নবীন প্রাণশক্তি, নবীন স্বপ্ন, কত অকুল, কত বিশাল, আপনারা সবাই তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এতক্ষণ ধরে আমি আপনাদের সবাইকে অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে শুনছিলাম, দেখছিলাম যে প্রত্যয় নিয়ে আপনারা বলছিলেন তা যেন সব সময় এরকম থাকে। আপনারা ভাবুন, আপনাদের স্টার্ট-আপ-এর পরিধি কত বড়। একটি স্টার্ট-আপ কার্বন ফাইবার থ্রি-ডি প্রিন্টার নিয়ে , আর অন্যটির প্রতিনিধি স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকেল নিয়ে কথা বলছিলেন। ই-টয়লেট থেকে শুরু করে বায়ো-ড্রিগ্রেডেবল পিপিই কিট পর্যন্ত, আর মধুমেহর ওষুধ থেকে শুরু করে কিট তৈরির মিশন পর্যন্ত, দিব্যাঙ্গদের জন্য এআর টেকনোলজি পর্যন্ত যত বিষয় নিয়ে আপনারা স্টার্ট-আপ চালু করেছেন, সেগুলি নিয়ে বলেছেন, তা আমার মনে এমন অনুভব এনে দিয়েছে যে আপনাদের মধ্যে ভারতের তথা বিশ্বের ভবিষ্যৎ পরিবর্তনের শক্তি কত বড়, কত অসীম সম্ভাবনা!
আরেকটি পরিবর্তন এখন দেখা যাচ্ছে, আগে যদি কোনও যুবক স্টার্ট-আপ শুরু করতেন তখন অনেকেই বলতেন, ‘কোনও ভালো চাকরি করছ না কেন? স্টার্ট-আপ কেন?’ এই মানসিকতা এখন বদলাচ্ছে। এখন মানুষ বলছেন, ‘চাকরি তো ঠিক আছে, কিন্তু একটা নিজস্ব স্টার্ট-আপও তো চালু করতে পারো!’ যে যুবক-যুবতীরা আগে থেকেই স্টার্ট-আপ-এ আছেন, তাঁদেরকে দেখলেই এখন একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হল – ‘বাহ! আপনারা স্টার্ট-আপ!' এই পরিবর্তন বিমস্টেক সদস্য দেশগুলিতে অর্থাৎ, বঙ্গোপসাগর থেকে উন্নয়নের প্রেরণা গ্রহণকারী বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার এবং থাইল্যান্ডের বড় শক্তি। ভারতের স্টার্ট-আপ হোক কিংবা যে কোনও বিমস্টেক সদস্য দেশের স্টার্ট-আপ, প্রতিটি ক্ষেত্রেই এরকম প্রাণশক্তি দেখা যাচ্ছে। এই অনুষ্ঠানে আমার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন বিমস্টেক দেশগুলির মাননীয় মন্ত্রীগণ। বাংলাদেশ থেকে যুক্ত হয়েছেন শ্রী জুনেদ আহমেদ পালকজি, ভুটানের লিনপো থেকে যুক্ত হয়েছেন শ্রী লোকনাথ শর্মাজি, মায়ানমার থেকে যুক্ত হয়েছেন শ্রী ঊ থাঊঁগ তুনজি, নেপাল থেকে যুক্ত হয়েছেন শ্রী লেখরাজ ভট্টজি, শ্রীলঙ্কা থেকে যুক্ত হয়েছেন শ্রী নমল রাজপক্ষজি আর যুক্ত হয়েছেন বিমস্টেক-এর সচিব জেনারেল শ্রী তেনজিং লেকফেলজি, আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সহযোগী শ্রী পীযূষ গোয়েলজি, শ্রী প্রকাশ জাভড়েকরজি, শ্রী হরদীপ সিং পুরীজি, শ্রী সোমপ্রকাশজি, এই সভাস্থলে উপস্থিত শিল্প জগতের বিখ্যাত ব্যক্তিগণ - ফিকি-র সভাপতি শ্রী উদয় শঙ্করজি, শ্রী উদয় কোটাকজি, শ্রী সঞ্জীব মেহতাজি, ডঃ সঙ্গীতা রেড্ডিজি, শ্রী শুভ্রকান্ত পান্ডাজি, শ্রী সন্দীপ সোমানিজি, শ্রী হর্ষ মারিয়ালাজি, শ্রী সিঙ্ঘানিয়াজি, অন্য সমস্ত মাননীয় ব্যক্তিগণ, আর আমার স্টার্ট-আপ বিশ্বের প্রিয় নবীন বন্ধুরা!
আজকের দিনটি আমাদের সকলের জন্য অনেক 'প্রারম্ভের দিন'। আজ বিমস্টেক দেশগুলির প্রথম স্টার্ট-আপ কনক্লেভ আয়োজিত হচ্ছে। আজ 'স্টার্ট-আপ ইন্ডিয়া মুভমেন্ট' তার সফল পাঁচ বছর পূর্ণ করছে, আর আজই ভারত করোনার বিরুদ্ধে সব থেকে ঐতিহাসিক, বৃহত্তম টিকাকরণ অভিযান শুরু করল। এই দিনটি তাই আমাদের বৈজ্ঞানিকদের, আমাদের যুবক-যুবতীদের আর আমাদের শিল্পোদ্যোগীদের ক্ষমতা, আর আমাদের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের পরিশ্রম আর সেবাভাবের সাফল্যের সাক্ষী। করোনার বিরুদ্ধে লড়াই থেকে শুরু করে টিকা তৈরি করা পর্যন্ত আমাদের প্রত্যেকের যে অভিজ্ঞতা, আপনারা সেই অভিজ্ঞতাগুলি নিয়েই আজ সমস্ত বিমস্টেক দেশগুলির নবীন শিল্পোদ্যোগীদের এই 'প্রারম্ভ' শীর্ষ সম্মেলনে সামিল হয়েছেন। সেজন্য এই শীর্ষ সম্মেলন আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আমাকে বলা হয়েছে, এই দু'দিনে আপনারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন, নিজেদের স্টার্ট-আপ সাফল্যগাথা পরস্পরকে জানিয়েছেন, আর পারস্পরিক সহযোগিতার নতুন সুযোগ গড়ে তুলেছেন। যে ১২টি ক্ষেত্রে আমাদের দেশ স্টার্ট-আপ পুরস্কার প্রদান শুরু করেছিল, সে সমস্ত ক্ষেত্রের বিজেতাদের নাম ঘোষণাও হয়েছে। যাঁরা এই পুরস্কার জিতেছেন তাঁদের সবাইকে আমি অভিনন্দন জানাই।
ন্ধুগণ,
এই শতাব্দী ডিজিটাল বিপ্লব এবং ‘নিউ এজ ইনোভেশন’-এর শতাব্দী। আর এই শতাব্দীকে এশীয় শতাব্দীও বলা হয়। আর সেজন্য সময়ের চাহিদা হল ভবিষ্যতের প্রযুক্তিগুলি যেন এশিয়ার গবেষণাগারগুলি থেকে উদ্ভাবিত হয়, ভবিষ্যতের শিল্পোদ্যোগীরা যেন আমাদের এখান থেকে নিজেদের গড়ে তোলেন। সেজন্য এশিয়ার সেই দেশগুলির এগিয়ে এসে দায়িত্ব নিতে হবে যাঁরা একসঙ্গে মিলে কাজ করতে পারেন, পরস্পরের জন্য কাজ করতে পারেন। তাঁদের কাছে সম্পদও আছে, আর সহযোগিতার ভাবনাও আছে। সেজন্য এই দায়িত্ব স্বাভাবিকভাবেই আমাদের সমস্ত বিমস্টেক দেশগুলির ওপর ন্যস্ত হয়। আমাদের শতাব্দী শতাব্দী প্রাচীন সম্পর্ক, আমাদের সংস্কৃতি, সভ্যতা এবং নাগরিক সম্পর্কের সাধারণ ঐতিহ্য আমাদের সকলকে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত রেখেছে। আমরা নিজেদের ভাবনা পরস্পরকে বলি। আমরা নিজেদের ভাবনাকে আরও বেশি পরস্পরের কাছে বলতে সক্ষম। আমরা পরস্পরের সুখ-দুঃখে পাশে দাঁড়াই। সেজন্য আমাদের সাফল্য হবে - মিলিত সাফল্য। এর পাশাপাশি, আমরা একসঙ্গে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশের জন্য কাজ করছি। আমাদের কাছে মিলিতভাবে ৩.৮ ট্রিলিয়ন ডলার ডিজিপি-র শক্তিও রয়েছে। আমাদের যুব সম্প্রদায়ের যে প্রাণশক্তি, নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেরাই লেখার জন্য যে উদগ্রীব অধীরতা, আমি তাতে গোটা বিশ্বের জন্য অনেক নতুন সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি।
বন্ধুগণ,
সেজন্য আমি ২০১৮-য় বিমস্টেক শীর্ষ সম্মেলনে বলেছিলাম, আমরা সবাই দেশের প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করব। আমি বিমস্টেক স্টার্ট-আপ কনক্লেভেই একথা বলেছিলাম। সেই সঙ্কল্প বাস্তবায়িত করতে আজ আমরা সকল দেশের স্টার্ট-আপ ইন্টারন্যাশনাল কনক্লেভ-এর এই মঞ্চে একত্রিত হয়েছি। সকল বিমস্টেক দেশের পারস্পরিক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে, বাণিজ্যিক সম্পর্ককে গতি প্রদান করতে আগে থেকেই লাগাতার কাজ চলছে। ২০১৮ সালে বিমস্টেকএর সদস্য দেশগুলির মন্ত্রীরা পারস্পরিক ডিজিটাল যোগাযোগ ব্যবস্থা বৃদ্ধির জন্য ইন্ডিয়া মোবাইল কংগ্রেস-এ অংশগ্রহণ করেছিলেন। এভাবে আমরা প্রতিরক্ষা, বিপর্যয় মোকাবিলা, মহাকাশ, পরিবেশ উন্নয়ন, কৃষি ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে মিলেমিশে কাজ করছি। আমাদের এই সকল ক্ষেত্র যত শক্তিশালী হবে, যত আধুনিক হবে, ততটাই আমাদের স্টার্ট-আপগুলি উপকৃত হবে। এটা একটা মূল্য সৃষ্টির চক্র। অর্থাৎ, আমরা পরিকাঠামো, কৃষি এবং ব্যবসার মতো ক্ষেত্রে আমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক শক্তিশালী করছি। ফলে আমাদের স্টার্ট-আপগুলির জন্য নতুন নতুন সুযোগ গড়ে উঠছে। আর আমাদের স্টার্ট-আপগুলি যত শক্তিশালী হবে, আমাদের উপরিল্লিখিত ক্ষেত্রগুলির উন্নয়নেও ততটাই গতি বৃদ্ধি হবে।
বন্ধুগণ,
ব্যক্তিগতরূপে এখানে সকল স্টার্ট-আপগুলি পরস্পরের সঙ্গে নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিচ্ছে। কিন্তু পরিবর্তনের এতবড় যাত্রাপথে প্রত্যেক দেশের নিজস্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে। ভারত তার পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার জন্য বা অন্যদেরকে জানানোর জন্য আজ 'ইভোলিউশন অফ স্টার্ট-আপ ইন্ডিয়া' নামক একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেছে। আমি চাই, প্রত্যেক বিমস্টেক দেশ সময়ের সঙ্গে এভাবে তাদের অভিজ্ঞতাগুলি প্রকাশের মাধ্যমে অন্যদেরকে অবহিত করুক। আপনাদের এই অভিজ্ঞতা আমাদের সবাইকে শেখার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে। উদাহরণস্বরূপ, আপনারা ভারতের পাঁচ বছরের স্টার্ট-আপ অভিযানকে দেখুন। যখন স্টার্ট-আপ ইন্ডিয়া অভিযান শুরু হয়েছিল, তখন আমাদের সামনে অনেক সমস্যা ছিল। কিন্তু আজ ভারত বিশ্বের সর্ববৃহৎ স্টার্ট-আপ ব্যবস্থাগুলির মধ্যে অন্যতম। আজ দেশে ৪১ হাজারেরও বেশি স্টার্ট-আপ কোনও না কোন অভিযানের সঙ্গে যুক্ত। এগুলির মধ্যে ৫,৭০০-রও বেশি স্টার্ট-আপ তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে রয়েছে, ৩,৬০০-রও বেশি স্টার্ট-আপ স্বাস্থ্যক্ষেত্রের জন্য তৈরি হয়েছে, আর প্রায় ১,৭০০ স্টার্ট-আপ কৃষিক্ষেত্রে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছে।
বন্ধুগণ,
এই স্টার্ট-আপগুলি আজ ব্যবসার 'ডেমোগ্রাফিক' চরিত্রও বদলে দিচ্ছে। আজ ভারতে ৪৪ শতাংশ স্বীকৃত স্টার্ট-আপ-এর নির্দেশকরা সকলেই মহিলা। আর অধিকাংশ স্টার্ট-আপ-এই বিপুল সংখ্যক মহিলা কাজ করছেন। আজ সাধারণ আর্থিক প্রেক্ষিতসম্পন্ন যুবক-যুবতীও তাঁদের প্রতিভা, তাঁদের ভাবনার মাটিতে সাফল্যের স্তম্ভ গড়ে তুলতে পারছেন। এর পরিণামও আজ আমাদের সামনে রয়েছে। ২০১৪-য় ভারতে মাত্র চারটি স্টার্ট-আপ ইউনিকর্ন ক্লাবের সদস্য ছিল। আজ ৩০টিরও বেশি স্টার্ট-আপ ১ বিলিয়ন লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে। আপনারা শুনলে অবাক হবেন, এক্ষেত্রে আমাদের ১১টি স্টার্ট-আপ ২০২০-তে ইউনিকর্ন ক্লাবে সামিল হয়েছে। অর্থাৎ, করোনাকালের এই কঠিন বছরেও তারা সাফল্য অর্জন করেছে।
বন্ধুগণ,
ভারত মহামারীর কঠিন সময়েও 'আত্মনির্ভর ভারত' অভিযান শুরু করেছে। এক্ষেত্রে আমাদের স্টার্ট-আপগুলি আজ বড় ভূমিকা পালন করছে। মহামারীর সময় যখন বিশ্বের বড় বড় কোম্পানিগুলি তাদের অস্তিত্বের লড়াই লড়ছিল, ভারতের স্টার্ট-আপগুলি তখন একটি নতুন ফৌজ তৈরি করছিল। দেশে স্যানিটাইজার থেকে শুরু করে পিপিই কিটের প্রয়োজন ছিল, এগুলির সরবরাহ শৃঙ্খলের প্রয়োজন ছিল। এক্ষেত্রে আমাদের স্টার্ট-আপগুলি বড় ভূমিকা পালন করেছে। স্থানীয় প্রয়োজনের জন্য স্থানীয় স্টার্ট-আপগুলি সাফল্যের সঙ্গে কাজ করেছে। একটি স্টার্ট-আপ গ্রাহকদের রান্নাঘরের প্রয়োজনীয় জিনিস পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেছে, তো অন্যটি দরজায় দরজায় ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেছে। কোনও স্টার্ট-আপ অগ্রণী করোনা যোদ্ধাদের জন্য যাতায়াতের ব্যবস্থা চালু করেছে, তো অন্যটি অনলাইন ক্লাসের স্টাডি ম্যাটেরিয়াল প্রস্তুত করেছে। অর্থাৎ, এই স্টার্ট-আপগুলি বিপর্যয়ের মধ্যে সুযোগ অন্বেষণ করেছে আর বিপর্যয়কে আত্মবিশ্বাস দিয়ে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।
বন্ধুগণ,
আজ স্টার্ট-আপগুলির সাফল্যের এই কাহিনীগুলি শুধুই বড় শহরগুলিতে সীমাবদ্ধ নেই। আপনারা দেখুন, আজকের আটটি পুরস্কার যে স্টার্ট-আপগুলি পেয়েছে, তারা কেউ মেট্রো শহরগুলির স্টার্ট-আপ নয়। তারা প্রত্যেকেই ছোট ছোট শহরে উঠে দাঁড়িয়েছে। এগুলির শিল্পোদ্যোগীরা কেউ লক্ষ্ণৌ-এর বাসিন্দা, কেউ ভোপালের, কেউ সোনিপথের, কেউ কোচির, আবার কেউ তিরুবনন্তপুরমের। কারণ আজ ভারতের প্রত্যেক রাজ্য স্টার্ট-আপ ইন্ডিয়া অভিযানে অংশগ্রহণ করছে। প্রত্যেক রাজ্য নিজেদের স্থানীয় সম্ভাবনাগুলি হিসেবে স্টার্ট-আপগুলিকে সহায়তা এবং ইনকিউবেট করার চেষ্টা করছে। আর এর পরিণাম হল আজ ভারতের ৮০ শতাংশ জেলা ইতিমধ্যেই স্টার্ট-আপ অভিযানের সঙ্গে যুক্ত। আমাদের ৪৫ শতাংশ স্টার্ট-আপ আজ টিয়ার-২ এবং টিয়ার-৩ শহরগুলিতে কাজ করছে, তারাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্থানীয় পণ্যগুলির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডারের ভূমিকা পালন করছে।
বন্ধুগণ,
আপনাদের মধ্যে স্বাস্থ্য এবং খাদ্যাভ্যাস নিয়ে যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে, যে স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন আসছে, তাও স্টার্ট-আপগুলির জন্য নতুন নতুন সুযোগ গড়ে তুলছে। সেজন্য বলা যায় আজ কোনও ‘এভারগ্রিন সেক্টর’ যদি থাকে, তা হল খাদ্য ও কৃষিক্ষেত্র। ভারতে এই ক্ষেত্রগুলির উন্নয়নে বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে। কৃষি-সংশ্লিষ্ট পরিকাঠামো আধুনিক করে তুলতে দেশে ১ লক্ষ কোটি টাকার কৃষি পরিকাঠামো তহবিল গড়ে তোলা হয়েছে। এগুলির মাধ্যমে আমাদের স্টার্ট-আপগুলির জন্য নতুন পথ খুলেছে। আজ স্টার্ট-আপগুলি কৃষকদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। খামার থেকে টেবিল পর্যন্ত খাদ্যপণ্য আরও সহজে, উন্নত উৎকর্ষ বজায় রেখে সরাসরি পৌঁছে দিতে এই স্টার্ট-আপগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
বন্ধুগণ,
আমাদের স্টার্ট-আপগুলির সব থেকে বড় বৈশিষ্ট্য হল, সেগুলির 'ডিসরাপশন অ্যান্ড ডাইভার্সিফিকেশন ক্যাপাসিটি'। ‘ডিসরাপশন’ এজন্য বলছি কারণ এই স্টার্ট-আপগুলি আজ নতুন দৃষ্টিকোণ, নতুন প্রযুক্তি এবং নতুন নতুন পদ্ধতির জন্ম দিচ্ছে। আমাদের নির্দিষ্ট পথ ধরে চলার যে ভাবনা ছিল, স্টার্ট-আপগুলি সেই ভাবনাটাকেই বদলে দিচ্ছে। আর দ্বিতীয় হল ‘ডাইভার্সিফিকেশন’; আপনারা দেখুন, আজ কত স্টার্ট-আপ উঠে আসছে, আর কত ভিন্ন ভিন্ন ভাবনা নিয়ে উঠে আসছে। এই স্টার্ট-আপগুলি প্রত্যেক ক্ষেত্রে একটি নতুন বিপ্লব এনে দিচ্ছে। আজ আমাদের স্টার্ট-আপগুলির যে পরিধি তা জীবনযাত্রার প্রায় সকল দিককে স্পর্শ করছে, আর এগুলির যে বৈচিত্র্য রয়েছে তা-ও অভূতপূর্ব। আর সব থেকে বড় কথা এই স্টার্ট-আপগুলি গতির থেকেও বেশি আবেগ দ্বারা পরিচালিত। যখনই কোনও ক্ষেত্রে নতুন সমস্যা উঠে আসে, তখনই কোনও না কোন স্টার্ট-আপ এগিয়ে এসে বলে, - আমরা এর সমাধানের কাজ করব! ভারতও আজ এরকম স্টার্ট-আপ প্রাণশক্তি নিয়ে কাজ করছে। আগে যখনই কোনও নতুন পরিস্থিতি আসত, যখনই নতুন কিছু করতে হত, তখন জিজ্ঞাসা করা হত, কে এটা করবে? কিন্তু আজ দেশের নবীন প্রজন্ম নিজে থেকে এগিয়ে এসে বলে, আমরা এটা করব! ডিজিটাল লেনদেন থেকে শুরু করে সৌরশক্তিক্ষেত্রে নতুন নতুন উদ্ভাবন, কিংবা এআই রেভোলিউশন, দেশ আর জিজ্ঞাসা করে না, - কে করবে? দেশ নিজে থেকেই ঠিক করেছে, - আমরাই করবো! এই মানসিকতার পরিবর্তন অত্যন্ত সুফলদায়ক হয়েছে। আজ ভীম ইউপিআই লেনদেনের ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। শুধু গত বছর ডিসেম্বর মাসে ভারতে লেনদেন ৪ লক্ষ কোটি টাকার থেকেও বেশি ইউপিআই-এর মাধ্যমে হয়েছে। সৌরশক্তির ক্ষেত্রেও ভারত এখন বিশ্বকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে চলেছে। একটি সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী, বিশ্বের বড় দেশগুলির তুলনায় ভারতে এআই-এর ব্যবহার দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বন্ধুগণ,
স্টার্ট-আপগুলি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্ত বাধা-নিষেধ ভেঙে যেভাবে সমাধান বের করে আনে সেভাবেই আজ ভারত প্রতিটি ক্ষেত্রে পুরনো দেওয়ালগুলি ভেঙে দিচ্ছে। আজ দেশের গরীব, কৃষক, ছাত্রছাত্রীদের আর্থিক সহায়তা প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তরের মাধ্যমে সরাসরি তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষ অনেক সমস্যা থেকে মুক্তি পাচ্ছেন। আর দেশের প্রায় ১ লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। এভাবে আজ সরকারের সঙ্গে যুক্ত, ব্যাঙ্কিং সেক্টরের সঙ্গে যুক্ত অধিকাংশ পরিষেবা ডিজিটাল ইন্ডিয়ার মাধ্যমে সরাসরি মোবাইল ফোন দিয়েই করা যাচ্ছে। দেশে এই পরিবর্তন আমাদের স্টার্ট-আপগুলি নিজেরাই অনুভব করছে।
আজ জিইএম পোর্টালের মাধ্যমে সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে স্টার্ট-আপগুলি ততটাই সুযোগ পাচ্ছে, যতটা দেশে বড় কোম্পানিগুলি পায়। এখন পর্যন্ত প্রায় ৮ হাজার স্টার্ট-আপ জিইএম পোর্টালে নথিভুক্ত হয়েছে, আর তারা প্রায় ২,৩০০ কোটি টাকার বাণিজ্যও করেছে। জিইএম পোর্টালে মোট বাণিজ্য ইতিমধ্যে প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। আগামীদিনে এক্ষেত্রে স্টার্ট-আপগুলির অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি পাবে। এই টাকা আমাদের স্টার্ট-আপগুলির হাতে পৌঁছলে স্থানীয় শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, বৃহৎ সংখ্যক যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থান হবে, আর নিজেদের স্বভাব অনুসারে স্টার্ট-আপগুলি আরও গবেষণা এবং উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে বেশি বিনিয়োগ করবে।
বন্ধুগণ,
আমাদের স্টার্ট-আপগুলির যেন পুঁজির অভাব না হয় সেজন্য দেশ অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। এই পর্যায়ে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা আজ এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে করছি। স্টার্ট-আপগুলিকে প্রারম্ভিক পুঁজি প্রদানের জন্য দেশ ১ হাজার কোটি টাকার ‘স্টার্ট-আপ ইন্ডিয়া সিড ফান্ড’ চালু করছে। এক্ষেত্রে নতুন স্টার্ট-আপ শুরু করতে এবং সেগুলি বড় করে তুলতে অনেক সাহায্য হবে। পরবর্তীকালে সরকার স্টার্ট-আপগুলিকে গ্যারান্টির মাধ্যমে ‘ঋন মূলধন’(ডেবট ক্যাপিটাল) সংগ্রহের ক্ষেত্রেও সাহায্য করবে।
বন্ধুগণ,
ভারত একটি এমন স্টার্ট-আপ ব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা করছে যার ভিত্তি যুবকদের দ্বারা, যুবকদের মাধ্যমে, যুবকদের জন্য – এই মন্ত্রের মাধ্যমে গড়ে উঠবে। স্টার্ট-আপ ইন্ডিয়া অভিযানের মাধ্যমে আমাদের যুবশক্তি এই পাঁচ বছরে এর মজবুত ভিত্তি তৈরি করেছে। এখন আমাদের পরবর্তী পাঁচ বছরের লক্ষ্য স্থির করতে হবে। আর এই লক্ষ্য হওয়া উচিৎ আমাদের স্টার্ট-আপগুলিকে, আমাদের ইউনিকর্নগুলিকে এখন গ্লোবাল জায়েন্টস করে তোলা, ভবিষ্যতের উপযোগী প্রযুক্তি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমাদের স্টার্ট-আপগুলির নেতৃত্ব প্রদান। এই সঙ্কল্প আমাদের প্রত্যেক বিমস্টেক সদস্য দেশের মিলিত সঙ্কল্প হয়ে উঠুক। তাহলে একটি বড় জনসংখ্যা এর দ্বারা উপকৃত হবে। সকল দেশের জনগণের জীবন আরও উন্নত হবে। আমি যখন বিমস্টেকের সদস্য দেশগুলির স্টার্ট-আপগুলির সাফল্যগাথা দেখি ও শুনি, তখন আমার মনে আনন্দ আরও বেড়ে যায়। আমি বিমস্টেক দেশগুলির সমস্ত স্টার্ট-আপগুলিকে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই নতুন দশকে আমরা সবাই একসঙ্গে মিলে এই গোটা অঞ্চলের স্টার্ট-আপগুলিকে নতুন পরিচয়ে সমৃদ্ধ করব। বিমস্টেক সদস্য দেশগুলির স্টার্ট-আপগুলির শক্তি যেন গোটা বিশ্ব অনুভব করে, সেরকম কাজ করব। এই শুভকামনা জানিয়ে আপনাদের সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।