আমার প্রিয় বন্ধু নেপালের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহামান্য কে পি শর্মা ওলিজী, উভয় দেশের প্রবীণ মন্ত্রী এবং আধিকারিকগণ,
নমস্কার।
সবার আগে আমি নিজের পক্ষ থেকে এবং সমস্ত ভারতবাসীর পক্ষ থেকে ওলিজী এবং আমাদের সকল নেপালী বন্ধুদের নববর্ষ ২০২০-র শুভেচ্ছা জানাই। এটা শুধু নতুন বছর নয়, একটি নতুন দশকও শুরু হল। আমি কামনা করি, এই নতুন দশক আপনাদের সবার জন্যে ভাল স্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু, প্রগতি, প্রসন্নতা এবং শান্তি নিয়ে আসুক।
গত সপ্তাহে উভয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পৌষ সংক্রান্তি উৎসব নানা রূপ রং এবং আনন্দ উল্লাসের সঙ্গে পালন করা হয়েছে। এই উৎসব উপলক্ষে আমি আপনাদের সবাইকে শুভেচ্ছা জানাতে চাই।
মহা মান্যবর,
এই নতুন বছর ও নতুন দশকের গোড়াতেই আমরা এই শুভকাজে একসঙ্গে মিলিত হয়েছি। এটা অত্যন্ত আনন্দের কথা।
গত মাসে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার আমরা ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে উভয় দেশের মধ্যে মিলিত প্রকল্পের উদ্বোধন করছি। এটি ভারত – নেপাল সম্পর্কের বিস্তার এবং দ্রুত উন্নয়নের প্রতীক।
বন্ধুগণ,
নেপালের চতুর্মুখী উন্নয়নে, নেপালের অগ্রাধিকারগুলি অনুসারে ভারত এক বিশ্বস্ত অংশীদারের ভূমিকা পালন করে আসছে।
আমার সরকারের অগ্রাধিকার হল, ‘প্রতিবেশী সর্বাগ্রে’। আর এই নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল, সীমান্তের ওপারের মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি।
আর ভারত ও নেপালের মধ্যে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে এই অগ্রাধিকার আরও প্রাধান্য পায়। কারণ আমাদের মধ্যে সম্পর্ক নিছকই প্রতিবেশীর সঙ্গে প্রতিবেশীর সম্পর্ক নয়, ইতিহাস এবং ভূগোল আমাদের প্রকৃতি, পরিবার, ভাষা, সংস্কৃতি, প্রগতি এবং আরও কত না সম্পর্কের সুতো দিয়ে জুড়েছে!
সেজন্যে, আমাদের দুই দেশের মধ্যে ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থা আমাদের জীবনকে আরও নিবিড়ভাবে যুক্ত করে, আমাদের হৃদয়ের সঙ্গে হৃদয়ের মিলনের নতুন নতুন পথ খোলে।
এই যোগাযোগ ব্যবস্থা শুধু আমাদের দুই দেশ নয়, সমগ্র অঞ্চলের উন্নয়নে একটি অনুঘটকের ভূমিকা পালন করে। সমস্ত প্রতিবেশী দেশের বন্ধুদের যাতায়াতকে সহজ ও সুগম করে তুলতে, প্রতিবেশি দেশগুলির মধ্যে পারস্পরিক বাণিজ্যিক লেনদেন, সংস্কৃতি ও শিক্ষা সংক্রান্ত আদান-প্রদানকে আরও সুগম করতে ভারত দায়বদ্ধ।
ভারত এবং নেপাল অনেকগুলি সীমান্ত অতিক্রমকারী যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন – সড়কপথ, রেলপথ এবং ট্র্যান্সমিশন লাইন প্রকল্পে একসঙ্গে কাজ করছে। উভয় দেশের সীমান্তে বিশেষ বিশেষ স্থানে ইন্টিগ্রেটেড চেক পোস্টগুলি আমাদের পারস্পরিক বাণিজ্যিক লেনদেন ও পর্যটকদের যাতায়াতকে সুবিধাজনক করে তুলছে।
মহামান্যবর,
প্রথম পর্যায়ে আমরা বীরগঞ্জ এবং বিরাটনগরে ইন্টিগ্রেটেড চেক পোস্ট উন্নয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমরা ২০১৮ সালেই বীরগঞ্জে ইন্টিগ্রেটেড চেক পোস্ট উদ্বোধন করেছি।
এবার বিরাটনগরেও ইন্টিগ্রেটেড চেক পোস্টগুলি চালু করতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। ভারতের দিকে রক্সৌল এবং জোগবনীতে আগে থেকেই এই পরিষেবা চালু রয়েছে।
আমার পূর্ণ বিশ্বাস যে আগামী বছরগুলিতে আমরা এরকম আরও অনেক আধুনিক পরিষেবা বিকশিত করে তুলতে পারবো।
মহামান্যবর,
২০১৫-র ভূমিকম্প একটি ভয়ানক প্রাকৃতিক বিপর্যয় ছিল। এ ধরণের প্রাকৃতিক বিপর্যয় মানুষের দৃঢ়তা এবং সিদ্ধান্তগ্রহণ ক্ষমতার পরীক্ষা নেয়। প্রত্যেক ভারতীয় গর্বের সঙ্গে বলতে পারে যে আমাদের নেপালী ভাই ও বোনেরা অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে এই বিপর্যয়ের মোকাবিলা করেছে।
ত্রাণ ও উদ্ধারের ক্ষেত্রে সবার আগে ঝাঁপিয়ে পড়ার ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালনের পর পুনর্নিমাণের সময়ও ভারতীয়রা নেপালী বন্ধুদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে। নিকটতম প্রতিবেশী এবং বন্ধুদেশ হিসেবে এটা আমাদের কর্তব্য ছিল।
সেজন্যে, গোর্খা এবং নুওয়াকোট জেলায় আবাসন পুনর্নিমানের অগ্রগতি দেখে আমি অত্যন্ত আনন্দ পেয়েছি। আমরা বাড়িগুলি আগের থেকে ভাল উপাদান দিয়ে ভূমিকম্প নিরোধী পদ্ধতিতে টেকসই করে তোলার চেষ্টা করেছি।
কোয়ালিশন ফর ডিসাস্টার রেজিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার স্থাপনের ক্ষেত্রে ভারতের উদ্দেশ্য উন্নত পরিকাঠামো ব্যবহারের মাধ্যমে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের প্রভাব হ্রাস করা।
এটা অত্যন্ত আনন্দের বিষয় যে ভারত – নেপাল সহযোগিতা প্রকল্পের অন্তর্গত পঞ্চাশ হাজারের মধ্যে পয়তাল্লিশ হাজার বাড়ির নির্মাণকার্য ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ হয়েছে। আশা করি, অদূর ভবিষ্যতেই বাকি বাড়িগুলির নির্মাণকার্য সম্পূর্ণ হবে। আর অতি শীঘ্রই এই বাড়িগুলি নেপালী ভাই ও বোনেদের সমর্পণ করা হবে।
মহামান্যবর,
আপনাদের সহযোগিতায় বিগত কয়েক বছরে ভারত-নেপাল পারস্পরিক সম্পর্কে অভূতপূর্ব প্রগতি পরিলক্ষিত হয়েছে। আমাদের সহযোগিতা আর উন্নয়নের অংশীদারিত্ব দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। পাশাপাশি আমরা আরও কয়েকটি নতুন ক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছি।
আমি কামনা করি যে নতুন বছরে আপনাদের সহযোগিতা ও সমর্থনে আমরা পারস্পরিক সম্পর্ককে আরও নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাব। আর এই দশক ভারত- নেপাল সম্পর্কের সোনালী দশকে পরিণত হবে।
আরেকবার আপনাদের সুস্বাস্থ্য ও সকল প্রকার সাফল্যের জন্য শুভেচ্ছা জানাই। আর এই কর্মসূচিতে ভিডিও মাধ্যমে যুক্ত হওয়ার জন্যে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ জানাই।
অন্ত মা, তপাই হরু সবৈ লাই ধেরৈ শুভকামনা দিঞ্ছু।
অবশেষে, আপনাদের সকলকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
নমস্কার।