প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভিডিও বার্তার মাধ্যমে কৌশল দীক্ষান্ত সমারোহ ২০২৩-এ ভাষণ দিয়েছেন।
এই উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষতা বিকাশের এই উৎসব অনন্য, আজ দেশজুড়ে দক্ষতা বিকাশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলির যৌথ দীক্ষান্ত অনুষ্ঠান আয়োজনের উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তিনি বলেন, কৌশল দীক্ষান্ত সমারোহের মাধ্যমে বর্তমান ভারতের অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রগুলি প্রতিফলিত হচ্ছে। প্রযুক্তির মাধ্যমে হাজার হাজার যুবক যুবতী আজকের এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন।
শ্রী মোদী যুবশক্তির গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে বলেন, যে কোনো দেশের শক্তি তার প্রাকৃতিক বা খনিজ সম্পদ অথবা সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে নিহিত থাকে। দেশ বর্তমানে শক্তিশালী যুবশক্তির সাহায্যে উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে, আর তাই দেশের সম্পদ যথাযথভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমান সময়কালে সমগ্র ব্যবস্থাপনার অভূতপূর্ব উন্নতির মূল কারণ দেশের যুবশক্তির ক্ষমতায়নকে নিশ্চিত করা। “দেশে দ্বিমুখী নীতি গ্রহণ করা হয়েছে।” তিনি এর ব্যাখ্যা করে বলেন, দক্ষতা এবং শিক্ষার মাধ্যমে নতুন নতুন সুযোগ যাতে যুব সম্প্রদায় গ্রহণ করতে পারে, ভারত সেই উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রায় চার দশক পর দেশে নতুন জাতীয় শিক্ষা নীতি কার্যকর হয়েছে। সরকার বিপুল সংখ্যায় নতুন নতুন মেডিকেল কলেজ এবং আইআইটি, আইআইএম ও আইটিআই-এর মতো দক্ষতা বিকাশ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে। প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনায় লক্ষ লক্ষ যুবক-যুবতী প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন। অন্যদিকে চিরায়ত ক্ষেত্রগুলিকে শক্তিশালী করে তুলে কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও নতুন নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে এবং শিল্পোদ্যোগকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। রপ্তানী বাণিজ্য, মোবাইল, বিভিন্ন বৈদ্যুতিন সামগ্রী, পরিষেবা এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রপ্তানীতে ভারত নতুন রেকর্ড গড়েছে। একইসঙ্গে মহাকাশ, স্টার্টআপ, ড্রোন, অ্যানিমেশন, বৈদ্যুতিক যানবাহন, সেমি কন্ডাক্টরের মতো ক্ষেত্রে যুবক-যুবতীদের জন্য বিপুল পরিমানে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজ সারা বিশ্ব মনে করে এই শতাব্দী ভারতের হতে চলেছে।” ভারতের যুব সম্প্রদায়ের কারণেই এই আস্থা অর্জিত হয়েছে। আজ বিশ্বের বহু দেশে প্রবীন নাগরিকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেক্ষেত্রে ভারতে প্রতিদিন যুবক-যুবতীর সংখ্যা বাড়ছে। “দেশের সামনে এক বিরাট সুযোগ তৈরি হয়েছে।” বর্তমানে সারা বিশ্ব ভারতের দক্ষ যুব সম্প্রদায়ের উপর আস্থাশীল। জি২০ শিখর সম্মেলনে আন্তর্জাতিক স্তরে দক্ষতা নির্ধারণ সংক্রান্ত যে প্রস্তাব ভারত রেখেছে, তা গৃহীত হয়েছে। এরফলে আগামীদিনে যুব সম্প্রদায়ের কাছে নতুন নতুন সুযোগ তৈরি হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কোন সুযোগকে অবহেলা করা উচিত নয়, এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি। পূর্ববর্তী সরকারগুলি দক্ষতা বিকাশকে অবহেলা করেছে। “আমাদের সরকার দক্ষতার গুরুত্ব উপলব্ধি করেছে, আর তাই এরজন্য পৃথক একটি মন্ত্রক গড়ে তোলা হয়েছে, আলাদা বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে।” ভারত তার যুব সম্প্রদায়ের দক্ষতা বিকাশের জন্য আগের থেকে আরও বেশি বিনিয়োগ করছে। এই প্রসঙ্গে তিনি প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনার উল্লেখ করেন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে তৃণমূল স্তরে যুব সম্প্রদায়কে আরও শক্তিশালী করে তোলা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই এই প্রকল্পে দেড় কোটি যুবক-যুবতী প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এখন শিল্প তালুকগুলির কাছে নতুন নতুন দক্ষতা বিকাশ কেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে। এরফলে শিল্পসংস্থাগুলির চাহিদা পূরণ হবে এবং দক্ষ যুবক-যুবতীরাও আরও ভালো কাজের সুযোগ পাবেন।
দক্ষতা, দক্ষতার মানোন্নয়ন এবং নতুন নতুন ক্ষেত্রে দক্ষ হয়ে ওঠার গুরুত্বের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, বর্তমান সময়কালের চাহিদা অনুসারে কাজের ধারা বদলাচ্ছে। আর তাই দক্ষতার মানোন্নয়ন ঘটানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। শিল্পসংস্থাগুলির চাহিদা অনুসারে গবেষণা ও দক্ষতা বিকাশ প্রতিষ্ঠানগুলিকে গড়ে তুলতে হবে। দক্ষতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ৯ বছরে প্রায় ৫ হাজার নতুন আইটিআই গড়ে তোলা হয়েছে। ৪ লক্ষেরও বেশি আসনে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি করা হচ্ছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উন্নত মানের প্রশিক্ষণের জন্য সেগুলিকে আদর্শ আইটিআই-এ উন্নীত করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “ভারতে দক্ষতা বিকাশের সুযোগ ক্রমবর্ধমান। আমরা যন্ত্রবিদ, প্রযুক্তিবিদ, প্রযুক্তি অথবা অন্য কোনো পরিষেবার মধ্যে নিজেদের আবদ্ধ করে রাখছি না।” এখন মহিলা পরিচালিত স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা করা হচ্ছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিশ্বকর্মাদের গুরুত্বের কথা তুলে ধরে শ্রী মোদী বলেন, আজ পিএম বিশ্বকর্মা যোজনার মাধ্যমে বিশ্বকর্মারা তাঁদের চিরায়ত দক্ষতাকে আধুনিক প্রযুক্তি এবং সরঞ্জামের সাহায্যে আরও শক্তিশালী করে তুলছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের অর্থনীতির সম্প্রসারণের ফলে দেশের যুব সম্প্রদায়ের সামনে নতুন নতুন সুযোগ গড়ে উঠছে। ভারতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। সম্প্রতি এক সমীক্ষায় দেখা গেছে গত ৬ বছরে ভারতে বেকারত্বের হার সর্বনিম্ন। দেশের গ্রাম ও শহরাঞ্চলে বেকারত্ব দ্রুতহারে হ্রাস পাচ্ছে। শ্রী মোদী বলেন, শহরাঞ্চলের মতো গ্রামাঞ্চলেও উন্নয়নের সুফল সমানভাবে পৌঁছানো জরুরি। ফলস্বরূপ গ্রাম এবং শহরে নতুন নতুন সুযোগ তৈরি হবে। আজ ভারতের শ্রমশক্তিতে মহিলাদের অন্তর্ভুক্তির হার অভূতপূর্ব হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত কয়েক বছরে মহিলাদের ক্ষমতায়নের জন্য গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্প এবং কর্মসূচীর ইতিবাচক প্রভাবের কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামীদিনে ভারত দ্রুত উন্নয়নশীল অর্থনীতি হিসেবে তার অবস্থান বজায় রাখবে। ভারতকে বিশ্বের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক মূদ্রা তহবিল মনে করে আগামী ৩-৪ বছরের মধ্যে বিশ্বে প্রথম তিনটি অর্থনৈতিক শক্তির মধ্যে ভারত স্থান করে নেবে। ফলস্বরূপ দেশে নতুন নতুন কর্মসংস্থান এবং স্বনির্ভর হয়ে ওঠার সুযোগ তৈরি হবে।
তাঁর ভাষণের শেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতকে আন্তর্জাতিক স্তরে দক্ষ মানব সম্পদের সর্ববৃহৎ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। “শিক্ষালাভ, শিক্ষাদান এবং সামনের দিকে এগিয়ে চলার এই ধারা আমাদের বজায় রাখতে হবে। এর মাধ্যমে জীবনের প্রতিটি স্তরে আপনারা সফল হবেন।”