আজ এক ভিডিও বার্তার মাধ্যমে আমেথি সাংসদ খেল প্রতিযোগিতা, ২০২৩-এর সমাপ্তি অনুষ্ঠানে তাঁর বক্তব্য পেশ করলেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী।
এই সমাপ্তি অনুষ্ঠান উপলক্ষে আয়োজিত এক সমাবেশের উদ্দেশে ভাষণদানকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমেথি সাংসদ খেল প্রতিযোগিতা, ২০২৩-এ অংশগ্রহণকারী সকলের সঙ্গে মিলিত হওয়ার এই ঘটনা আমাদের মধ্যে এক নতুন ও বিশেষ অনুভূতির জন্ম দেয়। কারণ, এই মাসটি হল দেশের ক্রীড়াক্ষেত্রের পক্ষে খুবই শুভ একটি সময়কাল। এশিয়ান গেমস-এ ১০০টিরও বেশি পদক জয় করে ভারতীয় খেলোয়াড়রা এখন ঘরে ফিরেছেন। আমেথি সাংসদ খেল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমেথির বহু খেলোয়াড়ই তাঁদের ক্রীড়া প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। তাঁদের এই সাফল্য থেকে অনুপ্রাণিত হবেন আগামীদিনের বহু খেলোয়াড়ই, কারণ এই সাফল্য খেলোয়াড়দের মধ্যে নতুন উদ্যম ও আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলে। ২৫ দিনের এই প্রতিযোগিতা থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতা খেলোয়াড়দের কাছে এক বিশেষ সম্পদ হয়ে থাকবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, একটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে ১ লক্ষেরও বেশি মানুষের সমাগম শুধুমাত্র একটি বিশেষ ঘটনামাত্র নয়, একইসঙ্গে তা এক সার্বিক সাফল্যেরও সূচনা করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কোনো সমাজ ব্যবস্থাতেই উন্নয়নের একটি অন্যতম শর্ত হল ক্রীড়া প্রতিভাদের যথাযথ প্রস্ফুটিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া। কারণ, খেলাধূলার মাধ্যমে দেশের তরুণ ও যুব সমাজের মধ্যে ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে এবং নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণের পথে তা তাঁদের এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করে। কেন্দ্রের বর্তমান সরকারের বহু সাংসদই সমাজের উন্নয়নের একটি বিশেষ দিক বেছে নিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই পথটি হল সাংসদদের নিজের নিজের নির্বাচনী এলাকায় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা। আমেথির তরুণ খেলোয়াড়রা আগামীদিনে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় পদক জয়ের সম্মান অর্জন করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শ্রী মোদী বলেন, খেলোয়াড়রা যখন খেলার মাঠে প্রবেশ করেন, তখন তাঁদের সামনে একটিমাত্র লক্ষ্য থাকে এবং তা হল নিজের দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এইভাবেই দেশবাসীর মধ্যেও এক নতুন প্রেরণার সঞ্চার ঘটেছে। তাঁদের সকলের কাছে দেশই এখন সর্বপ্রথম। খেলোয়াড়রা যেভাবে সবকিছুকে তুচ্ছ করে দেশের স্বার্থে খেলার মাঠে প্রবেশ করেন তা তাঁদের ভবিষ্যৎ জীবনে আরও বৃহত্তর এক লক্ষ্য পূরণের পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। এইভাবেই দেশের প্রত্যেকটি জেলার প্রতিটি নাগরিকেরই ভূমিকা রয়েছে ভারতকে এক উন্নত রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করার সার্বিক প্রচেষ্টায় সামিল হওয়ার। এজন্য প্রতিটি ক্ষেত্রেই এগিয়ে যেতে হবে একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য এবং সঙ্কল্পকে অবলম্বন করে। তরুণ ও যুবকদের জন্য ‘টপস’ এবং ‘খেলো ইন্ডিয়া’র মতো যে কর্মসূচিগুলি রূপায়িত হচ্ছে, সেকথাও এদিন তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই কর্মসূচির আওতায় দেশ-বিদেশের বহু খেলোয়াড়কেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে এবং এজন্য কোটি কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা দেওয়ারও ব্যবস্থা রয়েছে। তিন হাজারেরও বেশি খেলোয়াড়কে প্রতি মাসে ‘খেলো ইন্ডিয়া গেমস’-এর আওতায় ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ ও অনুশীলন, সঠিক মানের খাদ্য ও পুষ্টি, খেলাধূলার সাজসরঞ্জাম এবং অন্যান্য ব্যয় নির্বাহের জন্য এই সহায়তা দেওয়া হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শ্রী মোদী বলেন যে ভারত বর্তমানে এক রূপান্তর প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে। ছোট ছোট শহরগুলির মেধাশক্তিকে উৎসাহিত করা হচ্ছে ক্রীড়া উদ্যোগ গড়ে তোলার জন্য। ভারতের স্টার্ট-আপ প্রচেষ্টায় তাই ছোট শহরগুলিও এখন আর পিছিয়ে নেই কারণ, বর্তমান বিশ্বে বহু ক্রীড়া প্রতিভাই উঠে আসে এই সমস্ত ছোট ছোট শহরগুলি থেকে। তরুণ ক্রীড়া প্রতিভার দক্ষতা বিকাশে তাঁর সরকার যে এক স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গী অনুসরণ করে চলেছে একথাও প্রসঙ্গত উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। এশিয়ান গেমস-এর দৃষ্টান্ত তুলে ধরে শ্রী মোদী বলেন যে পদক জয়ী বহু ক্রীড়া প্রতিভাই উঠে এসেছে দেশের ছোট ছোট শহরগুলি থেকে। তাঁদের প্রতিভাকে কেন্দ্রীয় সরকার যথাযথ মর্যাদাদানে কোনরকম ত্রুটি রাখবে না বলে জানিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই ক্রীড়াবিদরা দেশকে সাফল্য এনে দিয়েছেন। প্রসঙ্গত এইভাবেই উত্তরপ্রদেশের অন্নু রানি, পারুল চৌধুরি এবং সুধা সিং-এর সাফল্যের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সাংসদ খেল প্রতিযোগিতা হল এই ধরনের ক্রীড়া প্রতিভাদের সকলের সামনে তুলে ধরার এক মঞ্চবিশেষ।
আগামীদিনেও দেশের তরুণ ক্রীড়া প্রতিভা নতুন উদ্যমে দেশকে আরও জয় ও গৌরব এনে দিতে পারবে বলে তাঁর আত্মবিশ্বাসের কথা এদিন দৃঢ়তার সঙ্গেই ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।