প্রধানমন্ত্রীর প্রধান সচিব ডঃ পি কে মিশ্র ২৭শে সেপ্টেম্বর জাতীয় বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এনডিএমএ) – এর পঞ্চদশ প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে নতুন দিল্লিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন।
তাঁর ভাষণে ডঃ মিশ্র এনডিএমএ – এর সঙ্গে তাঁর যোগসূত্রের কথা উল্লেখ করেন। বিপর্যয় ব্যবস্থাপনায় এনডিএমএ – র বিভিন্ন উদ্যোগের বিষয়ে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। প্রতিটি স্তরে আমাদের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে যে কোনও বিপর্যয় হ্রাসে বিভিন্ন অংশীদারদের সঙ্গে এনডিএমএ – এর সমন্বয়ের ভূমিকার তিনি প্রশংসা করেন।
ডঃ পি কে মিশ্র বিপর্যয় মোকাবিলার ক্ষেত্রে ভিন্নভাবে সক্ষমদের সহায়তার জন্য একটি রূপরেখা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর সবকা সাথ সবকা বিকাশ পরিকল্পনার অঙ্গ হিসাবে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিপর্যয়ের দরুণ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্তদের পরিস্থিতি মোকাবিলায় নানারকমের ঝুঁকি এড়াতে তিনি এনডিএমএ-কে বিভিন্ন পন্থা-পদ্ধতি তৈরি করার লক্ষ্যে নিরন্তর উদ্যোগী হওয়ার আবেদন জানান। বিপর্যয়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের কল্যাণেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই বছরের প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপনের মূল বিষয় ‘অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা’। তিনি বলেন, সম্প্রতি আমাজন অরণ্যে দাবানল এবং সুরাট অগ্নিকাণ্ডের প্রেক্ষিতে সারা বিশ্ব এই বিষয়টির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। শহরাঞ্চলে পরিকল্পনার ক্ষেত্রে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা যথাযথ হওয়া উচিৎ বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, আবাসিক, বাণিজ্যিক, গ্রাম, শহর, দাবানল, শিল্প প্রতিষ্ঠানে আগুন – প্রতিটি ক্ষেত্রে আগুন নেভানোর কাজে বিভিন্ন রকমের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। দমকল বাহিনীকে এর জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রধান সচিব মনে করেন, সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো, শপিং কমপ্লেক্স, বাণিজ্যিক ভবন এবং সরকারি ভবনগুলিকে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার ব্যাপারে নিয়মিত পরীক্ষা করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে অগ্নিকাণ্ডের আগে যথাযথ ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
সুরাটের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সেই লক্ষ্যে পুরসভাগুলির বিভিন্ন আইন মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। সুরাটে একটি বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সের মধ্যে কোচিং সেন্টারে অগ্নিকাণ্ডে বহু ছাত্রছাত্রী প্রাণ হারিয়েছিলেন।
অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থাপনায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং যন্ত্রপাতির ব্যবহার মুম্বাই শহরে করা হয়। ডঃ পি কে মিশ্র এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। মুম্বাই শহরে ড্রোন, হস্তচালিত লেজার ইনফ্রারেড ক্যামেরা আগুন নেভানোর সময় রিমোর্ট কন্ট্রোল চালিত রোবটের ব্যবহার করা হয়। তিনি অন্যান্য শহরগুলিকে মুম্বাই মডেল মেনে চলার আহ্বান জানান।
অগ্নিকাণ্ডের পর দ্রুত ব্যবস্থা নিতে মুম্বাই, হায়দ্রাবাদ এবং গুরগাঁও – এর মতো শহরে ভ্রাম্যমান দমকল বাহিনী ঘুরে বেড়ায়। এর ফলে, আগুন লাগলেই দ্রুত পরিস্থিতির মোকাবিলা করা যায়। ডঃ মিশ্র এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, স্থানীয় প্রশাসনগুলি দমকল বাহিনীর সঙ্গে আগুন নেভানোর কাজে একযোগে কাজ করা উচিৎ।
ডঃ মিশ্র এ প্রসঙ্গে পশ্চিমী দুনিয়ার উদাহরণ দিয়ে বলেন, যে কোনও বিপর্যয় অথবা আপৎকালীন পরিস্থিতিতে দমকল বাহিনীকে পাঠানো হয়ে থাকে। তাঁর মতে, এ ধরনের বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে দমকল বাহিনী যেন প্রথম ব্যবস্থা নিতে পারে, সেই লক্ষ্যে দমকল পরিষেবার আধুনিকীকরণের প্রয়োজন। এর জন্য নিয়মিতভাবে মকড্রিল, সচেতনতা কর্মসূচি নিতে হবে।
তিনি ২০১২ সালে দমকল বাহিনীর জন্য যে জাতীয় নির্দেশিকা প্রকাশিত হয়েছিল, সেটি সংস্কারের জন্য এনডিএমএ – এর কাছে প্রস্তাব দেন।
সবশেষে তিনি বলেন, ‘সকলের জন্য অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজ্যের বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এবং দমকল বাহিনীর প্রতিনিধিরা ছাড়াও এনডিএমএ, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলির শীর্ষ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।