আমি ২১ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করবো। আমি হিউস্টনে যাবো, সেখান থেকে নিউ ইয়র্কে গিয়ে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৪ তম অধিবেশনে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে যোগ দেব।
জ্বালানীক্ষেত্রে অগ্রণী সংস্থাগুলির মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিকদের সঙ্গে আমি হিউস্টোনে বৈঠক করবো। আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে জ্বালানীক্ষেত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠছে আর পারস্পরিক ভাবে লাভজনক সহযোগিতার নতুন একটি দিক হিসেবে তা বিবেচিত হচ্ছে।
হিউস্টোনে আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ভারতীয় সম্প্রদায়ের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেব। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁদের সাফল্য, মার্কিন জনজীবনের নানা দিকে তাঁদের অবদান , ভারতের সঙ্গে তাঁদের নিবিড় যোগাযোগ এবং আমাদের দুই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মধ্যে তাঁরা যেভাবে সেতুবন্ধের কাজ করছেন, তা আমাদের কাছে অত্যন্ত গর্বের বিষয়। ভারতীয় হিসেবে আমার কাছে এটি অত্যন্ত আনন্দের এবং সম্মানের যে, মার্কিন রাষ্ট্রপতি মিস্টার ডোনাল্ড ট্রাম্প এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকরবেন এবং ভারতীয় সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন। এই প্রথম ভারতীয় সম্প্রদায়ের কোন অনুষ্ঠানে মার্কিন রাষ্ট্রপতি আমাদের সঙ্গে যোগ দেবেন। যা এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে।
হিউস্টোনে থাকার সময় আমার বিভিন্ন ইন্দো-মার্কিন গোষ্ঠি এবং তাঁদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ হবে।
নিউ ইয়র্কে আমি রাষ্ট্রসংঘের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে যোগ দেব। রাষ্ট্রসংঘের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে, ভারত শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি তার অঙ্গীকার সর্বদা ব্যক্ত করেছে। বিশ্বে বৃহত্তর ক্ষেত্রে সমন্বিত আর্থিক বিকাশ ও উন্নয়নেও আমাদের ভুমিকার কথা তুলে ধরা হবে।
এই বছর, রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনের বিষয় হল “ দারিদ্র্য দূরীকরণ, উন্নতমানের শিক্ষা, জলবায়ুর সমস্যার সমাধানে সক্রিয় বহুস্তরীয় উদ্যোগ”। বিশ্বজুড়ে আর্থিকক্ষেত্রে মন্দা, পৃথিবীর নানা প্রান্তে অশান্তি আর উত্তেজনা, সন্ত্রাসবাদ বৃদ্ধি ও তার বিস্তার, জলবায়ু পরিবর্তন এবং স্থানীয়ভাবে দারিদ্র্যর মতোবিভিন্ন সমস্যা রয়েছে।আর এইসব নানা চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা একযোগে করা হচ্ছে। আমি বহুস্তরীয় সংস্কারব্যবস্থার প্রতি আমাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছি, যা হবে সংবেদনশীল, ফলপ্রসূ এবং সমন্বিত, যেভাবে ভারত অতীত থেকে তার ভূমিকা পালন করে আসছে।
রাষ্ট্রসংঘের অনুষ্ঠানগুলিতে আমি স্থিতিশীল উন্নয়নের লক্ষে আমাদের সাফল্য তুলে ধরব। ২৩শে সেপ্টেম্বর জলবায়ু সংক্রান্ত সম্মেলনে, আমি জলবায়ু পরিবর্তন সমস্যার প্রতিরোধে আন্তর্জাতিকস্তরে যে পরিকল্পনা করা হয়েছে সেই অনুযায়ী ভারত যে সব দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছে সেগুলি জানানোর মাধ্যমে, এই বিষয়ে আমাদের অঙ্গীকার আবারো ব্যক্ত করবো।
রাষ্ট্রসংঘ, সর্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবার উপর যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে, সেখানে আমি আয়ুষ্মান ভারত কর্মসূচী সহ আমাদের নানা উদ্যোগের কথা জানাবো।
আজকের পৃথিবীতে গান্ধীবাদী চিন্তা এবং মূল্যবোধের প্রাসঙ্গিকতার আলোকে, ভারত রাষ্ট্রসংঘে মহাত্মা গান্ধীর সার্ধ জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব সহ অনেক রাষ্ট্রপ্রধানরা এই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। আমরা একসঙ্গে গান্ধীজীকে শ্রদ্ধা জানাবো এবং তাঁর বাণীর গুরুত্ব তুলে ধরবো।
রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠকের ফাঁকে আমি বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ এবং রাষ্ট্রসংঘের নানা সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবো। এই প্রথম ভারত, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলি ও ক্যারিকম গোষ্ঠীর নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় করবে। এর ফলে তাদের সঙ্গে আমাদের সক্রিয় দক্ষিণ দক্ষিণ সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে।
রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের সঙ্গে আমার হিউস্টোনে সাক্ষাতের কয়েকদিনের মধ্যেই নিউ ইয়র্কে দেখা হবে। দুটি দেশ এবং জনগণ আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক থেকে কিভাবে আরো সুবিধে পেতে পারে আমরা তা পর্যালোচনা করবো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের জাতীয় উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ শরীক। শিক্ষা, দক্ষতা, গবেষণা, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন এবং ভারতের আর্থিক বিকাশ ও জাতীয় নিরাপত্তায় একযোগে কাজ করার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্বের প্রাচীন এবং বৃহত্তম গণতন্ত্রের মধ্যে স্বাভাবিক অংশীদারীত্বর ভিত্তি হল পারস্পরিক শ্রদ্ধা, অভিন্ন স্বার্থ এবং পরিপূরক শক্তি। স্থায়ী্ভাবে শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ, স্থিতিশীল এবং সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়ার লক্ষে দুটিদেশ একযোগে কাজ করে যাবে।
নিউ ইয়র্ক সফরের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। ব্লুমবার্গ গ্লোবাল বিজনেস ফোরামের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের উদ্বোধনে আমি ভাষণ দেবার সময় মার্কিন শীর্ষ ব্যবসায়ীদের ভারতের আর্থিক বিকাশ এবং পরিবর্তনে আরো সক্রিয় অংশগ্রহণের আহ্বান জানাবো। বিল এবং মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন আমাকে ২০১৯ সালের‘গ্লোবাল গোলকিপারস গোলস’ পুরষ্কার দেবার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে , তাতে আমি সম্মানিত বোধ করছি।
আমি আশাবাদী আমার এই সফরের মাধ্যমে ভারত যে সম্ভাবনার আদর্শ জায়গা, বিশ্বাসযোগ্য সঙ্গী এবং বিশ্বনেতা ౼ তা প্রতিভাত হবে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরো এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।