ধমঃ চক্র পরাবর্তনে চ কার্য; এই দীক্ষা এখানকার ভূমিপুত্র ডঃ বাবাসাহেব আম্বেদকর দিয়ে গেছেন। এই ভূমিকে আমার প্রণাম। কাশী প্রাচীন জ্ঞাননগরী, নাগপুরআধুনিক জ্ঞাননগরী হয়ে উঠবে কি?
আজ একসঙ্গে এতগুলি প্রকল্পের উদ্বোধন হচ্ছে। এগুলি নিয়ে ইতিমধ্যেই অনেকেবলে গেছেন। আপনারা নিশ্চয়ই মনে রেখেছেন।
আজ নাগপুরের মাটিতে দাঁড়িয়ে দেশবাসীকে একসঙ্গে এতগুলি প্রকল্প উৎসর্গ করাহচ্ছে। আজ ১৪ এপ্রিল বাবাসাহেব ডঃ ভীমরাও আম্বেদকরের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আজ সকালেতাঁর দীক্ষাভূমিতে গিয়ে সেই পবিত্র ভূমিকে প্রণাম করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। সেখানথেকে এক নতুন উৎসাহ ও নতুন প্রেরণা নিয়ে আজ আপনাদের মাঝে এসেছি। এই দেশের দলিত,পীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত, গ্রামীণ দরিদ্র মানুষ, কৃষকের জীবনে স্বাধীন ভারতের স্বপ্নগুলিকিভাবে সফল হবে? তাঁদের আশা-আকাঙ্খার কী হবে? নতুন ভারতে এই মানুষদের কি কোনওগুরুত্ব থাকবে? বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকরজি তাঁর নেতৃত্বে রচিত সংবিধানের মাধ্যমেদেশবাসীকে এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন, গ্যারান্টি রূপে দিয়েছেন। আর তারই পরিণামহ’ল, সাংবিধানিক ব্যবস্থাগুলির মাধ্যমে আজ দেশের প্রত্যেক শ্রেণীর মানুষের কিছুকরার সুযোগ রয়েছে আর সেই সুযোগই তাঁর স্বপ্নগুলিকে সফল করতে উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়েএগিয়ে যেতে প্রেরণা যোগায়।
ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজের জীবনে উপলব্ধি করেছি, অভাবের মধ্যে জন্ম নিয়ে কোনওরকমভাবে প্রভাবিত না হয়েও নিজের জীবনযাত্রাকে সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়আর সে প্রেরণা আমরা বাবাসাহেব আম্বেদকরের জীবন থেকে পাই। কখনও ব্যক্তির জীবনের নিত্যনৈমিত্তিককটু অভিজ্ঞতা ও অনুভব দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে ওঠে, অপমানিত হওয়া, প্রতারিত হওয়া,তিরষ্কৃত হওয়া! মানুষ যদি নীচু মনের হয়, তা হলে এসব কিছু বাড়িতে, মনমন্দিরে, মন ওমস্তিষ্কে কতটা তিক্ততা ভরে দেয়! তখন মনে হয়, সুযোগ পেলেই ওকে আমি দেখাব! আমারসঙ্গে এটা হয়েছে, ছোটবেলায় এটা হয়েছে, স্কুলে হয়েছে, কর্মজীবনে এসব হয়েছে; ভীমরাওআম্বেদকরের জীবনের প্রতিটি পর্যায়েও এ ধরণের অসংখ্য অপমান, তিরস্কার ও প্রতারণারঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এসবের মুখোমুখি হয়েও তাঁর জীবনে যখন সুযোগ এসেছে তিনি কিন্তুসেখানে বিন্দুমাত্র তিক্ততা প্রতিফলিত হতে দেননি। ভারতের সংবিধানে কোথাও কোনও রকমপ্রতিশোধস্পৃহা প্রকট হয়নি। তাঁর বক্তব্যে ও অধিকার ক্ষেত্রে কোনও রকম ছাপ পড়তেদেননি। কোনও ব্যক্তির উচ্চতা এহেন সময়ের কষ্টিপাথরে যাচাই করলেই বোঝা যায় তিনি কতমহান। ভগবান শিব যেমন সমুদ্রমন্থন থেকে উঠে আসা বিষ নিজের কন্ঠে ধারণ করে নীলকন্ঠহয়ে উঠেছিলেন, বাবাসাহেব আম্বেদকরও তেমনই জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে বিষ হজম করেআমাদের জন্য রেখে গেছেন অমৃতধারা।
আজ অনেকগুলি প্রকল্পের শুভারম্ভ হচ্ছে, নতুন ভবন উদ্বোধন হচ্ছে। প্রায়দু’হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কারখানা উদ্বোধন হয়েছে। জ্বালানিআজ জীবনের অভিন্ন অঙ্গ। উন্নয়নের কোনও স্বপ্ন জ্বালানি ছাড়া বাস্তবায়িত করা সম্ভবনয়। আর একবিংশ শতাব্দীতে জ্বালানি প্রত্যেক নাগরিকের অধিকারে পর্যবসিত হয়েছে।লিখিতরূপে না হলেও বাস্তবে হয়েছে। আধুনিক ভারতকে একবিংশ শতাব্দীতে উন্নয়নের শিখরেপৌঁছে দিতে হলে, তার প্রথম প্রয়োজন হ’ল জ্বালানি। একদিকে পরিবেশ দূষণেরদুশ্চিন্তায় অস্থির বিশ্ববাসী এখন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিকে বন্ধ করে দিতে চাইছেন,অন্যদিকে উন্নত দেশগুলিতে সবচাইতে বেশি বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদন করে ঐ তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রগুলিই। আন্তর্জাতিক স্তরে এত বড় দ্বন্দ্বের মাঝে পথ বের করার ক্ষেত্রে ভারতআজ নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমরা গোটা বিশ্বকে নিজের পরিবার ভাবি, সম্পূর্ণ ব্রহ্মান্ডকেআপন ভাবি। আমরা নিজেদের দ্বারা এমন কিছু হতে দেব না, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যকোনও সংকট সৃষ্টি হয়। সেজন্য ভারত ১৭৫ গিগাওয়াট পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদনেরস্বপ্ন দেখেছে। সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি এবং জলশক্তির মাধ্যমে এই লক্ষ্যমাত্রা আমরাপূরণ করব। সেজন্যই নীতিনজি বুক ফুলিয়ে গর্বের সঙ্গে বলছিলেন যে, নাগপুর শহরেরনোংরা জল শুদ্ধিকরণের প্রক্রিয়া থেকেই বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। এই পরিবেশ-বান্ধবপ্রকল্পের জন্য আমি নাগপুরবাসীদের শুভেচ্ছা জানাই। এখন দেশের সর্বত্র ক্রমশ বর্জ্যপ্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে শক্তি উৎপাদনের প্রক্রিয়া জনপ্রিয় হচ্ছে।
আজ এখানে একটি বড় আবাসন প্রকল্পেরও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হ’ল। দেশস্বাধীন হওয়ার পর থেকে সত্তর বছর পেরিয়ে গেল। এক মুহূর্তের জন্য কি আমরা সাত দশকপূর্ববর্তী জীবন বাঁচার চেষ্টা করে দেখতে পারি! ঐ প্রক্রিয়ায় ১৯৩০, ৪০, ৫০-এর দশকেবা তারও আগের সময়ের কথা কল্পনা করি যখন বিপ্লবীরা ভারতের ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকাউত্তোলনের স্বার্থে ফাঁসির মঞ্চে চড়ে যেতেন। ভারতমাতাকে দাসত্বের শৃঙ্খলমুক্ত করতেগোটা যৌবন কারান্তরালে কাটিয়ে দিতেন। মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতেন। হাসতে হাসতে দেশের জন্যআত্মোৎসর্গ করার লাইনে কখনও লোকের অভাব হয়নি। এই অসংখ্য আত্মবলিদানের পরিণামস্বরূপ দেশ স্বাধীন হয়েছে। এই স্বাধীনতা সংগ্রামীরা স্বাধীন ভারত কেমন হবে তারস্বপ্ন দেখছিলেন, কিন্তু এই স্বাধীন ভারতে প্রশ্বাস গ্রহণের সুযোগ তাঁরা পাননি।কিন্তু আমরা পেয়েছি। আমরা দেশের জন্য মরার সুযোগ পাইনি, দেশের জন্য বাঁচার সুযোগপেয়েছি।
২০২২ সালে ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি হবে। আমাদের হাতে ৫ বছর সময়আছে। ১২৫ কোটি ভারতবাসী যদি সংকল্প গ্রহণ করি যে মহাপুরুষেরা দেশ স্বাধীন করারজন্য আত্মোৎসর্গ করেছিলেন, তাঁদের স্বপ্নের ভারত নির্মাণে আমরাও অংশগ্রহণ করব,আমিও ব্যক্তিগতভাবে কিছু করব, তা হলে আমি নিশ্চিত যে ২০২২ সালের মধ্যেই ভারতবিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে। আমাদের স্বপ্ন, ২০২২ সালের মধ্যে দেশের সমস্তদরিদ্র মানুষের মাথার ওপর নিজস্ব ছাদ থাকবে। দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর মানুষও যাতেনিজের বাড়িতে থাকতে পারেন, সে ব্যবস্থা করতে চাই। আজ সেই বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগথাকবে, পরিশ্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা থাকবে, গ্যাসের উন্নয়ন থাকবে, কাছাকাছিএলাকায় ছেলেমেয়েদের জন্য বিদ্যালয় থাকবে, সকলের জন্য হাসপাতাল থাকবে, সেখানেবৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের চিকিৎসার বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে; আমরা এমন ভারত দেখতে চাই। ১২৫কোটি ভারতবাসী কি দেশের গরিব মানুষদের অশ্রু মুছতে চাইবেন না? বাবাসাহেব ভীমরাওআম্বেদকরের নেতৃত্বে রচিত সংবিধানে যেসব স্বপ্ন প্রোথিত রয়েছে, সেগুলি বাস্তবায়নেরসময় এসেছে। আমরা সংকল্প নিয়ে এগিয়ে গেলে ৫ বছরের মধ্যে সেই স্বপ্নগুলি অবশ্যই সফলহবে।
আমি মহারাষ্ট্র সরকারকে কৃতজ্ঞতা জানাই, তারা কেন্দ্রীয় সরকারেরপ্রকল্পগুলি বাস্তবায়নে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে এসেছেন। অনেক বেশি মাত্রায়গৃহনির্মাণের কাজ চলছে। এতে বহু মানুষের কর্মসংস্থানও হচ্ছে। দরিদ্র মানুষ বাড়িপাবেন, আর গৃহনির্মাণকারীদের রোজগারও হবে। সিমেন্ট উৎপাদনকারীর রোজগার বাড়বে, লোহাউৎপাদনকারীর রোজগার বাড়বে, প্রত্যেকের কর্মসংস্থান হবে। এভাবে ভারতের প্রত্যেকপ্রান্তে নিজের মতো করে সুপরিকল্পিত আবাসন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে।
একবিংশ শতাব্দী জ্ঞানের শতাব্দী। ইতিহাস সাক্ষী রয়েছে, যখনই মানবসভ্যতাজ্ঞানযুগে প্রবেশ করেছে; ভারত নেতৃত্ব দিয়েছে। একবিংশ শতাব্দীতেও তেমনইনেতৃত্বদানের সুযোগ এসেছে! আজ এখানে নতুন ভবনগুলি নির্মাণের পর আইআইটি, আইআইএম,এইম্স-এর মতো দেশের নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির শাখা একসঙ্গে পাশাপাশিক্যাম্পাসে শিক্ষাদানের কাজ শুরু করতে চলেছে। মহারাষ্ট্র তথা ভারতের নবীনপ্রজন্মের ছেলেমেয়েরা এখানে নিজের ভাগ্য নির্মাণের পাশাপাশি আধুনিক ভারত নির্মাণেরজন্য প্রশিক্ষণ পাবেন। এই উদ্বোধনের পুণ্যলগ্নে আমার নবীন প্রজন্মের বন্ধুদের অনেকঅনেক শুভেচ্ছা জানাই।
কিছুদিন ধরে আমরা ডিজিটাল ইন্ডিয়া গড়ে তোলার লক্ষ্যে ব্যাপকভাবে কাজ করেচলেছি। এর একটি পদক্ষেপ হ’ল ডিজিধন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সেদিন দূরে নেই, যখন দেশেরপ্রত্যেক গরিব মানুষও বলতে শুরু করবেন ‘ডিজিধন, নিজিধন’। ডিজিধনকেই গরিব মানুষেরাবেশ আপন করে নেবেন। এ প্রসঙ্গে আমাদের বিরোধিতা করার জন্যই যাঁরা বিরোধিতা করছেন,সেসব নামী বিদ্বানদের বক্তব্য শুনে আমার হাসি পায়।
অথচ, নগদ টাকার ব্যবহার কমানোর আলোচনা এখন দেশের প্রতিটি পরিবারে চলছে। ধনীপরিবারের সন্তান, নামী হস্টেলে থেকে পড়াশুনা করে, তাঁর বাবা-মা আলোচনা করেন, একসঙ্গেবেশি টাকা পাঠিও না, ছেলের স্বভাব বিগড়ে যাবে। গরিব পরিবারের ছেলে বাড়ি থেকেবেরোনোর সময় ৫ টাকা চাইলে মা তার হাতে ২ টাকা দিয়ে বলেন, ‘কষ্ট করে এতেই কাজচালিয়ে নে বাবা’! নগদের ব্যবহার যত কমানো যাবে, ততই পরিবারে সাশ্রয় হবে – এটা আমরাসকলেই জানি।
সম্পন্ন পরিবারের মা-বাবারাও তাঁদের ছেলেমেয়েদের বান্ডিল বান্ডিল টাকাখরচ করতে দেন না। তাঁরা জানেন, এর কুপরিণাম কী কী হতে পারে! ভাল কম, খারাপ-ই বেশিহয়। ব্যক্তি জীবনের এই সত্য সমাজ এবং রাষ্ট্রজীবনের ক্ষেত্রেও সত্য। এই সহজবুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে যথাসম্ভব নগদের ব্যবহার কমিয়ে লেনদেন করা উচিৎ। একটা সময়েস্বর্ণমুদ্রার প্রচলন ছিল, গিনি সোনার মুদ্রা। পরিবর্তিত হতে হতে কখনও চামড়ারমুদ্রার প্রচলন হয়েছিল, তারপর কাগজে ছাপা টাকা। প্রত্যেক যুগের প্রয়োজন অনুসারেসেই পরিবর্তনকে মানুষ স্বীকার করে নিয়েছেন। হয়তো, সেই সময়েও কিছু মানুষ সেইপরিবর্তনের বিরোধিতা করেছেন। তখন খবরের কাগজ ছিল না, টেলিভিশন ছিল না, মানুষতখনকার গ্রামীণ ও নাগরিক সভায় নিজের বক্তব্য রাখতেন। এখন সময় বদলেছে, আপনাদেরসামনে বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে, নিরাপদ ব্যবস্থা রয়েছে। সেই ব্যবস্থাগুলির মধ্যে ভারতসরকার প্রবর্তিত ভীম অ্যাপ হ’ল অত্যাধুনিক ব্যবস্থা, যা সমাজে ইতিমধ্যেই সাধারণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে শুরু করেছে। আর আমার কথালিখে রাখুন, এই ভীম অ্যাপ বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকরের প্রদর্শিত পথে দরিদ্রমানুষের স্বার্থে, দেশের অর্থ ব্যবস্থায় নগদের ব্যবহার কমিয়ে এক দুর্নীতিমুক্তনতুন ভারত গড়ে তুলবই।
ভারতের মতো বিশাল দেশে টাকা ছাপাতে, ছেপে নিরাপদভাবে ব্যাঙ্কগুলিতে পৌঁছেদিতে কোটি কোটি টাকা খরচ হয়। এই অর্থ সাশ্রয় করা গেলে কত গরিবের গৃহনির্মাণ সম্ভবহবে বন্ধুগণ! আর এটা সম্ভব, যদি আমরা যতটা সম্ভব নগদে লেনদেনের অভ্যাস ত্যাগ করতেপারি। আজ প্রতিটি এটিএম-এর সুরক্ষার জন্য পাঁচজন করে নিরাপত্তা রক্ষী নিয়োগ করতেহয়। একজন মানুষকে নিরাপত্তা দিতে অনেক সময় পুলিশকর্মীর অভাব থাকে অথচ একটিএটিএম-এর জন্য পাঁচজন। সেজন্যই Premises-less এবং Paper-less ব্যাঙ্কব্যবস্থাই অদূর ভবিষ্যতে আমাদের জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠতে বাধ্য। ইতিমধ্যেই অনেকেনিজেদের মোবাইল ফোন দিয়ে মানিব্যাগের কাজ সারছেন। আর অনেকে এক পা গিয়ে মোবাইলফোনকেই ব্যাঙ্কে পরিণত করেছেন। অদূর ভবিষ্যতে প্রত্যেকেই তাই করবেন। প্রযুক্তিবিপ্লব সমাজে আর্থিক লেনদেনের অঙ্গ হয়ে উঠবে। সেজন্য গত ২৫ ডিসেম্বর ক্রিসমাসেরদিনে ডিজিধন প্রকল্প উদ্বোধন করেছিলাম। আজ ১৪ এপ্রিল বাবাসাহেব আম্বেদকরেরজন্মজয়ন্তী এবং গুড ফ্রাইডে। ইতিমধ্যে ১০০ দিন পেরিয়ে গেছে, এই ১০০ দিন ধরে দেশের১০০টি শহরে পরীক্ষামূলকভাবে এই প্রকল্প চলেছে।
শুরুর দিনগুলিতে অনেকে দুশ্চিন্তা ব্যক্ত করেছিলেন, যাঁদের কাছে মোবাইল ফোননেই, তাঁরা কী করবেন? সংসদে বেশ মজার মজার ভাষণ শোনা গিয়েছে, দেশে সবার হাতেস্মার্টফোন নেই, এটা নেই, সেটা নেই! আমি তাঁদেরকে বোঝাই, ভাই, ৮০০-১০০০ টাকা দামেরফিচার ফোন দিয়েও কাজ চলবে! কিন্তু যিনি বুঝতেই চান না, তাঁকে কেমন করে বোঝাবেন?কিন্তু এখন তো ডিজিটাল লেনদেনও মোবাইল ফোনেরও প্রয়োজন নেই; আপনার বুড়ো আঙ্গুলেরছাপই যথেষ্ট। একটা সময় বুড়ো আঙুলের ছাপ লেখাপড়া না জানা মানুষের প্রতীক ছিল। যুগকেমন বদলেছে, সেই বুড়ো আঙুলই আজ আপনার শক্তির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। এখন নবীনপ্রজন্মের মানুষ দিনের মধ্যে দু-তিন ঘন্টা শুধু বুড়ো আঙুল দিয়ে ম্যাসেজ লেখেন।প্রযুক্তি বুড়ো আঙুলকে শক্তিশালী করে তুলেছে। আর সেজন্য ভীম-আধার নিয়ে ভারত গর্ববোধ করতে পারে। বিশ্ব প্রযুক্তির দিক থেকে এগিয়ে থাকা কোনও দেশেই অত্যাধুনিক ব্যবস্থানেই। আপনার কাছে মোবাইল ফোন থাকুক আর না থাকুক, আপনার আধার কার্ড থাকলে দোকানেলেনদেন সম্ভব। দোকানদারের কাছে পিওএস মেশিন থাকলে ভাল, না থাকলে দু’ইঞ্চি বাইদু’ইঞ্চি মাপের একটি ছোট মেশিন থাকবে, সেখানে আপনি বুড়ো আঙুলের ছাপ দিলে আপনার আধারকার্ডের সঙ্গে যদি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর যুক্ত থাকে, তা হলে মুহূর্তেই লেনদেনসম্পন্ন করতে পারবেন। ১০ টাকায় জিনিস কিনলে ১০ টাকা অবলীলায় আপনার অ্যাকাউন্ট থেকেকেটে যাবে। ১ টাকাও সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে না। কোথাও আপনার ব্যবসা থমকে যাবে না। আরসেজন্যই আপনারা দেখবেন, অদূর ভবিষ্যতে ভীম-আধার এক এমন পর্যায়ে পৌঁছে যাবে যেবিশ্বের তাবড় তাবড় বিশ্ববিদ্যালয়ে এই প্রযুক্তির সফল প্রয়োগ সম্পর্কে গবেষণা হবে,ছাত্রছাত্রীরা বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে এ বিষয়ে কেস-স্টাডি করতে ভারতে আসবেন।সারা পৃথিবীতে এটি আর্থিক পরিবর্তনের ভিত্তি রচনা করবে, উদাহরণ হিসাবে পরিগণিতহবে।
আমি গতকালই আমাদের রবিশঙ্করজিকে বলছিলাম যে, ভারত সরকারের উচিৎ দ্রুত এটাকেপেটেন্ট করানো! কারণ এসব ঘটনা ঘটবেই। ইতিমধ্যেই আফ্রিকার বেশ কিছু দেশের সর্বোচ্চনেতৃবৃন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তাঁরা আমার কাছে জানতে চেয়েছেন যে, তাঁদের দেশেওআমরা এটি চালু করতে পারব কি না! ধীরে ধীরে বিশ্বের অন্যত্রও এর চাহিদা গড়ে উঠতেপারে! বিশ্বের নানা দেশে ভারত সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের অনুঘটক হয়ে উঠতেপারে!
এই ডিজিধন প্রকল্পে ভারতের নানাপ্রান্তে ১০০টি শহরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে লক্ষলক্ষ মানুষকে অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে। তাঁরা প্রযুক্তিকে বোঝার চেষ্টা করেছেন,স্বীকার করে নিয়েছেন, অসংখ্য মানুষ পুরস্কার পেয়েছেন। যাঁরা পুরস্কৃত হয়েছেন,তাঁদের মধ্যে চেন্নাইয়ের নাগরিক এক ভদ্রলোক তাঁর পাওয়া অর্থমূল্য গঙ্গা সাফাইঅভিযানের তহবিলে দান করেছেন। আমি তাঁকে অভিনন্দন জানাই। অবশ্য ডিজিধনও এক প্রকারসাফাই অভিযান। এর মাধ্যমে আমরা দেশের আর্থিক দুর্নীতি ও কালো টাকার বিরুদ্ধেবিমুদ্রাকরণ পরবর্তী পর্যায়ের লড়াই জারি রেখেছি।
আমি দেশবাসীকে বলতে চাই যে, নগদের লেনদেন হ্রাসের এই ভাবনা আপনাদের ভাললাগুক চাই না লাগুক, নগদহীন সমাজের স্বপ্ন আপনি না-ও পছন্দ করতে পারেন, কিন্তু এদেশে এমন কোনও মানুষ নেই, যাঁর হৃদয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনও ক্ষোভ নেই। যাঁরাঅসহায়ের মতো ঘুষ দেন, তাঁদের মনে তো রাগ থাকেই, যিনি ঘুষ নেন, তিনিও রাতে বিছানায়শুয়ে হয়তো আমাকে গালি দিতে থাকেন, ভাবেন এই মোদীর ফাঁদে না জানি কবে ফেঁসে যাবো!তখন কী হবে? অনেক অন্যায় আমরা সহ্য করেছি, ভবিষ্যতের অপমান ও লাঞ্চনা থেকে বাঁচতেঅবিলম্বে ভীম-আধার – এর মাধ্যমে দুর্নীতি ও কালো টাকার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামিল হোন।এই লড়াইয়ে যাঁরাই সামিল হবেন, আমার জন্য প্রত্যেকেই মহান সিপাহী হয়ে উঠবেন। এইপ্রকল্প আমরা আগামী ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত চালু রাখব। ১৪ অক্টোবর বাবাসাহেবআম্বেদকরের দীক্ষা গ্রহণের দিন। ঐ পবিত্র দিন পর্যন্ত আমরা এই প্রকল্প চালাব। আমরাদেখেছি যে, অনেক ধনী পরিবারের ছেলেমেয়েরা নিজেদের পরিচয় গোপন করে এই প্রকল্পেসামিল হয়ে সৎপথে রোজগার করেছেন, প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। তাঁরা যে পরিবেশে বড় হয়েছেন,সেখানে এই প্রশিক্ষণের সুযোগ না থাকায় তাঁরা ছুটির সময় হোটেলের বাসন মেজে, চাপরিবেশ করে, পেট্রোল পাম্পে কাজ করে নিজের পরিশ্রমে রোজগার করার আনন্দ নেন। দেশেরনবীন প্রজন্ম এমনই সৎভাবে বুক ফুলিয়ে বেঁচে থাকার আনন্দ পেতে চান।
আগে শুনতাম, বিদেশে পড়াশুনা করতে গিয়ে নবযুবকরা এমনই রাতে দু-তিন ঘন্টাপরিশ্রম করে, ট্যাক্সি চালায়, বাসন মাজে, ইত্যাদি ইত্যাদি। এই রোজগারে ওদের হাতখরচচলে। এখন ভারতের বড় বড় শহরগুলিতেও এসব শুরু হয়েছে। ভীম-আধারের মাধ্যমে আমি এইগ্রীষ্মের ছুটিতে রোজগারে অংশগ্রহণের জন্য আমি নবীন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদেরআমন্ত্রণ জানাই। এর অন্তর্গত Referral পরিষেবায় আপনারা যদি কোনও ব্যবসায়ীকে কিংবা সাধারণনাগরিককে এর ব্যবহার সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেন, তাঁর মোবাইল ফোনে ভীম অ্যাপ ডাউনলোডকরান, আপনার প্রেরণায় তিনি তিনটি লেনদেন করলে, মনে করুন একবার ৫০ টাকা, একবার ৩০টাকা আর একবার ১০০ টাকার জিনিস কিনলেন, তা হলে সরকারের পক্ষ থেকে আপনারঅ্যাকাউন্টে ১০ টাকা জমা পড়বে। এরকম একদিনে ২০ জন মানুষকে ৩টি করে লেনদেনে উৎসাহিতকরলে আপনার অ্যাকাউন্টে ২০০ টাকা আসবে। এরকম ছুটির তিন মাস সহজেই দৈনিক ২০০ টাকা করেরোজগার করতে পারেন। এতে দেশসেবাও হ’ল, মজাও হ’ল। আর যাঁরা আপনার কথা শুনে লেনদেনশুরু করলেন, তিনি প্রথম লেনদেনের পর ২৫ টাকা পাবেন। অর্থাৎ আপনি কাউকে বোঝাতেপারবেন, যাঁকে বোঝাবেন, সে পাবে ২৫ টাকা, আর আপনি জনপ্রতি ১০ টাকা। এই প্রকল্প ১৪অক্টোবর পর্যন্ত ছ’মাস চালু থাকবে। প্রত্যেক নবীন বন্ধু এর মাধ্যমে সহজেই ১০ থেকে১৫ হাজার টাকা রোজগার করতে পারবেন। পাশাপাশি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দেশকেসাহায্য করবেন। আমি আপনাদের বোঝানোর জন্য সহজভাবে বলছি। কত টাকার কাজ কিভাবে করলেকত টাকা পাবেন, এ সম্পর্কে প্রকল্পের লিখিত নিয়মাবলীতে রয়েছে। সেই হিসাবই চূড়ান্ত।এখন পরীক্ষা হয়ে গেছে, আপনারা দৈনিক ২০-২৫-৩০ জনকে লক্ষ্য করে লেগে পড়ুন, দৈনিক২০০-৩০০ টাকা রোজগার করুন। এবারের ছুটির দিনগুলিতে মা-বাবার কাছে হাত পেতে হাত খরচচাইতে হবে না। এই বিপ্লবে শরিক হ’ন।
আজ এখানে কম নগদ লেনদেনের ৭৫টি টাউনশিপ-এরও উদ্বোধন হ’ল। কোনোটা সারকোম্পানির টাউনশিপ, কোনোটা রেল কর্মচারীদের, কোনোটা সৈনিক ও প্রাক্তন সৈনিকদের –এমনই ৭৫টি টাউনশিপ নিজেদের কম নগদ লেনদেন প্রকল্পে সামিল করেছে। আমি তাঁদেরপ্রেজেন্টেশন দেখছিলাম। সব্জি বিক্রেতাকে জিজ্ঞেস করি, এতে আপনার কি লাভ হয়েছে? সেবলে , আমি ফুটপাতে বসে সব্জি বিক্রি করি, আগে কারও সব্জির দাম হিসেবে ২৫ টাকা ৮০পয়সা হলে খুচরোর অভাবে ক্রেতা ৮০ পয়সা দিতেন না। এখন আর সেই লোকসান হয় না, সেজিনিসের যা দাম, হুবহু পেয়ে যাই। সারা দিনে ১৫-২০ টাকা সাশ্রয় হয়। আমি অনুভবকরলাম, প্রযুক্তি গরিব মানুষের কাজে লাগছে। এই ৭৫টি টাউনশিপ একটি শুভ সূচনা। এরাদৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন।
যাঁরা পুরস্কার পেয়েছেন, এই অল্প সময়ে প্রায় আড়াইশো কোটি টাকারও বেশিপুরস্কারমূল্য বিতড়িত হ’ল। এই পুরস্কার পেয়ে আত্মসন্তুষ্টিতে ভুগবেন না। সেসহস্রাধিক মানুষ পুরস্কার পেলেন, তাঁরা এই প্রকল্পের দূত হিসাবে প্রকল্পটিকে এগিয়েনিয়ে যান। আপনাদের উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেশে অর্থনৈতিক বিপ্লব আনছে, সেই অভিযানকে সফলকরুন। আমি রবিশঙ্করজি এবং তাঁর বিভাগের পুরো টিমকে, নিতি আয়োগের টিমকে অভিনন্দনজানাই, তাঁরা একটি নিশ্ছিদ্র প্রযুক্তি গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। বিশ্বে যেখানেযেখানে এ বিষয়ে যতরকম কাজ হয়েছে সব গবেষণা করে সর্বোত্তম উপায়গুলির সমন্বয়ে এই সহজলেনদেনের পদ্ধতি চালু করেছেন, যাতে দরিদ্র থেকে দরিদ্রতম ব্যক্তিও এটি ব্যবহার করেলাভবান হতে পারেন। এই ব্যবহার-বান্ধব ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য আপনাদের কৃতজ্ঞতাজানাই। এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আয়োজকদের নাগপুরকে বেছে নেওয়ার জন্য অভিনন্দন জানাই।এর মাধ্যমে নাগপুরবাসী খুবই উপকৃত হলেন। আমিও এখানে বিপুল সংখ্যায় সমাগত আপনাদেরসঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগ পেলাম। আপনাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ।