মহামান্য রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি এবং আজকের আমাদের সভার অধ্যক্ষ,
অন্যান্য অংশগ্রহণকারী দেশের প্রশাসনিক প্রধান, মহামান্য বন্ধুগণ, আমার সঙ্গী বন্ধুরা,
সবার আগে আমি সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের দক্ষ নেতৃত্বের জন্য এবং কোভিড-১৯ বিশ্বব্যাপী মহামারীর সমস্যা ও বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও এই বৈঠকের আয়োজনের জন্য রাষ্ট্রপতি পুতিনকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাতে চাই। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে আমরা এই কঠিন পরিস্থিতি সত্ত্বেও সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের মাধ্যমে সহযোগিতা এবং সংহতির একটি ব্যাপক ও প্রগতিশীল কর্মধারা নিয়ে এগিয়ে যেতে পেরেছি।
মহামান্যবরগণ,
সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনে ভারতে জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর। আমরা প্রথমবার একটি শীর্ষ সম্মেলন স্তরের বৈঠকে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন কাউন্সিল অফ হেডস অফ গভর্নমেন্টের আয়োজন করতে যাচ্ছি। এই বৈঠকের জন্য একটি ব্যাপক কর্মসূচি তৈরি করা হয়েছে যাতে আর্থিক সহযোগিতার বিষয়গুলিকে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। আমরা স্টার্ট-আপ ইকো-সিস্টেমে আমাদের সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতাকে সকলের কাছে তুলে ধরার জন্য উদ্ভাবন এবং স্টার্ট-আপ নিয়ে স্পেশাল ওয়ার্কিং গ্রুপ স্থাপন করার প্রস্তাব রেখেছি। আমরা পরম্পরাগত ঔষধি নিয়ে গবেষণার জন্য ওয়ার্কিং গ্রুপেরও প্রস্তাব রেখেছি যাতে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের অন্তর্গত দেশগুলিতে যত পারম্পরিক এবং প্রাচীন চিকিৎসার জ্ঞান রয়েছে, সেগুলির সঙ্গে সমকালীন চিকিৎসার মেলবন্ধনে চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা পরস্পরের পরিপূরক হয়ে উঠতে পারি।
মহামান্যগণ,
ভারতের দৃঢ় বিশ্বাস, ইকনমিক মাল্টি-ল্যাটারালিজম এবং ন্যাশনাল ক্যাপাসিটি বিল্ডিং-এর সমাহারে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের সদস্য দেশগুলি বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর ফলে যে আর্থিক লোকসানের সম্মুখীন হয়েছে সেই সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে। আমরা বিশ্বব্যাপী মহামারী পরবর্তী বিশ্বে 'আত্মনির্ভর ভারত'-এর দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে চলেছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই ‘আত্মনির্ভর ভারত’ অভিযান আন্তর্জাতিক অর্থনীতির জন্য একটি ফোর্স মাল্টিপ্লায়ার রূপে প্রমাণিত হবে। আর, সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের অংশীদার দেশগুলির আর্থিক প্রগতিকেও গতি প্রদান করবে।
মহামান্যগণ,
সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের সদস্য দেশগুলির সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের পূর্বজরা এই ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্কের ঐতিহ্যকে তাঁদের অফুরন্ত এবং নিরন্তর সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে জীবন্ত রেখেছেন। ইন্টারন্যাশনাল নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডর, চাবহার সমুদ্র বন্দর, অশগাবাত চুক্তি – এ ধরনের পদক্ষেপ এই দেশগুলির মধ্যে আদান-প্রদান ও যোগাযোগের প্রতি ভারতের মজবুত সঙ্কল্পকে তুলে ধরে। ভারত মনে করে যে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও বেশি নিবিড় করার জন্য, গভীর করার জন্য এটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় যে পরস্পরের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক সংহতিকে সম্মান জানানোর মূল সিদ্ধান্তগুলি নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
মহামান্যগণ,
এবছর রাষ্ট্রসঙ্ঘ তার ৭৫ বছর পূর্ণ করেছে। কিন্তু অনেক সাফল্য সত্ত্বেও রাষ্ট্রসঙ্ঘের মূল লক্ষ্য এখনও অসম্পূর্ণ। বিশ্বব্যাপী মহামারীর অর্থনৈতিক এবং সামাজিক যন্ত্রণার বিরুদ্ধে সংঘর্ষরত বিশ্ববাসীর প্রত্যাশা হল – রাষ্ট্রসঙ্ঘের ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনা উচিৎ।
আমাদের দেশে শাস্ত্রে বলা হয়েছে – “পরিবর্তনমেব স্থিরমস্তি” অর্থাৎ, পরিবর্তনই একমাত্র স্থিরতা। ভারত ২০২১ থেকে রাষ্ট্রসঙ্ঘের সুরক্ষা পরিষদের এক অস্থায়ী সদস্য রূপে অংশগ্রহণ করবে। আমাদের লক্ষ্য থাকবে, আন্তর্জাতিক শাসনবিধিতে সম্ভাব্য পরিবর্তন কিভাবে আনা যায়।
একটি 'রিফর্মড মাল্টি-ল্যাটারালিজম’ যা আজকের আন্তর্জাতিক বাস্তবিকতাকে তুলে ধরে, যা সংশ্লিষ্ট সকলের প্রত্যাশা, সমকালীন সমস্যাগুলির সমাধান, এবং মানবকল্যাণের মতো বিষয়গুলি নিয়ে চর্চা করে। এই প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা আমাদের সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের সদস্য দেশগুলির পূর্ণ সমর্থন পাওয়ার প্রত্যাশা রাখি।
মান্যবরগণ,
"সর্বে ভবন্তু সুখিনঃ সর্বে সন্তু নিরাময়াঃ" অর্থাৎ, সবাই সুখী এবং সবাই রোগমুক্ত থাকুন। এই শান্তির মন্ত্র ভারতের সমস্ত মানবকল্যাণের প্রতি আস্থার প্রতীক। অভূতপূর্ব বিশ্বব্যাপী মহামারীর এই অত্যন্ত কঠিন সময়ে ভারতের ফার্মা শিল্প ১৫০টিরও বেশি দেশে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র পাঠিয়েছে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ ভ্যাক্সিন উৎপাদক দেশ রূপে ভারত তার ভ্যাক্সিন উৎপাদন এবং বিতরণের ক্ষমতার ব্যবহার এই সঙ্কটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে সমগ্র মানবতাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসবে।
মান্যবরগণ,
ভারত শান্তি, নিরাপত্তা এবং সমৃদ্ধিতে দৃঢ় বিশ্বাস রাখে। আর আমরা সর্বদাই সন্ত্রাসবাদ, অবৈধ অস্ত্রশত্রের তস্করি, ড্রাগস এবং মানি লন্ডারিং-এর বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে এসেছি। ভারত সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন চার্টারে নির্ধারিত সিদ্ধান্তগুলি অনুসারে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের মাধ্যমে কাজ করার ক্ষেত্রে নিজের দায়বদ্ধতার ক্ষেত্রে দৃঢ় থেকেছে।
কিন্তু তা সত্ত্বেও এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যপূর্ণ যে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের এজেন্ডায় বারবার অনাবশ্যক রূপে বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক বিষয়গুলিকে তুলে ধরার প্রচেষ্টা চলেছে, যা সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন চার্টার এবং সাংহাই স্পিরিটের উলঙ্ঘন মাত্র। এ ধরনের প্রচেষ্টা সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনকে পরিভাষিত করা সর্বসম্মতি এবং সহযোগিতার ভাবনার পরিপন্থী।
মহামান্যগণ,
আমি ২০২১ সালে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের ২০তম বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন সংস্কৃতি বর্ষ উদযাপনের প্রস্তাবকে পূর্ণ সমর্থন জানাই। ভারতের জাতীয় সংগ্রহালয় এ বছর আমাদের মিলিত বৌদ্ধ ঐতিহ্য নিয়ে প্রথম সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন প্রদর্শনী আয়োজন করার প্রক্রিয়া চালু করেছে। ভারতে সাহিত্য অ্যাকাডেমি রাশিয়ান এবং চিনা ভাষায় ১০টি ভারতীয় ধ্রূপদী সাহিত্যকৃতিকে অনুবাদের কাজ সম্পূর্ণ করেছে।
আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আগামী বছর ভারত মহামারীমুক্ত আবহে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন ফুড ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করতে সক্ষম হবে। আমি আনন্দিত যে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের সমস্ত সদস্য দেশগুলির আধিকারিকবৃন্দ এবং কূটনীতিকরা সম্প্রতি বেজিং-এ সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন সচিবালয়ের সহযোগিতায় আয়োজিত যোগ কর্মসূচিতে মহা উৎসাহে অংশগ্রহণ করেছেন।
মহামান্যগণ,
আমি আরেকবার রাষ্ট্রপতি পুতিনকে তাঁর দক্ষ এবং সফল নেতৃত্বের জন্য ধন্যবাদ জানাই। আর এই বৈঠকের আয়োজনের জন্যও তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। আমি রাষ্ট্রপতি ইমোমলী রহমোনকে আগামী এক বছরের জন্য সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের সভাপতিত্ব করার জন্য শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা জানাতে চাই।
আর তাজিকিস্তানের সফল সভাপতিত্বের জন্য ভারতের পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাসও দিচ্ছি।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।