মহামান্য নেতৃবৃন্দ,
ব্রিকস্ বাণিজ্য ফোরামে অংশগ্রহণকারী সম্মানিত ব্যক্তিগণ,
নমস্কার,
শুভ সন্ধ্যা।
ব্রিকস্ বাণিজ্য ফোরামেঅংশগ্রহণ করতে পেরে আমি খুব খুশি। একাদশব্রিকস্ শীর্ষ সম্মেলনের শুভ সূচনাও এই বাণিজ্য ফোরামের মাধ্যমেই হ’ল। শিল্প-বাণিজ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্যে আমি ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি, এই ফোরামের আয়োজক আর সমস্ত অংশগ্রহণকারীদের অভিনন্দন জানাই।
বন্ধুগণ,
বিশ্বের আর্থিক বিকাশে ব্রিকস্ দেশগুলির অংশীদারিত্ব ৫০ শতাংশ। বিশ্ববাজারে আর্থিক মন্দা থাকা সত্ত্বেও, ব্রিকস্ দেশগুলি আর্থিক বিকাশকে গতিপ্রদান করেছে, কোটি কোটি মানুষকে দারিদ্র্যসীমার উপরে তুলেছে এবং প্রযুক্তি তথা উদ্ভাবনে নতুন নতুন সাফল্য অর্জন করেছে। এখন ব্রিকস্ সংগঠন প্রতিষ্ঠার দশ বছর পর, আমাদের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপগুলির লক্ষ্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে এই ফোরাম একটি ভাল মঞ্চ।
বন্ধুগণ,
ব্রিকস্ দেশগুলির মধ্যে বাণিজ্য প্রক্রিয়াকে সরল করতে পারলে আমাদের পারস্পরিক বাণিজ্য ও লেনদেন বৃদ্ধি পাবে। আমাদের এই পাঁচটি দেশের মধ্যে কর এবং শুল্ক প্রক্রিয়া সরলতর করার চেষ্টা চলছে। ইন্টেলেকচ্যুয়াল প্রপার্টি রাইটস্ নিয়ে, এবং ব্যাঙ্কগুলির মধ্যে সহযোগিতার মাধ্যমে বাণিজ্যিক পরিবেশ আরও সহজ হয়ে উঠছে।ব্রিকস্ বাণিজ্য ফোরামের প্রতি আমার অনুরোধ, এরকম অনুকূল পরিবেশে গড়ে সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে বাণিজ্যিক পদক্ষেপগুলিকে সঠিকভাবে অধ্যয়ন করুন।
ব্রিকস্ দেশগুলির মধ্যে বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা আরও উচ্চাকাঙ্ক্ষী হওয়া উচিৎ। আমাদের পারস্পরিক বাণিজ্যের পুঁজির প্রয়োজন আরও হ্রাস করার জন্যে আপনাদের পরামর্শ উপযোগী হবে।
আমি অনুরোধ জানাই, আগামী দশ বছরের জন্যে আমাদের মধ্যে পারস্পরিক বাণিজ্যের অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করে তার ভিত্তিতে ‘ব্রিকস্’ দেশগুলির মধ্যে সহযোগিতার নীল নক্শা রচনা করুন।
বন্ধুগণ,
আমাদের বাজারের আকার, বৈচিত্র্য এবং আমাদের পরিপূরকতা পরস্পরের অত্যন্ত লাভজনক। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একটি সদস্য দেশের কাছে যে প্রযুক্তি রয়েছে, অন্য দেশের কাছে তার জন্যে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল কিম্বা সেই প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদিত পণ্যের বাজার রয়েছে। বিদ্যুৎ চালিত যানবাহন, ডিজিটাল প্রযুক্তি, সার, কৃষিজাত পণ্য, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ইত্যাদির সম্ভাবনা অনেক বেশি। আমার অনুরোধ,ব্রিকস্ বাণিজ্য ফোরামে এই পাঁচটি দেশের এহেন পরিপূরকতার মানচিত্রকরণ করা হোক। আমার পরামর্শ হ’ল, আগামী ব্রিকস্ শীর্ষ সম্মেলনের আগে নিদেনপক্ষে এরকম পাঁচটি ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হোক, যেগুলির মধ্যে পরিপূরকতার মাধ্যমে আমাদের মধ্যে যৌথ উদ্যোগ করে তোলা যেতে পারে।
বন্ধুগণ,
‘ব্রিকস্’ অন্তর্ভুক্ত দেশগুলির জনগণ নিজেদের পরিশ্রম, প্রতিভা ও সৃষ্টিশীলতার জন্য সুপ্রসিদ্ধ। আগামীকাল শীর্ষ সম্মেলনের অধিবেশনগুলিতে ‘ইনোভেশন ব্রিকস নেটওয়ার্ক’, ‘ব্রিকস ইনস্টিটিউট ফর ফিউচার নেটওয়ার্ক’ – এর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলি নিয়ে আলাপ-আলোচনা হবে। বেসরকারি ক্ষেত্রের প্রতি আমার অনুরোধ, মানবসম্পদ-কেন্দ্রিক এই উদ্যোগগুলিতে যুক্ত হন। নবীন শিল্পোদ্যোগীরা যদি এই উদ্যোগগুলিতে যুক্ত হন, তাহলে বাণিজ্য এবং উদ্ভাবনকে আরও মজবুত করা সম্ভব হবে।
বন্ধুগণ,
‘ব্রিকস্’ সদস্য দেশগুলির মধ্যে পর্যটন, বাণিজ্য ও কর্মসংস্থান, সদস্য দেশগুলির জনগণের আসা-যাওয়ার মাধ্যমে সহজ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতীয়দের ভিসামুক্ত প্রবেশের অনুমতিপ্রদানের সিদ্ধান্তের জন্যে আমি ব্রাজিলের মাননীয় রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানাই। আমাদের এই পাঁচটি দেশের মধ্যে পারস্পরিক সামাজিক সুরক্ষা চুক্তি নিয়েও চিন্তাভাবনার অবকাশ রয়েছে।
বন্ধুগণ,
আপনারা হয়তো ভারতের ‘ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস’, ‘লজিস্টিক পারফরমেন্স’, এবং ‘গ্লোবাল ইনোভেশন’-এর মতো সারণীগুলিতে প্রতিনিয়ত উন্নতি সম্পর্কে অবহিত। সময়ের অভাব রয়েছে, তাই আমি শুধু এইটুকুই বলবো যে, ভারতে রাজনৈতিক স্থিরতা, অনুমেয় নীতি এবং বাণিজ্য-বান্ধব সংস্কারের ফলে আমরা এখন বিশ্বের সর্বাধিক মুক্ত এবং বিনিয়োগ- বান্ধব অর্থনীতির দেশ। ২০২৪ সালের মধ্যে ভারত পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থ-ব্যবস্থার দেশ হয়ে উঠতে চায়। শুধু পরিকাঠামো ক্ষেত্রেই ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রয়োজন রয়েছে।
ভারতে অসীম সম্ভাবনা রয়েছে, অ-গুণতি সুযোগ রয়েছে। এই সুযোগ গ্রহণের জন্যে আমি ‘ব্রিকস্’দেশগুলির বাণিজ্যমহলকে আমন্ত্রণ জানাই, আসুন, ভারতে আপনাদের বাণিজ্য করুন এবং নিজেদের বাণিজ্যে শ্রীবৃদ্ধি ঘটান।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।