"খেলায় পরাজয় বলে কিছু নেই। হয় জয়লাভ, নয়তো শিক্ষালাভ এই দুয়ের মধ্যে যেকোন একটি ঘটনা ঘটে।"
আজ এক ভিডিও বার্তার মাধ্যমে পালি সাংসদ খেল মহাকুম্ভ-এর অনুষ্ঠানে ভাষণদান কালে এই মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। দেশের যুবসমাজ তথা সমগ্র জাতির সার্বিক বিকাশ প্রচেষ্টায় খেলাধূলার গুরুত্বকে তুলে ধরে তিনি বলেন, "সাংসদ খেল মহাকুম্ভ-এ যে উৎসাহ উদ্দীপনা ও আত্মপ্রত্যয় আমরা লক্ষ্য করি তা আজ প্রত্যেক খেলোয়াড় এবং প্রতিটি তরুণ ও যুবকের এক স্বতন্ত্র পরিচয় হয়ে উঠেছে। খেলাধূলার প্রতি সরকারি ইচ্ছাশক্তির অনুরণন ঘটেছে ক্রীড়া ক্ষেত্রের প্রত্যেক প্রতিযোগীর মধ্যে।"
এই ধরনের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্যোগ আয়োজনে কেন্দ্রের বর্তমান সরকারের নিরন্তর প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন যে সাংসদ খেল মহাকুম্ভ হল মেধা ও বুদ্ধিদীপ্ত লক্ষ লক্ষ খেলোয়াড়দের প্রতিভা বিকাশের এক মঞ্চ বিশেষ। বিভিন্ন রাজ্য ও জেলা থেকে প্রতিযোগীরা এতে অংশগ্রহণ করেন। শুধু তাই নয়, এই প্রতিযোগিতা হল এমন একটি মাধ্যম যাতে উৎসাহিত ও উদ্দীপ্ত বোধ করে নতুন এবং আগামীদিনের ক্রীড়া প্রতিভাগুলি। প্রসঙ্গত শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য আয়োজিত বিশেষ বিশেষ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
সাংসদ খেল মহাকুম্ভে পালি থেকে ২ লক্ষেরও বেশি ক্রীড়া প্রতিযোগীর অংশগ্রহণকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী। প্রতিযোগীদের মধ্যে রয়েছে ১১০০-রও বেশি স্কুল ছাত্র-ছাত্রী। এই ধরনের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্যোগ আয়োজনের জন্য পালির সাংসদ শ্রী পি পি চৌধুরীকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী।
শ্রী মোদী বলেন, রাজস্থানের যুবকরা যথেষ্ট সাহসী। তাঁরা নানা দিক থেকে দেশকে গর্বিত করেছেন। সশস্ত্র বাহিনী থেকে শুরু করে খেলার মাঠেও তাঁদের সাফল্য দেশকে গর্বের আসনে বসিয়েছে। ক্রীড়া প্রতিযোগীরাও এই উত্তরাধিকারকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন বলে মনে করেন তিনি।
খেলাধূলার মধ্যে রূপান্তরের শক্তি নিহিত রয়েছে - একথার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খেলাধূলার একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল জয়লাভের স্পৃহাকে শুধুমাত্র বাড়িয়ে তোলাই নয়, একই সঙ্গে নিজেকে আরও ভালোভাবে তৈরি করার জন্য আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলা। ক্রীড়া ক্ষেত্র থেকে আমরা যে বিষয়টি সম্পর্কে শিক্ষা লাভ করি তা হল উৎকর্ষের কোন সীমারেখা নেই। তাই আমাদের উচিত সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া।
প্রধানমন্ত্রী বিশেষ জোর দিয়ে বলেন, খেলাধূলার সব থেকে বড় শক্তিটি হল এই যে তা যুব সমাজকে নানা ধরনের মন্দ বিষয় থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। খেলাধূলার অনুশীলনের মধ্য দিয়ে তাঁদের মধ্যে গড়ে ওঠে সংযম ও শৃঙ্খলা বোধ। সেই সঙ্গে তাঁদের মনোযোগের মাত্রাও বৃদ্ধি পেতে থাকে ক্রমান্নয়ে। তাই আত্মবিকাশ প্রচেষ্টায় খেলাধূলার এক বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
যুব কল্যাণের প্রতি সরকারি অঙ্গীকারবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার যুবসমাজের চাহিদাগুলিকে বিশেষ ভাবে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা থেকে শুরু করে সহায় সম্পদের সুষম বন্টন নিশ্চিত করেছে কেন্দ্রের বর্তমান সরকার খেলাধূলার আঙিনায় যুব প্রতিযোগীদের উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করে। এই কারণে গত ১০ বছরে খেলাধূলার জন্য বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৩ গুণ। 'টপস' সহ বিভিন্ন কর্মসূচির আওতায় আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে শত শত ক্রীড়া প্রতিযোগীকে। শুধু তাই নয়, দেশজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে শুধুমাত্র খেলাধূলার জন্য কয়েকটি বিশেষ বিশেষ কেন্দ্র। 'খেলো ইন্ডিয়া' কর্মসূচির আওতায় ৩০০০-এরও বেশি অ্যাথলিট প্রতি মাসে ৫০,০০০ টাকার মতো আর্থিক সহায়তা লাভের সুযোগ পাচ্ছেন। আবার যে সমস্ত খেলোয়াড়রা একেবারে নীচের তলা থেকে উঠে আসছেন, তাঁদের ১০০০-টির মত 'খেলো ইন্ডিয়া' কেন্দ্রগুলিতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক এশিয়ান গেমসে ব্যতিক্রমী সাফল্যের জন্য ভারতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগীদের বিশেষ প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। এই প্রতিযোগিতায় ১০০-টিরও বেশি পদক জয় করে এনেছেন দেশের খেলোয়াড়রা।
গত পয়লা ফেব্রুয়ারি সংসদে পেশ করা কেন্দ্রীয় বাজেটে ১১ লক্ষ কোটি টাকা সংস্থানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অর্থ বিনিয়োগ করে রেল ও সড়ক পরিকাঠামো অত্যাধুনিক করে গড়ে তোলা হবে। যার ফলে বিশেষ ভাবে উপকৃত হবেন দেশের যুবক ও তরুণরা। ৪০,০০০ বন্দে ভারত বগি তৈরির যে ঘোষণা করা হয়েছে এই বাজেটে তার সবচেয়ে বড় সুফলভোগী হবে দেশের যুবসমাজ।
কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, শিল্পোদ্যোগ প্রচেষ্টাকে উৎসাহদান এবং ক্রীড়া সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা বিকাশের মাধ্যমে যুবসমাজের ক্ষমতায়ন ঘটছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রসঙ্গত, স্টার্টআপ শিল্পোদ্যোগীদের জন্য ১ লক্ষ কোটি টাকার কর ছাড়ের বিষয়টিও তুলে ধরেন তিনি।
পালির উন্নয়নে ১৩,০০০ কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর সাহায্যে সড়ক নির্মাণ, রেলস্টেশনগুলির উন্নয়ন, সেতু নির্মাণ এবং আইটি সহ বিভিন্ন শিক্ষা কেন্দ্র ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হবে। পালির অধিবাসীদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে এই প্রচেষ্টা বিশেষ ভাবে সফল হবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
পরিশেষে রাজস্থান সহ দেশের প্রতিটি রাজ্যের নাগরিকদের ক্ষমতায়নে সরকারি প্রতিশ্রুতি ও দায়বদ্ধতার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন শ্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, ক্রীড়া অনুশীলন ও চর্চা যুবসমাজের মধ্যে গড়ে তোলে সংকল্প গ্রহণের মানসিকতা। এর মধ্য দিয়ে তারা হয়ে ওঠেন সংযমী ও সহনশীল, যার মাধ্যমে জাতির অগ্রগতি ও সমৃদ্ধিতে এক বিশেষ ভূমিকা পালনের উপযুক্ত হয়ে ওঠেন তারা।