আগামীকাল অর্থাৎ, ১৮ ডিসেম্বর মেঘালয় ও ত্রিপুরা সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। শিলং-এ তিনি উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় পরিষদের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানেও অংশগ্রহণ করবেন। শিলং-এর রাজ্য কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় পরিষদের বৈঠকেও উপস্থিত থাকবেন তিনি। বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে বেলা ১০-৩০ মিনিট নাগাদ। এরপর, বেলা ১১-৩০ মিনিটে শিলং-এ আয়োজিত এক বিশেষ অনুষ্ঠানে তিনি বেশ কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাসও করবেন। একইসঙ্গে জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করবেন কয়েকটি প্রকল্পকে।
মেঘালয় সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী যাত্রা করবেন ত্রিপুরার আগরতলার উদ্দেশ্যে। সেখানে বিকেল ২-৪৫ মিনিট নাগাদ এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করবেন তিনি।
মেঘালয়ে প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচির মধ্যে রয়েছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় পরিষদের বৈঠকে ভাষণদান। পরিষদের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় ১৯৭২ সালের ৭ নভেম্বর। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় পরিষদ এক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছে। অঞ্চলের সবক’টি রাজ্যেই বিভিন্ন উন্নয়ন তথা পরিকাঠামো প্রকল্পের বাস্তবায়নে পরিষদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এই উন্নয়ন প্রচেষ্টার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে একদিকে যেমন মূলধন ও সামাজিক পরিকাঠামোর প্রসার ও বৃদ্ধি ঘটেছে, অন্যদিকে তেমনই শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া, জলসম্পদ, কৃষি, পর্যটন, শিল্প এবং অন্যান্য অনগ্রসর ক্ষেত্রগুলির উন্নয়নও ত্বরান্বিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শিলং-এ ২,৪৫০ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস কর্মসূচিতে যোগ দেবেন।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে দূরসঞ্চারের বিষয়টিকে আরও জোরদার করে তুলতে সেখানে ৪জি মোবাইল টাওয়ারগুলি জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করবেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যে ৩২০টি টাওয়ারের নির্মাণ কাজ ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ হয়েছে এবং অবশিষ্ট ৮৯০টির কাজ নির্মাণের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। উমসাওলি-তে আইআইএম শিলং-এর নতুন ক্যাম্পাসটির উদ্বোধনও করবেন প্রধানমন্ত্রী। দিয়েঙ্গপাশো সড়কের উদ্বোধনও করবেন তিনি। এই সড়কটির মাধ্যমে শিলং-এর নতুন স্যাটেলাইট টাউনশিপের যোগাযোগ ও সংযোগ আরও উন্নততর হবে বলে আশা করা হচ্ছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মেঘালয়, মণিপুর ও অরুণাচল প্রদেশ – এই তিনটি রাজ্যের অন্য চারটি সড়ক প্রকল্পেরও তিনি এদিন উদ্বোধন করবেন।
মেঘালয়ের মাশরুম ডেভেলপমেন্ট সেন্টারে একটি পরীক্ষাগারেরও সূচনা করবেন প্রধানমন্ত্রী। এই কেন্দ্রটি থেকে কৃষক ও শিল্পোদ্যোগীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণদানের ব্যবস্থা থাকবে। মৌমাছি পালনের সঙ্গে যে সমস্ত কৃষক পরিবার যুক্ত রয়েছে তাদের জীবন ও জীবিকার মানোন্নয়নে একটি ‘সুসংহত মৌমাছি পালন ও উন্নয়ন কেন্দ্র’-এরও উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এই কেন্দ্রটি থেকে মৌমাছি পালন ও মধু আহরণের সঙ্গে যুক্ত কৃষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও প্রযুক্তিগত পরামর্শদানেরও ব্যবস্থা থাকবে। মিজোরাম, মণিপুর, ত্রিপুরা এবং আসামের ২১টি হিন্দি গ্রন্থাগারেরও সূচনা করবেন শ্রী নরেন্দ্র মোদী।
আসাম, মেঘালয়, মণিপুর, মিজোরাম এবং ত্রিপুরার ছ’টি সড়ক প্রকল্পের এদিন শিলান্যাস করবেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন তুরা-র ইন্টিগ্রেটেড হসপিটালিটি অ্যান্ড কনভেনশন সেন্টার-এর। শিলং প্রযুক্তি পার্কের দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্মাণ কাজের শিলান্যাসও করবেন তিনি। প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার বর্গ ফুট এলাকা জুড়ে এই প্রযুক্তি পার্কটি গড়ে তোলা হবে। পেশাগত প্রশিক্ষণ ছাড়াও ৩ হাজারেরও বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে এই প্রকল্পটিতে। ইন্টিগ্রেটেড হসপিটালিটি অ্যান্ড কনভেনশন সেন্টার-এ থাকবে একটি সম্মেলন কক্ষ, অতিথিশালা, ফুড কোর্ট ইত্যাদি। পর্যটনের প্রসারে এবং সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো প্রসারের কাজ করে যাবে এই বিশেষ কেন্দ্রটি।
এরপর ত্রিপুরায় ৪,৩৫০ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগের বেশ কয়েকটি প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। কয়েকটি প্রকল্পকে তিনি উৎসর্গও করবেন জাতির উদ্দেশে।
দেশের প্রতিটি দরিদ্র পরিবারই যাতে একটি করে বাসস্থানের মালিকানা লাভ করতে পারেন সেই লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী বরাবরই সচেষ্ট রয়েছেন। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অধিবাসীরাও এর ব্যতিক্রম নন। তাই, প্রধানমন্ত্রী তাঁর মৌলিক চিন্তাভাবনাকে অনুসরণ করে ত্রিপুরায় ‘গৃহ প্রবেশ’ কর্মসূচির সূচনা করবেন। ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’র আওতায় যে বাসস্থানগুলি নির্মিত হয়েছে সেগুলির দ্বারোদ্ঘাটন করবেন তিনি। এই বাসস্থানগুলি গড়ে তোলা হয়েছে ৩,৪০০ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগে। এর ফলে উপকৃত হবেন ২ লক্ষেরও বেশি দরিদ্র পরিবার।
সড়ক সংযোগকে আরও উন্নত করে তোলার লক্ষ্যে ৮ নম্বর জাতীয় মহাসড়কের আগরতলা বাইপাসটিকে আরও প্রশস্ত করে তোলার কাজটির এদিন সূচনা হবে প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে। খয়েরপুর থেকে আমতলি পর্যন্ত রাস্তাটিকে আরও চওড়া করে পুনর্নির্মাণ করা হবে। এর ফলে, আগরতলা শহরে যানজটের সমস্যা অনেকটাই মিটে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ‘প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা’র আওতায় ২৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩২টি সড়কের এদিন শিলান্যাস করবেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়াও, ৫৪০ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত ১১২টি সড়ক উন্নয়নের কাজেরও এদিন সূচনা করবেন তিনি।
ত্রিপুরায় প্রধানমন্ত্রীর এদিনের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আনন্দনগরে স্টেট ইনস্টিটিউট অফ হোটেল ম্যানেজমেন্ট এবং আগরতলা গভর্নমেন্ট ডেন্টাল কলেজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন।