সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী মিঃ স্টিফ্যান লফভেনের আমন্ত্রণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী সরকারিভাবে স্টকহোম সফর করেন এ মাসের ১৬ ও ১৭ তারিখে।
প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং প্রধানমন্ত্রী লফভেন এক বৈঠকে মিলিত হয়ে ২০১৬ সালে মুম্বাইতে প্রচারিত তাঁদের যৌথ বিবৃতির কথা স্মরণ করে তার রূপায়ণের অগ্রগতিকে স্বাগত জানান। তাঁদের এই যৌথ বিবৃতিকে সহযোগিতা প্রসারের লক্ষ্যে এক রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্য দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সঙ্কল্প গ্রহণ করেন তাঁরা।
গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, আইনের শাসন, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্ভ্রম, বহুত্ববাদ এবং নীতি-নিয়ম নির্দেশিত এক বিশ্ব শৃঙ্খলার মিলিত অংশীদার হল ভারত ও সুইডেন – এই দুটি দেশ। জলবায়ু পরিবর্তন, ২০৩০ সাল পর্যন্ত রূপায়ণের লক্ষ্যে এক বিশেষ কার্যসূচি, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা, মানবাধিকার, লিঙ্গক্ষেত্রে সমতা, মানবতাবাদী প্রচেষ্টা এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মতো পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা ও মতবিনিময় করেন দুই প্রধানমন্ত্রী। জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে আরও গতিশীল করে তোলার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টিকে তাঁরা যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেন। প্যারিস চুক্তি রূপায়ণে দুটি দেশই যে সাধারণভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ, একথারও পুনরুচ্চারণ ঘটে তাঁদের আলাপ-আলোচনাকালে। যৌথ বিবৃতি অনুসারে, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্যায়ে নিরাপত্তা সম্পর্কিত নীতির বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার সপক্ষে মত প্রকাশ করেন তাঁরা।
রাষ্ট্রসঙ্ঘ সহ অন্যান্য বহুপাক্ষিক মঞ্চগুলিতে নিবিড়ভাবে সহযোগিতা চালিয়ে যাওয়ার কথাও বলেন দুই প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসচিবের সংস্কার প্রচেষ্টা প্রসঙ্গেও আলোচনা করেন তাঁরা। রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার, তার সম্প্রসারণ এবং তাকে আরও প্রতিনিধিত্বমূলক, দায়বদ্ধ এবং কার্যকর করে তোলার কথাও বলেন তাঁরা। একুশ শতকের বাস্তবতাকে স্বীকার করে নিয়ে, সেই অনুযায়ী এই বিষয়ে এগিয়ে যাওয়ার সপক্ষে সহমত পোষণ করেন দুই প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে (২০২১-২২) ভারতের অস্থায়ী সদস্যপদের জন্য আবেদনকে সমর্থন জানানোর জন্য সুইডেনের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান শ্রী নরেন্দ্র মোদী। সংস্কার প্রচেষ্টার পরবর্তীকালে রাষ্ট্রসঙ্ঘের সম্প্রসারিত নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের স্থায়ী সদস্যপদের বিষয়টিকেও সমর্থন জানিয়েছে সুইডেন। এজন্যও আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ, নিরস্ত্রীকরণ এবং এই ক্ষেত্রগুলিতে নিবিড় সহযোগিতা প্রসারের বিষয়ে সঙ্কল্পবদ্ধ হন দুই নেতাই। পরমাণু সরবরাহকারী দেশগুলির গোষ্ঠীভুক্ত হওয়ার জন্য ভারতের সদস্যপদের আবেদনকেও সমর্থন জানান প্রধানমন্ত্রী লফভেন। সন্ত্রাস দমন, সন্ত্রাসবাদী নেটওয়ার্ককে ধ্বংস করে দেওয়া এবং সন্ত্রাসে অর্থ বা অন্যকোনভাবে মদতদানের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান দুই প্রধানমন্ত্রী। এই লক্ষ্যে সন্ত্রাস বিরোধী আন্তর্জাতিক আইনি কাঠামোটিকে নিয়মিতভাবে পর্যালোচনারও আহ্বান জানান তাঁরা। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস রোধে একটি সুসংবদ্ধ খসড়া চুক্তি চূড়ান্ত করার প্রশ্নেও সহমত পোষণ করেন দুই প্রধানমন্ত্রী।
ভারত ও সুইডেনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার প্রসারে যে যে বিষয়গুলিতে বিশেষ জোর দেন দুই প্রধানমন্ত্রী তার মধ্যে রয়েছে – উদ্ভাবন প্রচেষ্টা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, স্মার্ট নগরী, পরবর্তী প্রজন্মের উপযোগী পরিবহণ ব্যবস্থা, নিরন্তর ও পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি শক্তি, নারী ক্ষমতায়ন, মহিলাদের দক্ষতা বিকাশ, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, বিজ্ঞান ও মহাকাশ কর্মসূচি, স্বাস্থ্য ও জীবনবিজ্ঞান ক্ষেত্রে সহযোগিতার প্রসার ইত্যাদি।