প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ভিডিও বার্তার মাধ্যমে আজ আচার্য শ্রী এস এন গোয়েঙ্কার বর্ষব্যাপী জন্ম শতবর্ষ উদযাপনের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন।
বিপাসনা প্রশিক্ষক আচার্য শ্রী এস এন গোয়েঙ্কার বর্ষব্যাপী জন্ম শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠান যেদিন শুরু হল সেদিন তাঁর নিজের কথাই স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছিলেন, দেশ অমৃত মহোৎসব উদযাপন এবং কল্যাণ মিত্র গোয়েঙ্কার আদর্শের কথা স্মরণ একই সঙ্গে করছে। তিনি পুনরায় বলেন, বর্ষব্যাপী এই উদযাপন অনুষ্ঠান আজ যখন শেষ হচ্ছে দেশ তখন বিকশিত ভারতের সংকল্প পূরণে দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গুরুজি প্রায়সই ভগবান বুদ্ধের মন্ত্রের কথা স্মরণ করতেন। প্রধানমন্ত্রী এর ব্যাখ্যা করে বলেন, “একত্রে ধ্যান কার্যকরী ফলদায়ক, এই সংহতির বোধ ও ঐক্যশক্তি বিকশিত ভারতের মূল ভিত্তি”। সারা বছর ধরে এই মন্ত্র প্রচারের জন্য তিনি সকলকে উষ্ণ শুভেচ্ছা জানান।
শ্রী গোয়েঙ্কার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সম্পর্কের কথা স্মরণ করে বলেন, রাষ্ট্রসংঘের বিশ্ব ধর্ম সম্মেলনের প্রথম বৈঠকের পর গুজরাটে বহুবার তাদের সাক্ষাৎ হয়েছে। আচার্য গোয়েঙ্কার জীবনের চূড়ান্ত লগ্নে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ হওয়ায় নিজেকে সৌভাগ্যবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আচার্যকে খুব ঘনিষ্ঠভাবে বোঝার সুযোগ হয়েছিল তাঁর। শ্রী গোয়েঙ্কা সম্পর্কে উচ্চ প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিপাসনায় গভীরভাবে আত্মনিষ্ঠ হওয়ায় তাঁর মধ্যে স্থৈর্য্য, সৌম্যভাব এবং ব্যক্তিত্ব বিকশিত হয়, ফলে যেখানেই তিনি যেতেন সেখানে এক পবিত্রতার বাতাবরণ তৈরি হত। ‘এক জীবন এক লক্ষ্য’-এর এক আদর্শ দৃষ্টান্ত স্বরূপ। শ্রী গোয়েঙ্কার জীবনে বিপাসনাই ছিল অনন্য লক্ষ্য। বিপাসনার জ্ঞানে তিনি সকলকে ঋদ্ধ করেছেন। বিশ্বে মানবতার বিকাশে তাঁর অপরিসীম অবদানের কথাও প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বকে ভারতীয় প্রাচীন জীবনশৈলির এক অসাধারণ উপহার হল বিপাসনা। আমাদের দেশে দীর্ঘদিন ধরে এই ঐতিহ্য হারিয়ে গেছিল। মনে হয়েছিল যেন বিপাসনা, শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের দিন বোধহয় শেষ হয়ে গেছে। যদিও মায়ানমারে দীর্ঘ ১৪ বছর তপস্যার পর শ্রী গোয়েঙ্কা তাঁর নিজ ভূমে প্রত্যাবর্তন করেন ভারতের প্রাচীন গৌরব বিপাসনার জ্ঞানে আলোকিত হয়ে। বিপাসনার গুরুত্বের দিক উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা হল আত্ম অবলোকনের মাধ্যমে আত্ম রূপান্তরের এক পথ। হাজার হাজার বছর পূর্বে এর সূচনা লগ্নে এর গভীর তাৎপর্ষের দিক উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ বিশ্ব জুড়ে বর্তমান চ্যালেঞ্জের সমাধানে এটা এক বড় শক্তি হয়ে উঠবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গুরুজির প্রয়াসের মাধ্যমেই বিশ্বের ৮০ টিরও বেশি দেশ ধ্যানের গুরুত্বকে অনুভব করেছে এবং তাকে গ্রহণ করেছে। আচার্য গোয়েঙ্কা বিপাসনাকে বিশ্ব স্বীকৃতির স্থানে আরো একবার জায়গা করে দিয়েছেন। ভারত আজ সেই সংকল্প পথের বিস্তারে নতুন শক্তি জোগাচ্ছে। রাষ্ট্রসংঘে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উদযাপনে ১৯০ টিরও বেশি দেশের সমর্থন বিশ্বব্যাপী তাকে জীবনের এক অঙ্গ করে তুলেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিপাসনা যোগ ব্যায়াম নিয়ে ভারতে অতীতে অনেক গবেষণা হয়েছে। তবে এটা নিদারুণ দুঃখের যে পরবর্তী প্রজন্ম এর গুরুত্বের কথা ভুলে গেছে। বিপাসনা, ধ্যান, ধারণা, এগুলিকে ত্যাগের দিক বলে স্মরণ করা হয়ে থাকে। তবে গুরুত্বের দিক নিয়ে মানুষ অচেতন। আচার্য শ্রী এসএন গোয়েঙ্কার মত ব্যক্তিত্বের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যকর জীবন আমাদের নিজেদের কাছে নিজেদেরই এক দায়বদ্ধতা স্বরূপ। বিপাসনার উপকারের দিক উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে কঠিন সময়ে দাঁড়িয়ে বিপাসনার গুরুত্ব বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তার কারণ কাজের চাপের সঙ্গে জীবনের সঙ্গতি বজায় ছাড়াও বর্তমান জীবনশৈলির ক্ষেত্রে যুব সমাজ এক প্রকার দীর্ণ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিপাসনা কেবলমাত্র যুবসম্প্রদায়ের কাছেই সমাধান সূত্র নিয়ে আসতে পারে তাই নয়, অণু এবং ক্ষুদ্র পরিবার যেখান বয়স্ক পিতামাতা নানাভাবে ভারাক্রান্ত, তাদের কাছেও তা এক সমাধানের দিক হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী আচার্য শ্রী গোয়েঙ্কার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, তিনি প্রত্যেকের জীবনে সুখ শান্তি এবং সম্প্রীতির জন্য প্রচার করেছেন। তিনি চাইতেন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এর মাঝে উপকৃত হোক। তাই তিনি তাঁর জ্ঞানকে সকলের কাছে ছড়িয়ে দিয়েছেন। এখানেই থেমে না থেকে তিনি নিজে অনেক দক্ষ শিক্ষক তৈরি করে গেছেন। বিপাসনার গুরুত্বের কথা আরও একবার ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা হল এক ধরনের আত্মসমীক্ষা এবং অন্তরের অন্তস্থলে যাত্রার গভীর পথ নির্ণয়। এটা কেবলমাত্র একটি রীতি বা ধারাই নয়, বিজ্ঞানও বটে। তিনি বলেন, এই বিজ্ঞানের ফলের সঙ্গে আমরা পরিচিত। আধুনিক বিজ্ঞানের মানের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রেখে এর সাক্ষ্যকে এখন বিশ্বের সামনে পৌঁছে দেওয়াটাই প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বজুড়ে এই লক্ষ্যে অনেক কিছু হলেও বিশ্বের বৃহত্তর কল্যাণে নতুন গবেষণার মাধ্যমে ভারত এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা নিতে চায়। ভাষণ শেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আচার্য এস এন গোয়েঙ্কার জন্মশতবর্ষ উদযাপনের বর্ষব্যাপী অনুষ্ঠান সকলের কাছেই এক প্রেরণা দায়ক সময়। মানব সেবায় তাঁর আদর্শকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান।