পরম শ্রদ্ধেয়, আমার বন্ধু রাষ্ট্রপতি সোলিহ,
ভদ্র মহিলা ও ভদ্র মহোদয়গণ,
আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী রূপে আমার দ্বিতীয় কার্যকালে প্রথম বিদেশ সফরে আপনাদের সুন্দর দেশ মালদ্বীপে আসার সৌভাগ্য হয়েছে।
এটা আরও খুশির কথা যে, আপনাদের মতো ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সঙ্গে আমার আরেকবার সাক্ষাতের সুযোগ হয়েছে।
এই সুযোগ করে দেবার জন্য আর আপনাদের অসাধারণ অতিথি সৎকারের জন্য আমার ও আমাদের সফরকারী দলের পক্ষ থেকে আপনাকে এবং মালদ্বীপ সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
আমাদের উভয় দেশেই কয়েকদিন আগে অত্যন্ত উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে ঈদ উৎসব পালন করা হয়েছে।
এই উৎসবের আলো আমাদের উভয় দেশের জনগণের জীবনকে সর্বদা আলোকময় করে রাখুক – এই শুভ কামনা জানাই।
পরম শ্রদ্ধেয়, আজ আমাকে মালদ্বীপের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে আপনারা শুধু আমাকে নয়, সমগ্র ভারতকে একটি নতুন গৌরব প্রদান করেছেন। এই ‘নিশান ইজ্জুদ্দিন’ সম্মান আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দ ও গর্বের বিষয়। এটি আমাদের উভয় দেশের মৈত্রী ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককেও সম্মানিত করেছে।
আমি অত্যন্ত বিনম্রতার সঙ্গে ও কৃতজ্ঞচিত্তে সমস্ত ভারতবাসীর পক্ষ থেকে এই সম্মান গ্রহণ করেছি।
ভারত মহাসাগরের ঊর্মিমালা হাজার হাজার বছর ধরে উভয় দেশকে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কের বন্ধনে বেঁধে রেখেছে।
এই অটুট বন্ধুত্ব কঠিন সময়েও আমাদের পথ-প্রদর্শকের ভূমিকা পালন করেছে।
১৯৮৮ সালে বহিঃশত্রুর আক্রমণ, ২০০৪ সালে সুনামির প্রলয়ঙ্করী বিপর্যয় কিংবা সম্প্রতি পানীয় জলের সংকটের সময়ে ভারতই প্রথম সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আর সর্বদাই আমরা এভাবে আপনাদের পাশে থাকব।
বন্ধুগণ,
ভারতের সাধারণ নির্বাচন এবং মালদ্বীপে রাষ্ট্রপতি ও মজলিশ নির্বাচনের জনাদেশ থেকে স্পষ্ট যে, আমাদের উভয় দেশের জনগণ স্থিরতা ও উন্নয়ন চান। এক্ষেত্রে জনকেন্দ্রিক ও সমন্বয়-ধর্মী উন্নয়ন ও সুশাসনের জন্য আমাদের দায়িত্ব আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
আমি একটু আগেই রাষ্ট্রপতি সোলিহ-র সঙ্গে বিস্তারিত ও অত্যন্ত কার্যকরি আলোচনা করেছি। আমাদের পারস্পরিক হিতসাধনে ক্ষেত্রীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়গুলি নিয়ে যেমন আলোচনা হয়েছে, তেমনই পারস্পরিক দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা কিভাবে আরও বিস্তারিত করা যায়, তা খতিয়ে দেখেছি। আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতার ভবিষ্যৎ লক্ষ্য নিয়ে আমাদের মধ্যে পূর্ণ সহমত রয়েছে।
রাষ্ট্রপতি সোলিহ, আপনি এই গুরু দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার গতি ও লক্ষ্যে মৌলিক পরিবর্তন এসেছে। ২০১৮সালের ডিসেম্বরে ভারত সফরে এসে আপনি আমাদের সঙ্গে যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, আমরা যেসব চুক্তি সম্পাদন করেছিলাম, সেগুলি সময়-নির্দিষ্টভাবে বাস্তবায়িত করা হচ্ছে।
বন্ধুগণ,
রাষ্ট্রপতি সোলিহ’র ভারত সফরের সময়ে আমরা যে ১.৪ বিলিয়ন ডলার আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলাম, তার মাধ্যমে মালদ্বীপের তৎকালীন আর্থিক প্রয়োজন মেটানো সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি, ‘সোস্যাল ইমপ্যাক্ট’ – এর বেশ কিছু প্রকল্প চালু করা হয়েছে। আর ৮০০ মিলিয়ন ডলারের ‘লাইন অফ ক্রেডিট’ – এর অন্তর্গত উন্নয়ন কর্মসূচিগুলির জন্য নতুন পথ খুলেছে।
ভারত ও মালদ্বীপের মধ্যে উন্নয়ন সহযোগিতা আরও শক্তিশালী করার জন্য আমরা মালদ্বীপের সাধারণ মানুষের উন্নয়ন-কেন্দ্রীক বিভিন্ন প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দিয়েছি।
আজ আমাদের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা মালদ্বীপের সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের প্রতিটি ক্ষেত্রকে স্পর্শ করছে।
বিভিন্ন দ্বীপে জল সরবরাহ এবং পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা;
ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র শিল্প ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত বিনিয়োগের ব্যবস্থা;
সমুদ্র বন্দরগুলির পরিকাঠামো উন্নয়ন;
কনফারেন্স এবং কম্যুনিটি সেন্টার নির্মাণ;
ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণ;
জরুরিকালীন চিকিৎসা পরিষেবা;
অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা;
তট সুরক্ষা সুনিশ্চিত করা;
আউটডোর ফিটনেস উপকরণের ব্যবস্থা;
ড্রাগ ডিটক্স সেন্টার;
স্টুডেন্ট ফেরী;
কৃষি ও মৎস্যপালন;
পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি; এবং
পর্যটন।
ভারতীয় সহযোগিতায় গড়ে ওঠা এমনই অনেক প্রকল্প মালদ্বীপের জনগণকে সরাসরি উপকৃত করবে।
আমরা আড্ডু-তে পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং ঐতিহাসিক ‘ফ্রাইডে মস্ক’ – এর সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য সহমত হয়েছি।
উভয় দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক নিবিড়তর করতে আমরা ভারতের কোচি এবং মালদ্বীপের কুলধুফুসি ও মালের মধ্যে নৌকা পরিষেবা চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মালদ্বীপে রুপে কার্ড চালু করার মাধ্যমে ভারতীয় পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, সেজন্য আমরা শীঘ্রই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।
নিরাপত্তা সহযোগিতাকে আরও মজবুত করতে আমরা আলোচনা করেছি। তারপর আজ আমরা সংযুক্তভাবে মালদ্বীপ ডিফেন্স ফোর্সেস – এর কম্পোসিট ট্রেনিং সেন্টার এবং তট পর্যবেক্ষণের জন্য র্যাডার প্রণালীর উদ্বোধন করেছি। এই প্রণালী মালদ্বীপের সমুদ্র নিরাপত্তাকে আরও শক্তিশালী করবে।
ভারত, মালদ্বীপের সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ককে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়। আমরা পরস্পরের সঙ্গে একটি নিবিড় ও শক্তিশালী সম্পর্ক চাই, যা একটি সমৃদ্ধ, গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ মালদ্বীপ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
আমি আরেকবার বলতে চাই যে, ভারত সর্বদাই মালদ্বীপকে সমস্ত রকম সম্ভাব্য সহযোগিতার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
আমি আরেকবার মাননীয় রাষ্ট্রপতি ও মালদ্বীপের জনগণকে উষ্ণ আতিথেয়তার জন্য ধন্যবাদ জানাই।
ভারত – মালদ্বীপ বন্ধুত্ব অমর হোক।
দিবেহী রাজ্জে আ ইন্ডিয়াগে রাহোমেথেরীখন অবদহ,
ধন্যবাদ।