প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আগামীকাল প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনা (পিএমএমএসওয়াই) ডিজিটাল পদ্ধতিতে সূচনা করবেন। এছাড়াও, তিনি দেশীয় প্রজাতির গরুর বংশ বৃদ্ধি তথা গোপালকদের জন্য তথ্য সম্বলিত এক সুসংবদ্ধ ই-গোপালা অ্যাপের সূচনা করবেন। এই উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী বিহারে মৎস্য চাষ ও পশুপালন ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত একাধিক উদ্যোগেরও সূচনা করবেন।
অনুষ্ঠানে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী সহ একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অংশ নেবেন।
প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনা
দেশে মৎস্য ক্ষেত্রের সুস্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি ফ্ল্যাগশিপ কর্মসূচি হিসাবে প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনা শুরু করা হচ্ছে। ২০২০-২১ অর্থবর্ষ থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষ পর্যন্ত ৫ বছরে এই কর্মসূচিতে ২০ হাজার ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। আত্মনির্ভর ভারত প্যাকেজের অঙ্গ হিসাবে সমস্ত রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এই কর্মসূচি রূপায়িত হবে। দেশে মৎস্য চাষ ক্ষেত্রে ২০ হাজার ৫০ কোটি টাকার এই বিনিয়োগের প্রস্তাব এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এই ২০ হাজার ৫০ কোটি টাকার মধ্যে ১২ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা নোনা ও স্বাদু জলের মাছ চাষের জন্য জলজ কৃষি কাজের প্রসারে কাজে লাগানো হবে এবং প্রায় ৭ হাজার ৭১০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে মৎস্য ক্ষেত্রের পরিকাঠামো উন্নয়নে।
প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনার উদ্দেশ্য হ’ল – ২০২৪-২৫ নাগাদ মাছের উৎপাদন আরও ৭০ লক্ষ টন বাড়ানো। সেই সঙ্গে, মৎস্য রপ্তানি থেকে আয় বাড়িয়ে ১ লক্ষ কোটি টাকা করা, মৎস্য চাষীদের আয় দ্বিগুণ করা, মৎস্য চাষের ক্ষেত্রে আর্থিক অপচয়ের পরিমাণ ২০-২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে প্রায় ১০ শতাংশ করা এবং অতিরিক্ত ৫৫ লক্ষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।
এই কর্মসূচিটি এমনভাবে প্রণয়ন করা হয়েছে, যাতে মৎস্য উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতার মধ্যে ফারাকগুলি দূর করা যায়, মাছের গুণমান বাড়ানো যায়, প্রযুক্তির আরও বেশি প্রয়োগ ঘটানো যায়। সেই সঙ্গে, মূল্য-শৃঙ্খল ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ ও সুদৃঢ়করণ।
এখনও পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনার আওতায় মৎস্য চাষ বিষয়ক দপ্তর প্রথম পর্যায়ে ২১টি রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের জন্য ১ হাজার ৭২৩ কোটি টাকার একগুচ্ছ প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। কর্মসূচির মাধ্যমে উপার্জন বৃদ্ধির একাধিক পন্থা কার্যকর করার ব্যাপারেও দপ্তরের অনুমোদন পাওয়া গেছে। বিহারে এই কর্মসূচিটি রূপায়ণে ১ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তার অংশ বাবদ রাজ্য সরকারকে ৫৩৫ কোটি টাকা দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে, অতিরিক্ত ৩ লক্ষ টন মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা স্থির হয়েছে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবর্ষে কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রকল্প খাতে বিহার সরকারের জন্য ১০৭ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে।
মৎস্য চাষ ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য উদ্যোগের সূচনা
প্রধানমন্ত্রী সীতামারীতে মাছের জিন সংরক্ষণ সংক্রান্ত ব্যাঙ্ক উদ্বোধনের কথা ঘোষণা করবেন। এছাড়াও, কিষাণগঞ্জে অ্যাকোয়াটিক ডিজিজ রেফারেল ল্যাবরেটরি চালু করার কথা ঘোষণা করবেন। প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনার আওতায় কিষাণগঞ্জের এই পরীক্ষাগারটির জন্য অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে।
তিনি বিহারের মাধেপুরাতে মাছের খাবারের একটি উৎপাদন কেন্দ্র এবং পাটনাকে ফিশ অন হুইলস্ সংক্রান্ত ২টি ইউনিটের সূচনা করবেন। এই উপলক্ষে তিনি সুফলভোগীদের সঙ্গেও মতবিনিময় করবেন।
প্রধানমন্ত্রী বিহারের পুসাতে ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ কেন্দ্রীয় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সুসংবদ্ধ মৎস্য উৎপাদন প্রযুক্তি কেন্দ্রের সূচনা করবেন। এই কেন্দ্রটি মাছের চারা উৎপাদনে নতুন নতুন প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটাবে, যার ফলে উৎপাদনশীলতা বাড়বে এবং মৎস্যচাষীদের উপার্জন বৃদ্ধি পাবে।
ই-গোপালা অ্যাপ
দেশীয় প্রজাতির গরুর বংশ বৃদ্ধি ঘটাতে এবং গরু প্রতিপালনের ক্ষেত্রে গোপালকদের সময় মতো উপযুক্ত তথ্য সরবরাহের জন্য এই অ্যাপ চালু করা হচ্ছে। বর্তমানে দেশে গবাদি পশুর উপযুক্ত প্রতিপালনের ক্ষেত্রে সহায়তাদানের কোনও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম নেই। তাই, এই অ্যাপটি গোপালকদের বিভিন্ন বিষয়ে সময় মতো সঠিক তথ্য দিয়ে সাহায্য করবে।
পশুপালন ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত একাধিক কর্মসূচির সূচনা
প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় গোকুল মিশনের আওতায় বিহারের পুর্ণিয়াতে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন একটি সিমেন বা বীর্য সংরক্ষণ কেন্দ্রের সূচনা করবেন। এই সংরক্ষণ কেন্দ্রটি গড়ে তুলতে ৮৪ কোটি ২৭ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। বিহার সরকার এই সংরক্ষণ কেন্দ্রটির জন্য ৭৫ একর জমি দিয়েছে। এই বীর্য সংরক্ষণ কেন্দ্রটি থেকে প্রতি বছর ৫০ লক্ষ ডোজ সিমেন উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় গোকুল মিশনের আওতায় পাটনাতে প্রাণী বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আইভিএফ ল্যাবের সূচনা করবেন। এই পরীক্ষাগারটিতে দেশীয় প্রজাতির গরুর বংশ বৃদ্ধি এবং দুধের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে একাধিক গবেষণামূলক কাজকর্ম পরিচালিত হবে।
এছাড়াও, প্রধানমন্ত্রী বেগুসরাই জেলায় বারোনী মিল্ক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় গোকুল মিশনের আওতায় সহায়তাপ্রাপ্ত কৃত্রিম প্রজনের ক্ষেত্রে সেক্স সর্টেড সিমেন পদ্ধতি ব্যবহারের সূচনা করবেন। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে ৯০ শতাংশের বেশি ক্ষেত্রে গাভির জন্ম দেওয়া সম্ভব হবে। একইভাবে, দুগ্ধ উৎপাদনশীলতার হার দ্বিগুণ বাড়াতে সাহায্য করবে।