছে।পৃথিবীর সব দেশেই এখন যোগ শিক্ষকের চাহিদা বাড়ছে । এভাবে যোগের মাধ্যমে বিশ্বে একটি নতুন কর্মসংস্থানের বাজার তৈরি হয়েছে।আর এক্ষেত্রে ভারতীয়রাই সারা পৃথিবীতে অগ্রাধিকার পাচ্ছে।
একটা সময়ছিল যখন প্রত্যেকে নিজের নিজের পদ্ধতিতে যোগাভ্যাস করতেন। ধীরে ধীরে তার একটানির্দিষ্ট মান নির্ধারিত করা, সেই মানে উন্নীত করা, এভাবে প্রথম পর্যায়, দ্বিতীয়পর্যায়, তৃতীয় পর্যায় নির্ধারিত করা, আর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমেবিশ্বের সর্বত্র সমানভাবে সেই নির্দিষ্ট মানে পৌঁছনোর প্রক্রিয়াকে জনপ্রিয় করে তোলারক্ষেত্রে ভারত এবং ভারতের বাইরে সর্বত্র অনেক প্রচেষ্টা চলছে।
গত বছরইউনেস্কো ভারতের যোগ-কে মানব সংস্কৃতির একটি অমর ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।বিশ্বের সকল সংগঠন বিদ্যালয়গুলিতে, মহাবিদ্যালয়গুলিতে ছাত্রছাত্রীরা যাতে যোগ-এরপ্রশিক্ষণ পায়, যোগ-কে যাতে ধীরে ধীরে জীবনের অংশ হিসেবে গ্রহণ করে, সেই লক্ষ্যেসচেতনতা বাড়ছে। আজ ভারতেও অনেক রাজ্যে যোগ-কে শিক্ষা ব্যবস্থার অন্তর্গত করা হয়েছেযাতে আগামী প্রজন্ম আমাদের সহস্র সহস্রাব্দ প্রাচীন এই বিজ্ঞানের সঙ্গে পরিচিত হয়,নিয়মিত অভ্যাস করে এবং উন্নত জীবনধারণের পথে অগ্রসর হয়।
স্বাস্থ্যেরজন্যও অনেক প্রকল্প হয়। কিন্তু সুস্থ থাকার চাইতেও ভালো থাকার গুরুত্ব অনেক বেশি।সেজন্য, জীবনে কত সহজে ভালো থাকা যায় তা জানার জন্য যোগ একটি বড় মাধ্যম। তবে, আজওযোগ-এর সামনে অনেক প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে। সময়োপযোগী পরিবর্তন হয়ে চলেছ্ বিশ্বের নানাসমাজে এর সঙ্গে নানা কৌশল যুক্ত হয়েছে, স্থান, কাল, পরিস্থিত এবং আয়ু অনুসারে যোগেরউত্তরোত্তর বিকাশ ও বিস্তার হচ্ছে। আর সেজন্যই এই গুরুত্বপূর্ণ সুযোগে দেশ ওবিশ্বের মানুষকে আমি অনুরোধ জানাই, আপনারা যোগ-কে জীবনের অংশ করে তুলুন। আমরাসকলেই হয়তো যোগ-এ পারদর্শী হব না, সকলেই হয়তো পুরস্কৃত হব না, কিন্তু আমরা সকলেইযোগ-এ অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারি। প্রথমবার যোগাভ্যাস করলেই বোঝা যায় আমাদের শরীরেকতগুলি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ রয়েছে যেগুলি সম্পর্কে আমরা কখনও ভাবিনি। অব্যবহারেশরীরের কত অঙ্গ অকেজো হয়ে যাচ্ছিল। নিয়মিত যোগাভ্যাস করলে শরীরের অনেক অঙ্গ যাএতদিন সুপ্ত অবস্থায় ছিল, সেখানে জাগরণ অনুভব করা যায়। তার জন্য কোন দিব্য চেতনারপ্রয়োজন নেই। যিনি প্রথমবার যোগাসন করেছেন, তিনিই বুঝতে পারবেন তাঁর শরীরের কোনঅঙ্গ সুপ্ত রয়েছে। যোগাসন শুরু করলেই তার মধ্যে আপনি জাগরণের অনুভূতি পাবেন। চেতনাঅনুভব করবেন।
আমাকে অনেকেবলেন, যোগ-এর মাহাত্ম্য নিয়ে বড় বড় কথা না বলে সহজ ভাষায় বোঝাতে হবে। লবণ সবচাইতেসস্তা। সবখানে পাওয়া যায়। কিন্তু সারাদিনের সমস্ত আহারে এক চিমটি লবণ না থাকলেশুধু সাধই বিগড়ে যায় না, শরীরের সমস্ত ব্যবস্থায় অভাব অনুভূত হয়। এক চিমটি লবণহলেই তা আমাদের শারীরিক ব্যবস্থার ভারসাম্য রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাপালন করে। এর গুরুত্ব কেউ অস্বীকার করতে পারে না। শুধু লবণ দিয়ে জীবন চলে না। কিন্তুজীবনে লবণ না থাকলে জীবন চলে না। জীবনে লবনের যে স্থান, যোগ-কেও আমাদের সেই স্থানদিতে হবে। ২৪ ঘন্টা যোগ করার প্রয়োজন নেই। মাত্র ৫০ থেকে ৬০ মিনিট যোগাভ্যাস করুন,তা আপনাদের বিনা খরচে স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখার নিশ্চয়তা দেবে।
সুস্থ শরীর,সুস্থ মন, সুস্থ বুদ্ধি; ১২৫ কোটি ভারতবাসী যদি এই সুস্থতা অর্জন করতে পারে, তাহলেমানব সভ্যতার সামনে যে নানা অমানবিক সমস্যার সঙ্কট তৈরি হয়েছে সেগুলির হাত থেকেআমরা মানবজাতিকে রক্ষা করতে পারব।
আর সেজন্যইআজ তৃতীয় আন্তর্জাতিক যোগ দিবসে আমি সারা পৃথিবীর সকল যোগপ্রেমীদের আন্তরিকশুভেচ্ছা জানাই। বিশ্বের সকল দেশে যে উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে এই দিবস পালিত হচ্ছেতার জন্য আমি বিশ্ববাসীকে অভিনন্দন জানাই। আর, আমি লক্ষ্ণৌবাসীদের অন্তর থেকে অনেকঅনেক অভিনন্দন জানাই।
ধন্যবাদ।