দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শ্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৯ সালের ৩০ মে শপথ নেন। তিনিই ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, যাঁর জন্ম ভারতের স্বাধীনতালাভের পর | অত্যন্ত কর্ম-চঞ্চল, দেশের জন্য নিবেদিত-প্রাণ এবং দৃঢ় প্রত্যয়ী শ্রী নরেন্দ্র মোদি কোটি কোটি ভারতবাসীর আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটিয়ে চলেছেন।
২০১৪ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকেই তিনি সার্বিক ও সর্বজনের উন্নয়নের অভিযাত্রা শুরু করেছেন, যার মাধ্যমে প্রত্যেক ভারতীয় নাগরিক নিজ নিজ আশা-আকাঙ্খা পূরণে সমর্থ হবেন। সমাজের একেবারে প্রান্তিক মানুষটিকেও সেবা করার লক্ষ্যে নিয়োজিত অন্ত্যোদয়ের নীতিতে তিনি গভীরভাবে অনুপ্রাণিত।
বহু উদ্ভাবনমুখী চিন্তা ও পদক্ষেপের মাধ্যমে এই সরকার এটা নিশ্চিত করেছে যে, অগ্রগতির চাকা দ্রুত গতিতে ঘুরবে এবং প্রতিটি নাগরিকই উন্নয়নের সুফল পাবে। সরকারী ব্যবস্থাপনা হয়ে উঠেছে উন্মুক্ত, সহজ এবং স্বচ্ছ।
প্রধানমন্ত্রী জনধন যোজনা পদ্ধতিগতভাবে প্রথমবারের মত এক যুগান্তকারী পরিবর্তন সূচিত করেছে, যার মাধ্যমে প্রতিটি নাগরিককে দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনার সাথে নিবিড়ভাবে যুক্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে| ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’-র জন্য তাঁর উদাত্ত আহ্বান, সংগে সংগে বাণিজ্যকে সহজ-সরল করার উপর আলোকপাতের প্রয়াস অভুতপূর্বভাবে বাণিজ্যমহল এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিশেষ সাহস ও উদ্যোগের সঞ্চার করেছে। ‘সত্যমেব জয়তে’ পদক্ষেপের মাধ্যমে শ্রমের প্রতি মর্যাদা দান ও শ্রম সংস্কার যেমন ছোট এবং মাঝারি ক্ষেত্রের শিল্প শ্রমিকদের সক্ষম করেছে, তেমনি দক্ষ যুবকদের করেছে উৎসাহিত।
এই প্রথম ভারত সরকার দেশের জনগনের জন্য তিনটি সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্প চালু করেছে এবং বয়স্কদের পেনসন ও গরীবদের বীমার আওতায় নিয়ে আসার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছে। ২০১৫ সালের জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল ইন্ডিয়া মিশনের উদ্বোধন করেছেন যার মূল লক্ষ্য এমন ডিজিটাল ইন্ডিয়া সৃষ্টি করা যার মাধ্যমে প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে মানুষের জীবনে গুনগত পরিবর্তন আনা যাবে|
২০১৪ সালের ২ অক্টোবর মহাত্মা গান্ধীর জন্মবার্ষিকিতে প্রধানমন্ত্রী ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন’ নামে পরিচ্ছন্নতার জন্য দেশজুড়ে এক গণ আন্দোলন শুরু করেন। তার ব্যাপকতা ও প্রভাব ঐতিহাসিক।
নরেন্দ্র মোদির বিদেশ নীতি বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের সম্ভাবনা ও ভুমিকাকে বিশ্ব মঞ্চে সঠিক ভাবে তুলে ধরেছে| তিনি তাঁর সরকারের কাজ শুরু করেছিলেন সার্কভুক্ত দেশগুলোর প্রধানদের উপস্থিতিতে। রাষ্ট্রসংঘের সাধারন পরিষদে তাঁর ভাষন সারা বিশ্বের প্রশংসা কুড়িয়েছে। নরেন্দ্র মোদি-ই প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী যিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১৭ বছর পর নেপালে, অস্ট্রেলিয়ায় ২৮ বছর পর, ফিজিতে ৩১ বছর পর এবং সিয়াচেনে ৩৪ বছর পর সফর শুরু করেন। সরকারের দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকে শ্রী নরেন্দ্র মোদি রাষ্ট্রসংঘ, ব্রিকস, সার্ক, জি-২০ প্রভৃতি শীর্ষ বৈঠকে অংশ নিয়েছেন, যেখানে বিশ্ব অর্থনীতি ও রাজনৈতিক নানা ক্ষেত্রের বিবিধ সমস্যা নিয়ে ভারতের মধ্যস্থতা, ভুমিকা ও দৃষ্টিভঙ্গি বিশেষ ভাবে সমাদৃত হয়েছে। তাঁর জাপান সফর জাপান-ভারত সম্পর্কে নতুন যুগের সূচনা করার লক্ষ্যে এক স্মরণীয় অধ্যায় হিসেবে সূচিত হয়েছে। তিনি ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মঙ্গোলিয়া সফর করেন। তাঁর চিন এবং দক্ষিণ কোরিয়া সফর ভারতে বিনিয়োগ আনতে সফল হয়েছে। তিনি ইউরোপের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা বজায় রেখে চলেছেন, যা তাঁর ফ্রান্স এবং জার্মান সফরের সময়েও লক্ষ্য করা গিয়েছে।
শ্রী নরেন্দ্র মোদি আরব দুনিয়ার সংগেও বিশেষ সম্পর্ক তৈরির উপর অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছেন।২০১৫-এর আগস্ট মাসে তাঁর সংযুক্ত আরব আমিরশাহী সফর ৩৪ বছরের মধ্যে কোন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সেদেশে প্রথম সফর, উপসাগরীয় অঞ্চলের সংগে ভারতের অর্থনৈতিক অংশিদারিত্ব বৃদ্ধি করতে দারুন ভিত্তি রচনা করেছে| ২০১৫ সালের জুলাই মাসে শ্রী মোদি মধ্য এশিয়ার পাঁচটি দেশ সফর করেছেন, এটিও নতুন পথের সন্ধান দিয়েছে| শক্তি, বানিজ্য, সংস্কৃতি, এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ন চুক্তি এই দেশগুলির সাথে স্বাক্ষরিত হয়েছে। ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে একটি ঐতিহাসিক ভারত-আফ্রিকা শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় নিউ দিল্লিতে, যেখানে ৫৪ আফ্রিকান দেশ অংশগ্রহণ করেন। ৪১ আফ্রিকান দেশের নেতৃবৃন্দ শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, যেখানে ভারত-আফ্রিকা সম্পর্ক শক্তিশালীকরণ বহুল আলোচিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে গিয়ে আফ্রিকার নেতাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন।
২০১৫ সালের নভেম্বরে প্রধান মন্ত্রী কপ-২১ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান করেন প্যারিসে, যেখানে তিনি বিভিন্ন বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে বরাবর জলবায়ু পরিবর্তনের উপর মনঃস্থির করেন, শ্রী মোদি ও ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি ওলাঁদ উন্মোচন করেন আন্তর্জাতিক সৌর অ্যালায়েন্স, একটি ফোরাম আলো বাড়িগুলো সূর্যের শক্তি জোতা করে।
২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে প্রধান মন্ত্রী যোগদান করেন পারমাণবিক নিরাপত্তার শীর্ষ সম্মেলনে, যেখানে তাঁর বিশ্বব্যাপী পর্যায়ে পারমাণবিক নিরাপত্তার গুরুত্বের উপর একটি শক্তিশালী বার্তায় পত্রপুষ্পোদ্গম হয়। তিনি সৌদি আরব সফর করেন, যেখানে তিনি সৌদি কিং আবদুল আজিজের দ্বারা সৌদি আরবের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মানে ভূষিত হন।
বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, যেমন, অস্ট্রেলিয়ার টনি অ্যাবোট, গণ প্রজাতন্ত্রী চিন-এর জি জিনপিং, শ্রীলঙ্কার মৈথ্রীপালা সিরিসেনা, রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন ভারত সফর করেছেন, এবং তাঁদের সফরের ফলে ভারত এবং ওই দেশগুলির মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক উন্নতিকরণে যুগান্তকারী দিক উন্মোচিত হয়েছে। ২০১৫ সালের প্রজাতন্ত্র দিবসে প্রধান অতিথি হিসাবে রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামার উপস্থিতির ঘটনা ভারত-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ইতিহাসে প্রথম। ২০১৫-র আগস্টে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলির শীর্ষনেতাদের নিয়ে ফিপিক সামিট ভারত আয়োজন করেছিল। ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মূল ভিত্তিগুলি নিয়ে সেখানে আলোচনা হয়েছে।
বছরের একটা দিনকে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস হিসাবে পালন করার জন্য শ্রী নরেন্দ্র মোদির আহ্বান রাষ্ট্রসংঘে ব্যাপক সাড়া ফেলে। এর পর-ই প্রথমবারের মত বিশ্বের ১৭৭-টি দেশ একসাথে হয়ে রাষ্ট্রসংঘের ‘২১ জুন আন্তর্জাতিক যোগ দিবস’ হিসাবে ঘোষণা করার প্রস্তাবে সম্মতি দেয়|
১৯৫০ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর গুজরাটের একটি ছোট শহরে তাঁর জন্ম। সমাজের প্রান্তিক স্তরের অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীভুক্ত ছিল তাঁর পরিবার। এক দরিদ্র কিন্তু ভালবাসায় পরিপূর্ণ পরিবারে তাঁর বেড়ে ওঠা, যাঁদের একটি টাকাও অতিরিক্ত ব্যয়ের ক্ষমতা ছিল না। প্রাথমিক পর্যায়ে অত্যন্ত কষ্টসাধ্য জীবনযাপন তাঁকে যে শুধু কঠিন কাজের মূল্যই শিখিয়েছে, তা নয়, বরং সাধারণের দুঃখকষ্ট বুঝতেও সাহায্য করেছে। এই বিষয়টিই খুব ছোটবেলা থেকে তাঁকে সাধারণ মানুষ তথা দেশের সেবায় উদ্বুদ্ধ করেছে। প্রথম দিকের বছরগুলিতে তিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের মতো জাতীয়তাবাদী সংগঠনের সঙ্গে দেশ গঠনের কাজে নিজেকে সম্পূর্ণ নিয়োজিত করেন এবং পরে তিনি রাজনীতিতে যোগ দেন। ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগ দিয়ে তিনি জাতীয় এবং রাজ্য পর্যায়ে কাজ করেন। শ্রী মোদী গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে এমএ করেন।
২০০১ সালে তিনি তাঁর রাজ্য গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হন, এবং রেকর্ড সংখ্যক চারবার মুখ্যমন্ত্রী হয়ে জনসেবার কাজ করে গিয়েছেন| যে গুজরাট সেসময় বিধ্বংসী ভুমিকম্প পরবর্তী বিপুল ক্ষতির মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল তিনি সেই গুজরাটের রূপান্তর ঘটিয়েছেন, বিকাশের কারিগর হিসেবে রাজ্যকে পরিনত করেছেন, যা ভারতের উন্নয়নে যথেষ্ট শক্তিশালী অবদান রাখছে।
নরেন্দ্র মোদি এমন একজন জন-নেতা, যিনি জনগণের সমস্যা নিরসনে এবং তাঁদের মঙ্গলের জন্য নিজেকে নিবেদিত করে রেখেছেন। মানুষের মধ্যে থাকা, তাঁদের দুঃখ-কষ্টের অংশীদার হওয়া, তাঁদের কষ্টের লাঘব করা, তাঁর কাছে এর চেয়ে সন্তোষজনক আর কিছু নেই। মানুষের সংগে তাঁর জোরদার ব্যক্তিগত যোগাযোগ থাকার ফলে তিনি এক মজবুত অনলাইন উপস্থিতি পেয়েছেন| তাঁকে ভারতের সবচেয়ে বড় প্রযুক্তি-প্রেমী নেতা বলে গন্য করা হয়, যিনি মানুষের সংগে যোগাযোগ রাখতে ও তাদের জীবনের পরিবর্তন আনতে ওয়েব ব্যবহার করেন| তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় অত্যন্ত সক্রিয়| এই মাধ্যমের বেশ কয়েকটি মঞ্চ যেমন, ফেসবুক, ট্যুইটার, গুগল+,ইন্সটাগ্রাম, সাউন্ড-ক্লাউড, লিঙ্কড-ইন, ওয়েবিও, এবং অনান্য আরো কয়েকটিও তিনি ব্যবহার করেন|
রাজনীতির বাইরে শ্রী নরেন্দ্র মোদি নানারকম লেখালেখির কাজও উপভোগ করেন।তিনি বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন, এরমধ্যে আছে কবিতার বইও।যোগ-চর্চা করে তিনি দিন শুরু করেন, যা তাঁর মন এবং শরীরকে কেন্দ্রীভূত করে এবং যা অত্যন্ত ব্যস্ত দিনলিপির মধ্যে থেকেও তাঁর মনকে শান্ত রাখার শক্তি সঞ্চারিত করে।
তিনি এমনই এক ব্যক্তি, যাঁর মধ্যে একসাথে মূর্ত্ হয়েছে সাহস, সহমর্মিতা এবং সংকল্পের দৃঢ়তার গুণ। তিনি ভারতকে পুনরুজ্জীবিত করবেন এবং ভারতকে বিশ্বের সামনে এক উজ্জ্বল আলোকশিখা হিসেবে তুলে ধরবেন – এই বিশ্বাস থেকে জাতি তাঁর ওপর দায়িত্ব ন্যস্ত করেছে|