কোভিড-১৯ সংক্রমণের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াই চালিয়ে যেতে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে তাঁর মতবিনিময় অব্যাহত রাখবেন।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন প্রয়াসের অঙ্গ হিসাবে শ্রী মোদী ইতিমধ্যেই একাধিক বৈদ্যুতিন গণমাধ্যম এবং বিভিন্ন ডিজিটাল সংস্থার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে আলাপ-আলোচনা করেছেন।
নিয়মিত মতবিনিময় ও বৈঠক
প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদী গত জানুয়ারি মাস থেকে কোভিড-১৯ মোকাবিলার পন্থা-পদ্ধতি খুঁজে বের করতে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ ও আধিকারিকদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে মিলিত হয়েছেন এবং আলোচনা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী এখন নিয়মিতভাবে রোজ একাধিক বৈঠক করছেন, যে বৈঠকগুলিতে ক্যাবিনেট সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রধান সচিব তাঁকে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে অবহিত করছেন।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডঃ হর্ষ বর্ধনের নেতৃত্বে গঠিত মন্ত্রীগোষ্ঠী সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলি সম্পর্কেও প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করছে।
দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ
প্রধানমন্ত্রী আগেই জানিয়েছিলেন, মানুষকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য তিনি এবারের হোলি উদযাপন অনুষ্ঠানে অংশ নেবন না।
জাতির উদ্দেশে ভাষণ – জনতা কার্ফিউ
কোভিড-১৯ মোকাবিলা ও নিয়ন্ত্রণে দেশকে প্রস্তুত করে তুলতে প্রধানমন্রী গত ১৯শে মার্চ জাতির উদ্দেশে ভাষণে ২২শে মার্চ সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দীর্ঘ ১৪ ঘন্টা মানুষকে স্বেচ্ছায় জনতা কার্ফিউ অভিযানে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান। এই ভাষণে শ্রী মোদী করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় দেশবাসীকে দৃঢ় সংকল্প ও সংযম বজায় রাখার অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে সাধারণ মানুষকে অযথা ভয় না পেয়ে কেনাকাটা না করার অনুরোধ জানিয়ে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যসামগ্রীর সরবরাহ ও যোগান বজায় থাকবে বলেও আশ্বস্ত করেন।
কোভিড-১৯ ইকনোমিক রেসপন্স টাস্কফোর্স
কোভিড-১৯ মহামারীজনিত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে অর্থনীতির ওপর যে প্রভাব পড়েছে, তার মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে ইকনোমিক রেপন্স টাস্কফোর্স গঠন করার কথা ঘোষণা করেছিলেন। এই টাস্কফোর্স সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তাদের মতামত জেনে আর্থিক চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
প্রধানমন্ত্রী বাণিজ্য মহল এবং উচ্চ আয়ের মানুষদের আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, বিভিন্ন পরিষেবা গ্রহণের সময় তারা যেন কম আয়ের মানুষের ওপর যাতে বিরূপ আর্থিক প্রভাব না পড়ে, সেকথা বিবেচনায় রাখেন। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেছিলেন, বর্তমান কোভিড-১৯ সংক্রান্ত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে যে সকল কর্মী কর্মক্ষেত্রে আসতে পারবেন না, তাঁদের যেন বেতন কাটা না হয়। জটিল এই পরিস্থিতিতে তিনি মানবিকতার গুরুত্বের কথা বলেছিলেন।
ওষুধ ক্ষেত্রের সঙ্গে বৈঠক
ওষুধপত্র ও চিকিৎসা সরঞ্জামের নিয়মিত সরবরাহ বজায় রাখতে প্রধানমন্ত্রী গত ২১শে মার্চ ওষুধ প্রস্তুত শিল্পের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠক করেন। এই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ওষুধ শিল্প সংস্থাগুলিকে যুদ্ধকালীন-ভিত্তিতে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত নমুনা যাচাই সামগ্রী তৈরি করার নির্দেশ দেন। শ্রী মোদী প্রতিনিধিদের আশ্বস্ত করে বলেন, ঐ ধরনের নমুনা যাচাই সামগ্রী ও প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে যাবতীয় সরবরাহ প্রক্রিয়া বজায় রাখতে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ।
অত্যাবশ্যকীয় ওষুধপত্রের যোগান অব্যাহত রাখা এবং কালোবাজারি বন্ধ করতেও তিনি প্রতিনিধিদের নির্দেশ দেন।
রাজ্যগুলির সঙ্গে সমন্বয় বজায় রেখে কাজ করা
প্রধানমন্ত্রী গত ২০শে মার্চ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সমস্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে তিনি কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলা ও নিয়ন্ত্রণে একযোগে কাজ করার কথা বলেন। ভাইরাস সংক্রমণ রুখতে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির মধ্যে সমন্বয় বজায় রেখে নিরন্তর নজরদারি চালানোর পরামর্শও দেন তিনি।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে দেশ এখন কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে চলেছে। তবে, অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই বলেও তিনি রাজ্য নেতৃবৃন্দকে আশ্বস্ত করেন।
কোভিড-১৯ সংক্রমণ মোকাবিলা ও নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে যে সমস্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, সে ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীদের অবহিত করে প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনি ব্যক্তিগতভাবে দেশের সার্বিক পরিস্থিতির নজর রাখছেন।
বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীরা নমুনা যাচাই ব্যবস্থা আরও জোরদার করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে যে অনুরোধ জানান। তার প্রেক্ষিতে শ্রী মোদী রাজ্যগুলিকে সবরকম সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেন। শ্রী মোদী রাজ্যগুলির স্বাস্থ্য কর্মীদের দক্ষতা আরও বাড়ানো ও স্বাস্থ্য পরিষেবা পরিকাঠামোর মানোন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দেন।
সার্কগোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলিও একজোট হয়েছে
প্রধানমন্ত্রী সার্ক অঞ্চলের দেশগুলির প্রথম নেতা হিসাবে আঞ্চলিক পর্যায়ের আলাপ-আলোচনা ও মতামত প্রকাশের প্রস্তাব দেন। এই অঞ্চলের দেশগুলির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে বৈঠকের সময় তিনি এই প্রস্তাব দেন। ভারতের নেতৃত্বে গত ১৫ই মার্চ সার্ক নেতৃবৃন্দের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সহযোগিতামূলক মানসিকতার অঙ্গ হিসাবে শ্রী মোদী অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করে সমস্ত সার্ক দেশগুলির জন্য স্বেচ্ছায় আর্থিক অবদানের লক্ষ্যে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত একটি আপৎকালীন তহবিল গঠনের আহ্বান জানান। প্রাথমিকভাবে ভারত এই তহবিলে ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদানের কথা জানায়। অবিলম্বে যে কোনও ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ বাবদ খরচ মেটাতে সার্ক দেশগুলি এই তহবিলকে কাজে লাগাতে পারবে।
জরুরি এই তহবিলে ইতিমধ্যেই নেপাল, ভুটান ও মালদ্বীপ আর্থিক অনুদান দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রয়াস
কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধ ও মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদী গত ১২ই মার্চ ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী মিঃ বরিস জনসন এবং ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী মিঃ বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু’র সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। এছাড়াও, তিনি গত ১৭ই মার্চ সৌদি আরবের যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমনের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে টেলিফোনে কথা বলেন।
বিদেশে আটকে পড়া ভারত সহ অন্যান্য দেশের নাগরিকদের উদ্ধার
প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদীর সুদক্ষ নেতৃত্বে ভারত করোনা ভাইরাসে ব্যাপক আক্রান্ত চীন, ইতালি, ইরান এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে ভারত সহ বিভিন্ন দেশের ২ হাজারেরও বেশি নাগরিককে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছে।