প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আগামী চৌঠা জানুয়ারি মণিপুর ও ত্রিপুরা সফর করবেন। সেদিন বেলা ১১টা নাগাদ প্রধানমন্ত্রী মণিপুরের ইম্ফলে ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকার বেশি ২২টি উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাসন করবেন। এরপর, বেলা দুটো নাগাদ প্রধানমন্ত্রী ত্রিপুরার আগরতলায় মহারাজা বীর বিক্রম বিমানবন্দরে নবনির্মিত সুসংবদ্ধ টার্মিনাল ভবনের উদ্বোধন করবেন এবং আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নমূলক কর্মসূচির সূচনা করবেন।
মণিপুরে প্রধানমন্ত্রী -
মণিপুরে প্রধানমন্ত্রী প্রায় ১ হাজার ৮৫০ কোটি টাকার ১৩টি প্রকল্পের সূচনা এবং ২ হাজার ৯৫০ কোটি টাকার নয়টি প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন। এই প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে সড়ক পরিকাঠামো, পানীয় জল সরবরাহ, স্বাস্থ্য, নগরোন্নয়ন, আবাসন, তথ্য প্রযুক্তি, দক্ষতা উন্নয়ন, শিল্প ও সংস্কৃতি প্রভৃতি।
দেশব্যাপী যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি সাধনে প্রধানমন্ত্রী ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে নির্মিত পাঁচটি জাতীয় মহাসড়ক প্রকল্পের নির্মাণ কাজের শিলান্যাস করবেন। সম্মিলিত ভাবে এই মহাসড়ক প্রকল্পগুলির মোট দৈর্ঘ্য হবে ১১০ কিলোমিটারের বেশি। মহাসড়ক নির্মাণ কাজ শেষ হলে এই অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় প্রভূত অগ্রগতি ঘটবে। সেই সঙ্গে, শিলচর থেকে ইম্ফল পর্যন্ত সারা বছর ধরে যোগাযোগ ব্যবস্থা বজায় থাকবে এবং যানজট কমবে। ৩৭ নম্বর জাতীয় মহাসড়কে বারাক নদীর ওপর একটি ইস্পাত নির্মিত সেতু গড়ে তোলা হয়েছে। এটি নির্মাণে খরচ পড়েছে ৭৫ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী এই সেতুটিরও উদ্বোধন করবেন।
এরপর প্রধানমন্ত্রী প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ২ হাজার ৩৮৭টি মোবাইল টাওয়ার মণিপুরবাসীর উদ্দেশে উৎসর্গ করবেন। মোবাইল টাওয়ারগুলি চালু হলে রাজ্যে মোবাইল যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাপক অগ্রগতি ঘটবে।
মণিপুরে পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্পের উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি পরিবারে বিশুদ্ধ পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। প্রধানমন্ত্রী ২৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত থৌবাল মাল্টিপার্পাস প্রকল্পের অন্তর্গত জল সরবরাহ ব্যবস্থার সূচনা করবেন। এই প্রকল্প থেকে সমগ্র ইম্ফল শহরে জল সরবরাহ করা হবে। ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে তামেঙ্গলং সদর দপ্তরে নির্মিত জল সরবরাহ প্রকল্পটি থেকে এই জেলার ১০টি জনপদে প্রতিটি বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া হবে। এছাড়াও ৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে সেনাপতি জেলায় নির্মিত জল সরবরাহ প্রকল্পটি থেকে এই এলাকার বাসিন্দাদের কাছে নিয়মিত জল সরবরাহ করা হবে।
রাজ্যে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের মানোন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী সরকারি - বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ইম্ফলে প্রায় ১৬০ কোটি টাকার অত্যাধুনিক ক্যান্সার হাসপাতালের শিলান্যাস করবেন। হাসপাতালটি গড়ে উঠলে রাজ্যের মানুষ উপকৃত হবেন এবং স্বাস্থ্য খাতে সাধারণ মানুষের খরচ সাশ্রয় হবে। এছাড়াও রাজ্যে কোভিড পরিকাঠামো ব্যবস্থার প্রসারে প্রধানমন্ত্রী কিয়ামগিতে ২০০ শয্যা বিশিষ্ট কোভিড হাসপাতালের সূচনা করবেন। প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থার সহযোগিতায় প্রায় ৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এই কোভিড হাসপাতালটি গড়ে তোলা হয়েছে।
দেশে শহরগুলির পুনরুজ্জীবন ও পট পরিবর্তনের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নিরলস প্রচেষ্টার বাস্তবায়ণের অঙ্গ হিসেবে ইম্ফল স্মার্ট সিটি মিশনের আওতায় প্রধানমন্ত্রী তিনটি প্রকল্পের সূচনা করবেন। এই প্রকল্পগুলি নির্মাণ খাতে খরচ হয়েছে ১৭০ কোটি টাকার বেশি। প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে ইন্টিগ্রেটেড কম্যান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার; প্রথম পর্যায়ে ইম্ফল নদীর পশ্চিম পাড়ের মানোন্নয়ন এবং প্রথম পর্যায়ে থানঙ্গাল বাজারে মল রোডের মানোন্নয়ন। ইম্ফল শহরে গড়ে ওঠা ইন্টিগ্রেটেড কম্যান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারটি থেকে বিভিন্ন ধরণের প্রযুক্তি নির্ভর পরিষেবা পাওয়া যাবে। সেই সঙ্গে, যানজট নিয়ন্ত্রণ, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং শহরে নজরদারির কাজে সহায়ক হবে। এই প্রকল্পগুলির মাধ্যমে রাজ্যে পর্যটন ও স্থানীয় অর্থনীতির বিকাশ ঘটবে। সেই সঙ্গে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে।
প্রধানমন্ত্রী প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে উঠতে চলা ইনভেনশন, ইনোভেশন, ইনক্যুবেশন ও ট্রেনিং সেন্টারের শিলান্যাস কবেন। রাজ্যে সরকারি - বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে এটিই সর্ববৃহৎ প্রকল্প। এই প্রকল্পের ফলে তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে অগ্রগতি ঘটবে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে। প্রধানমন্ত্রী এরপর হরিয়ানার গুরগাঁও-এ মণিপুর ইন্সটিটিউট অফ পারফর্মিং আর্ট সেন্টারের নির্মাণ কাজের শিলান্যাস করবেন। মণিপুরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নিয়ে হরিয়ানায় এধরণের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রথম পরিকল্পনা ১৯৯০ সালে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বহু বছর ধরে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। ২৪০ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা হবে। মণিপুরের সমৃদ্ধ শিল্প সংস্কৃতির প্রসারে এই প্রতিষ্ঠানটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। রাজ্যের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের আরও প্রসারে প্রধানমন্ত্রী ইম্ফলে নবরূপে সজ্জিত গোবিন্দজী মন্দিরের উদ্বোধন করবেন। তিনি মইরাঙে আইএনএ কমপ্লেক্সের সূচনা করবেন। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি (আইএনএ) যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল তা এখানে তুলে ধরা হয়েছে।
সবকা সাথ - সবকা বিকাশ - সবকা বিশ্বাস -এই মন্ত্র অনুসরণ করে প্রধানমন্ত্রী ১৩০ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে প্রধানমন্ত্রী জনবিকাশ কার্যক্রমের আওতায় গড়ে উঠতে চলা ৭২টি প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন। এই প্রকল্পগুলি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সার্বিক উন্নয়নে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্ষেত্রে পরিকাঠামোগত সহায়তা যোগাবে।
মণিপুরে তাঁত বস্ত্রশিল্পের মানোন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী ইম্ফল পূর্ব জেলায় নঙপোক কাকচিঙে মেগা হ্যান্ডলুম ক্লাস্টার এবং মইরাঙে ক্রাফ্ট অ্যান্ড হ্যান্ডলুম ভিলেজ নামে দুটি প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন। এই প্রকল্প দুটি খাতে খরচ ধরা হয়েছে ৩৬ কোটি টাকা। রাজ্যের তন্তুবায়েরা এই প্রকল্প দুটি থেকে লাভবান হবেন। এমনকি, মইরাঙে পর্যটনের সম্ভাবনা বাড়বে। সেই সঙ্গে লোকতাক হ্রদে পর্যটনের প্রসার ঘটবে এবং স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
প্রধানমন্ত্রী এরপর সরকারি আবাসন কোয়ার্টারের নির্মাণ কাজে সূচনা করবেন। নিউ চেকনে প্রায় ৩৯০ কোটি টাকা খরচে এই আবাসন গড়ে উঠবে। হাউজিং কলোনির আদলে গড়ে ওঠা এই আবাসনগুলিতে সবরকম আধুনিক সুযোগসুবিধা থাকবে। প্রধানমন্ত্রী পূর্ব ইম্ফলে একটি রোপওয়ে প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন।
এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী আরও কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। এরমধ্যে রয়েছে দক্ষতা উন্নয়ন পরিকাঠামো কর্মসূচির আওতায় কাঙ্গপোকপিতে নতুন একটি শিল্প প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান (আইটিআই) এবং তথ্য ও জনসংযোগ নির্দেশালয়ের নতুন কার্যালয় ভবন।
ত্রিপুরায় প্রধানমন্ত্রী -
ত্রিপুরা সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আগরতলায় মহারাজা বীর বিক্রম বিমানবন্দরে নতুন সুসংবদ্ধ টার্মিনাল ভবনের উদ্বোধন করবেন। এছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী ত্রিপুরা গ্রাম সমৃদ্ধি যোজনা এবং ১০০টি বিদ্যালয়ে মিশন বিদ্যাজ্যোতি প্রকল্পের সূচনা করবেন।
মহারাজা বীর বিক্রম বিমানবন্দরে নতুন সুসংবদ্ধ টার্মিনাল ভবনটি নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা। সর্বাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত এই টার্মিনাল ভবন ৩০ হাজার বর্গমিটার এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে। দেশের সমস্ত বিমানবন্দরে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর প্রয়াসের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নতুন এই টার্মিনাল ভবনটি গড়ে উঠেছে।
রাজ্যে ১০০টি বিদ্যালয়ে যে বিদ্যাজ্যোতি মিশনের সূচনা হতে চলেছে তার উদ্দেশ্যই হল, বর্তমানে চালু ১০০টি মাধ্যমিক / উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার গুণগত মান বাড়ানো এবং শিক্ষাদানের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা গড়ে তোলা। এই কর্মসূচিতে নার্সারি থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে নিয়ে আসা হবে। আগামী তিন বছরে এই কর্মসূচি রূপায়ণ খাতে খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।
মুখ্যমন্ত্রী ত্রিপুরা গ্রাম সমৃদ্ধি যোজনার উদ্দেশ্যই হল গ্রামে গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নমূলক ক্ষেত্রগুলিতে পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে মাপকাঠি নির্ধারণ করা। এই কর্মসূচিতে যে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে মাপকাঠি নির্ধারণ করা হবে তার মধ্যে রয়েছে পারিবারিক জল সংযোগ, পারিবারিক বিদ্যুৎ সংযোগ, সব মরশুমের উপযোগী সড়ক, প্রতিটি পরিবারে ব্যবহার হওয়া শৌচাগার, প্রত্যেক শিশুর জন্য টিকাকরণের প্রস্তাব, মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির অংশগ্রহণ প্রভৃতি। গ্রামগুলিতে পরিষেবা প্রদানে আদর্শ মানদন্ড গড়ে তোলার লক্ষ্যে একেবারে তৃণমূল স্তরে পরিষেবা ব্যবস্থার মানোন্নয়নে গ্রামগুলির মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতা গড়ে তোলাই গ্রাম সমৃদ্ধি যোজনার উদ্দেশ্য।