প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল জম্মু ও কাশ্মীর সফর করবেন। তিনি সেখানে জাতীয় পঞ্চায়েতি রাজ দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ যোগ দিয়ে দেশের সমস্ত গ্রামসভার উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। তিনি সাম্বা জেলায় পল্লীপঞ্চায়েত পরিদর্শন করবেন। এই সফরকালে প্রধানমন্ত্রী জম্মু ও কাশ্মীরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার একাধিক উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করবেন। তিনি অমৃতসরোবর উদ্যোগেরও সূচনা করবেন। এরপর তিনি মুম্বাই পৌঁছে বিকেল পাঁচটা নাগাদ মাস্টার দীননাথ মঙ্গেশকর পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রথম লতা দীননাথ মঙ্গেশকর পুরস্কার গ্রহণ করবেন।
জম্মু ও কাশ্মীরে প্রধানমন্ত্রী -
জম্মু ও কাশ্মীরে ২০১৯-এর আগস্ট মাসে সাংবিধানিক সংস্কারমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করার সময় থেকেই সরকার এই অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থায় অগ্রগতির লক্ষ্যে সংস্কারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছে। এই সফরকালে প্রধানমন্ত্রী যে সমস্ত প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করবেন তা এই অঞ্চলে মসৃণ যাতায়াত ব্যবস্থা, পরিকাঠামোর মানোন্নয়ন এবং মৌলিক সুযোগ-সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারি ভূমিকা নেবে।
প্রধানমন্ত্রী সেখানে ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বানিহাল - কাজিগুন্ড সুড়ঙ্গপথের উদ্বোধন করবেন। প্রায় ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সুড়ঙ্গপথটি বানিহাল ও কাজিগুন্ডের মধ্যে দূরত্ব ১৬ কিলোমিটার হ্রাস করবে এবং যাত্রার সময় প্রায় এক থেকে দেড় ঘন্টা কমবে। এই ট্যুইন টিউব সুড়ঙ্গপথে প্রতি ৫০০ মিটারে ক্রস প্যাসেজ রয়েছে। সুড়ঙ্গপথের রক্ষণাবেক্ষণ এবং আপৎকালীন পরিস্থিতিতে উদ্ধারের জন্যই এধরণের ক্রস প্যাসেজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই সুড়ঙ্গপথটি জম্মু ও কাশ্মীরের মধ্যে সব মরশুমে যাতায়াতের উপযোগী হয়ে উঠবে। এমনকি, এই দুই অঞ্চলকে আরও কাছাকাছি নিয়ে আসবে।
প্রধানমন্ত্রী দিল্লি-অমৃতসর-কাটরা এক্সপ্রেসওয়েতে তিনটি সড়ক প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন। এই প্রকল্পগুলি খাতে খরচ ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি। প্রকল্পের মাধ্যমে চার বা ছয় লেন বিশিষ্ট সড়ক নির্মাণ করা হবে। এরফলে, জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চলের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে যাতায়াত আরও সুগম হবে। এমনকি, জম্মু বিমান বন্দরের সঙ্গেও আরও ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে।
প্রধানমন্ত্রী রতলে ও কোয়ার জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন। ৮৫০ মেগা ওয়াট ক্ষমতা বিশিষ্ট এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটি কিস্তোয়ার জেলায় চিনাব নদের ওপর তৈরি করা হবে। এজন্য খরচ ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এছাড়াও ৫৪০ মেগা ওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কোয়ার জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটি কিস্তোয়ার জেলায় চিনাব নদের ওপর গড়ে তোলা হবে। এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প খাতে খরচ ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি। এই অঞ্চলে বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প দুটি বড় ভূমিকা নেবে।
জম্মু ও কাশ্মীরে জনঔষধী কেন্দ্রের পরিধি বিস্তারে এবং সুলভে গুণগত মানের জেনেরিক ওষুধপত্র যোগানে ১০০টি কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এই জনঔষধী কেন্দ্রগুলি জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করবেন। এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রত্যন্ত এলাকায় জনঔষধী কেন্দ্রগুলি খোলা হয়েছে।
শ্রী মোদী পাল্লিতে ৫০০ কিলোওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা বিশিষ্ট সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সূচনা করবেন। এই প্রকল্প পাল্লি পঞ্চায়েতকে দেশের প্রথম কার্বন নিঃসরণ মুক্ত পঞ্চায়েত এলাকা হিসেবে পরিচিতি দেবে।
প্রধানমন্ত্রী স্বামিত্ব কর্মসূচির আওতায় সুফলভোগীদের স্বামিত্ব কার্ড প্রদান করবেন। জাতীয় পঞ্চায়েতিরাজ দিবস উদযাপন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন বিভাগে জয়ী পঞ্চায়েতগুলিকে আর্থিক পুরস্কার দেবেন। প্রধানমন্ত্রী ইনট্যাক ফটো-গ্যালারি ঘুরে দেখবেন, যেটি এই অঞ্চলের গ্রামীণ ঐতিহ্যকে তুলে ধরেছে। দেশে আদর্শ স্মার্ট ভিলেজ গড়ে তুলতে শ্রী মোদী গ্রামীণ শিল্পোদ্যোগ ভিত্তিক নকেয়া স্মার্টপুর মডেল পরিদর্শন করবেন।
অমৃত সরোবর -
জলাশয়গুলির পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে জম্মু ও কাশ্মীর সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী অমৃত সরোবর নামে নতুন এক উদ্যোগের সূচনা করবেন। এই উদ্যোগে দেশের প্রতিটি জেলায় ৭৫টি জলাশয়ের মানোন্নয়ন ও পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্য স্থির হয়েছে। আজাদি কা অমৃত মহোৎসব উদযাপনে সরকারের এটি আরও একটি অভিনব উদ্যোগ।
মুম্বাইয়ে প্রধানমন্ত্রী -
প্রধানমন্ত্রী এরপর মুম্বাইয়ে পৌঁছে বিকেল পাঁচটা নাগাদ মাস্টার দীননাথ মঙ্গেশকর পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। এই উপলক্ষে তাঁকে প্রথম লতা দীননাথ মঙ্গেশকর পুরস্কার প্রদান করা হবে। ভারতরত্ন লতা মঙ্গেশকরের স্মরণে এই পুরস্কার চালু করা হয়েছে। দেশ গঠনে দৃষ্টান্তমূলক অবদানের জন্য প্রতিবছর একজন ব্যক্তিকে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।