প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আগামীকাল (২৮শে জানুয়ারি) নতুন দিল্লি থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গুজরাটের গান্ধীনগরে আয়োজিত তৃতীয় বিশ্ব আলু সম্মেলনে ভাষণ দেবেন।
আলু গবেষণা, ব্যবসা ও শিল্প তথা মূল্য-শৃঙ্খল ব্যবস্থার সুযোগ-সুবিধা সহ বর্তমান দশকের জন্য একটি রূপরেখা চূড়ান্ত করার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী তাঁর মতামত জানাবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশ্ব আলু সম্মেলনের তৃতীয় পর্বটি এবার গান্ধীনগরে আয়োজিত হতে চলেছে। প্রতি ১০ বছরের ব্যবধানে আলু ক্ষেত্রের সাফল্য নিয়ে আলাপ-আলোচনা এবং আসন্ন দশকটির জন্য একটি রূপরেখা চূড়ান্ত করার উদ্দেশ্যে এ ধরনের সম্মেলনের গুরুত্ব রয়েছে। এই লক্ষ্যে বিগত দুই দশকে বিশ্ব আলু সম্মেলন যথাক্রমে ১৯৯৯ এবং ২০০৮-এ অনুষ্ঠিত হয়।
এই সম্মেলন সংশ্লিষ্ট সমস্ত পক্ষকে এক অভিন্ন মঞ্চে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে সুযোগ করে দেবে, যাতে আলুক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত বিষয় নিয়ে বিশদ আলোচনা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে মতামত পেশ করা যায়। আলু গবেষণার ক্ষেত্রে জ্ঞান ও উদ্ভাবনের দিক থেকে দেশের সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মতামত জানানোর ব্যাপারেও এ ধরনের সম্মেলন অভিনব হয়ে উঠেছে।
গুজরাট দেশের অগ্রণী আলু উৎপাদক রাজ্য। বিগত ১১ বছরে ভারতে যেখানে আলু চাষের এলাকা বেড়েছে ১৯ শতাংশ, সেখানে কেবল গুজরাটেই এই আলু চাষের এলাকা বেড়েছে ১৭০ শতাংশ। এই রাজ্যে ২০০৬-০৭-এ আলু চাষ হয়েছিল ৪৯.৭ হাজার হেক্টর জমিতে। ২০১৭-১৮-তে আলু চাষের এলাকা বেড়ে হয়েছে ১৩৩ হাজার হেক্টর। এমনকি, এই রাজ্যটি বিগত এক দশক ধরে হেক্টর পিছু ৩০ টনের বেশি আলু উৎপাদন করে দেশের মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে। কৃষিকাজে এই রাজ্যটি স্প্রিঙ্কলার এবং ড্রিপ ইরিগেশনের মতো আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে থাকে।
উল্লেখ করা যেতে পারে, গুজরাটে উন্নতমানের হিমঘরের সুযোগ-সুবিধা ও পারস্পরিক যোগাযোগের সুবিধার প্রেক্ষিতে রাজ্যটি আলু প্রক্রিয়াকরণ শিল্পক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।
আলু রপ্তানিকারকদের অধিকাংশই গুজরাটের। এই কারণেই রাজ্যটি দেশের অন্যতম আলু হাব (ভাণ্ডার) হয়ে উঠেছে।
এই প্রেক্ষিতে গুজরাটে তৃতীয় বিশ্ব আলু সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। ভারতীয় কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের শিমলা-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় আলু গবেষণা কেন্দ্র এবং পেরুর লিমা-ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল পোটাটো সেন্টারের সহযোগিতায় ইন্ডিয়ান পোটাটো অ্যাসোসিয়েশন এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে।
এই সম্মেলনে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। এগুলি হল – আলু সম্মেলন, কৃষিপণ্য রপ্তানি এবং পোটাটো ফিল্ড ডে। সম্মেলন চলবে আগামী ৩০ তারিখ পর্যন্ত। কৃষি রপ্তানি নিয়ে আলোচনা হবে ২৮ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত। এই আলোচনাসভায় আলু-ভিত্তিক শিল্প ও বাণিজ্য, প্রক্রিয়াকরণ, আলু বীজ উৎপাদন, জৈব প্রযুক্তির ব্যবহার, প্রযুক্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব সহ কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
পোটাটো ফিল্ড ডে বা সরেজমিনে আলু জমি পরিদর্শন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে আগামী ৩১শে ডিসেম্বর। এই কর্মসূচির আওতায় আলুর বিভিন্ন প্রজাতি, চাষাবাদে আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ প্রভৃতি ক্ষেত্রে অর্জিত সাফল্যগুলি হাতেকলমে দেখানো হবে।
এছাড়াও সম্মেলনে আলু চাষের যন্ত্রপাতির অভাব, সরবরাহ শৃঙ্খল, উৎপাদন-পরবর্তী অপচয়, প্রক্রিয়াকরণের হার বাড়ানো, রপ্তানি এবং প্রযুক্তি ব্যবহারে আরও বৈচিত্র্য নিয়ে আসার মতো বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হবে।