পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল শ্রীযুক্ত জগদীপ ধনখড় জি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আমার সহকর্মী শ্রী পী্যুষ গোয়েল জি, মন্ত্রিসভায় আমার সঙ্গী শ্রী বাবুল সুপ্রীয় জি, এখানে উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, ভদ্রমহোদয়া ও ভদ্রমহোদয়গণ, পশ্চিমবঙ্গের রেল ও মেট্রো প্রকল্পের সম্প্রসারণের জন্য আপনাদের সকলকে অনেক অনেক অভিনন্দন !! আজ যে প্রকল্পগুলি জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করা হল, তার ফলে হুগলি সহ অনেক জেলার লক্ষ লক্ষ মানুষের সহজ জীবনযাত্রার জন্য তা আরো সহায়ক হবে।
বন্ধুগণ,
আমাদের দেশে পরিবহণ ব্যবস্থা যত উন্নত হবে, আমাদের আত্মনির্ভরতা এবং আত্মবিশ্বাসের সংকল্প ততটাই শক্তিশালী হবে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, কলকাতা ছাড়াও হুগলি, হাওড়া আর উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বন্ধুরা এখন থেকে মেট্রো পরিষেবার সুবিধা পাবেন। আজ নোয়াপাড়া থেকে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত যে অংশটির উদ্বোধন করা হল, তার ফলে দেড় ঘন্টার রাস্তা মাত্র ২৫ থেকে ৩৫ মিনিটে পৌঁছে যাওয়া যাবে। দক্ষিণেশ্বর থেকে কলকাতার “কবি সুভাষ” বা “নিউ গড়িয়া” পর্যন্ত মেট্রোতে এখন মাত্র ১ ঘন্টায় পৌঁছনো যাবে। যে রাস্তা সড়ক পথে যেতে আড়াই ঘন্টা লাগে। এর ফলে স্কুল, কলেজে যাওয়া যুব সম্প্রদায়ের, অফিস – কারখানায় কাজ করতে যাওয়া কর্মচারীদের এবং শ্রমিকদের খুব সুবিধা হবে। বিশেষ করে ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটের বরাহনগর ক্যাম্পাস, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে পৌঁছাতে এখন খুব সুবিধা হবে। শুধু তাই নয়, কালীঘাট ও দক্ষিণেশ্বরের মা কালীর মন্দিরে এখন ভক্তদের পৌঁছাতেও খুব সুবিধা হবে।
বন্ধুগণ,
কলকাতা মেট্রো, দীর্ঘ দশক ধরে চলছে, দেশের প্রথম মোট্রের গৌরব অর্জন করেছে। কিন্তু এই মেট্রোর আধুনিক সংস্করণ ও বিস্তৃতি সম্প্রতি বছরগুলিতে শুরু হয়েছে। আর আমার এটা জেনে খুব ভালো লাগছে যে, মেট্রোই বলুন কিংবা রেল ব্যবস্থা, আজ ভারতে যা কিছু নির্মাণ হচ্ছে, সেগুলিতে মেড ইন ইন্ডিয়ার ছাপ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। রেল লাইন পাতা থেকে শুরু করে রেলের আধুনিক ইঞ্চিন এবং আধুনিক কামরা পর্যন্ত উপাদান এবং প্রযুক্তির সবই ভারতে তৈরি হচ্ছে। এর ফলে আমাদের কাজে গতি এসেছে, গুণমান বৃদ্ধি পেয়েছে, খরচ কমেছে, আর ট্রেনের গতিও বেড়েছে।
বন্ধুগণ,
পশ্চিমবঙ্গ দেশের আত্মনির্ভরতার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠবে। আর এখান থেকে উত্তর – পূর্ব পর্যন্ত আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রভূত সম্ভাবনা রয়েছে। এই বিষয়টি উপলদ্ধি করে সাম্প্রতিককালে রেল নেটওয়ার্ককে আরো শক্তিশালী করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখন যেমন সেবক – রংপো, নতুন লাইনের সাহায্যে সিকিম রাজ্যকে রেল নেটওয়ার্কের ব্যবস্থার সঙ্গে প্রথমবার যুক্ত করা হচ্ছে। আর সেটি পশ্চিমবঙ্গের মধ্য দিয়ে যাবে। কলকাতা থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত গাড়ি চলছে। সম্প্রতি হলদিবাড়ী থেকে ভারত – বাংলাদেশে সীমান্ত পর্যন্ত রেল লাইন চালু হয়েছে। গত ৬ বছরে পশ্চিমবঙ্গে অনেক ওভার ব্রিজ আর আন্ডারপাসের কাজ শুরু হয়েছে।
বন্ধুগণ,
আজ যে চারটি প্রকল্পকে উদ্বোধন ও জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করা হয়েছে, এর ফলে এখানকার রেল পরিষেবা আরো শক্তিশালী হল। খড়্গপুর – আদিত্যপুর অংশে তৃতীয় লাইন চালু হওয়ায় রেল চলাচলের বিশেষ সুবিধা হবে এবং হাওড়া – মুম্বাই রুটে ট্রেন এখন থেকে কম দেরিতে চলবে। আজিমগঞ্জ থেকে খাগড়াঘাট রোড পর্যন্ত দ্বিতীয় লাইনের সুবিধা পাওয়ার ফলে মুর্শিদাবাদ জেলার ব্যস্ত রেল নেটওয়ার্কের সুবিধা হবে। এই রুট দিয়ে কলকাতা – নিউ জলপাইগুড়ি – গুয়াহাটির জন্য বিকল্প রাস্তা পাওয়া যাবে। আর উত্তর – পূর্ব পর্যন্ত যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে। ডানকুনি – বারুইপাড়ার মধ্যে চতুর্থ লাইন বসানোর প্রকল্পটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি তৈরি হওয়ায় হুগলিতে ব্যস্ত নেটওয়ার্কের উপর চাপ কমবে। একইভাবে রসুলপুর আর মগরা শাখায়, যেটিকে একরকম কলকাতার প্রবেশপথ বলা চলে, অথচ এই লাইনে ট্রেনের বেশ ভিড় ছিল, নতুন লাইন চালু হওয়ায় এই সমস্যার বেশ অনেকটাই সমাধান হবে।
বন্ধুগণ,
এই সমস্ত প্রকল্পগুলি পশ্চিমবঙ্গের সেই অঞ্চলগুলির সঙ্গে যুক্ত, যেখানে কয়লা শিল্প রয়েছে, ইস্পাত শিল্প রয়েছে, যেখানে সার তৈরি হয়, সব্জি ফলানো হয়। এই নতুন রেললাইনগুলির ফলে এই অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা আরো সহজ হবে। শিল্পোদ্যোগের জন্য নতুন বিকল্প পাওয়া যাবে। আর আরো উন্নত পরিকাঠামো গড়ে উঠবে। এটাই তো “সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস”। এটাই তো আত্মনির্ভর ভারতের চূড়ান্ত লক্ষ্য। এই লক্ষ নিয়ে আমরা সকলে কাজ করছি। আমি, পীযষ জি, তাঁর পুরো টিমের প্রশংসা করি, অভিনন্দন জানাই, আর পশ্চিমবঙ্গের রেল পরিষেবায়, রেল পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে বিগত কয়েক বছরে যে ঘাটতি ছিল, তার দূর করার জন্য উনি যে উদ্যোগ নিয়েছেন, সেগুলিকে আমরা সকলে মিলে বাস্তবায়িত করবো, আর বাংলার স্বপ্ন পূরণ করবো।
আর এরই সঙ্গে আপনাদের সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ !!