প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ২৫ ফেব্রুয়ারি তামিলনাড়ু ও পুদুচেরী সফর করবেন। তিনি পুদুচেরীতে সকাল ১১.৩০ মিনিটে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করবেন। কোয়েম্বাতুরে প্রধানমন্ত্রী বিকেল ৪টের সময় একগুচ্ছ পরিকাঠামোগত প্রকল্প জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ ও শিলান্যাস করবেন।
তামিলনাড়ুতে প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী নেভেলি নতুন তাপবিদ্যুত প্রকল্পটি জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করবেন। লিগনাইট ভিত্তিক এই বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র থেকে ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদিত হবে। এখানে ৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ইউনিট তৈরি করা হয়েছে। এর জন্য ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার কোটি টাকা। নেভেলির লিগনাইট খনি থেকে জ্বালানী পাওয়া যাবে। এই খনিতে যথেষ্ট পরিমাণে লিগনাইট সঞ্চিত আছে। তাপবিদ্যুত কেন্দ্রে যে ছাই পাওয়া যাবে, সেটি পুরোটাই নানা কাজে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তামিলনাড়ু, কেরালা, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা এবং পুদুচেরীতে এই বিদ্যুতকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুত সরবরাহ করা হবে। তবে তামিলনাড়ু এখানে উৎপাদিত বিদ্যুতের ৬৫ শতাংশ বিদ্যুত পাবে।
প্রধানমন্ত্রী এনএলসিআইএল-এর ৭০৯ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সৌর বিদ্যুত প্রকল্পটি জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করবেন। তিরুনেলভেলি, তুতিকোরিন, রামানাথাপুরম ও বিরুধুনগর জেলায় মোট ২ হাজার ৭০ একর জমির ওপর এই সৌর বিদ্যুত কেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়েছে। এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার কোটি টাকা।
প্রধানমন্ত্রী নিম্ন ভবানী প্রকল্প ব্যবস্থাপনার সম্প্রসারণ ও নবরূপে আধুনিকীকরণ প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন। ১৯৫৫ সালে ভবানী সাগর জলাধার এবং খাল খননের কাজ শেষ হয়েছিল। নিম্নভবানী ব্যবস্থাপনাটিতে আরাকানকোট্টাই, থারাপল্লী ও কোলিঙ্গরায়ন খাল এবং নিম্নভবানী প্রকল্পর খাল রয়েছে। ইরোড, তিরুপ্পুর ও কারুর জেলার ২ লক্ষ একর জমিতে এই ব্যবস্থাপনায় সেচের কাজ করা হয়। নার্বাডের পরিকাঠামোগত উন্নয়নমূলক সহযোগিতায় ৯৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নিম্ন ভবানী প্রকল্প ব্যবস্থাপনার সম্প্রসারণ ও নবরূপে আধুনিকীকরণের কাজ হবে। এর মূল লক্ষ্য হল বর্তমান সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও খালগুলির নাব্যতা বৃদ্ধি। এর মাধ্যমে খালগুলির সংস্কার, ৮২৪টি স্লুইস গেট তৈরি, ১৭৬টি ড্রেন ও ৩২টি সেতু তৈরি করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী ৮ লেনের কোরামপাল্লাম সেতু এবং ভি.ও.চিদাম্বরনার বন্দরে রেললাইনের ওপর উড়ালপুলের উদ্বোধন করবেন। চিদাম্বরনার বন্দরটি দেশের মধ্যে অন্যতম বৃহৎ বন্দর। ১৯৬৪ সালে নির্মিত ১৪ মিটার চওড়া বর্তমান কোরামপাল্লাম সেতু ব্যবহার করে বন্দরের ৭৬ শতাংশ পণ্য এখান দিয়ে পরিবহণ করা হয়। এই ব্রিজের ওপর দৈনিক ৩ হাজারটি ভারি ট্রাক চলাচল করে। এর ফলে প্রবল যানজটের সৃষ্টি হয়, যার ফলশ্রুতিতে পণ্য ওঠানো-নামানোর ক্ষেত্রে অনেক সময় লেগে যায়। বন্দর এলাকাকে যানজট মুক্ত করতে এবং পণ্য ওঠানো-নামানোর ক্ষেত্রে সব রকমের বাধা দূর করতে ৮ লেনের কোরামপাল্লাম সেতু এবং রেল লাইনের ওপর উড়ালপুল তৈরি করা হয়েছে। এখানে পুরনো সেতুর দুই ধারে আরও ২টি লেন (৮.৫ মিটার) তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও সিটি লিঙ্ক সার্কেলের সঙ্গে ৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে টিটিপিসি সার্কেলের মধ্যে রাস্তাটিকে চওড়া করা হয়েছে। সাগরমালা প্রকল্প থেকে এই প্রকল্পের অর্থ যোগানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ভি.ও চিদাম্বরনার বন্দরে ৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত একটি সৌর বিদ্যুত প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন। এটি নির্মাণে ব্যয় হবে ২০ কোটি টাকা। এখান থেকে বছরে ৮০ লক্ষ ইউনিট বিদ্যুত উৎপাদন হবে। এর ফলে বন্দরের মোট বিদ্যুতের ৫৬ শতাংশ চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে ও কার্বন নিঃসরণ হ্রাস পাবে।
প্রধানমন্ত্রী সহজ জীবনযাত্রা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (শহরাঞ্চল) প্রকল্পের আওতায় বস্তিবাসীদের জন্য নির্মিত ঘর উদ্বোধন করবেন। তিরুপ্পুরের ভিরাপন্ডিতে ১ হাজার ২৮০টি বস্তিবাসিদের ঘর, তিরুপ্পুরে তিরুকুমারন নগরে ১ হাজার ২৪৮টি বস্তিবাসীদের জন্য ঘর, মাদুরাইয়ে রাজাক্কুরে ১ হাজার ৮৮টি বস্তিবাসীদের জন্য ঘর এবং ত্রিচির ইরুংগালুরে ৫২৮টি বস্তিবাসীদের জন্য ঘর তামিলনাডু়র স্লাম ক্লিয়ারেন্স বোর্ড তৈরি করেছে। এই ঘরগুলি বানাতে ৩৩০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। শহরাঞ্চলের দরিদ্র বস্তিবাসীদের ৪০০ বর্গকিলোমিটার প্লিন্থ এলাকার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি বহুমুখী হল, রান্নাঘর, স্নানের জায়গা ও শৌচালয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া পাকা রাস্তা, রাস্তার আলো, পয়ঃনিষ্কাশি জলকে পরিশোধিত করার প্ল্যান্ট, রেশন দোকান, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, পাঠাগার ও দোকানেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী কোয়েম্বাটোর, মাদুরাই, সালেম, থান্জাভুর, ভেলোর, তিরুচিরাপল্লী, তিরুপ্পুর, তিরুনেলভেলি ও থুঠুকুড়ি- এই ৯টি স্মার্ট সিটিতে ইন্ডিগ্রেটেড কম্যান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের শিলান্যাস করবেন। ১০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এই কেন্দ্রগুলি তৈরি করা হবে। এখান থেকে সরকারি পরিষেবা দেওয়া হবে। এছাড়াও তথ্য ভিত্তিক বিভিন্ন সিদ্ধান্ত এখান থেকে গ্রহণ করা হবে।
পুদুচেরীতে প্রধানমন্ত্রী
সাত্তানাথাপুরম- নাগাপট্টিনামের মধ্যে ৫৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ৪৫-এ জাতীয় সড়কটি ৪ লেন করার প্রকল্পটির শিলান্যাস করবেন প্রধানমন্ত্রী। এরফলে করাইকল জেলার ভিল্লুপুরম থেকে নাগাপট্টিনামের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হবে। এই প্রকল্প নির্মাণে ব্যয় হবে ২ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা। শ্রী মোদী করাইকল জেলায় জিপমার মেডিকেল কলেজ বিল্ডিং-এর নতুন ক্যাম্পাসেরও শিলান্যাস করবেন। এই প্রকল্প নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯১ কোটি টাকা।
পুদুচেরীতে সাগরমালা প্রকল্পের আওতায় একটি ছোট বন্দরের শিলান্যাস করা হবে। ৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প নির্মাণের ফলে চেন্নাইয়ের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে এবং পুদুচেরীতে বিভিন্ন শিল্পসংস্থার জন্য পণ্য পরিবহণে সুবিধা হবে। প্রধানমন্ত্রী পুদুচেরীর ইন্দিরা গান্ধী স্পোর্টস কমপ্লেক্সে সিন্থেটিক অ্যাথেলেটিক ট্র্যাক প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন। বর্তমান ট্র্যাকটি পুরোন হয়ে গেছে তাই ৪০০ মিটারের নতুন ট্র্যাক বসাতে হচ্ছে। এই প্রকল্পে ৭ কোটি টাকা ব্যয় হবে।
প্রধানমন্ত্রী পুদুচেরীর জওহরলাল ইন্সটিটিউট অফ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিকেল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের (জিপমার) ব্লাড সেন্টারের উদ্বোধন করবেন। ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীদের প্রশিক্ষণ, রক্ত জমা নেওয়া এবং রোগীকে রক্ত দেওয়া সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ এখানে দেওয়া হবে। এই প্রকল্প নির্মাণে ব্যয় হবে ২৮ কোটি টাকা।
প্রধানমন্ত্রী পুদুচেরীর লসপেটে ১০০ শয্যার গার্লস হোস্টেলের উদ্বোধন করবেন। স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়ায় যে সব মহিলা ক্রীড়াবিদ প্রশিক্ষণ নেন, তাদের সুবিধার্থে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে এই হোস্টেল নির্মিত হয়েছে। শ্রী মোদী পুদুচেরীর ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত নবরূপে সজ্জিত হেরিটেজ মারিয়া বিল্ডিং-এর উদ্বোধন করবেন। ফরাসীরা এই ভবনটি নির্মাণ করেছিল। এটি সংস্কারের জন্য ব্যয় হয়েছে ১৫ কোটি টাকা।