সবার আগে তোমাদের সবাইকে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রাপ্তির জন্য অনেক অনেক অভিনন্দন। যখন থেকে তোমরা জানতে পেরেছ যে তোমাদের নাম এই পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়েছে, তখন থেকে তোমাদের ধৈর্য্যের পরীক্ষা চলছে। তোমাদের মা, বাবা, বন্ধু, শিক্ষক, শিক্ষিকা - এঁরাও তোমাদের মতোই উত্তেজনায় সময় কাটাচ্ছেন। তোমাদের মতো আমিও তোমাদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম, কিন্তু করোনার ফলে এবার আমাদের সাক্ষাৎ ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে হচ্ছে।
আমার প্রিয় শিশুরা,
তোমরা যে কাজ করেছ, তোমরা যে পুরস্কার পেয়েছ তা অত্যন্ত বিশেষ, কারণ তোমরা এইসব কাজ এই করোনার সঙ্কটকালে করেছ। এত কম বয়সে তোমাদের এই কাজ সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। কেউ ক্রীড়াক্ষেত্রে দেশের নাম উজ্জ্বল করেছ, কেউ গবেষণা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে আমাদের চমকে দিয়েছ। তোমাদের মধ্যেই রয়েছে দেশের আগামীর শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়, বৈজ্ঞানিক, নেতা, বড় বড় কোম্পানির সিইও-রা। তোমরা ভবিষ্যতে ভারতের গৌরব বৃদ্ধির পরম্পরা বহন করবে। এখন যে ভিডিও ফিল্মটি চলছিল, তাতে তোমাদের সকলের সাফল্য সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে। তোমাদের মধ্যে কয়েকজনের সম্পর্কে আমি আগেও কোনও না কোনভাবে জানতে পেরেছি। যেমন, আমাদের মুম্বাইয়ের মেয়ে কাম্যা কার্তিকেয়ন। তোমার হয়তো মনে আছে, আমি 'মন কি বাত' অনুষ্ঠানে তোমার সম্পর্কে বলেছিলাম। পর্বত আরোহনের মাধ্যমে দেশের নাম উজ্জ্বল করার জন্য তুমি এই পুরস্কার পেয়েছ। এসো, আজ আমরা কাম্যাকে দিয়েই কথা বলা শুরু করি। আমি অবশ্যই তার কাছে কিছু জানতে চাইব।
প্রশ্ন : কাম্যা, আমি মনে করি না যে তুমি এই দিনগুলিতে চুপচাপ বসেছিলে, অবশ্যই কিছু না কিছু করেছ। তুমি সম্প্রতি কোন নতুন পর্বত শিখরে আরোহন করেছ? না করলে আর কী করেছ? নাকি করোনার ফলে তুমি কোনও সমস্যায় পড়েছ? কী হয়েছে?
উত্তর : স্যার, করোনা গোটা দেশকেই কিছুটা সমস্যার মুখে ফেলে দিয়েছিল। কিন্তু যেমনটি আপনি বলেছেন, আমরা চুপচাপ বসে থাকতে পারি না। আমাদের করোনার পরও শক্তিশালী হয়ে বেরিয়ে আসতে হবে। সেজন্য আমি করোনার সময়ে নিজের সম্পূর্ণ প্রশিক্ষণ এবং রুটিন চালু রেখেছি। আর এই সময়ে আমরা জম্মু-কাশ্মীরের গুলমার্গে রয়েছি। আমার পরবর্তী পর্বত আরোহনের জন্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছি। আমার পরবর্তী লক্ষ্য উত্তর আমেরিকার মাউন্ট দেনালী। আমরা এ বছর জুন মাসে মাউট দেনালী আরোহনের জন্য এখন প্রশিক্ষণ নিচ্ছি।
প্রশ্ন : তাহলে তুমি এখন বারামুলাতে আছ?
উত্তর : হ্যাঁ স্যার। এখানকার অফিসের সবাই আমাদের খুব সাহায্য করছেন। তাঁরাও বিগত তিনদিন ধরে ২৪x৭ কাজ করছেন। আর আমরা এখানে বারামুলায় এসে আপনার সঙ্গে কথা বলতে পারলাম স্যার।
প্রশ্ন : তোমার সঙ্গে আর কারা রয়েছেন পরিচয় করাও।
উত্তর : স্যার ইনি আমার মা, আর ইনি আমার বাবা।
কাম্যার বাবা : নমস্কার!
মোদীজি : আপনাদের অভিনন্দন জানাই। আপনারা মেয়ের সাহস বাড়িয়েছেন, তাকে সাহায্যও করছেন। আমি এরকম মা-বাবাকে বিশেষভাবে অভিনন্দন জানাই। আচ্ছা, সব থেকে বড় পুরস্কার তো তোমার জন্য তোমার পরিশ্রম এবং মনোবল। তুমি পাহাড়ে চড়, ট্রেকিং করো, গোটা বিশ্বে ঘোরো, হঠাৎই করোনার ফলে গৃহবন্দী হয়ে পড়েছিলে। এই এক বছর কিভাবে কাটিয়েছ? কী করছিলে?
উত্তর : স্যার, আমি করোনাকে একটি সুযোগ হিসেবে নিয়েছি। যদিও আমি ...
প্রশ্ন : অর্থাৎ তুমি বিপর্যয়কে সুযোগে পরিবর্তিত করেছ?
উত্তর : হ্যাঁ স্যার।
প্রশ্ন : হ্যাঁ বলতে থাক।
উত্তর : স্যার, এই সময়ে পর্বতারোহন সম্ভব ছিল না। তখন আমি ভেবেছি যে এই সুযোগে অন্যান্যদের ঠিক সময়ে পৌঁছনোর জন্য প্রেরণা জোগাতে পারি। আমি অনেক বিদ্যালয়, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ওয়েবিনারের মাধ্যমে কথা বলেছি। আমার অভিযান সম্পর্কে বলেছি, আর আমার বার্তা ছড়িয়ে দিতে চাইছি স্যার।
প্রশ্ন : কিন্তু ফিজিক্যাল ফিটনেস বজায় রাখার জন্যও তো তোমাকে কিছু করতে হয়েছে?
উত্তর : হ্যাঁ স্যার, সাধারণত আমি দৌড় এবং সাইকেল চালাতে যাই। কিন্তু লকডাউনের প্রথম দিকে এসবের অনুমতি ছিল না। তখন আমরা মুম্বাইয়ে একটি ২১ তলা বাড়িতে থাকতাম। আমি নিজের শরীর সুস্থ রাখার জন্য সেই বাড়ির সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামা করতাম। আর লকডাউন কিছুটা শিথিল হওয়ার পর আমরা সপ্তাহান্তে মুম্বাই থেকে সহ্যাদ্রী পাহাড়ে গিয়ে ট্রেকিং করতাম স্যার।
প্রশ্ন : হ্যাঁ মুম্বাইয়ে তো কখনও শীত কাকে বলে বোঝাই যায় না। আর এখন তুমি যেখানে আছ বারামুলায়, সেখানে নিশ্চয়ই খুব ঠান্ডা?
উত্তর : হ্যাঁ স্যার।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য : দেখুন, করোনা নিশ্চিতভাবে সবাইকে প্রভাবিত করেছে। কিন্তু একটি বিষয় আমি লক্ষ্য করেছি, দেশের শিশুরা, দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই মহামারী মোকাবিলায় সবচাইতে বড় ভূমিকা পালন করেছে। ২০ সেকেন্ড পরপর সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাসটি সবার আগে বাচ্চারাই রপ্ত করেছে। আর আমি তখন সামাজিক মাধ্যমগুলিতে অনেক ভিডিও দেখেছি, যেগুলিতে বাচ্চারা সবাইকে করোনা থেকে বাঁচার নানা উপায় সম্পর্কে বলছিল। আজ এ ধরনের প্রত্যেক ছেলেমেয়ে এখানে পুরস্কৃত হয়েছে। এভাবে পরিবার এবং সমাজ যেখানে ছোটবেলা থেকে শিক্ষার সংস্কৃতি থাকে, সেখানে শিশুদের ব্যক্তিত্ব দ্রুত বিকশিত হয়। পাশাপাশি, বড়রাও থেমে থাকেন না। তাঁদের মধ্যেও শিক্ষার ইচ্ছা জাগে, উৎসাহও বজায় থাকে। আর বড়রাও ভাবতে শুরু করেন – আরে বাহ! আমাদের ছেলে-মেয়েরা এরকম করছে, আমরাও অবশ্যই করব। আমরা করোনার সঙ্কটকালেও দেখেছি আর স্বচ্ছ ভারত মিশনের সময়েও এটা দেখেছি। বাচ্চারা যখন কোনও আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয় তখন সেই আন্দোলন সফল হবেই। কাম্যা তোমাকে, তোমার মা-বাবাকে, তোমার প্রশিক্ষকদের অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই, অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। তুমি কাশ্মীরে খুব আনন্দ করো, আর নতুন সাহস নিয়ে এগিয়ে যাও। নিজের স্বাস্থ্য এবং ফিটনেসের দিকে লক্ষ্য রেখো, নতুন নতুন শৃঙ্গ জয় করো।
প্রিয় শিশুরা, আজ আমাদের সঙ্গে ঝাড়খণ্ডের একটি মেয়ে রয়েছে তার নাম সবিতা কুমারী। সে খুব ভালো খেলার দক্ষতার জন্য এই পুরস্কার পাচ্ছে।
প্রশ্ন : সবিতা তুমি তীরন্দাজীকে বেছে নেওয়ার সাহস কিভাবে পেলে? তোমার বাড়িতে কি কেউ সমর্থন করেছে? আমি তোমার কাছ থেকে শুনতে চাই, যাতে দেশের শিশুরা জানতে পারে ঝাড়খণ্ডের গভীর অরণ্যগুলি থেকে উঠে এসে আমাদের একটি মেয়ে কেমন পরাক্রম দেখাচ্ছে। এর মাধ্যমে দেশের শিশুরা প্রেরণা পাবে। বলো।
উত্তর : হ্যাঁ স্যার, কস্তুরবা গান্ধী বালিকা বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি। সেখানেই তীরন্দাজী শেখার প্রেরণা পাই।
প্রশ্ন : তুমি ইতিমধ্যেই দেশের জন্য মেডেল আনতে শুরু করেছ। সারা দেশের শুভকামনা তোমার সঙ্গে আছে। ভবিষ্যতের জন্য তোমার মনে কী লক্ষ্য স্থির করেছ?
উত্তর : স্যার, আমি আন্তর্জাতিক ক্রীড়া থেকে স্বর্ণ পদক জিততে চাই। আর যখন বিদেশের মাঠে আমাদের জাতীয় স্তোত্র বাজে, তখন খুব আনন্দ পাই।
প্রশ্ন : বাহ! তোমার সঙ্গে কে কে এসেছেন?
উত্তর : স্যার মা এসেছেন, আর এদিকে বাবাও এসেছেন।
প্রশ্ন : আচ্ছা, ও কি আগে এসব খেলত? সবিতার বাবা বলুন। আপনিও কি কখনও খেলতেন?
উত্তর : না স্যার।
প্রশ্ন : তার মানে সবার আগে সবিতাই শুরু করেছে?
উত্তর : হ্যাঁ স্যার।
প্রশ্ন : তাহলে এখন যখন বাইরে যাও তখন মা-বাবা চিন্তা করেন না?
উত্তর : স্যার, এখন তো আমাদের সঙ্গে স্যার রয়েছেন। তিনিই সব সময় সঙ্গে থাকেন।
প্রশ্ন : খুব ভালো।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য : আমি প্রার্থনা করি, তুমি যেন অবশ্যই অলিম্পিকে খেলতে পারো, স্বর্ণ পদক জিতে আসো। তোমার স্বপ্নগুলি প্রকৃতপক্ষেই ভারতের প্রত্যেক শিশুর নতুন স্বপ্নগুলি সাজানোর প্রেরণা দেয়। আমার শুভকামনা তোমার সঙ্গে রয়েছে। ক্রীড়া বিশ্বে ঝাড়খণ্ডের যে প্রতিভা রয়েছে, সেজন্য গোটা দেশ গর্বিত। আমি দেখেছি, ঝাড়খণ্ডের মেয়েরা অনেক সাফল্য পাচ্ছে। অনেক খেলাতেই তাঁরা নিজেদের নাম উজ্জ্বল করছে। ছোট ছোট গ্রাম, ছোট ছোট শহরগুলি থেকে উঠে এসে দেশের নাম উজ্জ্বল করছে। সবিতা তোমাকে আমার অনেক আশীর্বাদ। খুব বড় হোক! অনেক এগিয়ে যাক!
উত্তর : ধন্যবাদ স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : আমার ছোট বন্ধুরা, এবারের জাতীয় শিশু পুরস্কারে যে বৈচিত্র্য রয়েছে তা আমার খুব ভালো লাগছে। তীরন্দাজী থেকে এখন আমরা শিল্পকলার জগতে এগিয়ে যাব। আমাদের মণিপুরের কন্যা কুমারী নবীশ কিসম খুব ভালো ছবি আঁকার জন্য সে আজ পুরস্কার পেয়েছে।
প্রশ্ন : বলো মা নবীশ, আমরা তোমার কথা শুনতে চাই। তুমি খুব ভালো ছবি আঁকো। রং-এর মধ্যে এমনিতেই অনেক প্রাণশক্তি থাকে। আর আমাদের উত্তর-পূর্ব ভারত তো এমনিতেই অনেক রঙিন। সেই রংগুলি সাজিয়ে জীবনকে পরিপূর্ণ করে দেওয়া যায়। আমাকে বলা হয়েছে যে তুমি পরিবেশ ও প্রকৃতি নিয়ে, প্রকৃতির সজীবতা নিয়ে তৈলচিত্র তৈরি কর। এই বিষয়টা তোমাকে কেন এত আকর্ষণ করে?
উত্তর : শুভ দুপুর স্যার। আমি বনীশ কিসম আপনার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলতে পেরে অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করছি। আমি পরিবেশ ও প্রকৃতি নিয়ে ছবি আঁকতে পছন্দ করি, কারণ, যতদিন যাচ্ছে আমাদের পরিবেশ ক্রমে নোংরা হচ্ছে। এমনকি আমাদের ইম্ফলেও অনেক পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। আমি গাছ লাগিয়ে পরিবেশকে রক্ষা করতে চাই। আমাদের উদ্ভিদ ও প্রাণীদের জীবন বাঁচাতে চাই। আমাদের অরণ্যকে রক্ষা করতে চাই। এই বার্তা জনমানসে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমি ছবি আঁকাকে মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছি।
প্রশ্ন : আচ্ছা, তোমার পরিবারে কি আর কেউ ছবি আঁকে? বাবা, মা, ভাই, কাকা আর কেউ?
উত্তর : না স্যার। আমার বাবা একজন ব্যবসায়ী, আর মা বাড়ির দেখাশোনা করেন। আমিই শুধু ছবি আঁকি।
প্রশ্ন : এখন কি তোমার সঙ্গে বাবা-মা আছেন?
উত্তর : হ্যাঁ।
প্রশ্ন : ওঁরা তো বোধহয় তোমাকে ছবি আঁকার জন্য বকেন, পড়াশোনা ঠিকমতো কর না, রান্না কর না, বাড়ির কাজ কর না, এসব বলে বকেন?
উত্তর : না স্যার। ওঁরা সবাই আমাকে সমর্থন করেন।
প্রশ্ন : তুমি অনেক ভাগ্যবতী। আচ্ছা তোমার বয়স কত? এত বড় তোমার ভাবনা? ছবি আঁকা ছাড়া তোমার আর কী হবি আছে?
উত্তর : স্যার, আমি গান গাইতে ভালোবাসি, বাগান করতেও ভালোবাসি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য : নবীশ, আমি অনেকবার মণিপুরে গিয়েছি। সেখানকার প্রকৃতি আমাকে খুব আকর্ষণ করে। সেখানকার অভিজ্ঞতা আমার দারুন। সেখানকার মানুষের মনে প্রকৃতি সম্পর্কে যে শ্রদ্ধা রয়েছে, প্রকৃতিকে রক্ষা করার জন্য গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রত্যেক মানুষ যেভাবে জীবনপণ লড়াই করে, বিশেষ করে মণিপুরেই এটা দেখা যায়, আমি মনে করি, এটা অনেক বড় শিষ্টাচার।
প্রশ্ন : আচ্ছা, তুমি বললে তুমি গান গাও। তুমি কি আমাদেরকে একটা গান শোনাবে?
উত্তর : হ্যাঁ স্যার। আমি কিন্তু পেশাদার গায়িকা নই। কিন্তু ভালোবাসি। আমি আমাদের একটি লোকগীতি গেয়ে শোনাচ্ছি। (গান)
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য : খুব ভালো। আমি তোমার মা-বাবাকে অভিনন্দন জানাই আর মনে করি তোমার গানটাও চালিয়ে যাওয়া উচিৎ। তোমার গলা খুব সুন্দর। আমি কোনও সঙ্গীত-শাস্ত্র জানি না, কিন্তু ভালো লেগেছে। তোমার সঙ্গীতচর্চা করা উচিৎ। তোমাকে অনেক অনেক আশীর্বাদ।
বন্ধুগণ,
আমাদের দেশের শিশুরা এত প্রতিভা নিয়ে এগিয়ে চলেছে, তাদের যতই প্রশংসা করা হোক না কেন, তা কম। এখন দেখুন, একদিকে এত সুন্দর চিত্রশিল্পী নবীশ, আর অন্যদিকে কর্ণাটকের রাকেশ কৃষ্ণ চাষের ক্ষেত্রে উদ্ভাবনের জন্য জাতীয় পুরস্কার পেল। রাকেশ তোমাকে অনেক অনেক অভিনন্দন। আমি তোমার সঙ্গেও কথা বলতে চাই।
প্রশ্ন : রাকেশ, তোমার প্রোফাইল দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে। তুমি এত কম বয়সেই উদ্ভাবন করছো, আমাদের কৃষকদের জন্য ভাবছো। তুমি বিজ্ঞানের ছাত্র। তোমার জন্য গবেষণা করা ও উদ্ভাবন তো স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু কৃষকদের জন্য উদ্ভাবন কম কথা নয়। আমি অবশ্যই তোমার কথা শুনতে চাইব কিভাবে তুমি এরকম কাজ করার কথা ভেবেছ?
উত্তর : স্যার সবার আগে আপনাকে নমস্কার জানাই। আমি বলতে চাই, বিজ্ঞান এবং উদ্ভাবনে আমার ঝোঁক আগে থেকেই ছিল। কিন্তু আমার বাবা একজন কৃষক, আর আমিও কৃষক পরিবারেরই ছেলে। ইনি আমার বাবা, আর ইনি আমার মা। আমি ছোটবেলা থেকেই লক্ষ্য করতাম, কৃষির প্রচলিত পদ্ধতিতে অনেক সমস্যা রয়েছে। সেজন্যই নতুন কিছু করার কথা ভেবেছি। কৃষকরা আমাদের দেশের অন্নদাতা। আমি প্রযুক্তির মাধ্যমে নতুন কিছু করার কথা ভেবে কাজ করে চলেছি। এখন পর্যন্ত যে মেশিনটি বানিয়েছি, সেটি সাধারণ প্রক্রিয়া থেকে কৃষিক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ বেশি লাভের পথ দেখাচ্ছে।
প্রশ্ন : আচ্ছা, এই মেশিন কি তোমাদের ফসলের খেতে প্রয়োগ করেছ?
উত্তর : হ্যাঁ স্যার, প্রয়োগ করেছি। আমার মেশিন ১০-১৫ শতাংশ সময় সাশ্রয় করে। প্রয়োগের পর দেখলাম, এই মেশিনে ‘জার্মিনেশন রেট’ অধিক হওয়ায় বাবার লাভ বেশি হয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে দক্ষ শ্রমিক চাই। সেই শ্রমিকদের চাহিদা এখন তুঙ্গে। তাঁদের পারিশ্রমিকও অনেক বেড়ে গেছে। সেজন্য আমি একটি মাল্টি-পারপাস মেশিন তৈরি করেছি যেটি কৃষকদের সব কাজ একসঙ্গে করতে পারে। ফলে অনেক টাকা এবং সময় সাশ্রয় হয়।
প্রশ্ন : আচ্ছা, যখন তুমি তৈরি করলে, খবরের কাগজে ছাপা হল, অনেকে জানতে পারলেন, তখন কি কোনও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, কোনও স্টার্ট-আপ কোম্পানি তোমার কাছে পৌঁছেছে? তোমাকে কি কেউ এই মেশিন বড় মাত্রায় উৎপাদনের জন্য কোনও প্রস্তাব রেখেছে?
উত্তর : হ্যাঁ স্যার। দু'তিনটে কোম্পানি এসেছে। আর আমি রাষ্ট্রপতি ভবনে ফেস্টিভ্যাল অফ ইনোভেশনে অংশগ্রহণ করেছিলাম। সেখানেও অনেকে এসে জিজ্ঞাসা করেছে স্যার। কিন্তু আমার প্রোটোটাইপ এখনও সম্পূর্ণ তৈরি হয়নি। এখনও অনেক কাজ করার বাকি। আমি এটাকে আরও ভালোভাবে তৈরি করতে চাই স্যার।
প্রশ্ন : তোমার শিক্ষকরা কি এক্ষেত্রে আগ্রহ দেখাচ্ছেন? তোমাকে সাহায্য করছেন? কোনও বৈজ্ঞানিক কি তোমাকে সাহায্য করছেন? কেউ কি তোমার সঙ্গে অনলাইনে যোগাযোগ করেছেন?
উত্তর : হ্যাঁ স্যার। আগে যখন হাইস্কুলে পড়তাম সেখানকার বিজ্ঞান শিক্ষকরা, আর এখন প্রি-ইউনিভার্সিটি কলেজের অধ্যাপকরা আমাকে সাহায্য করছেন, প্রেরণাও জোগাচ্ছেন। আমার প্রতিটি পদক্ষেপ আমার পরিশ্রমী বাবা-মা এবং শিক্ষকদের প্রেরণাতেই নিতে পেরেছি। আজ যতটাই এগিয়েছি, সব তাঁদের সাহায্যেই সম্ভব হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী : ঠিক আছে, তোমার মা-বাবাকে অভিনন্দন জানাই। তাঁরা চাষের কাজ ভালোভাবে করেছেন আর ছেলেকে বিজ্ঞানী হয়ে উঠতে সাহায্য করছেন। তাঁদের ভালোবাসা ও ছেলের মেধা কৃষির উন্নতিতে কাজে লাগছে। সেজন্য তাঁরা দ্বিগুণ অভিনন্দনের অধিকারী।
রাকেশ, আজ আমাদের দেশে প্রয়োজন হল আধুনিক কৃষি। আর আমি এটা দেখে খুব আনন্দ পেয়েছি যে এত কম বয়সে তুমি শুধুই একথা উপলব্ধি করে থেকে যাওনি, তুমি কৃষিকে আধুনিক করে তোলার জন্য প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টাও করেছ। তুমি যাতে এভাবে এক্ষেত্রে আরও সাফল্য পাও, সেই শুভকামনা জানাই। তোমার মা-বাবাকে ধন্যবাদ জানাই।
আসুন এখন উত্তরপ্রদেশের দিকে এগোই। উত্তরপ্রদেশে আলিগড়ের বাসিন্দা মহম্মদ সাদাব, তাঁর সঙ্গে কথা বলি। যেমনটি বলা হয়েছে, মহম্মদ সাদাব আমেরিকা পর্যন্ত ভারতের পতাকা পুঁতে এসেছে। দেশের নাম উজ্জ্বল করেছে।
প্রশ্ন : সাদাব, তুমি আমেরিকায় নবীন রাজদূতের মতো কাজ করছো। ছাত্রবৃত্তি পেয়ে তুমি আলিগড় থেকে আমেরিকা পর্যন্ত গিয়েছে। অনেক পুরস্কারও পেয়েছ। আর নারী স্বশক্তিকরণ নিয়ে অনেক কাজও করেছো। এতকিছু করার প্রেরণা তুমি কোথা থেকে পেয়েছ?
উত্তর : মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজি নমস্কার! সবার আগে বলতে চাই আমি আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র। আর এসব কিছু করার প্রেরণা আমি আমার বাবা-মা এবং আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের থেকে পাই। আমরা সবাই জানি, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা বিশ্বকে অনেক নামীদামি মানুষ উপহার দিয়েছে। তেমনই আমিও আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উজ্জ্বল করতে চাই আর দেশের জন্য কিছু করতে চাই।
প্রশ্ন : তোমার বাবা-মা কি তোমাকে সাহায্য করেন নাকি তুমি একাই সব করছো?
উত্তর : না। আমার বাবা-মা শুরু থেকেই সমর্থন করে আসছেন। তাঁরা আমাকে ছোটবেলাতেই এ পি জে আব্দুল কালাম আজাদ স্যারের দৃষ্টান্ত দিয়ে বলেছেন যে আজ দেশ কারোর গোলাম নয়। এমন কিছু দেশের জন্য করো যাতে দেশ তোমাকে অনেক বছর মনে রাখে।
প্রশ্ন : দেখো, তুমি সত্যি সত্যি দেশের নাম উজ্জ্বল করছ। ভবিষ্যতের জন্য কি ভাবছ? কিছু তো নিশ্চয়ই ভাবছ?
উত্তর : হ্যাঁ স্যার, আমার স্বপ্ন হল বড় হয়ে আইএএস অফিসার হওয়া আর সমাজের সেবা করা। আর আমি সেখানে থেমে থাকতে চাই না। আমি ভবিষ্যতে রাষ্ট্রসঙ্ঘে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করতে চাই। আমার স্বপ্ন হল রাষ্ট্রসঙ্ঘে গিয়ে আমার দেশের পতাকা ওড়ানো, আর দেশের নাম উজ্জ্বল করা।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য : বাহ! বিশ্বে ভারতের নাম আরও উজ্জ্বল করতে, নতুন ভারতের পরিচয় আরও শক্তিশালী করতে আমাদের দেশের নবীন প্রজন্মের কাঁধে বড় দায়িত্ব রয়েছে। আর সাদাব, আমি তোমাকে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। তোমার মনে অনেক স্বচ্ছ ভাব রয়েছে। আর তোমার বাবা-মা ছোটবেলা থেকেই তোমার মস্তিষ্কে আব্দুল কালামজিকে আদর্শরূপে স্থাপন করেছেন। তোমার মনে এই স্বপ্ন প্রোথিত করার জন্য আমি তোমার মা-বাবাকে অনেক অভিনন্দন জানাই। তাঁরা তোমাকে সঠিক পথ দেখিয়েছেন। আদর্শ কেমন হওয়া উচিৎ তা ছোটবেলাতেই তোমাকে শিখিয়েছেন, যা তোমার জীবনকে সুন্দর করে তুলেছে। তুমি তোমার মা-বাবার মন্ত্র নিয়ে জীবনে সফল হবে এই আশা রেখে আমি তোমাকে অনেক অভিনন্দন জানাই, অনেক অনেক শুভকামনা জানাই।
আসুন, এবার আমরা গুজরাটে যাই। গুজরাটের মন্ত্র জিতেন্দ্র হরখানি। মন্ত্র জিতেন্দ্র ক্রীড়াক্ষেত্রে, সাঁতারে কৃতিত্বের জন্য জাতীয় পুরস্কার পেল।
প্রশ্ন : মন্ত্র কেমন আছ? ভালো আছ। তোমার সঙ্গে কে কে আছে?
উত্তর : আমার সঙ্গে বাবা-মা আছেন।
প্রশ্ন : আচ্ছা মন্ত্র একথা বলো, সারা দেশের মানুষ এখন তোমাকে দেখছে, তুমি দেশের নাম উজ্জ্বল করেছ, আমি যখন ছোট ছিলাম, আমার গ্রাম বডনগরে তখন আমাদের গ্রামে একটা বড় পুকুর ছিল। আমরা সবাই সেখানে সাঁতার কাটতাম। কিন্তু সেই সাঁতার আর তোমার সাঁতারের মধ্যে অনেক পার্থক্য বাবা! তোমার ক্ষেত্রে অনেক প্রশিক্ষণ চাই, অনেক পরিশ্রম করতে হয়। আর তুমি তো সাঁতারে নতুন নতুন রেকর্ড বানিয়ে সকলের প্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছ। তুমি তো ক্রীড়াবিদ। আর ক্রীড়াবিদরা তাঁদের লক্ষ্য পূরণের জন্য খুব একাগ্র থাকেন। আমি তোমার কাছে জানতে চাই, তোমার কী লক্ষ্য? কী করতে চাও? কিভাবে এগোতে চাও? হ্যাঁ বলো এদিকে, আমার সঙ্গে কথা বলো!
উত্তর : গুড মর্নিং স্যার!
প্রশ্ন : হ্যাঁ, গুড মর্নিং, বলো।
উত্তর : স্যার, আমি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সাঁতারু হতে চাই। আর আপনার মতো হতে চাই। দেশের সেবা করতে চাই।
প্রশ্ন : দেখো, তোমার মনে এত স্বপ্ন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, তোমার মা-বাবা যে সমর্পণ ভাব নিয়ে তোমার জন্য তাঁদের সময় উৎসর্গ করছেন, তুমিই তাঁদের জীবনে স্বপ্নের মূর্ত রূপ হয়ে উঠেছ। তাঁদের জীবনের মন্ত্র হয়ে উঠেছ। সেজন্য আজ যত পরিশ্রম করছো, যে সাহস নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছ, তা শুধু তোমার মা-বাবা নয়, তোমার মতো প্রত্যেক ছেলে-মেয়ের মা-বাবার জন্য তোমার বাবা-মা প্রেরণার উৎস। সেজন্য আমি তোমাকে অনেক অভিনন্দন জানাই। তুমি এত উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে কথা বলছ। এটাও কম কথা নয়। কেউ একজন আমাকে বলল, তোমার কোচ নাকি তোমাকে কথা দিয়েছে আমার সঙ্গে দেখা করাবেন? তাহলে তুমি কোচের সঙ্গে ঝগড়া করনি কেন? এতদিন দেখা করায়নি কেন?
উত্তর : আপনি আসুন, আমরা চা খাওয়াব।
প্রশ্ন : আমি যখন গুজরাট যাব দেখা করতে আসবে?
উত্তর : অবশ্যই।
প্রশ্ন : তাহলে রাজকোটের গাঁঠিয়া নিয়ে আসতে হবে। ও কী বলছে?
উত্তর : স্যার ও বলছে, আপনি যখন আসবেন তখন জিলিপি, গাঁঠিয়া সব খাওয়াব। চা-ও খাওয়াব।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য : ঠিক আছে, অনেক অনেক অভিনন্দন আপনাকে। তোমরা সবাই খুব ভালো কথা বলেছ। প্রিয় নবীন বন্ধুরা, এই বার্তালাপে আর তোমাদের পাওয়া পুরস্কারগুলি থেকে এটা বোঝা যায় কিভাবে একটা ছোট্ট ভাবনা একটি যথাযথ ক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়, আর কত বড় এবং প্রভাবশালী ফল পাওয়া যায়। তোমরা প্রত্যেকেই এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। আজ তোমাদের এই সাফল্য, এর সূত্রপাত কোন ভাবনা থেকে? যে কোনও একটা ভাবনা থেকে তো নিশ্চয়ই শুরু হয়েছে! যেমন এখানে পশ্চিমবঙ্গের সৌহার্দ্য দে আছে। সে পৌরাণিক গল্প এবং দেশের গৌরবময় ইতিহাস নিয়ে লেখালেখি করে। যখন তার মনে প্রথমবার এই ভাবনা এসেছে যে এই বিষয় নিয়ে জানতে হবে, লিখতে হবে, তখন সে শুধুই এটা ভেবে বসে থাকেনি। সে যথাযথ পরিশ্রম করেছে, লেখা শুরু করেছে, আর আজ তার ফল আমরা দেখতে পাচ্ছি। তেমনই আসামের তনুজ সমাদ্দার, বিহারের জ্যোতি কুমারী, আর দুটি শিশুর জীবনরক্ষাকারী মহারাষ্ট্রের কামেশ্বর জগন্নাথ বাঘমারে। সিকিমের আয়ুষ রঞ্জন, পাঞ্জাবের মেয়ে নাম্যা যোশী - প্রত্যেক শিশুর প্রতিভা দেশের গৌরব বাড়িয়েছে। আমার তোমাদের সবার সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছা করছে। তোমরা সবাই ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’-এর অত্যন্ত সুন্দর অভিব্যক্তি। কিন্তু সময়ের অভাবে এটা পারলাম না।
বন্ধুগণ,
সংস্কৃতে একটি খুব সুন্দর শ্লোক আছে। আমরা যখন ছোট ছিলাম, আমাদের শিক্ষক এটা শোনাতেন, আর বারবার বলে এটা আমাদের মুখস্থ করিয়েছিলেন। সেই শ্লোকটি হল – “উদ্যমেন হি সিধ্যন্তি, কার্যানি ন মনোরথৈ” অর্থাৎ, উদ্যম ও পরিশ্রমের মাধ্যমেই সাফল্য আসে। শুধু কল্পনা করলে আসে না। একটি ভাবনা যখন ক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়, তখন তাতে আরও ক্রিয়া যুক্ত হতে শুরু করে। যেমন তোমাদের সাফল্য আরও কত শিশু-কিশোরকে প্রেরণা জোগাচ্ছে। তোমাদের বন্ধু-বান্ধব, দেশের অন্যান্য শিশুরা, যারা তোমাদের টিভিতে দেখছে, খবরের কাগজে তোমাদের সম্পর্কে পড়ছে, তারাও তোমাদের থেকে প্রেরণা নিয়ে এগিয়ে যাবে, নতুন সঙ্কল্প নেবে আর সেগুলি বাস্তবায়িত করার জন্য প্রাণপন চেষ্টা করবে। এভাবেই তাদের থেকে আরও অনেকে প্রেরণা পাবে। এই চক্র এভাবেই বৃদ্ধি পায়। কিন্তু প্রিয় শিশুরা, আরেকটি কথা তোমাদের বলতে চাই। আমার একথাটি সব সময় মনে রেখ। এই পুরস্কার তোমাদের জীবনের একটি ছোট্ট ধাপ মাত্র। তোমাদের এই সাফল্যের আনন্দে আত্মহারা হলে চলবে না। তোমরা যখন এখান থেকে যাবে, সবাই তখন তোমাদের খুব প্রশংসা করবে। খবরের কাগজে তোমাদের নামও ছাপা হবে, তোমাদের সাক্ষাৎকারও ছাপা হবে। কিন্তু তোমরা মনে রেখ, এই প্রশংসা শুধু তোমাদের কাজের জন্য, তোমাদের দায়বদ্ধতার জন্য। প্রশংসায় পথ হারিয়ে যদি তোমাদের কাজ করার ইচ্ছা মরে যায়, তোমরা তা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়, তাহলে এই প্রশংসা তোমাদের জীবনে বাধা হয়ে উঠতে পারে। এখন পরবর্তী জীবনেও তোমাদের আরও অনেক সাফল্য অর্জন করতে হবে। আর আমি তোমাদের একটা পরামর্শ দিতে চাইব, তোমরা প্রত্যেকে নিশ্চয়ই কিছু না কিছু পড়াশোনা কর। কিন্তু আমি বলব, প্রতি বছর তোমাদের পছন্দের বই ছাড়াও কারোর না কারোর জীবনী গ্রন্থ অবশ্যই পড়বে। সেটা জীবনীও হতে পারে, আত্মকথাও হতে পারে। কোনও বৈজ্ঞানিক, খেলোয়াড় কিংবা কোনও বড় সফল কৃষকেরও হতে পারে। আবার কোনও দার্শনিক কিংবা লেখকেরও হতে পারে। তোমরা প্রতি বছর কম করে একজনের জীবনী পড়বে। তাহলে দেখবে লাগাতার নতুন প্রেরণা পাবে।
আমার নবীন বন্ধুরা,
আমি চাইব, তোমরা এইসব বিষয়ে অবশ্যই গুরুত্ব দেবে। এর সঙ্গে আরও তিনটি বিষয় আমি যুক্ত করতে চাই। প্রথম – নিরন্তর কাজ করে যাওয়ার সঙ্কল্প। অর্থাৎ, তোমার কাজের গতি কখনও থামা উচিৎ নয়। কখনও শ্লথ হলে চলবে না। যখনই একটি কাজ সম্পূর্ণ হবে, তার পরবর্তী ধাপের কথা ভাবা উচিৎ।
দ্বিতীয় – দেশের জন্য সঙ্কল্প। যে কাজই করবে, শুধু নিজের কাজ ভেবে করবে না। আমার কাজ, আমার জন্য কাজ – এই ভাবনা তোমাদের কাজের পরিধিকে অনেক সীমিত করে দেয়। যখন দেশের জন্য করছি ভেবে কোনও কাজ করবে, তখনই দেখবে কাজটা কত বড় হয়ে যাবে। অনেকেই বুঝতে পারবে যে তোমরা তাঁদের জন্য কিছু না কিছু করছ। তাঁদের প্রতিক্রিয়া থেকে তোমাদের ভাবনার বিস্তার আরও বাড়বে। এ বছর আমাদের দেশ স্বাধীনতার ৭৫ বছরে পদার্পণ করবে। তোমরা সবাই ভাব, এমন কী করতে পার যার মাধ্যমে দেশ আরও এগিয়ে যাবে?
আর তৃতীয় যে কথাটি আমি বলতে চাই তা হল, বিনম্রতার সঙ্কল্প।
প্রত্যেক সাফল্যের সঙ্গে তোমাদের আরও বিনম্র হওয়ার সঙ্কল্প নিতে হবে, কারণ, তোমাদের মধ্যে বিনম্রতা থাকলেই তোমাদের সাফল্যকে আরও শত শত মানুষ, হাজার হাজার মানুষ তোমাদের সঙ্গে মিলে উদযাপন করবে। তখন তোমাদের সাফল্য তোমাদেরকে ছাপিয়ে অনেক বড় হয়ে যাবে। তাহলে আমি কি ধরে নিতে পারি যে তোমরা এই তিনটি সঙ্কল্প মনে রাখবে? ঠিক মনে রাখবে তো? আমার দৃঢ় বিশ্বাস, তোমরা প্রত্যেকেই খুব একাগ্রতা নিয়ে কাজ কর। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, তোমরা আমার কথাগুলি ভুলবে না। আমি জানি, তোমরা ভুলবে না, কাউকে ভুলতেও দেবে না। তোমরা প্রত্যেকেই ভবিষ্যতে আরও বড় বড় কাজ করবে। তোমাদের জীবনের ভবিষ্যতের যত স্বপ্ন, এই সমস্ত স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে। আর লাগাতার এরকম সাফল্যের মাধ্যমে তোমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এই শুভেচ্ছা জানিয়ে তোমাদের পরিবারের সবাইকে, তোমাদের শিক্ষকদের এবং সমস্ত বন্ধু-বান্ধবকে অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই, অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। আর আমি সমস্ত পুরস্কার প্রাপক শিশু-কিশোরদের অনেক অনেক আশীর্বাদ জানাই।
অনেক অনেক ধন্যবাদ!