প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আগামী ২ ও ৩ জানুয়ারি, ২০২৪-এ তামিলনাড়ু ও লাক্ষাদ্বীপ সফর করবেন।
২ জানুয়ারি, ২০২৪-এ সকাল ১০-৩০ মিনিট নাগাদ প্রধানমন্ত্রী তামিলনাড়ুর তিরুচিরাপল্লিতে পৌঁছবেন। তিরুচিরাপল্লির ভারতীদশন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৮তম সমাবর্তন উৎসবে তিনিই হবেন প্রধান অতিথি। দুপুর ২টো নাগাদ তিরুচিরাপল্লিতে একটি প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিমান, রেল, সড়ক, তেল ও গ্যাস, জাহাজ এবং উচ্চ শিক্ষাক্ষেত্র-কেন্দ্রিক ১৯ হাজার ৮৫০ কোটির বেশি টাকা মূল্যের একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ ও শিলান্যাস করবেন। দুপুর ৩-১৫ মিনিট নাগাদ প্রধানমন্ত্রী লাক্ষাদ্বীপের অগত্তি-তে পৌঁছবেন। সেখানে তিনি একটি জনসভায় ভাষণ দেবেন। ৩ জানুয়ারি, ২০২৪-এ দুপুর ১২টায় প্রধানমন্ত্রী লাক্ষাদ্বীপের কাভারাত্তিতে পৌঁছবেন। সেখানে টেলি-যোগাযোগ, পানীয় জল, সৌরশক্তি এবং স্বাস্থ্য সহ একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের শিলান্যাস ও জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করবেন।
তামিলনাড়ুতে প্রধানমন্ত্রী
তিরুচিরাপল্লির ভারতীদশন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৮তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের পুরস্কার প্রদান করবেন। অনুষ্ঠানে ভাষণ দেবেন তিনি।
তিরুচিরাপল্লির জনসভায় প্রধানমন্ত্রী তিরুচিরাপল্লি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনাল ভবনের উদ্বোধন করবেন। ১,১০০ কোটি টাকার বেশি মূল্যে নির্মিত দ্বিস্তরীয় নতুন আন্তর্জাতিক টার্মিনাল ভবনটিতে বছরে ৪৪ লক্ষের বেশি যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন এবং ব্যস্ত সময়ে ৩,৫০০ যাত্রীর পরিষেবা মেটাতে সক্ষম হবে এই বিমানবন্দর। নতুন ভবনে অত্যাধুনিক সুবিধা এবং যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থা থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী একাধিক রেল প্রকল্প জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করবেন। এর মধ্যে রয়েছে - সালেম-ম্যাগনেসাইট জংশন-ওমালুর-মেত্তুর ড্যাম শাখায় ৪১.৪ কিলোমিটার রেলপথের ডাবলিং প্রকল্প; মাদুরাই-তুতিকোরিন ১০৭ কিলোমিটার রেলপথের ডাবলিং প্রকল্প; এবং তিনটি রেলপথের বৈদ্যুতিকীকরণ যেমন, তিরুচিরাপল্লি-মনমাদুরাই-বিরুধুনগর; বিরুধুনগর-তেনকাশী জংশন; সেনগোট্টাই-তেনকাশী জংশন-তিরুনেলভেলি-তিরুচেন্দুর। এই রেল প্রকল্পগুলি যাত্রী এবং পণ্য পরিবহণ ব্যবস্থা উন্নত করতে সাহায্য করবে এবং তামিলনাড়ুর অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানে সহায়ক হবে।
প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে পাঁচটি সড়ক পথ প্রকল্প উৎসর্গ করবেন। এই প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে - ৮১ নম্বর জাতীয় সড়কের ত্রিচি-কাল্লাগাম শাখার ৩৯ কিলোমিটার অংশের সম্প্রসারণ; ঐ একই জাতীয় সড়কের কাল্লাগাম-মীনসুরুত্তি শাখার ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ পথের সম্প্রসারণ; ৭৮৫ নম্বর জাতীয় সড়কের চেত্তিকুলাম-নাথাম অংশের ২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ পথের সম্প্রসারণ; ৫৩৬ নম্বর জাতীয় সড়কের কারাইকুড়ি-রামানাথপুরম শাখায় ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ পথের ধার বাঁধানো এবং ১৭৯এ জাতীয় সড়কের সালেম-তিরুপাথুর-বানিয়ামবাদী রোড শাখায় ৪৪ কিলোমিটার দীর্ঘ পথের সম্প্রসারণ। এই সড়ক প্রকল্পগুলি এই অঞ্চলের মানুষের দ্রুত যাতায়াতে সহায়ক এবং ত্রিচি, শ্রীরঙ্গম, চিদম্বরম, রামেশ্বরম, ধনুষ্কোডি, উথিরাকোসামাঙ্গাই, দেবীপট্টিনাম, এড়ওয়াড়ি, মাদুরাই সহ অন্যান্য শিল্পাঞ্চল এবং বাণিজ্যিক অঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগ উন্নত করবে।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের শিলান্যাসও করবেন। এর মধ্যে আছে - ৩৩২এ জাতীয় সড়কের মোগাইইউ-র থেকে মারাকান্নাম পথে ৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ অংশের সম্প্রসারণ। এই রাস্তাটি তামিলনাড়ুর পূর্ব উপকূলের বন্দরগুলিকে যুক্ত করবে। সেইসঙ্গে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় থাকা মামল্লপুরমে সড়ক যোগাযোগ উন্নত করবে এবং কলপক্কম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গেও যোগাযোগ উন্নত করবে।
প্রধানমন্ত্রী কামরাজ বন্দরের জেনারেল কার্গো দ্বিতীয় বার্থকে জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করবেন। এতে দেশের বাণিজ্য আরও বৃদ্ধি পাবে। যার ফলে হবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ৯ হাজার কোটি টাকার বেশি মূল্যের গুরুত্বপূর্ণ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস প্রকল্প জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করবেন এবং শিলান্যাস করবেন। জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করা হবে যে দুটি প্রকল্প সেগুলি হল – ইন্ডিয়ান অয়েলের ৪৮৮ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইন এবং হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়ামের ৬৯৭ কিলোমিটার দীর্ঘ পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন।
এছাড়া, যে প্রকল্পগুলির শিলান্যাস করা হবে তার মধ্যে আছে - কোচি-কোট্টানাদ-ব্যাঙ্গালোর-ম্যাঙ্গালোর গ্যাস পাইপলাইনের কৃষ্ণগিরি থেকে কোয়েম্বাটুর অংশের ৩২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইনের নির্মাণ এবং চেন্নাইয়ের ভাল্লুরে প্রস্তাবিত তৃণমূল স্তরের টার্মিনালের জন্য পিওএল পাইপলাইনের অভিন্ন করিডর। তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্রের এই প্রকল্পগুলি এই অঞ্চলের শিল্পগত, অভ্যন্তরীণ এবং বাণিজ্যিক প্রয়োজন মেটানোর উদ্দেশ্যে একটি পদক্ষেপ। এতে এই অঞ্চলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে।
প্রধানমন্ত্রী কলপক্কমে ইন্দিরা গান্ধী সেন্টার ফর অ্যাটমিক রিসার্চ-এ ডেমন্সট্রেশন ফাস্ট রিঅ্যাক্টর ফুয়েল রিপ্রসেসিং প্লান্ট (ডিএফআরপি) জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করবেন। ৪০০ কোটি টাকায় নির্মিত হয়েছে ডিএফআরপি। এর নকশাটি অনন্য, যা বিশ্বে একেবারেই অভিনব এবং এটি দ্রুত চুল্লি থেকে নির্গত কার্বাইড এবং অক্সাইড জ্বালানি দুটিকেই পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করতে সক্ষম। এই নকশাটি পুরোপুরি ভারতীয় বিজ্ঞানীদের দ্বারা তৈরি। বাণিজ্যিকভাবে আরও বড় ফাস্ট রিঅ্যাক্টর ফুয়েল রিপ্রসেসিং প্লান্ট তৈরি করার লক্ষ্যে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
অন্য প্রকল্পগুলির মধ্যে প্রধানমন্ত্রী তিরুচিরাপল্লিতে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনলজি (এনআইটি)-তে ‘অ্যামেথিস্ট’ নামে ৫০০ শয্যার একটি ছাত্রাবাসের উদ্বোধন করবেন।
লাক্ষাদ্বীপে প্রধানমন্ত্রী
লাক্ষাদ্বীপ সফরে প্রধানমন্ত্রী ১,১৫০ কোটি টাকা বেশি মূল্যের উন্নয়ন প্রকল্প জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করবেন এবং শিলান্যাস করবেন।
রূপান্তরকারী পদক্ষেপ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী লাক্ষাদ্বীপে ইন্টারনেটের শ্লথ গতির সমস্যার মোকাবিলায় ২০২০-র আগস্টে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে লালকেল্লা থেকে দেওয়া ভাষণে কোচি-লাক্ষাদ্বীপ সাবমেরিন অপটিক্যাল ফাইবার কানেকশন প্রকল্পের ঘোষণা করেছিলেন। সেই প্রকল্প এখন সম্পূর্ণ হয়েছে এবং তার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এতে ইন্টারনেটের গতি বাড়বে ১০০ গুণের বেশি (প্রতি সেকেন্ডে ১.৭ জিবি থেকে প্রতি সেকেন্ডে ২০০ জিবি)। স্বাধীনতার পর এই প্রথম লাক্ষাদ্বীপ সাবমেরিন অপটিক ফাইবার কেবলের দ্বারা যুক্ত হবে। এই সাবমেরিন ওএফসি-টি লাক্ষাদ্বীপে যোগাযোগের পরিকাঠামোয় আমূল পরিবর্তন নিশ্চিত করবে। ইন্টারনেট পরিষেবা, টেলি-মেডিসিন, ই-গভর্ন্যান্স, শিক্ষা সংক্রান্ত উদ্যোগ, ডিজিটাল ব্যাঙ্কিং, ডিজিটাল কারেন্সি ব্যবহার, ডিজিটাল সাক্ষরতা ইত্যাদি দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য হবে।
প্রধানমন্ত্রী কাদমাতে লো টেম্পারেচার থার্মাল ডি-স্যালিনেশন (এলটিটিডি) প্লান্টটি জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করবেন। এটিতে প্রতিদিন ১.৫ লক্ষ লিটার স্বচ্ছ পানীয় জল উৎপাদন হবে। প্রধানমন্ত্রী অগত্তি এবং মিনিকয় দ্বীপের প্রত্যেকটি পরিবারে নলবাহিত জল পৌঁছে দেওয়ার প্রকল্প জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করবেন। যেহেতু লাক্ষাদ্বীপ একটি প্রবাল দ্বীপ, সেজন্য সেখানে পরিশ্রুত পানীয় জলের একটি সমস্যা ছিল। এখানে মাটির তলায় জল খুবই সীমিত। এই পানীয় জল প্রকল্প দ্বীপের পর্যটন সম্ভাবনা বৃদ্ধি করবে, সেইসঙ্গে স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির সুবিধা হবে।
এছাড়া জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করা হবে কাভারাত্তির সৌরশক্তি কেন্দ্র, যেটি লাক্ষাদ্বীপের প্রথম ব্যাটারি-নির্ভর সৌরশক্তি প্রকল্প। এতে ডিজেল-নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ওপর নির্ভরতা কমবে। এছাড়া জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করা হবে কাভারাত্তিতে ইন্ডিয়া রিজার্ভ ব্যাটালিয়ন প্রাঙ্গণে একটি নতুন প্রশাসনিক ব্লক এবং ৮০ জনের ব্যারাকের।
কালপেনিতে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন্দ্রের পুনর্নির্মাণের শিলান্যাস করবেন প্রধানমন্ত্রী এবং আন্দ্রথ, চেতলাত, কাদমাত, অগত্তি এবং মিনিকয় – এই পাঁচটি দ্বীপে পাঁচটি আদর্শ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র (নন্দঘর) নির্মাণের শিলান্যাস করবেন তিনি।