উত্তরপ্রদেশ ভারতে একমাত্র রাজ্য হতে চলেছে যেখানে ৫টি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থাকবে। প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী উত্তরপ্রদেশের গৌতমবুদ্ধ নগরের জেওয়ারে নয়ডা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর (এনআইএ)-র ২৫ নভেম্বর বেলা ১টার সময় শিলান্যাস করবেন।
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি এবং ভবিষ্যতে অত্যাধুনিক বিমান চলাচল ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার জন্য প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে এই বিমান বন্দর তৈরি করা হবে। উত্তরপ্রদেশ এক্ষেত্রে লাভবান হবে। সম্প্রতি সেখানে কুশীনগর আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর উদ্বোধন হয়েছে, অযোধ্যায় একটি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর তৈরি করা হচ্ছে। এরফলে সেরাজ্যে অনেকগুলি নতুন বিমান বন্দর গড়ে উঠছে।
জাতীয় রাজধানী দিল্লীর খুব কাছে দ্বিতীয় একটি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর গড়ে ওঠার ফলে ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের ওপর চাপ কমবে। দিল্লী, নয়ডা, গাজিয়াবাদ, আলিগড়, আগ্রা, ফরিদাবাদ এবং সংলগ্ন অঞ্চলের মানুষের পক্ষে যাতায়াতের জন্য এই বিমান বন্দর সুবিধাজনক হবে। এটি উত্তরভারতের পণ্য পরিবহণের প্রবেশদ্বার হিসেবে গড়ে উঠবে। এর ক্ষমতার কারণে উত্তরপ্রদেশে বিপুল পরিবর্তন হবে। সারা বিশ্ব উত্তরপ্রদেশের সম্ভাবনার সম্পর্কে জানতে পারবে। এই রাজ্য আন্তর্জাতিক পণ্য পরিবহণের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত হবে। দেশের প্রথম সুসংহত মাল্টি মডেল কার্গো হাবের সুবিধা এখানে পাওয়া যাবে। নয়ডা বিমান বন্দরের পণ্য পরিবহণের ক্ষমতা ২০ লক্ষ মেট্রিকটন হবে। ভবিষ্যতে যা বৃদ্ধি পেয়ে ৮০ লক্ষ টনে পৌঁছাবে। শিল্প সামগ্রীর বাধাহীন পরিবহণের ফলে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের উন্নয়নের বিমান বন্দরটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই অঞ্চলে বিপুল বিনিয়োগ হওয়ার মধ্য দিয়ে এখানে শিল্পোন্নয়নে জোয়ার আসবে। স্থানীয় পণ্য জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে এই বিমান বন্দরের মাধ্যমে পরিবহণ করা যাবে। এই অঞ্চলে শিল্পোদ্যোগের প্রচুর সুযোগ তৈরি হবে, যার ফলে এখানে প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
নয়ডা বিমান বন্দরটি গ্রাউন্ড ট্রান্সপোর্টেশন সেন্টার হিসেবে গড়ে উঠবে। এরফলে যাত্রীরা এখানে বিভিন্ন ধরণের যানবাহনের সুবিধা পাবেন। বিমান বন্দরে মেট্রো এবং হাইস্পিড রেল স্টেশন, ট্যাক্সি, বাস পরিষেবার ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়াও ব্যক্তিগত গাড়ি রাখার ব্যবস্থাও এখানে থাকবে। সড়ক, রেল এবং মেট্রোর মাধ্যমে এই বিমান বন্দরে সহজেই পৌঁছানো যাবে। বিমান বন্দরের সঙ্গে নয়ডা এবং দিল্লী মেট্রো পরিষেবার মাধ্যমে যুক্ত হবে। এখান থেকে যমুনা এক্সপ্রেসওয়ে, পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের পেরিফেরাল অর্থাৎ প্রান্তিক এক্সপ্রেসওয়ে, দিল্লী-মুম্বাই এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলা হবে। দিল্লী এবং বারাণসীর মধ্যে হাইস্পিড রেলের সুবিধাও এই বিমান বন্দর থেকে পাওয়া যাবে। এরফলে মাত্র ২১ মিনিটে দিল্লী শহরে পৌঁছানো যাবে।
অত্যাধুনিক রক্ষণাবেক্ষণের সুবিধা এই বিমান বন্দরে গড়ে উঠবে। এখানে খুব কম খরচে যাত্রীরা এক বিমান থেকে অন্য বিমানে যাওয়ার সুবিধা পাবেন। বিমান সংস্থাগুলির দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহণের সুবিধার জন্য এখানে সুইং এয়ারক্র্যাফ্ট স্ট্যান্ডের ব্যবস্থা থাকবে। এরফলে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে বিমান দেশের অভ্যন্তরে বা বিদেশে যাত্রা করতে পারবে। বিমান বন্দরে যাত্রী সাধারণের যাতায়াত করতে সুবিধা হবে।
নয়ডা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর ভারতের প্রথম সম্পূর্ণ কার্বন নিঃসরণ মুক্ত বিমান বন্দর হয়ে উঠতে চলেছে। প্রকল্প অঞ্চলে যেসমস্ত গাছ আছে সেগুলিকে তুলে নিয়ে নির্ধারিত জায়গায় বসিয়ে বনাঞ্চল গড়ে তোলা হবে। স্থানীয় জীব বৈচিত্র্য রক্ষা করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।
বিমান বন্দরের প্রথম পর্যায়ের কাজে ব্যয় হবে ১০,০৫০ কোটি টাকা। ১৩০০ হেক্টর জমিতে এই বিমান বন্দরের প্রথম পর্যায়ের কাজ হবে। এই বিমান বন্দর বছরে ১ কোটি ২০ লক্ষ যাত্রী ব্যবহার করতে পারবেন। আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের পর জুরিখ এয়ারপোর্ট ইন্টারন্যাশনাল এজি বিমান বন্দর তৈরির দায়িত্ব পেয়েছে। প্রথম পর্বের জমি অধিগ্রহণ এবং সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে যেসমস্ত পরিবারগুলি বসবাস করে তাদের পুর্নবাসনের কাজ শেষ হয়েছে।