ভারত-রাশিয়াকূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৭০তম বার্ষিকীর মূল উপলব্ধির বিষয়টি হল বিশ্বের এই দুইবৃহৎ শক্তির পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে এক কৌশলগতঅংশীদারিত্বের মজবুত বনিয়াদ। এই পারস্পরিক সম্পর্ক এক কথায় অভিনব এবং অতুলনীয়।রাজনৈতিক সংযোগ, নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তি, জ্বালানিশক্তি, বিজ্ঞান, সাংস্কৃতিক বিনিময় সফর, বিদেশ নীতি সহ প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেইপ্রসার লাভ করেছে ভারত-রাশিয়া দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক। এর ফলে, একদিকে যেমন দু’দেশেরজাতীয় স্বার্থের বিকাশ ঘটেছে, অন্যদিকে তেমনই শান্তি ও ন্যায়ের ভিত্তিতে এক বিশ্বশৃঙ্খলা গড়ে তোলার কাজও সহজতর হয়ে উঠেছে।

পারস্পরিকশ্রদ্ধা, বিশ্বাস ও সমঝোতার ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে এই দুটি দেশের সম্পর্ক।আর্থ-সামাজিক বিকাশ এবং বিদেশ নীতির ক্ষেত্রেও এই আস্থা ও বিশ্বাসের কোন অভাব নেই।শান্তি ও নিরাপত্তা তথা এক মজবুত বিশ্ব কাঠামো গড়ে তোলার কাজেও তার যথেষ্ট অবদানরয়েছে। বিশ্ব কাঠামোর এই ক্ষেত্রটিতে সভ্যতা ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্যও উল্লেখ করারমতো যা মানবজাতির ঐক্য প্রচেষ্টাকে আরও জোরদার করে তুলতে সাহায্য করেছে। এইপরিস্থিতিতে ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক আজ কালের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। বাইরের কোন চাপ বাশক্তি এই সম্পর্কে ফাটল ধরাতে পারেনি।

ভারতেরস্বাধীনতা সংগ্রামকে অকুন্ঠ সমর্থন যুগিয়েছিল রাশিয়া। এই দেশকে স্বনির্ভর হয়েউঠতেও নানাভাবে সাহায্য করেছে সে। ১৯৭১-এর আগস্ট মাসে ভারত ও রাশিয়া স্বাক্ষর করেশান্তি, মৈত্রী ও সহযোগিতা চুক্তিতে যা পারস্পরিক স্বার্থ ও সার্বভৌমত্বের প্রতিশ্রদ্ধা, সুপ্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নীতির ওপরভিত্তি করে রচিত। দু’দশক পরে ১৯৯৩-এর জানুয়ারিতে নতুন মৈত্রী ও সহযোগিতা চুক্তিতেপূর্বের অনেকগুলি বিষয়কেই আবার নতুন করে স্থান দেওয়া হয়। ২০০০ সালের ৩ অক্টোবরভারত ও রাশিয়ার মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্বের যে ঘোষণাপত্রটি স্বাক্ষরিত হয় তাদ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে এক নতুন মাত্রায় উন্নীত করে। আন্তর্জাতিক শান্তি ওনিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার কথাও বলা হয় তাতে। বিভিন্ন আঞ্চলিক বিষয়ের ওপর আলোকপাতকরার পাশাপাশি অর্থনীতি, সংস্কৃতি, শিক্ষা এবং অন্যান্য বিষয়গুলিতেও আন্তর্জাতিকপ্রেক্ষিতকে সামনে রেখে এগিয়ে যাওয়ার দিক নির্দেশ করা হয়। পরবর্তীকালে, ২০১০-এর ২১ডিসেম্বর তারিখে ভারত-রাশিয়ার এই অংশীদারিত্বের সম্পর্ক উন্নীত হয় এক বিশেষ কৌশলগতসহযোগিতার সম্পর্কে।

ভারত-রাশিয়াসম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে বিশেষ জোর দেওয়া হয় দুটি দেশের বিদেশনীতিগুলিকে অগ্রাধিকারদানের মাধ্যমে। দুটি রাষ্ট্রই অঙ্গীকার করেছে যে বিভিন্নক্ষেত্রের সহযোগিতাকে আরও প্রসারিত করে এবং দ্বিপাক্ষিক কর্মসূচিকে আরও সমৃদ্ধ তথাফলপ্রসূ করে তুলতে সম্ভাব্য সমস্ত সুযোগ কাজে লাগানো হবে।

 

ভারতও রাশিয়া এই দুটি দেশের অর্থনীতি জ্বালানি সম্পর্কিত সহযোগিতার ক্ষেত্রে একে অপরেরসম্পূরক হয়ে উঠতে পারে। এই লক্ষ্যে পরস্পরের মধ্যে জ্বালানি শক্তি সম্পর্কিতসম্পর্কের এক বিশেষ সেতু গড়ে তোলার কাজে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছে দুটি দেশই। পরমাণুশক্তি, হাইড্রো কার্বন, জলবিদ্যুৎ এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানির উৎস ব্যবহারেরমাধ্যমে জ্বালানি ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা প্রসারে এবং ব্যয়সাশ্রয়ী জ্বালানিগড়ে তুলতে দুটি দেশই সহযোগিতা করবে একে অপরের সঙ্গে।

প্রাকৃতিকগ্যাসের ব্যাপক ব্যবহার গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমণের মাত্রা যে উল্লেখযোগ্যভাবেকমিয়ে আনতে পারে, সে বিষয়টি অনুভব ও উপলব্ধি করেছে ভারত ও রাশিয়া। এই কারণে জলবায়ুপরিবর্তন সম্পর্কিত প্যারিস চুক্তির বিভিন্ন শর্ত পূরণের কাজে একে অপরের সঙ্গেসহযোগিতা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। নিরন্তর অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবংশান্তির উদ্দেশ্যে পরমাণু শক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করে তোলার কথাও বলা হয়েছেভারত-রাশিয়া যৌথ ঘোষণাপত্রটিতে। ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবংবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতাকে আরও নিবিড় করে তুলতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে দুটিরাষ্ট্রই। কুড়ানকুলাম পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলিকে ভারতের বৃহত্তম জ্বালানিউৎপাদন কেন্দ্র রূপে গড়ে তুলতেও এই সহযোগিতা চুক্তি কাজ করে যাবে।

পরমাণুশক্তি ক্ষেত্রে ভারত-রাশিয়া ক্রমবর্ধমান সহযোগিতার সম্পর্ক ভারতে পরমাণু উৎপাদনেরসুযোগ ও সম্ভাবনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এর ফলে, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচির লক্ষ্যপূরণের কাজ সহজতর হয়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ সম্পর্কিত একটি চুক্তি ভারত ওরাশিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় ২০১৫-র ২৪ ডিসেম্বর তারিখে।

গভীরসমুদ্রে অনুসন্ধান প্রচেষ্টা এবং হাইড্রো কার্বন সম্পদের উন্নয়ন সম্পর্কিতক্ষেত্রগুলিতেও কৌশলগতভাবে জোটবদ্ধ হয়ে ওঠার অঙ্গীকার করেছে ভারত ও রাশিয়া।দু’দেশের জ্বালানি সংস্থাগুলির মধ্যে সহযোগিতা প্রসারের প্রস্তাবকেও স্বাগত জানানোহয়েছে এই দ্বিপাক্ষিক ঘোষণাপত্রে। ভারতে বর্তমান বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলিরআধুনিকীকরণে এবং নতুন উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তোলার কাজে এই সহযোগিতা প্রসারের কথা বলাহয়েছে। প্রযুক্তি এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে দূষণমুক্ত পরিবেশ-বান্ধব এবং সুলভজ্বালানি সম্পদের ব্যবহার নিশ্চিত করে তোলার কাজে দুটি দেশই সহযোগিতা করে যাবেপরস্পরের মধ্যে।

দু’দেশেরঅর্থনৈতিক কর্মপ্রচেষ্টা এবং তার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ঘোষণায় বলা হয়েছে যেবাণিজ্য ও বিনিয়োগের প্রসার এবং পণ্য ও পরিষেবা ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক বৈচিত্রকরণেরওপর বিশেষ জোর দেওয়া হবে। বিশেষত, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে উচ্চ প্রযুক্তিরউৎপাদন এবং শিল্প সহযোগিতার প্রসারের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে এইঘোষণাপত্রটিতে। ভারত-রাশিয়া বাণিজ্য প্রসারের ক্ষেত্রে দু’দেশের জাতীয় কারেন্সিরওপর জোর দেওয়ার কথাও রয়েছে এই ঘোষণার মধ্যে। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এবং ব্যাঙ্কঅফ রাশিয়ার জাতীয় কারেন্সি ব্যবস্থা এই লক্ষ্যে ব্যবহার করা হবে বলে ঘোষণা করাহয়েছে। আঞ্চলিক পর্যায়েও অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার এইঘোষণাপত্রের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক। ইউরেশিয়ান ইকনমিক ইউনিয়ন এবং ভারতীয়সাধারণতন্ত্রের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পর্কিত আলাপ-আলোচনা যাতে দ্রুত শুরুকরা যায় তা নিশ্চিত করতে সহযোগিতা প্রসারের অঙ্গীকার রয়েছে এই ঘোষণাপত্রে।

শান্তি,সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির স্বার্থে মেনে চলা হবে আঞ্চলিক সংযোগ ও যোগাযোগেরবাধ্যবাধকতাও। পরস্পরের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে এবং শান্তিপূর্ণআলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এই লক্ষ্য পূরণের কাজে এগিয়ে যেতে হবে। কারণ, স্বচ্ছতা,নিরন্তর প্রচেষ্টা এবং দায়িত্বশীলতার নীতিতে বিশ্বাস করে ভারত ও রাশিয়া দুটি দেশই।আন্তর্জাতিক উত্তর-দক্ষিণ পরিবহণ করিডর সম্পর্কিত পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজে এবংগ্রিন করিডর প্রস্তাবের বাস্তবায়নে পরস্পরের অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছেস্বাক্ষরিত ঘোষণাপত্রে।

 

জ্ঞান-নির্ভরঅর্থনীতির ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে দুটি দেশেরই। আধুনিকতম বৈজ্ঞানিক প্রচেষ্টা ওউদ্ভাবনকে এজন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। মহাকাশ প্রযুক্তি,বিমান পরিবহণ, নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন, কৃষি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, চিকিৎসা,ওষুধ উৎপাদন, রোবোটিক্স, ন্যানো প্রযুক্তি, সুপার কম্পিউটিং প্রযুক্তি এবং বস্তুবিজ্ঞানের মতো ক্ষেত্রগুলিতে উচ্চ প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানকে গুরুত্বদেওয়া হবে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা প্রসারের ক্ষেত্রে।

পরিকাঠামোরআধুনিকীকরণের লক্ষ্যে যৌথ প্রচেষ্টাকে আরও উৎসাহিত করে তোলার কথাও বলা হয়েছেস্বাক্ষরিত ঘোষণায়। নগরায়নের চ্যালেঞ্জ, খাদ্য নিরাপত্তা, জল ও অরণ্য সম্পদেরসংরক্ষণ, অর্থনৈতিক সংস্কার প্রচেষ্টা এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সংস্থাগুলিরসার্বিক উন্নয়ন তথা দক্ষতা বিকাশের লক্ষ্যপূরণে সম্ভাব্য পথ ও উপায় অনুসন্ধানে জোরদেওয়া হবে দু’দেশের পক্ষ থেকেই। দু’দেশের মিলিত শক্তি ও সহায়-সম্পদকে কাজে লাগানোহবে হীরে উৎপাদন শিল্পের সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলিতে। হীরের বাজারে সিন্থেটিক রত্নেরঅনুপ্রবেশ রোধে এবং হীরে উৎপাদন ও বিপণনের বিষয়টিতে সহযোগিতা প্রসারে ঐক্যবদ্ধভাবেকাজ করে যাবে ভারত ও রাশিয়া।

জাহাজনির্মাণ, নৌ-চলাচল এবং সমুদ্রের জলকে লবণমুক্ত করার কাজে রাশিয়ার সাফল্য ও দক্ষতারকথা আজ আর কারোর অজানা নয়। তাই, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়েরমাধ্যমে অন্তর্দেশীয় জলপথগুলির বিকাশ, নদীর বাঁধ স্থাপন, বন্দর উন্নয়ন এবং কার্গোকন্টেনার সম্পর্কিত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এরসুবাদে ভারতের নদী ব্যবস্থার সার্বিক ও উন্নততর ব্যবহার সম্ভব হবে বলে আশা করাহচ্ছে।

জোরদেওয়া হবে, উচ্চ প্রযুক্তির রেল চলাচলের ওপরও। সুনির্দিষ্ট মাশুল করিডর স্থাপন,নতুন নতুন প্রযুক্তির প্রয়োগ ইত্যাদির মাধ্যমে দক্ষ রেল পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তোলাহবে ভারত ও রাশিয়ার যৌথ উদ্যোগে। এজন্য প্রযুক্তি বিনিময়ের পাশাপাশি, কর্মীপ্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হবে বলে যৌথ ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

দু’দেশেরবাজারে কৃষিজাত পণ্য ও খাদ্যসামগ্রীর বিনিময় ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করে তোলারঅঙ্গীকারও গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য প্রয়োজনে গবেষণা ও উন্নয়ন প্রচেষ্টার মাধ্যমেগড়ে তোলা হবে যৌথ প্রকৌশলগত ব্যবস্থা। কৃষি এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ক্ষেত্রের সকলসম্ভাবনাকেই এজন্য কাজে লাগানো হবে। কৃষি পদ্ধতি, কৃষি উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ এবংবিপণন – সবক’টি ক্ষেত্রেই কৌশলগত ব্যবস্থা উদ্ভাবনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করাহবে। দু’দেশের প্রাকৃতিক সহায়-সম্পদের সফল ব্যবহারের লক্ষ্যে যৌথ প্রকল্প গড়েতোলার কাজেও বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হবে। এজন্য বর্তমান প্রযুক্তির ব্যবহার এবং নতুননতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ওপর দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার মাধ্যমে জোর দেবে দুটি দেশই।

আগামী২০২০ সালের মধ্যে ভারত হয়ে উঠবে বিমান পরিবহণের ক্ষেত্রে এক তৃতীয় বৃহত্তম বিপণনব্যবস্থা । এই কারণে ভারতসরকারের আঞ্চলিক সংযোগ ও যোগাযোগ স্থাপনের বিষয়টিকে বিশেষ স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছেভারত-রাশিয়া ঘোষণাপত্রে । এই বিশেষক্ষেত্রটিতে যৌথ প্রচেষ্টায় উৎপাদন বৃদ্ধি এবং নতুন নতুন যৌথ উদ্যোগ গড়ে তোলারসুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে প্রচুর।

 

দ্বিপাক্ষিকপ্রতিরক্ষা সহযোগিতার মূলে রয়েছে পারস্পরিক গভীর আস্থা ও বিশ্বাস। রাশিয়া আধুনিকসামরিক প্রযুক্তি রপ্তানি করে থাকে ভারতে। এই সহযোগিতাকে আরও গভীর ও জোরদার করেতোলা হবে যৌথ উদ্যোগে নির্মাণ ও উৎপাদন প্রচেষ্টার মাধ্যমে। ভবিষ্যতের প্রযুক্তিগতসম্ভাবনা গ্রহণ ও বিনিময়ের মধ্য দিয়ে এবং পারস্পরিক প্রতিরক্ষা সংক্রান্তবাধ্যবাধকতার প্রতি আনুগত্য বজায় রেখে এই সামরিক সহায়তা প্রসারের ওপর জোর দেওয়াহবে।

ভারতও রাশিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত ঘোষণাপত্রটিতে দু’দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সহযোগিতাকেএক উন্নততর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। যৌথ উদ্যোগে এজন্য গড়ে তোলা হবে জলও স্থলে সামরিক মহড়া এবং একে অপরের সামরিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে প্রশিক্ষণ তথাঅনুশীলন। এই বছরই আলোর মুখ দেখতে চলেছে ত্রি-পরিষেবা ব্যবস্থা ‘ইন্দ্র, ২০১৭’।

মহাকাশগবেষণার ক্ষেত্রেও যথেষ্ট সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা প্রসারের।সমাজকল্যাণের স্বার্থে এজন্য ব্যবহার করা যেতে পারে প্রাসঙ্গিক প্রযুক্তিগত উন্নয়নপ্রচেষ্টাকে। দু’দেশের বিভিন্ন অঞ্চল এবং রাজ্যগুলির মধ্যে আরও বেশি করে সহযোগিতাপ্রসারের ওপর সক্রিয়ভাবে জোর দেওয়ার কথা বলেছে ভারত ও রাশিয়া দুটি দেশই।

আন্তর্জাতিকসম্পর্কের ক্ষেত্রে বহু পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে এক বিশ্ব শৃঙ্খলা গড়ে তোলার কাজটিকে একুশশতকের আন্তঃরাষ্ট্র সম্পর্ক প্রসারের ক্ষেত্রে এক স্বাভাবিক এবং অবশ্যম্ভাবীউদ্ভাবন প্রক্রিয়া বলে মনে করে ভারত ও রাশিয়া। এই কারণে আইনের শাসন এবং বিশ্বরাজনীতির সমন্বয় প্রচেষ্টায় রাষ্ট্রসঙ্ঘের কেন্দ্রীয় ভূমিকার প্রতি আনুগত্য বজায়রেখে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের কাঠামোটিকে গণতান্ত্রিক করে তোলার লক্ষ্যে যৌথপ্রচেষ্টা চালানোর কথা বলা হয়েছে স্বাক্ষরিত ভারত-রাশিয়া ঘোষণাপত্রে। জোর দেওয়াহয়েছে, রাষ্ট্রসঙ্ঘের সংস্কার কর্মসূচির ওপরও। নিরাপত্তা পরিষদকে আরওপ্রতিনিধিত্বমূলক এবং বাস্তবানুকূল করে তোলার কাজে এই সংস্কার প্রচেষ্টা ইতিবাচকফল দেবে বলে মনে করা হচ্ছে । রাষ্ট্রসঙ্ঘেরনিরাপত্তা পরিষদে ভারতের স্থায়ী সদস্যপদের প্রস্তাবকে বলিষ্ঠভাবে সমর্থন করেরাশিয়া। এক ইতিবাচক অভিন্ন আন্তর্জাতিক কার্যসূচির কাজকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ারপ্রস্তাবকেও সমর্থন করে ভারত ও রাশিয়া উভয়েই। কারণ, শান্তি, সুরক্ষা ও স্থিতিশীলতানিশ্চিত করার কাজে তা এক সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে বলে দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করেছে এইদুটি দেশ।

বিশ্বেররাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আর্থিক তথা সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলির সংস্কার ওগণতান্ত্রিকতার লক্ষ্যে একযোগে কাজ করে যাবে ভারত ও রাশিয়া। তাতে আন্তর্জাতিকসমষ্টি ও সম্প্রদায়ের স্বার্থ সুরক্ষিত থাকবে বলে মনে করে তারা। চাপ সৃষ্টির কোনআন্তর্জাতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাধ্যবাধকতাকে অস্বীকার করেছে এই দুটি দেশ।কারণ তারা মনে করে যে একটি দেশের সার্বভৌমত্ব, তার নিজস্ব উদ্বেগ ও আশঙ্কা এবং বৈধস্বার্থগুলিকে উপেক্ষা করা কোনমতেই উচিৎ নয়। ব্রিক্‌স সদস্য রাষ্ট্রগুলির সঙ্গেও সফলসহযোগিতার এক বাতাবরণ গড়ে তোলারও বাসনা রয়েছে এই দুটি দেশের। কারণ, আন্তর্জাতিকবিষয়গুলিতে ব্রিক্‌স সদস্য রাষ্ট্রগুলির এক বিশেষ প্রভাব উন্নয়ন প্রচেষ্টার কাজেসাহায্য করবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশ্ব শ্রম সংগঠন, জি-২০, সাংহাই সহযোগিতা সংস্থাএবং রাশিয়া-ভারত-চিন সহযোগিতা সংস্থাগুলি সহ বহু পক্ষ ও সংস্থাকে নিয়ে গঠিত বিশ্বসংগঠনগুলির মধ্যে নিরন্তর সহযোগিতা প্রসারেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ভারত ও রাশিয়া।রাশিয়া মনে করে যে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার পূর্ণ সদস্য পদে ভারতের অন্তর্ভুক্তিইউরেশিয়া তথা সমগ্র প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অর্থনৈতিক বিকাশ ও সমৃদ্ধিকেত্বরান্বিত করার পাশাপাশি, শান্তি ও সুস্থিতি প্রচেষ্টাকেও বিশেষভাবে জোরদার করেতুলবে।

দু’দেশেরমিলিত নীতি ও কর্মপ্রচেষ্টার সমন্বয়ে এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একঅন্তর্ভুক্তিমূলক নিরাপত্তা কাঠামো গড়ে তোলার কাজে সাহায্য করবে ভারত ও রাশিয়া।সমগ্র ব্যবস্থায় উদার মানসিকতা এবং সুষম বিকাশের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হবে। পূর্বএশিয়া শীর্ষ বৈঠকের কাঠামোয় প্রাসঙ্গিক আলোচনা ও বক্তব্যের ফলাফলকে আরও এগিয়ে নিয়েযাওয়ারও চেষ্টা করা হবে দুটি দেশের পক্ষ থেকে।

মধ্যপ্রাচ্যএবং উত্তর আফ্রিকায় শান্তি ও স্থিতিশীলতার পুনরুদ্ধার সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জগুলিরক্ষেত্রে ভারত ও রাশিয়া তাদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করে তোলার উদ্যোগ চালিয়েযাবে। সিরিয়ার সমস্যা ও সঙ্কটজনক পরিস্থিতির নিরসন, আফগানিস্তানের জাতীয় সমস্যারসমাধান ইত্যাদির ওপরও জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে এই দ্বিপাক্ষিক ঘোষণাপত্রে।

অস্ত্রশস্ত্রেরযথেচ্ছ ব্যবহার এবং নির্বিচার ধ্বংসলীলা প্রতিরোধ করতে বদ্ধপরিকর দুটি দেশই।রাশিয়া দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে বহুপাক্ষিক রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলিতে ভারতেরঅংশগ্রহণ কাজের সাফল্যকে বহুগুণে বৃদ্ধি করতে পারে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এনএসজিসদস্যপদে ভারতের আবেদনকে স্বাগত জানিয়েছে রাশিয়া।

যেকোন ধরনের সন্ত্রাস এবং তার বহিঃপ্রকাশকে কঠোর নিন্দা করে ভারত ও রাশিয়া দুটিদেশই। তারা মনে করে যে সন্ত্রাসের পেছনে কোন ধর্মীয়, রাজনৈতিক, জাতিগত কিংবাআদর্শগত যুক্তি বা কারণ থাকতে পারে না। সুতরাং, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সন্ত্রাসপ্রতিরোধে দুটি দেশই তাদের যৌথ প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে অঙ্গীকারবদ্ধ। ভারত ও রাশিয়ামনে করে যে সন্ত্রাসবাদের নজিরবিহীন হুমকি যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে এক দেশ থেকে অন্যদেশে, তাতে শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। এই কারণেবিশ্বের সবক’টি দেশেরই উচিৎ দ্বৈত ভূমিকার খোলস ছেড়ে আন্তর্জাতিক আইন এবংরাষ্ট্রসঙ্ঘের সনদ মেনে সন্ত্রাস বিরোধী প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণ করা। এই লক্ষ্যে সবক’টিদেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে আবেদন জানানো হয়েছে যে সন্ত্রাসবাদী নেটওয়ার্কপুরোপুরি বান্‌চাল করে দেওয়ার জন্য। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস প্রতিরোধে এক সুসংবদ্ধসম্মেলনের আয়োজন এবং সেখানে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছেভারত-রাশিয়া যৌথ ঘোষণাপত্রটিতে।

নিরাপত্তাএবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্ষেত্রগুলিতে ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পাদিতআন্তঃসরকারি চুক্তি মোতাবেক কাজ করে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। ভারত ও রাশিয়া দুটিদেশের জনসাধারণের পারস্পরিক স্বার্থ, সমঝোতা, শ্রদ্ধা এবং সহমর্মিতাকে ভিত্তি করে দ্বিপাক্ষিকসংযোগ ও যোগাযোগকে আরও প্রসারিত করার চেষ্টা করা হবে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিকপ্রচেষ্টার ক্ষেত্রগুলিতে। ভারত-রাশিয়া দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের৭০তম বার্ষিকী স্মরণীয় করে তুলতে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে দু’দেশের বিভিন্ন শহরে নানাধরনের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক উদ্যোগ গ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

 

শিক্ষাক্ষেত্রেদ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা প্রসারের গুরুত্বও কম নয়। বরং, এই বিশেষ ক্ষেত্রটিতে সহযোগিতাপ্রসারের সম্ভাবনা রয়েছে এক কথায় সীমাহীন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে সরাসরি সংযোগ ও যোগাযোগ স্থাপনের মধ্য দিয়ে শিক্ষাক্ষেত্রেসহযোগিতার সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করে তোলার ওপর জোর দেবে ভারত ও রাশিয়া।

বিজ্ঞানও প্রযুক্তি সম্পর্কিত দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার প্রসারেরও রয়েছে এক বিস্তৃত ক্ষেত্র।জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ সুরক্ষা, বিশুদ্ধ জ্বালানি, সাইবার নিরাপত্তা, সুলভস্বাস্থ্য পরিচর্যা, সামুদ্রিক প্রাণীর সুরক্ষা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উদ্ভূতচ্যালেঞ্জগুলি একযোগে মোকাবিলা করার কাজেও অঙ্গীকারবদ্ধ ভারত ও রাশিয়া – এই দুটিদেশ। বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও অনুসন্ধান প্রচেষ্টা এবং দু’দেশের সাধারণ স্বার্থগুলিরসুরক্ষার ওপর জোর দিয়ে এই সহযোগিতা প্রসারের কাজ আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলাহয়েছে। দুটি দেশই বিশেষভাবে জোর দিয়েছে জ্ঞান-নির্ভর কেন্দ্রের এক বিশেষ নেটওয়ার্কগড়ে তোলার ওপর যাতে সমন্বয় ঘটবে মানসিক অনুশীলন ও বৈজ্ঞানিক তথা উদ্ভাবনপ্রচেষ্টার যা প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক উন্নয়নের কাজকেও আরওত্বরান্বিত করবে।

দু’দেশেরমধ্যে পর্যটন প্রসার এবং পরস্পরের নাগরিকদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সংযোগ ও যোগাযোগেরবাতাবরণ গড়ে তুলতে ভিসা ব্যবস্থাকে সরল করে তোলার কথাও বলা হয়েছে ভারত-রাশিয়া যৌথঘোষণাপত্রে।

দুটিদেশের মধ্যে পারস্পরিক কল্যাণমুখী এক মৈত্রী তথা অংশীদারিত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলাহবে এক সম্প্রীতি বাতাবরণের মধ্য দিয়ে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিকাশে মিলিতপ্রচেষ্টা দুটি দেশের কর্মপ্রচেষ্টাকে কৌশলগত দিক থেকে অংশীদারিত্বের এক নতুনমাত্রায় উন্নীত করবে। এই প্রচেষ্টায় আখেরে লাভবান হবে বিশ্বের সবক’টি দেশই।

Explore More
৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪

জনপ্রিয় ভাষণ

৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪
PLI, Make in India schemes attracting foreign investors to India: CII

Media Coverage

PLI, Make in India schemes attracting foreign investors to India: CII
NM on the go

Nm on the go

Always be the first to hear from the PM. Get the App Now!
...
Text of PM Modi's address at the Parliament of Guyana
November 21, 2024

Hon’ble Speaker, मंज़ूर नादिर जी,
Hon’ble Prime Minister,मार्क एंथनी फिलिप्स जी,
Hon’ble, वाइस प्रेसिडेंट भरत जगदेव जी,
Hon’ble Leader of the Opposition,
Hon’ble Ministers,
Members of the Parliament,
Hon’ble The चांसलर ऑफ द ज्यूडिशियरी,
अन्य महानुभाव,
देवियों और सज्जनों,

गयाना की इस ऐतिहासिक पार्लियामेंट में, आप सभी ने मुझे अपने बीच आने के लिए निमंत्रित किया, मैं आपका बहुत-बहुत आभारी हूं। कल ही गयाना ने मुझे अपना सर्वोच्च सम्मान दिया है। मैं इस सम्मान के लिए भी आप सभी का, गयाना के हर नागरिक का हृदय से आभार व्यक्त करता हूं। गयाना का हर नागरिक मेरे लिए ‘स्टार बाई’ है। यहां के सभी नागरिकों को धन्यवाद! ये सम्मान मैं भारत के प्रत्येक नागरिक को समर्पित करता हूं।

साथियों,

भारत और गयाना का नाता बहुत गहरा है। ये रिश्ता, मिट्टी का है, पसीने का है,परिश्रम का है करीब 180 साल पहले, किसी भारतीय का पहली बार गयाना की धरती पर कदम पड़ा था। उसके बाद दुख में,सुख में,कोई भी परिस्थिति हो, भारत और गयाना का रिश्ता, आत्मीयता से भरा रहा है। India Arrival Monument इसी आत्मीय जुड़ाव का प्रतीक है। अब से कुछ देर बाद, मैं वहां जाने वाला हूं,

साथियों,

आज मैं भारत के प्रधानमंत्री के रूप में आपके बीच हूं, लेकिन 24 साल पहले एक जिज्ञासु के रूप में मुझे इस खूबसूरत देश में आने का अवसर मिला था। आमतौर पर लोग ऐसे देशों में जाना पसंद करते हैं, जहां तामझाम हो, चकाचौंध हो। लेकिन मुझे गयाना की विरासत को, यहां के इतिहास को जानना था,समझना था, आज भी गयाना में कई लोग मिल जाएंगे, जिन्हें मुझसे हुई मुलाकातें याद होंगीं, मेरी तब की यात्रा से बहुत सी यादें जुड़ी हुई हैं, यहां क्रिकेट का पैशन, यहां का गीत-संगीत, और जो बात मैं कभी नहीं भूल सकता, वो है चटनी, चटनी भारत की हो या फिर गयाना की, वाकई कमाल की होती है,

साथियों,

बहुत कम ऐसा होता है, जब आप किसी दूसरे देश में जाएं,और वहां का इतिहास आपको अपने देश के इतिहास जैसा लगे,पिछले दो-ढाई सौ साल में भारत और गयाना ने एक जैसी गुलामी देखी, एक जैसा संघर्ष देखा, दोनों ही देशों में गुलामी से मुक्ति की एक जैसी ही छटपटाहट भी थी, आजादी की लड़ाई में यहां भी,औऱ वहां भी, कितने ही लोगों ने अपना जीवन समर्पित कर दिया, यहां गांधी जी के करीबी सी एफ एंड्रूज हों, ईस्ट इंडियन एसोसिएशन के अध्यक्ष जंग बहादुर सिंह हों, सभी ने गुलामी से मुक्ति की ये लड़ाई मिलकर लड़ी,आजादी पाई। औऱ आज हम दोनों ही देश,दुनिया में डेमोक्रेसी को मज़बूत कर रहे हैं। इसलिए आज गयाना की संसद में, मैं आप सभी का,140 करोड़ भारतवासियों की तरफ से अभिनंदन करता हूं, मैं गयाना संसद के हर प्रतिनिधि को बधाई देता हूं। गयाना में डेमोक्रेसी को मजबूत करने के लिए आपका हर प्रयास, दुनिया के विकास को मजबूत कर रहा है।

साथियों,

डेमोक्रेसी को मजबूत बनाने के प्रयासों के बीच, हमें आज वैश्विक परिस्थितियों पर भी लगातार नजर ऱखनी है। जब भारत और गयाना आजाद हुए थे, तो दुनिया के सामने अलग तरह की चुनौतियां थीं। आज 21वीं सदी की दुनिया के सामने, अलग तरह की चुनौतियां हैं।
दूसरे विश्व युद्ध के बाद बनी व्यवस्थाएं और संस्थाएं,ध्वस्त हो रही हैं, कोरोना के बाद जहां एक नए वर्ल्ड ऑर्डर की तरफ बढ़ना था, दुनिया दूसरी ही चीजों में उलझ गई, इन परिस्थितियों में,आज विश्व के सामने, आगे बढ़ने का सबसे मजबूत मंत्र है-"Democracy First- Humanity First” "Democracy First की भावना हमें सिखाती है कि सबको साथ लेकर चलो,सबको साथ लेकर सबके विकास में सहभागी बनो। Humanity First” की भावना हमारे निर्णयों की दिशा तय करती है, जब हम Humanity First को अपने निर्णयों का आधार बनाते हैं, तो नतीजे भी मानवता का हित करने वाले होते हैं।

साथियों,

हमारी डेमोक्रेटिक वैल्यूज इतनी मजबूत हैं कि विकास के रास्ते पर चलते हुए हर उतार-चढ़ाव में हमारा संबल बनती हैं। एक इंक्लूसिव सोसायटी के निर्माण में डेमोक्रेसी से बड़ा कोई माध्यम नहीं। नागरिकों का कोई भी मत-पंथ हो, उसका कोई भी बैकग्राउंड हो, डेमोक्रेसी हर नागरिक को उसके अधिकारों की रक्षा की,उसके उज्जवल भविष्य की गारंटी देती है। और हम दोनों देशों ने मिलकर दिखाया है कि डेमोक्रेसी सिर्फ एक कानून नहीं है,सिर्फ एक व्यवस्था नहीं है, हमने दिखाया है कि डेमोक्रेसी हमारे DNA में है, हमारे विजन में है, हमारे आचार-व्यवहार में है।

साथियों,

हमारी ह्यूमन सेंट्रिक अप्रोच,हमें सिखाती है कि हर देश,हर देश के नागरिक उतने ही अहम हैं, इसलिए, जब विश्व को एकजुट करने की बात आई, तब भारत ने अपनी G-20 प्रेसीडेंसी के दौरान One Earth, One Family, One Future का मंत्र दिया। जब कोरोना का संकट आया, पूरी मानवता के सामने चुनौती आई, तब भारत ने One Earth, One Health का संदेश दिया। जब क्लाइमेट से जुड़े challenges में हर देश के प्रयासों को जोड़ना था, तब भारत ने वन वर्ल्ड, वन सन, वन ग्रिड का विजन रखा, जब दुनिया को प्राकृतिक आपदाओं से बचाने के लिए सामूहिक प्रयास जरूरी हुए, तब भारत ने CDRI यानि कोएलिशन फॉर डिज़ास्टर रज़ीलिएंट इंफ्रास्ट्रक्चर का initiative लिया। जब दुनिया में pro-planet people का एक बड़ा नेटवर्क तैयार करना था, तब भारत ने मिशन LiFE जैसा एक global movement शुरु किया,

साथियों,

"Democracy First- Humanity First” की इसी भावना पर चलते हुए, आज भारत विश्वबंधु के रूप में विश्व के प्रति अपना कर्तव्य निभा रहा है। दुनिया के किसी भी देश में कोई भी संकट हो, हमारा ईमानदार प्रयास होता है कि हम फर्स्ट रिस्पॉन्डर बनकर वहां पहुंचे। आपने कोरोना का वो दौर देखा है, जब हर देश अपने-अपने बचाव में ही जुटा था। तब भारत ने दुनिया के डेढ़ सौ से अधिक देशों के साथ दवाएं और वैक्सीन्स शेयर कीं। मुझे संतोष है कि भारत, उस मुश्किल दौर में गयाना की जनता को भी मदद पहुंचा सका। दुनिया में जहां-जहां युद्ध की स्थिति आई,भारत राहत और बचाव के लिए आगे आया। श्रीलंका हो, मालदीव हो, जिन भी देशों में संकट आया, भारत ने आगे बढ़कर बिना स्वार्थ के मदद की, नेपाल से लेकर तुर्की और सीरिया तक, जहां-जहां भूकंप आए, भारत सबसे पहले पहुंचा है। यही तो हमारे संस्कार हैं, हम कभी भी स्वार्थ के साथ आगे नहीं बढ़े, हम कभी भी विस्तारवाद की भावना से आगे नहीं बढ़े। हम Resources पर कब्जे की, Resources को हड़पने की भावना से हमेशा दूर रहे हैं। मैं मानता हूं,स्पेस हो,Sea हो, ये यूनीवर्सल कन्फ्लिक्ट के नहीं बल्कि यूनिवर्सल को-ऑपरेशन के विषय होने चाहिए। दुनिया के लिए भी ये समय,Conflict का नहीं है, ये समय, Conflict पैदा करने वाली Conditions को पहचानने और उनको दूर करने का है। आज टेरेरिज्म, ड्रग्स, सायबर क्राइम, ऐसी कितनी ही चुनौतियां हैं, जिनसे मुकाबला करके ही हम अपनी आने वाली पीढ़ियों का भविष्य संवार पाएंगे। और ये तभी संभव है, जब हम Democracy First- Humanity First को सेंटर स्टेज देंगे।

साथियों,

भारत ने हमेशा principles के आधार पर, trust और transparency के आधार पर ही अपनी बात की है। एक भी देश, एक भी रीजन पीछे रह गया, तो हमारे global goals कभी हासिल नहीं हो पाएंगे। तभी भारत कहता है – Every Nation Matters ! इसलिए भारत, आयलैंड नेशन्स को Small Island Nations नहीं बल्कि Large ओशिन कंट्रीज़ मानता है। इसी भाव के तहत हमने इंडियन ओशन से जुड़े आयलैंड देशों के लिए सागर Platform बनाया। हमने पैसिफिक ओशन के देशों को जोड़ने के लिए भी विशेष फोरम बनाया है। इसी नेक नीयत से भारत ने जी-20 की प्रेसिडेंसी के दौरान अफ्रीकन यूनियन को जी-20 में शामिल कराकर अपना कर्तव्य निभाया।

साथियों,

आज भारत, हर तरह से वैश्विक विकास के पक्ष में खड़ा है,शांति के पक्ष में खड़ा है, इसी भावना के साथ आज भारत, ग्लोबल साउथ की भी आवाज बना है। भारत का मत है कि ग्लोबल साउथ ने अतीत में बहुत कुछ भुगता है। हमने अतीत में अपने स्वभाव औऱ संस्कारों के मुताबिक प्रकृति को सुरक्षित रखते हुए प्रगति की। लेकिन कई देशों ने Environment को नुकसान पहुंचाते हुए अपना विकास किया। आज क्लाइमेट चेंज की सबसे बड़ी कीमत, ग्लोबल साउथ के देशों को चुकानी पड़ रही है। इस असंतुलन से दुनिया को निकालना बहुत आवश्यक है।

साथियों,

भारत हो, गयाना हो, हमारी भी विकास की आकांक्षाएं हैं, हमारे सामने अपने लोगों के लिए बेहतर जीवन देने के सपने हैं। इसके लिए ग्लोबल साउथ की एकजुट आवाज़ बहुत ज़रूरी है। ये समय ग्लोबल साउथ के देशों की Awakening का समय है। ये समय हमें एक Opportunity दे रहा है कि हम एक साथ मिलकर एक नया ग्लोबल ऑर्डर बनाएं। और मैं इसमें गयाना की,आप सभी जनप्रतिनिधियों की भी बड़ी भूमिका देख रहा हूं।

साथियों,

यहां अनेक women members मौजूद हैं। दुनिया के फ्यूचर को, फ्यूचर ग्रोथ को, प्रभावित करने वाला एक बहुत बड़ा फैक्टर दुनिया की आधी आबादी है। बीती सदियों में महिलाओं को Global growth में कंट्रीब्यूट करने का पूरा मौका नहीं मिल पाया। इसके कई कारण रहे हैं। ये किसी एक देश की नहीं,सिर्फ ग्लोबल साउथ की नहीं,बल्कि ये पूरी दुनिया की कहानी है।
लेकिन 21st सेंचुरी में, global prosperity सुनिश्चित करने में महिलाओं की बहुत बड़ी भूमिका होने वाली है। इसलिए, अपनी G-20 प्रेसीडेंसी के दौरान, भारत ने Women Led Development को एक बड़ा एजेंडा बनाया था।

साथियों,

भारत में हमने हर सेक्टर में, हर स्तर पर, लीडरशिप की भूमिका देने का एक बड़ा अभियान चलाया है। भारत में हर सेक्टर में आज महिलाएं आगे आ रही हैं। पूरी दुनिया में जितने पायलट्स हैं, उनमें से सिर्फ 5 परसेंट महिलाएं हैं। जबकि भारत में जितने पायलट्स हैं, उनमें से 15 परसेंट महिलाएं हैं। भारत में बड़ी संख्या में फाइटर पायलट्स महिलाएं हैं। दुनिया के विकसित देशों में भी साइंस, टेक्नॉलॉजी, इंजीनियरिंग, मैथ्स यानि STEM graduates में 30-35 परसेंट ही women हैं। भारत में ये संख्या फोर्टी परसेंट से भी ऊपर पहुंच चुकी है। आज भारत के बड़े-बड़े स्पेस मिशन की कमान महिला वैज्ञानिक संभाल रही हैं। आपको ये जानकर भी खुशी होगी कि भारत ने अपनी पार्लियामेंट में महिलाओं को रिजर्वेशन देने का भी कानून पास किया है। आज भारत में डेमोक्रेटिक गवर्नेंस के अलग-अलग लेवल्स पर महिलाओं का प्रतिनिधित्व है। हमारे यहां लोकल लेवल पर पंचायती राज है, लोकल बॉड़ीज़ हैं। हमारे पंचायती राज सिस्टम में 14 लाख से ज्यादा यानि One point four five मिलियन Elected Representatives, महिलाएं हैं। आप कल्पना कर सकते हैं, गयाना की कुल आबादी से भी करीब-करीब दोगुनी आबादी में हमारे यहां महिलाएं लोकल गवर्नेंट को री-प्रजेंट कर रही हैं।

साथियों,

गयाना Latin America के विशाल महाद्वीप का Gateway है। आप भारत और इस विशाल महाद्वीप के बीच अवसरों और संभावनाओं का एक ब्रिज बन सकते हैं। हम एक साथ मिलकर, भारत और Caricom की Partnership को और बेहतर बना सकते हैं। कल ही गयाना में India-Caricom Summit का आयोजन हुआ है। हमने अपनी साझेदारी के हर पहलू को और मजबूत करने का फैसला लिया है।

साथियों,

गयाना के विकास के लिए भी भारत हर संभव सहयोग दे रहा है। यहां के इंफ्रास्ट्रक्चर में निवेश हो, यहां की कैपेसिटी बिल्डिंग में निवेश हो भारत और गयाना मिलकर काम कर रहे हैं। भारत द्वारा दी गई ferry हो, एयरक्राफ्ट हों, ये आज गयाना के बहुत काम आ रहे हैं। रीन्युएबल एनर्जी के सेक्टर में, सोलर पावर के क्षेत्र में भी भारत बड़ी मदद कर रहा है। आपने t-20 क्रिकेट वर्ल्ड कप का शानदार आयोजन किया है। भारत को खुशी है कि स्टेडियम के निर्माण में हम भी सहयोग दे पाए।

साथियों,

डवलपमेंट से जुड़ी हमारी ये पार्टनरशिप अब नए दौर में प्रवेश कर रही है। भारत की Energy डिमांड तेज़ी से बढ़ रही हैं, और भारत अपने Sources को Diversify भी कर रहा है। इसमें गयाना को हम एक महत्वपूर्ण Energy Source के रूप में देख रहे हैं। हमारे Businesses, गयाना में और अधिक Invest करें, इसके लिए भी हम निरंतर प्रयास कर रहे हैं।

साथियों,

आप सभी ये भी जानते हैं, भारत के पास एक बहुत बड़ी Youth Capital है। भारत में Quality Education और Skill Development Ecosystem है। भारत को, गयाना के ज्यादा से ज्यादा Students को Host करने में खुशी होगी। मैं आज गयाना की संसद के माध्यम से,गयाना के युवाओं को, भारतीय इनोवेटर्स और वैज्ञानिकों के साथ मिलकर काम करने के लिए भी आमंत्रित करता हूँ। Collaborate Globally And Act Locally, हम अपने युवाओं को इसके लिए Inspire कर सकते हैं। हम Creative Collaboration के जरिए Global Challenges के Solutions ढूंढ सकते हैं।

साथियों,

गयाना के महान सपूत श्री छेदी जगन ने कहा था, हमें अतीत से सबक लेते हुए अपना वर्तमान सुधारना होगा और भविष्य की मजबूत नींव तैयार करनी होगी। हम दोनों देशों का साझा अतीत, हमारे सबक,हमारा वर्तमान, हमें जरूर उज्जवल भविष्य की तरफ ले जाएंगे। इन्हीं शब्दों के साथ मैं अपनी बात समाप्त करता हूं, मैं आप सभी को भारत आने के लिए भी निमंत्रित करूंगा, मुझे गयाना के ज्यादा से ज्यादा जनप्रतिनिधियों का भारत में स्वागत करते हुए खुशी होगी। मैं एक बार फिर गयाना की संसद का, आप सभी जनप्रतिनिधियों का, बहुत-बहुत आभार, बहुत बहुत धन्यवाद।