প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ১৯ ও ২০ অক্টোবর গুজরাট সফর করবেন। সফরকালে তিনি প্রায় ১৫ হাজার ৬৭০ কোটি টাকার একগুচ্ছ প্রকল্প উদ্বোধন ও শিলান্যাস করবেন।
১৯ অক্টোবর সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী গান্ধীনগরে মহাত্মা মন্দির কনভেনশন অ্যান্ড এক্সিবিশন সেন্টারে ডেফএক্সপো ২২ – এর উদ্বোধন করবেন। তিনি আদালাজে বেলা ১২টায় উৎকর্ষ স্কুল মিশন – এর সূচনা করবেন। বিকেল ৩টে ১৫ মিনিটে জুনাগড়ে একগুচ্ছ প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন। সন্ধ্যে ৬টায় শ্রী মোদী রাজকোটে ইন্ডিয়া আর্বান হাউসিং কনক্লেভ ২০২২ – এর উদ্বোধন করবেন এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ ও শিলান্যাস করবেন। এরপর, তিনি রাজকোটে সন্ধ্যে ৭টা ২০ মিনিটে উদ্ভাবনমূলক নির্মাণ প্রক্রিয়া সংক্রান্ত একটি প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন।
প্রধানমন্ত্রী ২০ অক্টোবর সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে কেভাডিয়ায় মিশন লাইফ – এর সূচনা করবেন। বেলা ১২টায় তিনি বিভিন্ন দেশের ভারতীয় দূতাবাসের প্রধানদের দশম সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন। এরপর, ভিয়ারায় ৩টে ৪৫ মিনিটে একগুচ্ছ প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন।
গান্ধীনগরে প্রধানমন্ত্রী:
প্রধানমন্ত্রী ডেফএক্সপো ২০২২ – এর উদ্বোধন করবেন। এবারের এক্সপো-র মূল ভাবনা গর্বের পথে একধাপ বা ‘পাথ টু প্রাইড’। এই প্রথম প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের প্রদর্শনীতে সবচেয়ে বেশি ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলি অংশগ্রহণ করছে। প্রদর্শনীতে বিদেশি সংস্থাগুলির অধীনস্ত ভারতীয় প্রতিষ্ঠান, ভারতে নিবন্ধীকৃত বিভিন্ন সংস্থার শাখা, কোনও ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠানগুলি অংশ নিতে চলেছে। এর আগে শুধুমাত্র ভারতীয় প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে এ ধরনের প্রদর্শনী হয়নি। এর মধ্য দিয়ে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারতীয় সংস্থাগুলির দক্ষতা এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের প্রসার ঘটানোর সুযোগ প্রতিফলিত হবে। এক্সপো-তে ভারত প্যাভিলিয়নের পাশাপাসি, ১০ রাজ্যের প্যাভিলিয়ন থাকছে। প্রধানমন্ত্রী ভারত প্যাভিলিয়নে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত প্রতিরক্ষা কাজে ব্যবহৃত বিমান এইটিটি ৪০-র উদ্বোধন করবেন। হিন্দুস্তান অ্যারোনেটিক্স লিমিটেড এটির মূল নক্শা তৈরি করেছে। এই বিমানে অত্যাধুনিক বিভিন্ন ব্যবস্থাপনা রয়েছে এবং এটি চালক-বান্ধব।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মিশন ডেফস্পেস – এর সূচনা করবেন। বিভিন্ন শিল্প সংস্থা ও স্টার্টআপ-গুলির সাহায্যে মহাকাশে প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য নানা সমস্যার সমাধান এই মিশনের মাধ্যমে করা হবে। শ্রী মোদী গুজরাটে দিশা এয়ারফিল্ডেরও শিলান্যাস করবেন। দেশের সীমান্ত এলাকার কাছাকাছি বিমান বাহিনীর ঘাঁটিগুলিকে আরও সুরক্ষিত করার উদ্যোগের অঙ্গ হিসাবে এটি নির্মাণ করা হবে।
ইন্ডিয়া – আফ্রিকা : প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কৌশলগত ব্যবস্থা গ্রহণ শীর্ষক বিষয়ে ভারত – আফ্রিকা প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত দ্বিতীয় আলোচনাচক্র প্রদর্শনী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলির মধ্যে শান্তি, উন্নয়ন, স্থিতাবস্থা ও সমৃদ্ধ নিশ্চিত করার জন্য সর্বাঙ্গীন আলোচনা কর্মসূচি ইন্ডিয়ান ওশান রিজিয়ন প্লাস – এর দ্বিতীয় সম্মেলনও অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর সাগর কর্মসূচির সাযুজ্য রেখেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত সরঞ্জামের উৎপাদক সংস্থাগুলির জন্য প্রথম বিনিয়োগকারী সম্মেলনও এখানে অনুষ্ঠিত হবে। মন্থন ২০২২ কর্মসূচিতে বিভিন্ন স্টার্ট সংস্থা তাদের উদ্ভাবিত সামগ্রী প্রদর্শন করবে। এছাড়াও বন্ধন কর্মসূচির আওতায় ৪৫১টি সংস্থার মধ্যে সমঝোতা গড়ে উঠবে।
প্রধানমন্ত্রী আদালাজে ত্রিমন্দিরে উৎকর্ষ স্কুল মিশনের সূচনা করবেন। এই প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধার্য হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। এই অনুষ্ঠানে শ্রী মোদী ৪ হাজার ২৬০ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্পের সূচনা করবেন। এর মাধ্যমে গুজরাটের নতুন নতুন শ্রেণীকক্ষ, স্মার্ট ক্লাস, কম্প্যুটার গবেষণাগার নির্মাণ এবং স্কুলগুলির সার্বিক পরিকাঠামোর মানোন্নয়ন ঘটানো হবে।
জুনাগড়ে প্রধানমন্ত্রী:
প্রধানমন্ত্রী জুনাগড়ে প্রায় ৩ হাজার ৫৮০ কোটি টাকার একগুচ্ছ উন্নয়নমূলক প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন।
তিনি উপকূল অঞ্চলের যেসব স্থানে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি, সেগুলিকে যুক্ত করে মহাসড়কের মানোন্নয়ন কর্মসূচির শিলান্যাস করবেন। এই প্রকল্পের প্রথম পর্বে ১৩টি জেলায় মোট ২৭০ কিলোমিটার সড়কের মানোন্নয়ন ঘটানো হবে।
প্রধানমন্ত্রী জুনাগড়ে ২টি জল সরবরাহ প্রকল্পের এবং কৃষিপণ্য মজুত রাখার জন্য গুদামঘর নির্মাণ প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন। পোরবন্দরে তিনি মাধবপুরের শ্রীকৃষ্ণ রুক্মিনী মন্দিরের সার্বিক উন্নয়ন প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন। তিনি পোরবন্দরের মৎস্য বন্দরের পলি তোলা, জল সরবরাহ ও পয়ঃনিকাশি ব্যবস্থার শিলান্যাস করবেন। গির সোমনাথে শ্রী মোদী মাধওয়াড়ে একটি মৎস্য বন্দর গড়ে তোলা সহ ২টি উন্নয়নমূলক প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন।
রাজকোটে প্রধানমন্ত্রী:
প্রধানমন্ত্রী রাজকোটে ৫ হাজার ৮৬০ কোটি টাকার একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করবেন। তিনি ইন্ডিয়া আর্বান হাউসিং কনক্লেভ ২০২২ – এর উদ্বোধন করবেন। ভারতীয় আবাসন শিল্পের পরিকল্পনা, নক্শা তৈরি, নীতি প্রণয়ন, দায়বদ্ধতা সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এখানে আলোচনা হবে। এই অনুষ্ঠানের পর তিনি নির্মাণ শিল্পের বিভিন্ন উদ্ভাবনমূলক উদ্যোগ সংক্রান্ত প্রদর্শনীরও উদ্বোধন করবেন।
এক জনসমাবেশে শ্রী মোদী লাইট হাউস প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ১ হাজার ১০০-রও বেশি বাড়ি জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করবেন। ঐ অনুষ্ঠানেই তিনি সংশ্লিষ্ট সুবিধাভোগীদের হাতে বাড়ির চাবি তুলে দেবেন। এছাড়াও, নর্মদা ক্যানেল পাম্পিং স্টেশনে দ্বিতীয় ব্রাহ্মনী জলাধার থেকে মোরবি বাল্ক পাইপলাইন প্রকল্পটি জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করবেন। এছাড়াও, তাঁর আঞ্চলিক বিজ্ঞান কেন্দ্র, উড়ালপুল, সেতু সহ সড়ক সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রকল্পও উদ্বোধনের কথা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী গুজরাটে ২৭ নম্বর জাতীয় সড়কের চারলেনের রাজকোট – গোন্ডাল – জেটপুর শাখাটি ছয় লেনে উন্নীত করার প্রকল্পটির শিলান্যাস করবেন। এছড়াও, মোরবি, রাজকোট, বোতাদ, জামনগর ও কচ্ছে জিআইডিসি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেটের বিভিন্ন প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন। এগুলি নির্মাণে ব্যয় হবে ২ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। অন্যান্য যেসব প্রকল্পগুলির রাজকোটে শিলান্যাস হবে, তার মধ্যে রয়েছে – আমূলের গাধকায় দুধ উৎপাদন কেন্দ্র, রাজকোটে ইন্ডোর স্পোর্টস্ কমপ্লেক্স, ২টি জল সরবরাহ প্রকল্প সহ সড়ক ও রেলপথের একগুচ্ছ প্রকল্প।
কেভাডিয়ায় প্রধানমন্ত্রী:
প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব শ্রী আন্তোনিয় গুতারেজের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। এরপর, একতানগরে স্ট্যাচু অফ ইউনিটিতে শ্রী গুতারেজের উপস্থিতিতে মিশন লাইফ – এর সূচনা করা হবে। পরিবেশ রক্ষা ও সংরক্ষণের জন্য ভারতের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক স্তরে এক গণআন্দোলনের যে পরিকল্পনা প্রধানমন্ত্রী করেছেন, তা এই মিশনের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে।
সুস্থায়ী একটি ব্যবস্থার দিকে আমাদের সার্বিক উদ্যোগের মধ্য দিয়ে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনাই মিশন লাইফ – এর উদ্দেশ্য। এক্ষেত্রে ৩টি উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রথমত, চাহিদা সৃষ্টির জন্য ব্যক্তি-বিশেষকে তাঁদের দৈনন্দিন জীবনে পরিবেশ-বান্ধব বিভিন্ন আচরণে উৎসাহিত করা হবে। দ্বিতীয়ত, সরবরাহ ব্যবস্থার জন্য শিল্প সংস্থাগুলিকে চাহিদার পরিবর্তন অনুযায়ী, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সাহায্য করা হবে। তৃতীয়ত, সুস্থায়ীভাবে উৎপাদন ও বিভিন্ন সামগ্রী ব্যবহারের জন্য সরকারকে প্রভাবিত করা। এর মধ্য দিয়ে প্রয়োজনীয় শিল্প নীতি প্রণয়ন করা যাবে।
শ্রী মোদী বিভিন্ন দেশে ভারতীয় দূতাবাসগুলির প্রধানদের দশম সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন। বিদেশ মন্ত্রক কেভাডিয়ায় ২০ থেকে ২২ অক্টোবর এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে। তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলনে ১১৮টি ভারতীয় দূতাবাসের প্রধানরা ২৩টি অধিবেশনে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন। এর মধ্যে বর্তমানে বিশ্ব জুড়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক অবস্থা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভারতের বিদেশ নীতিতে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়গুলি সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। দূতাবাসগুলির প্রধানরা তাঁদের নিজ নিজ রাজ্যে সফর করছেন। সফরকালে উচ্চাকাঙ্খী জেলা, এক জেলা – এক পণ্য, অমৃত সরোবর মিশন সহ বিভিন্ন ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্পের বিষয়ে তাঁরা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করছেন।
ভিয়ারায় প্রধানমন্ত্রী:
প্রধানমন্ত্রী তাপির ভিয়ারায় ১৯৭০ কোটি টাকার একগুচ্ছ উন্নয়নমূলক প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন। তিনি সাপুতারা থেকে স্ট্যাচু অফ ইউনিটির মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী সড়ক, তাপি ও নর্মদা জেলায় বিভিন্ন জল প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।