প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী চৌঠা জুলাই অন্ধ্রপ্রদেশের ভীমাভরম এবং গুজরাটের গান্ধীনগর সফর করবেন। তিনি সকাল ১১টায় ভীমাভরমে কিংবদন্তী স্বাধীনতা সংগ্রামী আল্লুরি সীতারাম রাজুর বর্ষব্যাপী ১২৫তম জন্মবার্ষিকীর সূচনা করবেন। এরপর বিকেল ৪.৩০ মিনিটে শ্রী মোদী গান্ধীনগরে ডিজিটাল ভারত সপ্তাহ ২০২২এর উদ্বোধন করবেন।
ভীমাভরমে প্রধানমন্ত্রী
আজাদি কা অমৃত মহোৎসব উদযাপনের অঙ্গ হিসেবে সরকার স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অবদানকে স্বীকৃতি দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ এবং দেশজুড়ে সকলের কাছে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য প্রচার করছে। এই উদ্যোগের অঙ্গ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী অন্ধ্রপ্রদেশের ভীমাবরমে কিংবদন্তী স্বাধীনতা সংগ্রামী আল্লুরি সীতারাম রাজুর বর্ষব্যাপি ১২৫তম জন্মবার্ষিকীর সূচনা করবেন। প্রধানমন্ত্রী আল্লুরি সীতারাম রাজুর ৩০ ফুট দীর্ঘ একটি ব্রোঞ্জের আবরণও উন্মোচন করবেন।
১৯৫৭ সালের চৌঠা জুলাই আল্লুরি সীতারাম রাজু জন্মগ্রহণ করেন। পূর্বঘাট পার্বত্য অঞ্চলে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষদের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য তাঁর সংগ্রামের কথা চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। ১৯২২ সালে তাঁর নেতৃত্বে রাম্পা বিদ্রোহ অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় জনসাধারণ রাজুকে ‘মান্যম বীরুডু’ (জঙ্গলের নায়ক) হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
বর্ষব্যাপী উদযাপনের অঙ্গ হিসেবে সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ভিজিয়ানাগ্রাম জেলায় পান্ড্রাঙ্গীতে আল্লুরি সীতারাম রাজুর জন্মস্থান এবং চিন্তাপল্লী থানার পুনর্নিমাণ করা হবে। রাম্পা বিদ্রোহের শতবার্ষিকী উদযাপনের অঙ্গ হিসেবে থানার পুনর্নিমাণ হবে। বিদ্রোহীরা রাম্পা বিদ্রোহের সময় এই থানা আক্রমন করে তাঁদের আন্দোলনের সূচনা করেন। কেন্দ্র মোগাল্লুতে আল্লুরি ধ্যান মন্দির নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে। এখানে ধ্যানমুদ্রায় আল্লুরি সীতারাম রাজুর একটি প্রতিকৃতি থাকবে। এই স্বাধীনতা সংগ্রামীর জীবনগাঁথা ম্যুরাল চিত্রকলা এবং কৃত্রিম মেধাযুক্ত মতবিনিময় ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হবে।
গান্ধীনগরে প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল ভারত সপ্তাহ ২০২২এর উদ্বোধন করবেন। ডিজিটাল ভারত সপ্তাহ ২০২২এর মূল ভাবনা নতুন ভারতের টেকেড-এর অনুঘটন। প্রযুক্তি, স্ট্রিমলাইনের মাধ্যমে পরিষেবা প্রদানের সাহায্যে সহজ জীবনযাত্রা এবং স্টার্টআপকে উৎসাহিত করতে শ্রী মোদী অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ডিজিটাল উদ্যোগের সূচনা করবেন।
প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল ইন্ডিয়া ভাষিনীর সূচনা করবেন। কন্ঠ ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা ছাড়াও এর সাহায্যে বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় ডিজিটাল পরিষেবা পাওয়া যাবে এবং নানা ভাষায় ইন্টারনেট ব্যবহার করা সম্ভব হবে। এর সাহায্যে ভারতীয় ভাষায় বিষয়বস্তু রচনা করা সম্ভব হবে। বহুভাষিক তথ্য ভান্ডার গড়ে তোলার জন্য কৃত্রিম মেধাভিত্তিক ভাষা সংক্রান্ত এই প্রযুক্তি ভারতীয় ভাষার মাধ্যমে ব্যবহারে সুবিধা হবে। ভাষাদান উদ্যোগের মাধ্যমে ডিজিটাল ভারতীয় ভাষিনী নাগরিকদের তথ্য ভান্ডার গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।
প্রধানমন্ত্রী উন্নত প্রযুক্তি সম্পন্ন উদ্ভাবনী স্টার্টআপকে সাহায্য করতে ডিজিটাল ইন্ডিয়া জেনেসিসের-ও সূচনা করবেন। এই জাতীয় প্রযুক্তি ভিত্তিক স্টার্টআপ ব্যবস্থাপনায় দেশের দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরের শহরগুলিতে নতুন শিল্পোদ্যোগকে সাহায্য করবে এবং উন্নয়নের ক্ষেত্রে এটি সহায়ক হবে। সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের জন্য ২৭৫ কোটি টাকা ধার্য করা হয়েছে।
শ্রী মোদী আধার, ইউপিআই, ডিজি লকার, কো-উইন টিকা মঞ্চ, সরকারি বৈদ্যুতিন বাজার (জেম), দীক্ষা প্ল্যাটফর্ম এবং আয়ুষ্মান ভারত ডিজিটাল স্বাস্থ্য মিশনের মতো বিভিন্ন প্রকল্পের বিষয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে যথাযথ উপস্থাপনের জন্য ইন্ডিয়া স্ট্যাক.গ্লোবাল-এর সূচনা করবেন। এরফলে ডিজিটাল পদ্ধতিতে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ভারত আগামী দিনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। অন্যান্য যেসব দেশ এই ধরণের প্রকল্পগুলির সন্ধান করছে, এই উদ্যোগের মাধ্যমে তারা উপকৃত হবে।
প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সন্ধান পেতে মাই স্কিম জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করবেন। এই পরিষেবার মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা তাদের প্রয়োজনীয় প্রকল্পগুলির সন্ধান পাবেন। শ্রী মোদী মেরি পেহচান প্রকল্পটিও জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করবেন। ন্যাশনাল সিঙ্গেল সাইন অন দ্য এনএসএসও পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় স্বীকৃতি দেবে। এখানে একটি জায়গাতেই ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য অনলাইনে আবেদন জানাতে পারবে।
শ্রী মোদী চিপ টু স্টার্টআপ (সিটুএস) কর্মসূচির জন্য বিশেষ সহায়তা প্রকল্পে প্রথম ৩০টি সংস্থার নাম ঘোষণা করবেন। সিটুএস কর্মসূচির মাধ্যমে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও গবেষণা স্তরে দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তোলার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রশিক্ষিতরা সেমি কন্ডাক্টর তৈরিতে স্টার্টআপ সংস্থাগুলিকে সাহায্য করবেন এবং সংশ্লিষ্ট শিল্পগুলির বিকাশে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করবেন। প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দানের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে দেশের সেমিকন্ডাক্টর মিশন বাস্তবায়িত হবে, যার ফলে দেশজুড়ে সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন শিল্পের প্রসার ঘটবে।
গান্ধীনগরে চৌঠা থেকে ৬ জুলাই ডিজিটাল ইন্ডিয়া সপ্তাহ ২০২২এর মূল কর্মসূচি উদযাপিত হবে। আধার, ইউপিআই, কো-উইন, ডিজিলকার ইত্যাদির মতো ব্যবস্থাপনা নাগরিকদের সহজ জীবনযাত্রাকে নিশ্চিত করতে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে তা এই কর্মসূচির মাধ্যমে তুলে ধরা হবে। ডিজিটাল ইন্ডিয়া বার্ষিকীও এই কর্মসূচির মাধ্যমে পালিত হবে। আন্তর্জাতিক স্তরে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ভারতের দক্ষতা তুলে ধরার ফলে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে নানা কর্মসূচির বাস্তবায়ন এবং বাণিজ্যিক সম্ভাবনা নিয়ে আলোচলার সুযোগ এর মাধ্যমে গড়ে উঠবে। এছাড়াও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের বিভিন্ন সুযোগের কথা তুলে ধরা হবে। এই কর্মসূচিতে প্রথম সারির সরকারি প্রতিষ্ঠান, শিল্পসংস্থা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও নতুন শিল্পোদ্যোগ বা স্টার্টআপ সংস্থাগুলিও অংশ নেবে। সহজ জীবনযাত্রা নিশ্চিত করতে ডিজিটাল পদ্ধতির ব্যবহার প্রদর্শনের জন্য একটি ডিজিটাল মেলার আয়োজন করা হবে, যেখানে ভারতীয় স্টার্টআপ এবং ইউনিকর্নগুলি ২০০টির বেশি স্টল দেবে। ডিজিটাল ভারত সপ্তাহ উদযাপনের অঙ্গ হিসেবে ৭-৯ জুলাই ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে ইন্ডিয়া স্ট্যাক নলেজ এক্সচেঞ্জ কর্মসূচি উদযাপিত হবে।