প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ গান্ধীনগরে বিদ্যালয়গুলির জন্য বিদ্যা সমীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এই কেন্দ্রে নজরদারি ব্যবস্থা, ভিডিও ওয়াল এবং লাইভ ডেমনস্ট্রেশন বা হাতে-কলমে প্রদর্শন সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়। অডিও ভিজ্যুয়াল ব্যবস্থার মাধ্যমে এই কেন্দ্র সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে সংক্ষেপে জানানো হয়। অনুষ্ঠানে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ভুপেন্দ্রভাই প্যাটেল উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী এই কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে সংশ্লিষ্ট সবপক্ষের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। আম্বাজী থেকে প্রধান শিক্ষিকা শ্রীমতী রাজশ্রী প্যাটেল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রথম মতবিনিময় করেন। নতুন এই প্রযুক্তি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আগ্রহের কথা জানতে চান। তিনি আরও বেশি সংখ্যক ছাত্রছাত্রীকে দীক্ষা পোর্টাল ব্যবহার করতে বলেন। নতুন এই ব্যবস্থা চালু হওয়ার ফলে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপর বোঝা বেড়েছে কিনা বা নতুন এই ব্যবস্থায় পরিস্থিতি সহজ হয়েছে কিনা, সে ব্যাপারেও খোঁজ-খবর নেন। অত্যন্ত খোলা মনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন এই ব্যবস্থা চালু হওয়ার ফলে ফাঁকি দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। শ্রী মোদী সপ্তম শ্রেণীর এক পড়ুয়ার সঙ্গেও মতবিনিময় করেন। তিনি এই পড়ুয়াকে খেলাধুলো ও খাওয়া-দাওয়ার উপর গুরুত্ব দিতে বলেন। সংশ্লিষ্ট সবপক্ষের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত খোলা মনে কথা বলেন। গান্ধীনগর জেলার সিআরসি-র তত্ত্বাবধায়ক নতুন এই প্রযুক্তি প্রয়োগের ফলে যে পরিবর্তন এসেছে, সে সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে জানান। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে নতুন এই প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে নজরদারি এবং বৈধতা যাচাই প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবহিত করেন। নতুন এই প্রযুক্তির মাধ্যমে পুষ্টির উপর নজরদারি সম্ভব কিনা, তা খতিয়ে দেখার পরামর্শ দেন। সুষম আহার সম্পর্কে পড়ুয়াদের ও সংশ্লিষ্ট সবপক্ষকে সচেতন করে তুলতে নতুন এই প্রযুক্তি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে সহজে ব্যবহারযোগ্য কিনা, সে ব্যাপারেও জানতে চান।
বেশ কয়েক বছর আগে কানাডা সফরে গিয়ে তাঁর একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা প্রধানমন্ত্রী সকলের সঙ্গে ভাগ করে নেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, সেদেশে একটি বিজ্ঞান সংগ্রহালয় ঘুরে দেখার পর, সেখানে তাঁর খাবার সম্পর্কে একটি তালিকাও পূরণ করতে হয়েছিল। নিরামিষাশী এই খাদ্য তালিকা যখন স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের মাধ্যমে প্রস্তুত হয়েছিল, তখন সেই যন্ত্র বলেছিল, আপনি কি পাখি!
এ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, প্রযুক্তি যখন সর্বস্তরে পৌঁছে যাচ্ছে এবং অজানাকে জানার দ্বার খুলে দিচ্ছে, তখন এটা বিবেচনায় রাখতে হবে যে, কাল্পনিক জগতের জন্য বাস্তব দুনিয়াকে কখনই উপেক্ষা করা উচিৎ নয়।
কচ্ছ থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় সমিতির কল্পনা রাঠোরের কাছে প্রধানমন্ত্রী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে জানতে চান। সমিতির প্রতিনিধি কল্পনা রাঠোর প্রধানমন্ত্রীকে জানান, নতুন এই ব্যবস্থা বিভিন্ন বাধ্যবাধকতা মেনে চলার ক্ষেত্রে কার্যকর হয়েছে। অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী পূজার সঙ্গে কথা বলার সময় প্রধানমন্ত্রী মেহসানা থেকে কয়েকজন শিক্ষকের একটি সমস্যার কথা স্মরণ করে জানান, এখানে শিক্ষক-শিক্ষিকারা স্থানীয় কচ্ছ ভাষায় শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। এ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয় যে, এখন পরিস্থিতিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। প্রধানমন্ত্রী দুর্বল ছাত্রছাত্রীদের কি ধরনের সহায়তা দেওয়া হয়েছে, সে সম্পর্কেও জানতে চান। এ ব্যাপারে একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, কোভিড মহামারীর সময় শিক্ষক-শিক্ষিকারা জি-শালা, দীক্ষা অ্যাপ প্রভৃতি ব্যবহার করেছেন। এমনকি, যাযাবর সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েদেরও শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নতুন এই প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ত হতে বহু ছাত্রছাত্রীকে প্রয়োজনীয় উপকরণ দেওয়া হয়েছে। শরীর চর্চার ক্ষেত্রে গুরুত্ব কম দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, খেলাধুলো এখন আর পাঠ্যসূচির বহির্ভূত কোনও বিষয় নয়, এখন খেলাধুলো পাঠ্যসূচির গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হয়ে উঠেছে।
তাপি জেলা থেকে দর্শনা বেন তাঁর অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে জানান, নতুন এই প্রযুক্তির দরুণ শিক্ষা ক্ষেত্রে বিভিন্ন মাপকাঠিতে লক্ষ্যণীয় অগ্রগতি হয়েছে। তিনি আরও জানান, নতুন এই ব্যবস্থায় কাজের বোঝা অনেকাংশে কমেছে। এমনকি, বহু ছাত্রছাত্রী দীক্ষা পোর্টালে নাম নথিভুক্ত করেছে। দশম শ্রেণীর পড়ুয়া তানভি জানায়, সে চিকিৎসক হতে চায়। এ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে বিজ্ঞানের বিষয় নিয়ে পড়াশুনো প্রত্যন্ত অঞ্চলে খুব একটা সহজ ছিল না। কিন্তু, এখন প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের ফলে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটেছে এবং তার সুফল মিলছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গুজরাট সর্বদাই নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করেছে এবং তারপর সারা দেশ তা অনুসরণ করেছে। অন্যান্য রাজ্য নতুন পদ্ধতি সম্পর্কে যে আগ্রহ দেখিয়েছে, সে ব্যাপারেও প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়। তিনি এই ব্যবস্থার তত্ত্বাবধায়কদের বলেন, প্রযুক্তি প্রয়োগের ফলে যেন মানবিকতার দিকগুলি উপেক্ষিত না হয়। প্রধানমন্ত্রীকে হোয়াটস্অ্যাপ-ভিত্তিক প্রয়োজনীয় সংশোধনমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে জানানো হয়। নতুন এই পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে সুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবেশ বজায় রাখার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
গান্ধীনগরে বিদ্যা সমীক্ষা কেন্দ্রটি বার্ষিক ৫০০ কোটিরও বেশি ডেটা বা তথ্য সংগ্রহ করে। সংগৃহীত এই তথ্য ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষণের মান বাড়ানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে দেখা হয়। এছাড়াও, এই কেন্দ্রটি দৈনিক-ভিত্তিতে অনলাইনে শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয়ে উপস্থিতির উপর নজর রাখতে সাহায্য করে। সর্বাধুনিক পন্থা-পদ্ধতি ব্যবহারের জন্য বিশ্ব ব্যাঙ্ক গান্ধীনগরের এই বিদ্যা সমীক্ষা কেন্দ্রটিকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই কেন্দ্রটির কাজকর্ম সম্পর্কে জানানোর জন্য বহু দেশকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে।