আমার প্রিয় বন্ধুরা, নমস্কার !
প্রথমত আমি শ্রী প্রেম বৎসকে এই ফোরাম তৈরির জন্য অভিনন্দন জানাই। এখানে কানাডার এত বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের দেখতে পেয়ে খুব ভালো লাগছে। ভারতে বিপুল বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের সুযোগ সম্পর্কে জানতে পারবেন আপনারা। সেটা ভেবে আমি আনন্দিত।
বন্ধুগণ, এখানকার বেশির ভাগ শ্রোতা-দর্শকের কাছে একটি জিনিস অভিন্ন। এখানে সেই লোকেরা আছেন, যারা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। সেই সিদ্ধান্ত যেটিতে ঝুঁকি রয়েছে। বিনিয়োগের সিদ্ধান্তে লাভ করারও পূর্বাভাষ থাকে।
আপনাদের কাছে আমি একটি জিনিস জানতে চাইঃ কোনো একটি দেশে বিনিয়োগের আগে আপনারা কি চিন্তা করেন ? সেই দেশে প্রাণবন্ত গণতন্ত্র থাকবে ? সেই দেশে কি রাজনৈতিক স্থিরতা থাকবে ? সেই দেশের নীতিগুলি কি বিনিয়োগ ও বাণিজ্যবান্ধব ? সেই দেশের কি প্রশাসনিক স্বচ্ছতা রয়েছে ? সেই দেশে কি দক্ষ মেধাসম্পন্ন শ্রমশক্তি আছে ? সেই দেশের কি বড় বাজার আছে ? আপনারা এরকম অনেক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পারেন।
এই সব প্রশ্নের একটাই উত্তরঃ সেটি হল ভারত।
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, উৎপাদক, উদ্ভাবন এবং পরিকাঠামো সহায়ক সংস্থা – সকলের জন্যই এখানে সুযোগ রয়েছে। বিনিয়োগ করে, শিল্প সংস্থা তৈরি করে ব্যবসা চালানোর সুযোগ আছে। আমদের বেসরকারী সংস্থা এবং সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্বের সুযোগ আছে। রোজগারের সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞানার্জনের যেমন সুযোগ আছে, আবার বিকাশেরও সুযোগ আছে, নেতৃত্ব দানেরও।
বন্ধুগণ, কোভিড পরবর্তী বিশ্বে আপনারা বিভিন্ন ধরণের সমস্যা শুনতে পাবেন – উৎপাদনের সমস্যা, সরবরাহ শৃঙ্খলের সমস্যা, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের সমস্যা ইত্যাদি। সমস্যা হওয়াটাই স্বাভাবিক।
তবে, ভারত কিন্তু সমস্যাগুলোকে রেখে দেয় না। আমরা দেখিয়েছি এগুলি সমাধানের বিভিন্ন উপায় এবং সমাধানের ক্ষেত্র হিসেবে আমরা উঠে এসেছি।
দীর্ঘ সময় ধরে আমরা ৮০ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য বিতরণ করেছি এবং ৮ কোটি পরিবারকে বিনামূল্যে রান্নার গ্যাস সরবরাহ করেছি। বিভিন্ন বাধা-বিপত্তির সত্ত্বেও আমরা ৪০ কোটির বেশি কৃষক, মহিলা, দরিদ্র মানুষদের কয়েক দিনের মধ্যে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা পাঠিয়েছি।
গত কয়েক বছর ধরে আমরা প্রশাসনিক যে কাঠামো তৈরি করেছি, তার শক্তি এর মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়েছে।
বন্ধুগণ, ভেষজ বিদ্যায় ভারত, বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। মহামারীর এই সময়ে আমরা প্রায় ১৫০টি দেশে ওষুধ সরবরাহ করেছি।
এবছরের মার্চ থেকে জুন মাসের মধ্যে কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানি ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সারা দেশে যখন কঠোরভাবে লকডাউন পালন করা হয়েছে, তখনই এই ঘটনাটি ঘটেছে।
আজ আমাদের উৎপাদনশিল্প পুরোদমে কাজ করছে। মহামারীর আগে ভারতে পিপিই কিট তৈরি হতো না। আজ ভারতে প্রত্যেক মাসে লক্ষ লক্ষ পিপিই কিট শুধু তৈরিই হয় না, আমরা সেগুলি রপ্তানিও করি।
উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। কোভিড – ১৯ এর টিকা উৎপাদনে যখন সময় আসবে, আমরা সেই সময় সারা বিশ্বকে সাহায্য় করতে চাই।
বন্ধুগণ, আজকের ভারতের গল্প হল শক্তিশালী হয়ে ওঠার গল্প এবং আগামী দিনে আমরা আরো বেশি শক্তিশালী হবো। এই বিষয়টি আমি আপনাদের ব্যাখ্যা করছি।
আজ প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগের নীতি যথেষ্ট উন্মুক্ত করা হয়েছে। আমরা সোভেরেইন ওয়েল্থ এন্ড পেনশন ফান্ডের জন্য একটি কর বান্ধব ব্যবস্থা গড়ে তুলেছি।
আমরা বিপুল বন্ডের বাজার তৈরির জন্য সংস্কার হাতে নিয়েছি। প্রধান প্রধান ক্ষেত্রগুলির জন্য আমরা বিভিন্ন উৎসাহব্যাঞ্জক প্রকল্প চালু করেছি।
ওষুধ প্রস্তুত, চিকিৎসা সরঞ্জাম নির্মাণ এবং বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতি তৈরির ক্ষেত্রগুলি ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছে। বিনিয়োগকারীদের প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দেওয়ার জন্য একটি নির্ধারিত ক্ষমতাশালী সচিব গোষ্ঠী তৈরি করা হয়েছে।
বিমানবন্দর, রেলপথ, মহাসড়ক, বিদ্যুৎ বন্টন ইত্যাদি ক্ষেত্রে আমরা অর্থের যোগান নিশ্চিত করেছি। রিয়েল এস্টেট এবং পরিকাঠামো ক্ষেত্রের বিনিয়োগের জন্য সরকারী এবং বেসরকারী স্তরে অর্থের যোগান নিশ্চিত করতে ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে।
বন্ধুগণ, আজ ভারতের চিন্তা-ভাবনা এবং তার বাজার দ্রুত গতিতে পরিবর্তিত হচ্ছে। কোম্পানী আইনের আওতায় একটা সময় বিভিন্ন বিষয়কে অপরাধ হিসাবে দেখা হত, আজ সেগুলিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এবং নিয়মের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করা হয়েছে।
গত ৫ বছরে আন্তর্জাতিক উদ্ভাবন সূচকের হিসেবে ভারত, ৮১তম স্থান থেকে ৪৮তম স্থানে উঠে এসেছে। গত ৫ বছরে বিশ্ব ব্যাঙ্কের সহজে ব্যবসা – বাণিজ্য করার ক্রমতালিকায় ভারত, ১৪২তম স্থান থেকে ৬৩তম স্থানে উঠে এসেছে। প্রত্যেকেই এই উন্নতির ফলাফলগুলি বুঝতে পারছেন। ২০১৯এর জানুয়ারী থেকে ২০২০-র জুলাই পর্যন্ত ভারতে ৭০০০ কোটি মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ এসেছে। যা ২০১৩ – ২০১৭ সালে মোট বিনিয়োগের প্রায় সমান। ভারতের প্রতি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা আস্থা বজায় রাখছেন। ২০১৯ সালে ভারতে ২০ শতাংশ প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সময়ে আন্তর্জাতিক স্তরে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগের পরিমাণ ১ শতাংশ কম হয়েছে। সারা বিশ্বের থেকে ভারতে এবছরের প্রথম ৬ মাসে ২০০০ কোটি মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ এসেছে। সারা পৃথিবীতে যখন কোভিড – ১৯ এর সংক্রমণ খুব বেশি, তখনই এই বিনিয়োগ এসেছে।
জিআইএফটি সিটিতে ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস সেন্টার গড়ে তোলা আমাদের একটি বড় উদ্যোগ। আন্তর্জাতিক স্তরে বিনিয়োগকারীরা এর মাধ্যমে লেনদেনের সুযোগ পেয়ে থাকেন। সম্প্রতি আমরা এর জন্য পূর্ণ ক্ষমতাপ্রাপ্ত ঐক্যবদ্ধ নিয়ামক গোষ্ঠী গড়ে তুলেছি।
বন্ধুগণ, কোভিড – ১৯ মহামারীর বিরুদ্ধে ভারত, একটি অনন্য ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে।
আমরা দরিদ্র এবং ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য উৎসাহমূলক ত্রাণের প্যাকেজের ব্যবস্থা করেছি। এর সাহায্যে আমরা কাঠামোগত সংস্কারের কাজই করবো না, পাশাপাশি আরো বেশি উৎপাদন এবং সমৃদ্ধি নিশ্চিত করবো।
শিক্ষা, শ্রম এবং কৃষি ক্ষেত্রে ত্রিমুখী সংস্কার কর্মসূচী ভারত গ্রহণ করেছে। এক সঙ্গে এই ৩টি বিষয়ের প্রভাব প্রতিটি ভারতবাসীর কাছে পৌঁচেছে।
শ্রম এবং কৃষি সংক্রান্ত পুরোনো আইনগুলির সংস্কার ভারত নিশ্চিত করেছে। এর ফলে বেসরকারী ক্ষেত্রগুলির আরো বেশি অংশগ্রহণ যেমন নিশ্চিত হয়েছে, একই সঙ্গে সরকারী সুরক্ষা কবজও শক্তিশালী হয়েছে।
এই সংস্কারগুলি উদ্যোগপতি এবং আমাদের কঠোর পরিশ্রমী মানুষদের জন্য একটি অনুকূল পরিস্থিতি গড়ে তুলবে। শিক্ষা ক্ষেত্রে সংস্কার, আমাদের তরুণদের মেধাকে কাজে লাগাতে সাহায্য করবে। এই সংস্কারগুলির মধ্য দিয়ে ভারতে বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আসার পথ আরো প্রশস্ত হয়েছে।
শ্রম আইনের সংস্কারের ফলে শ্রম সংক্রান্ত কোডের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। এর ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী ও কর্মচারী উভয়েরই সুবিধে হবে এবং সহজে ব্যবসা করার সুযোগও বাড়বে।
কৃষিক্ষেত্রে সংস্কারের ফলে সূদুর প্রসারী প্রভাব পড়বে। কৃষকরা অনেক সুযোগ পাওয়ার পাশাপাশি রপ্তানিরও সুযোগ ঘটবে।
এই সংস্কারগুলি আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমাদের উদ্যোগকে সাহায্য করবে। আত্মনির্ভরতার জন্য আমরা যে কাজ করছি, তার মাধ্যমে বিশ্বের সমৃদ্ধি নিশ্চিত হবে।
বন্ধুগণ,
আপনারা যদি শিক্ষাক্ষেত্রে অংশীদারিত্বের খোঁজ করেন, তার জায়গা হল ভারত।
আপনারা যদি উৎপাদন ক্ষেত্রে এবং পরিষেবা ক্ষেত্রে বিনিয়োগের খোঁজ করেন, তার জায়গা ভারত।
আপনারা যদি কৃষিক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য খোঁজ করেন, তার জায়গা ভারত।
বন্ধুগণ,
আমাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং অনেক অভিন্ন স্বার্থ ভারত ও কানাডার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। আমাদের বহুস্তরীয় সম্পর্কের অবিচ্ছেদ্য অংশ হল, ব্যবসা বাণিজ্য ও বিনিয়োগ।
ভারতে কানাডা হল ২০তম বৃহৎ বিদেশী বিনিয়োগকারী। ভারতে ৬০০র বেশি কানাডার কোম্পানী রয়েছে। আমি জানতে পেরেছি যে এপর্যন্ত ভারতে কানাডিয়ান পেনশন ফান্ড ৫০০০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আমাদের সম্পর্ক এই সব সংখ্যাগুলির থেকেও আরো মজবুত। কিন্তু এর মাধ্যমে এটাও বোঝা যায়, একসঙ্গে আমরা আরো অনেক কিছু অর্জন করতে পারি।
বৃহৎ এবং অভিজ্ঞ পরিকাঠামোগত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনেকেই কানাডার। ভারতে কানাডিয়ান পেনশন ফান্ড প্রথম থেকে প্রত্যক্ষভাবে বিনিয়োগ শুরু করেছে। মহাসড়ক, বিমানবন্দর, লজিস্টিক, টেলিকম এবং রিয়েল এস্টেটের মতো ক্ষেত্রগুলিতে তারা অনেকে বিনিয়োগের নতুন সম্ভাবনা খুঁজে পেয়েছেন। নতুন ক্ষেত্রে বিনিয়োগের জন্য এবং তাদের উপস্থিতি বাড়াতে এই সব সংস্থা সক্রিয়। দীর্ঘদিন ধরে ভারতে যে সব কানাডার বিনিয়োগকারীরা রয়েছেন, তাঁরাই আমাদের দেশের সব থেকে ভালো ব্র্যান্ড অ্যাম্বাস্যাডার।
তাঁদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা, তাঁদের ব্যবসা বাড়ানোর পরিকল্পনা, আপনাদের সকলের জন্য দারুণ উদাহরণ। এর পাশাপাশি আপনারা ভারতকে জানবার সুযোগও পেয়েছেন কারণ বিশ্বে সবথেকে বেশি ভারতীয় বংশদ্ভুত কানাডায় থাকেন। আপনাদের জন্য এখানে কোনো বিধিনিষেধ নেই। আপনাদের নিজের দেশের মতোই এদেশেও আপনারা স্বাগত।
এই অনুষ্ঠানে আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বক্তব্য রাখার সুযোগ করে দেওয়ায় আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ। অনেক অনেক ধন্যবাদ।