প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী তেশরা অক্টোবর সকাল ১০টার সময় রোটাং-এ অটল সুড়ঙ্গের উদ্বোধন করবেন।
মহাসড়কের উপর নির্মিত বিশ্বের দীর্ঘতম এই সুড়ঙ্গ – অটল সুড়ঙ্গ। মানালীর সঙ্গে লাহুল-স্পিতি উপত্যকার সারা বছর ধরে যোগাযোগ নিশ্চিত করার জন্য ৯.০২ কিলোমিটার লম্বা এই সুড়ঙ্গ তৈরি করা হয়েছে। এর আগে প্রতি বছর প্রায় ছয় মাস প্রবল তুষারপাতের কারণে এই উপত্যকা বিচ্ছিন্ন থাকত।
এই সুড়ঙ্গটি হিমালয়ের পীর পঞ্জল অঞ্চলে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। সমুদ্রতল থেকে ৩,০০০ মিটার বা ১০,০০০ ফুট উঁচুতে এই সুড়ঙ্গ অবস্থিত।
এই সুড়ঙ্গ মানালী এবং লেহ-এর মধ্যে ৪৬ কিলোমিটার সড়কপথে দূরত্ব কমিয়ে দেবে যার ফলে, ৪-৫ ঘন্টা সময় বাঁচবে।
অটল সুড়ঙ্গের দক্ষিণ প্রান্ত মানালী থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত যা সমুদ্রতল থেকে ৩,০৬০ মিটার উঁচুতে। এই সুড়ঙ্গের উত্তর প্রান্তটি লাহুল উপত্যকার সিসুর তেলিং গ্রামে অবস্থিত, সমুদ্রতল থেকে যা ৩,০৭১ মিটার উঁচুতে।
এই সুড়ঙ্গটি অশ্বক্ষুরাকৃতির। এখানে একটি পাইপের মধ্যে দুই লেনের সড়কপথ তৈরি করেছে। এর উচ্চতা ৫.৫২৫ মিটার।
এই সুড়ঙ্গ ১০.৫ মিটার চওড়া। এখানে ৩.৬X ২.২৫ মিটার অগ্নি প্রতিরোধী আপৎকালীন রাস্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
অটল সুড়ঙ্গ দিয়ে প্রতিদিন ৩,০০০টি গাড়ি এবং ১,৫০০ ট্রাক ঘন্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে যেতে পারবে।
এই সুড়ঙ্গে অত্যাধুনিক ইলেক্ট্রো-মেকানিক্যাল ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যার সাহায্য তীর্যকভাবে বায়ু চলাচল, নজরদারি ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ, সুড়ঙ্গের অভ্যন্তরে কি ঘটছে সে সংক্রান্ত তথ্য প্রাপ্তি, সুপারভাইজারি কন্ট্রোল অ্যান্ড ডেটা অ্যাক্যুইজিশন পদ্ধতিতে অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থাপনা এবং সুড়ঙ্গ আলোকিত করার যথাযথ রাখা হয়েছে।
এই সুড়ঙ্গ নির্মাণের সময় নিরাপত্তার দিকটিতে যথেষ্ট খেয়াল রাখা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল :
(ক) সুড়ঙ্গের দুই প্রান্তে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা হয়েছে।
(খ) প্রতি ১৫০ মিটার অন্তর বিপদকালীন পরিস্থিতিতে টেলিফোনে যোগাযোগ করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
(গ) প্রতি ৬০ মিটার অন্তর অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থাপনা রাখা হয়েছে। একটি করে ফায়ার-হাইড্র্যান্ট রাখা আছে।
(ঘ) প্রতি ২৫০ মিটার অন্তর সিসিটিভি ক্যামেরার সাহায্যে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে সুড়ঙ্গের ভেতর কি ঘটছে তা জানা যাবে।
(ঙ) প্রতি এক কিলোমিটার অন্তর বাতাসের গুণমান নজরদারি করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
(চ) প্রতি ২৫ মিটার অন্তর আপৎকালীন পরিস্থিতিতে বেরোনোর রাস্তার দিক-নির্দেশনা করা আছে।
(ছ) পুরো সুড়ঙ্গ জুড়ে বেতার সম্প্রচার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
(জ) প্রতি ৫০ মিটার অন্তর আগুন লাগলে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
(ঝ) প্রতি ৬০ মিটার অন্তর ক্যামেরা বসানো আছে।
রোটাং পাসের নিচে এই কৌশলগত সুড়ঙ্গ নির্মাণের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত স্বর্গীয় প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী ২০০০ সালের ৩ জুন গ্রহণ করেছিলেন। ২০০২ সালের ২৬ মে প্রস্তাবিত রোটাং সুড়ঙ্গের দক্ষিণ প্রান্তে এর শিলান্যাস করা হয়।
সীমান্ত সড়ক সংগঠন (বিআরও) ভৌগোলিক এবং আবহাওয়া সংক্রান্ত বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের নিরন্তর মোকাবিলা করে এই সুড়ঙ্গ নির্মাণ করেছে। এই সুড়ঙ্গ নির্মাণের সবথেকে কঠিন অংশ ছিল সেরি নালার চ্যুতি অংশের ৫৮৭ মিটার। ২০১৭-র ১৫ অক্টোবর সুড়ঙ্গের দু'প্রান্তের খনন কাজ এক জায়গায় এসে মিলিত হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর পৌরোহিত্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ২০১৯-এর ২৪ ডিসেম্বর এই সুড়ঙ্গের নাম 'অটল সুড়ঙ্গ' করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শ্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর অবদানকে স্বীকৃতি দিতে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
‘অটল সুড়ঙ্গ'-এর দক্ষিণ প্রান্তে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী লাহুল-স্পিতির সিসু-তে এবং সোলাং উপত্যকায় জনসভায় অংশ নেবেন।