আগামী ১১ ও ১২ নভেম্বর কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তেলেঙ্গানা সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। ১১ তারিখে সকাল পৌনে ১০টায় বেঙ্গালুরুর বিধান সৌধে সন্ত কবি কঙ্ক দাস-এর প্রতিমূর্তিতে তিনি মাল্যদান করবেন। এরপর বেলা ১০.২০ মিনিট নাগাদ বেঙ্গালুরুর কেএসআর রেল স্টেশনে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস এবং ভারত গৌরব কাশী দর্শন ট্রেনের যাত্রা সংকেত দেবেন। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ কেম্পেগৌড়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের দু নম্বর টার্মিনালটির উদ্বোধন করবেন তিনি। দুপুর ১২টার সময় প্রধানমন্ত্রী প্রভু কেম্পেগৌড়ার ১০৮ ফুট দীর্ঘ ব্রোঞ্জ মূর্তির আবরণ উন্মোচন করবেন। এরপর ঐদিন দুপুর সাড়ে ১২টার সময় তিনি যোগ দেবেন একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে। বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ তামিলনাড়ুর দিনদুগুল-এ গান্ধী গ্রাম রুরাল ইন্সটিটিউটের ৩৬-তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
পরের দিন অর্থাৎ ১২ নভেম্বর সকাল সাড়ে ১০টায় শ্রী মোদী অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমে বেশ কয়েকটি প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন। বিকেল সাড়ে ৩টেয় আবার তিনি তেলেঙ্গানার রামগুন্ডাম-এ আরএফসিএল প্ল্যানটি পরিদর্শন করবেন। ওই রামগুন্ডামেই আবার বিকেল ৪.১৫ মিনিট নাগাদ কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করবেন প্রধানমন্ত্রী।
১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী বেঙ্গালুরুর কেম্পেগৌড়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের যে দু নম্বর টার্মিনালটির উদ্বোধন করবেন সেটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকার মতো। ওই টার্মিনালটি দিয়ে প্রতি বছর ৫-৬ কোটি বিমান যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন। এটির নকশা তৈরি করা হয়েছে উদ্যান নগরী বেঙ্গালুরুর বৈচিত্র্যের অনুকরণে। এই টার্মিনাল দিয়ে যাতায়াতের সময় যাত্রীরা উদ্যানের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাওয়ার অনুভূতি লাভ করবেন। ১০ হাজার বর্গমিটারেরও বেশি সবুজ দেওয়াল, ঝুলন্ত বাগান এবং আউটডোর গার্ডেনের মধ্যে দিয়ে তাদের যাতায়াতের অভিজ্ঞতা হবে। এই টার্মিনালটির মধ্যে কর্ণাটকের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পাশাপাশি ভারতীয় আবেগ ও চিন্তাদর্শের প্রতিফলন ঘটেছে। টার্মিনালটির আর একটি বৈশিষ্ট্য হল, চারটি নীতি অনুসরণ করা হয়েছে এটির সার্বিক নির্মাণ কাজে। এগুলি হল, উদ্যানের মধ্যে অবস্থিত একটি টার্মিনাল, তার যথাযথ সুরক্ষা, প্রযুক্তিগত প্রয়োগ এবং শিল্প ও সংস্কৃতির স্পর্শ।
বেঙ্গালুরুর কেএসআর রেল স্টেশনে যে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনটির যাত্রার সূচনা করবেন প্রধানমন্ত্রী সেটি যাতাযাত করবে চেন্নাই ও মাইশুরুর মধ্যে। দেশে এটি হল পঞ্চম বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেন।
অন্য দিকে প্রধানমন্ত্রী যে ভারত গৌরব কাশী যাত্রা ট্রেনটির উদ্বোধন করবেন সেটির সূচনা হবে ভারত গৌরব কর্মসূচির আওতায়। কেন্দ্রীয় রেল মন্ত্রক এবং কর্ণাটক সরকারের যৌথ উদ্যোগে পুণ্যার্থীরা কর্ণাটক থেকে কাশী যাত্রার সুযোগ পাবেন এই ট্রেনটিতে। তাঁদের থাকা এবং কাশী, অযোধ্যা ও প্রয়াগ দর্শনের বন্দোবস্ত করবে রেল মন্ত্রক।
শ্রী নাড়া প্রভু কেম্পেগৌড়ার ১০৮ মিটার দীর্ঘ যে ব্রোঞ্জ মূর্তিটির আবরণ উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী সেটি প্রভু কেম্পেগৌড়ার অবদানকে স্মরণীয় করে রাখতে নির্মিত হয়েছে। এই মূর্তিটি তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়েছে ৯৮ টন ব্রোঞ্জ এবং ১২০ টন ইস্পাত।
অন্ধ্রপ্রদেশে প্রধানমন্ত্রী ১০ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন। গ্রীনফিল্ড রায়পুর-বিশাখাপত্তনম অর্থনৈতিক করিডরটিরও তিনি উদ্বোধন করবেন। ৬ লেনের এই করিডরটি বানাতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৭৫০ কোটি টাকারও মতো। এই করিডরটির মাধ্যমে ছত্তিশগড় ও ওড়িশার সঙ্গে বিশাখাপত্তনম বন্দর এবং চেন্নাই কলকাতা জাতীয় মহাসড়কের শিল্প তালুকগুলির মধ্যে যোগসূত্র স্থাপিত হবে। এর মাধ্যমে খুব সহজেই পৌঁছে যাওয়া যাবে ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশের আদিবাসী অধ্যুষিত অনগ্রসর এলাকাগুলিতে। বিশাখাপত্তনমে কনভেন্ট জংশন থেকে শীলানগর জংশন পর্যন্ত পোর্ট রোডেরও শিলান্যাস করবেন শ্রী নরেন্দ্র মোদী। এর ফলে বিশাখাপত্তনম শহরে যানজটের আশঙ্কা অনেকটাই হ্রাস পাবে। ওইদিন প্রধানমন্ত্রী ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৩২৬এ জাতীয় মহাসড়কের নরসান্নাপেটা থেকে পথপতনম সেকশনটি জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করবেন। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে উন্নততর যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এটি বিশেষভাবে কার্যকর হবে।
অন্ধ্রপ্রদেশে ২ হাজার ৯০০ কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে নির্মিত ওএনজিসি-র ইউ-ফিন্ড অনশোর ডিপ ওয়াটার ব্লক প্রজেক্টটি জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করবেন শ্রী নরেন্দ্র মোদী। শ্রীকাকুলাম, আঙ্গুল প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপ লাইন প্রকল্পটিরও শিলান্যাস করবেন তিনি। গ্যাস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া লিমিটেডের ৭৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পাইপলাইন তৈরি করতে ব্যয়ের মাত্রা ধরা হয়েছে ২৬৫০ কোটি টাকার মত। এই পাইপ লাইনটি দিয়ে প্রাকৃতিক গ্যাসের যোগান দেওয়া হবে শিল্প ও বাণিজ্যিক সংস্থা এবং গৃহস্থ বাড়িতে।
বিশাখাপত্তনম রেল স্টেশনটিকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে ৪৫০ কোটি টাকার এক বিশেষ প্রকল্পেরও শিলান্যাস করবেন প্রধানমন্ত্রী। এটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে প্রতিদিন ৭৫ হাজার রেল যাত্রী ওই স্টেশন দিয়ে যাতায়াত করতে পারবেন। অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা যুক্ত করা হবে এই স্টেশনটিতে।
বিশাখাপত্তনমের মৎস্য বন্দরটির আধুনিকীকরণের একটি প্রকল্পেরও শিলান্যাস করবেন শ্রী নরেন্দ্র মোদী। এই প্রকল্পটির রূপায়ণ সম্পূর্ণ করতে ব্যয় হবে আনুমানিক ১৫০ কোটি টাকা। এটির নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হলে বন্দরটির ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে প্রায় দ্বিগুণ।
তেলেঙ্গানার রামগুন্ডামে ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকার কয়েকটি প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী। রামগুন্ডামের সার প্রকল্পটি তিনি উৎসর্গ করবেন জাতির উদ্দেশ্যে। এই প্রকল্পটি থেকে তেলেঙ্গানার পাশাপাশি অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক, ছত্তিশগড় এবং মহারাষ্ট্রের কৃষকদের কাছে সঠিক সময়ে চাহিদা মতো ইউরিয়া সার পৌঁছে দেওয়ার কাজে সুবিধা হবে। সারের উন্নত যোগানের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে অর্থনৈতিক কর্মপ্রচেষ্টাও বৃদ্ধি পাবে এই প্রকল্পটির মাধ্যমে। গড়ে উঠবে রেল, সড়ক এবং অনুসারী শিল্প সংস্থার মতো বিভিন্ন পরিকাঠামো।
ভদ্রাচলম রোড- সাত্তুপল্লি রেলপথটিও জাতির উদ্দেশ্য উৎসর্গ করবেন প্রধানমন্ত্রী। এই রেলপথ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। এছাড়াও ২২০০ কোটি টাকার বেশ কয়েকটি সড়ক প্রকল্পেরও শিলান্যাস করবেন তিনি।
গান্ধীগ্রাম রুরাল ইন্সটিটিউটের ৩৬ তম সমাবর্তনে ভাষণ দেবেন শ্রী নরেন্দ্র মোদী। অনুষ্ঠানে ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ ব্যাচের ২ হাজার ৩০০ জনেরও বেশি ছাত্রছাত্রী ডিগ্রি লাভ করবেন।