“পরিবারকেন্দ্রিক রাজনীতি ভারতের গণতন্ত্রের পক্ষে উদ্বেগজনক”
“মোদী গ্যারান্টি দিচ্ছে যে, তৃতীয়বারের শাসনে ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম আর্থিক শক্তিতে রূপান্তরিত হবে”
“ভারতের মহান ঐতিহ্য ও পরম্পরা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে শক্তি জুগিয়ে যাবে অযোধ্যার রাম মন্দির”
“সরকারের তৃতীয়বারের শাসন ভারতের আগামী ১ হাজার বছরের ভিত্তি তৈরি করবে”
প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ লোকসভায় রাষ্ট্রপতির ভাষণের ধন্যবাদজ্ঞাপক প্রস্তাবের ওপর জবাবি ভাষণ দেন।
এই চারটি স্তম্ভের উপর ভিত্তি করে বিকশিত ভারতের রূপরেখা তুলে ধরেন শ্রী মোদী।
এব্যাপারে আক্ষেপ প্রকাশ করে শ্রী মোদী বলেন, দেশের উন্নয়ন কোনো এক ব্যক্তির জন্য নয়, দেশের উন্নয়ন সকলের জন্যই।
রাম মন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “ভারতের মহান ঐতিহ্য ও পরম্পরা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে রাম মন্দির শক্তি জুগিয়ে যাবে।”
প্রধানমন্ত্রী জানান, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দেশে ৩ কোটি লাখপতি দিদি তৈরি হবে।

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ লোকসভায় রাষ্ট্রপতির ভাষণের ধন্যবাদজ্ঞাপক প্রস্তাবের ওপর জবাবি ভাষণ দেন। 

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণ শুরুতে সংসদের নতুন ভবনে রাষ্ট্রপতিজির আগমনের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এই পরম্পরা সংসদের মর্যাদা বাড়িয়েছে। রাষ্ট্রপতির ভাষণের ধন্যবাদজ্ঞাপক প্রস্তাবের উপর সদস্যরা যেভাবে তাঁদের মতামত ব্যক্ত করেছেন, সেজন্য তাঁদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রপতি তথ্যসমৃদ্ধ বক্তব্য পেশ করেছেন এবং তাঁর ভাষণে ভারতের অগ্রগতির মাত্রা তুলে ধরা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, দেশ তখনই দ্রুত গতিতে এগোতে পারবে, যখন চারটি স্তম্ভ, অর্থাৎ নারী শক্তি, যুব শক্তি, গরিব এবং অন্নদাতাদের উন্নতি হবে। এই চারটি স্তম্ভের উপর ভিত্তি করে বিকশিত ভারতের রূপরেখা তুলে ধরেন শ্রী মোদী। 

শক্তিশালী বিরোধী দলের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরিবারকেন্দ্রিক রাজনীতি ভারতের গণতন্ত্রের পক্ষে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে শ্রী মোদী বলেন, একটি রাজনৈতিক দল পরিবারের হাতে চালিত হলে, সেটি তার পরিবারের সদস্যদের অগ্রাধিকার দেয়। সেখানে পরিবারের স্বার্থের দিকে লক্ষ্য রেখেই সমস্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তিনি বলেন, “দেশের সেবায় তরুণদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করার জন্য আমি আবেদন জানাচ্ছি।” পরিবারকেন্দ্রিক শাসনে বিপজ্জনক নানা দিক ব্যাখ্যা করেন প্রধানমন্ত্রী। এব্যাপারে আক্ষেপ প্রকাশ করে শ্রী মোদী বলেন, দেশের উন্নয়ন কোনো এক ব্যক্তির জন্য নয়, দেশের উন্নয়ন সকলের জন্যই। 

ভারতীয় অর্থনীতির মজবুত ভিত্তির প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মোদী গ্যারান্টি দিচ্ছে যে, এই সরকারের তৃতীয়বারের শাসনে ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম আর্থিক শক্তির দেশে রূপান্তরিত হবে।” এ প্রসঙ্গে জি২০ শীর্ষ বৈঠকে ভারত সম্পর্কে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ধারণার কথা উল্লেখ করেন শ্রী মোদী। 

দেশের অগ্রগতিতে সরকারের ভূমিকার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী ২০১৪ সালে তদানীন্তন সরকারের পেশ করা অন্তর্বর্তী বাজেটের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সে সময়ে দেশের অর্থমন্ত্রী জিডিপি-র নিরিখে ভারতকে বিশ্বের ১১ তম আর্থিক শক্তির দেশ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন, আর এখন ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম আর্থিক শক্তির দেশ হিসেবে উঠে এসেছে। তিনি আরও বলেন, আগামী তিন দশকের মধ্যে আমেরিকা এবং চিনের পরই বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম আর্থিক শক্তির দেশ হয়ে উঠবে ভারত। প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, “আমি আজ দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে জানাচ্ছি যে, বর্তমান সরকারের তৃতীয়বারের শাসনেই বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম আর্থিক শক্তির দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে ভারত।”

শ্রী মোদী বলেন, বড় লক্ষ্যকে সামনে রেখে সাহসের সঙ্গে সরকার যেভাবে দ্রুত গতিতে কাজ করে চলেছে, তার দিকে নজর রাখছে গোটা বিশ্ব। তিনি জানান, বর্তমান সরকার গ্রামের দরিদ্র মানুষের জন্য ৪ কোটি বাড়ি এবং শহরাঞ্চলে গরিবদের জন্য ৮০ লক্ষ পাকা বাড়ি তৈরি করেছে। গত ১০ বছরে ৪০ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ রেল পথের বৈদ্যুতিকীকরণ করা হয়েছে। ১৭ কোটি অতিরিক্ত গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে। 

কল্যাণমূলক কাজের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী সরকারের ভূমিকায় আক্ষেপ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়তার সঙ্গে দেশবাসীর শক্তি ও সক্ষমতার উপর তাঁর সরকারের আস্থার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “আমাদের সরকারের প্রথমবারের শাসনে আমরা পূর্ববর্তী সরকারের ঘাটতিগুলি দূর করার চেষ্টা করেছি, দ্বিতীয়বারের শাসনে আমরা নতুন ভারতের ভিত্তির পথ প্রশস্ত করেছি। আর তৃতীয়বারের শাসনে বিকশিত ভারতের লক্ষ্যে আমরা উন্নয়নে আরও গতি আনব।” এ প্রসঙ্গে প্রথমবারের শাসনে স্বচ্ছ ভারত, উজ্জ্বলা, আয়ুষ্মান ভারত, বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও, ডিজিটাল ইন্ডিয়া এবং জিএসটি-র চালুর কথা উল্লেখ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ ৩৭০ ধারার অবলুপ্তি দেখেছে, নারী শক্তি বন্দন অধিনিয়ম চালু করা হয়েছে, ৪০ হাজারের বেশি অচল আইনকে বাতিল করা হয়েছে, বন্দে ভারত এবং নমো ভারতের মতো ট্রেন চালু করা হয়েছে। তিনি বলেন, “উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম, দেশের মানুষ সময়ের মধ্যে সব প্রকল্পের কাজ শেষ হতে দেখেছেন।” শ্রী মোদী বলেন, বিকশিত ভারত সংকল্প যাত্রার মাধ্যমে প্রত্যেকের কাছে ন্যূনতম সুযোগ সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে দেশবাসী সরকারের নিষ্ঠা ও দৃঢ়তার প্রমাণ পেয়েছেন। রাম মন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “ভারতের মহান ঐতিহ্য ও পরম্পরা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে রাম মন্দির শক্তি জুগিয়ে যাবে।”

বর্তমান সরকারের তৃতীয়বারের শাসনে যেসব বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেওয়া হবে, প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে তাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “এই সরকারের তৃতীয়বারের শাসনে দেশের জন্য আগামী হাজার বছরের ভিত তৈরি করা হবে।” দেশের ১৪০ কোটি নাগরিকের সক্ষমতার উপর আস্থা প্রকাশ করে শ্রী মোদী বলেন, গত ১০ বছরে ২৫ কোটি মানুষকে দারিদ্র সীমার উপরে তুলে আনা হয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, দেশের সম্পদের যথার্থ ব্যবহারের মাধ্যমে দারিদ্রকে পরাস্ত করা সম্ভব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৪০ কোটি গরিবের নিজস্ব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে, ৪ কোটির নিজস্ব বাড়ি রয়েছে, ১১ কোটি গরিব মানুষ নলবাহিত জল সংযোগ পেয়েছেন, ৫৫ কোটি দেশবাসীকে আয়ুষ্মান কার্ড দেওয়া হয়েছে এবং ৮০ কোটি দেশবাসী বিনামূল্যে খাদ্যশস্য পাচ্ছেন। তিনি বলেন, “মোদী তাঁদের নিয়ে বেশি চিন্তিত, যাঁদের কথা কেউ ভাবে না।”

ভারতে নারী শক্তির ক্ষমতায়নে সরকারের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ভারতে এখন এমন কোনো ক্ষেত্র নেই, যেখানে নারীদের জন্য দরজা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়নি। তাঁরা যুদ্ধ বিমান চালাচ্ছেন এবং দেশের সীমান্তও রক্ষা করছেন।” মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির সক্ষমতার উপর আস্থা প্রকাশ করে শ্রী মোদী বলেন, এধরনের গোষ্ঠীর সংখ্যা ১০ কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে এবং এই গোষ্ঠীগুলি গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতি এনেছে। প্রধানমন্ত্রী জানান, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দেশে ৩ কোটি লাখপতি দিদি তৈরি হবে। 

কৃষক কল্যাণের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, কৃষিখাতে আগের সরকারের বাজেট বরাদ্দ ছিল ২৫ হাজার কোটি টাকা, এখন তা বেড়ে হয়েছে ১.২৫ লক্ষ কোটি টাকা। পিএম কিষান সম্মাননিধি যোজনায় কৃষকদের ২,৮০,০০০ কোটি টাকা প্রদান, পিএম ফসল বিমা যোজনায় ১,৫০,০০০ কোটি টাকা প্রদানের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। 

দেশের তরুণদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী স্টার্টআপ, ইউনিকর্ন, ডিজিটাল ব্যবস্থা প্রভৃতির কথা তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল অর্থনীতিতে ভারত এখন বিশ্বের প্রথমসারির দেশ হিসেবে উঠে এসেছে এবং ভারতের তরুণদের সামনে এখন অসংখ্য সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাচ্ছে। মোবাইল উৎপাদনে দেশের সাফল্যের কথা উল্লেখ করার পাশাপাশি পর্যটন এবং অসামরিক বিমান পরিবহণের ক্ষেত্রেও অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন তিনি। শ্রী মোদী বলেন, ভারতের তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা এবং সামাজিক সুরক্ষা সুনিশ্চিত করাই সরকারের লক্ষ্য।

পরিকাঠামো ক্ষেত্রে গত ১০ বছরে বাজেট বরাদ্দ ১২ লক্ষ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৪৪ লক্ষ কোটি টাকা করার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। গবেষণা এবং উদ্ভাবনের ক্ষেত্রেও তরুণদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন তিনি। শক্তির ক্ষেত্রে দেশকে আত্মনির্ভর করে তোলার লক্ষ্যে গ্রিন হাইড্রোজেন ও সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে লগ্নির প্রসঙ্গ টেনে আনেন প্রধানমন্ত্রী। 

তাঁর ভাষণে প্রধানমন্ত্রী মূল্যবৃদ্ধি এবং ১৯৭৪ সালের ৩০ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতির কথাও উল্লেখ করেন। করোনা অতিমারি সত্ত্বেও মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে বর্তমান সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করেন শ্রী মোদী। তিনি বলেন, প্রত্যক্ষ নগদ হস্তান্তরের মাধ্যমে ৩০ লক্ষ কোটি টাকার বেশি বন্টন করা হয়েছে।

দুর্নীতি নির্মূল করতে সরকারের সর্বাত্মক লড়াইয়ের অঙ্গীকারের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যারা দেশকে লুঠ করেছে, তাদের তার মূল্য দিতে হবে।” দেশের শান্তি ও সুস্থিতি রক্ষায় সরকারের প্রয়াসের প্রশংসা করে শ্রী মোদী বলেন, সন্ত্রাসবাদের প্রশ্নে ভারতের নীতি অনুসরণ করছে গোটা বিশ্ব। ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রশংসা করে বিচ্ছিন্নতাবাদের নিন্দা করেন প্রধানমন্ত্রী। জম্মু-কাশ্মীরের উন্নয়ন প্রক্রিয়ারও প্রশংসা করেন তিনি।

দেশের উন্নয়নে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার জন্য উপস্থিত সদস্যদের কাছে আবেদন জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “মা ভারতী এবং এর ১৪০ কোটি নাগরিকের উন্নয়নে আমি আপনাদের সহযোগিতা চাই।”

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Click here to read full text speech

Explore More
৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪

জনপ্রিয় ভাষণ

৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ১৫ই আগস্ট , ২০২৪
25% of India under forest & tree cover: Government report

Media Coverage

25% of India under forest & tree cover: Government report
NM on the go

Nm on the go

Always be the first to hear from the PM. Get the App Now!
...
সোশ্যাল মিডিয়া কর্নার 21 ডিসেম্বর 2024
December 21, 2024

Inclusive Progress: Bridging Development, Infrastructure, and Opportunity under the leadership of PM Modi