“তরুণ শক্তিতে দেশের উন্নয়নে নতুন গতি আসছে”
“৮ বছরের স্বল্প সময়ের মধ্যে দেশের স্টার্ট-আপ ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে”
“২০১৪ সালের পর সরকার তরুণদের উদ্ভাবনী শক্তির উপর বিশ্বাস ফিরিয়ে এনেছে এবং একটি সহায়ক ইকো ব্যবস্থাপনা তৈরি করেছে”
“৭ বছর আগে স্টার্ট-আপ ইন্ডিয়ার সূচনা ছিল উদ্ভানী ক্ষেত্রে চিন্তাভাবনাগুলিকে পরিণত করার এবং তা শিল্পে রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ”
“সহজে ব্যবসার সুযোগ দেওয়ার পাশাপাশি দেশে সহজে বসবাসের উপর অভূতপূর্ব জোর দেওয়া হয়েছে”
প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী শুক্রবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ইন্দোরে অনুষ্ঠিত মধ্যপ্রদেশ স্টার্ট-আপ সম্মেলনে মধ্যপ্রদেশ স্টার্ট-আপ নীতির সূচনা করেছেন। তিনি মধ্যপ্রদেশ স্টার্ট-আপ পোর্টালেরও সূচনা করেন। এই পোর্টাল স্টার্ট-আপ ইকো ব্যবস্থাপনাকে সহজ এবং উন্নতিসাধনে সাহায্য করবে। এদিন তিনি স্টার্ট-আপ উদ্যোক্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
কিরানা স্টোর - শপ কিরানা গড়ে তোলার জন্য অনলাইন স্টোরের প্রতিষ্ঠাতা শ্রী তনু তেজস সারস্বতের সঙ্গে মতবিনিময় করে, প্রধানমন্ত্রী তাঁর অতীতের কথা এবং কীভাবে এই ব্যবসা শুরু করেছেন সে সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। প্রধানমন্ত্রী এই ব্যবসার সুযোগ ও বৃদ্ধির বিষয় সম্পর্কে তাঁর কাছে জানতে চান। শ্রী মোদী আরও জিজ্ঞাসা করেন যে, কতগুলি কিরানা স্টোর তার স্টার্ট-আপের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে এবং কেন তিনি স্টার্ট-আপের জন্য ইন্দোরকে বেছে নিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী এও জিজ্ঞাসা করেন যে, অন্য কেউ কি রাস্তার বিক্রেতাদের সংগঠিত করতে পারে, যারা স্বানিধির মাধ্যমে উপকৃত হতে পারেন।
ভোপাল থেকে উমাং শ্রীধর ডিজাইন প্রাইভেট লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীমতী উমাং শ্রীধরের সঙ্গে আলাপচারিতার সময় প্রধানমন্ত্রীকে খাদির উপর তাদের উদ্ভাবনী কাজ এবং বড় সংস্থাগুলির জন্য পণ্য তৈরির বিষয়ে অবহিত করা হয়। ২০১৪ সালে তিনি যখন এই সংস্থা শুরু করেছিলেন তখন স্টার্ট-আপের বিষয় তার কাছে অস্পষ্ট ধারণা ছিল। মহিলাদের নিয়ে তাঁর কাজের কথাও তিনি শ্রী মোদীকে জানান। তাঁর স্টার্ট-আপের মাধ্যমে মহিলারা যে উন্নতি এবং আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারছেন, সে সম্পর্কেও প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞাসা করেন। শ্রীমতী উমাং জানান, মহিলা কারিগরদের আয় প্রায় ৩০০ শতাংশ বেড়েছে। তিনি কারিগর থেকে উদ্যোক্তায় স্নাতক হওয়ার জন্য মহিলাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথাও প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরেন। কাশীতে তাঁর কাজের বিষয়ে খোঁজখবর নেন প্রধানমন্ত্রী। একজন কর্মদাতা হিসেবে অন্যকে অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্য তাঁর কাজের প্রশংসাও জানান শ্রী মোদী।
ইন্দোর থেকে শ্রী তৌসিফ খানের সঙ্গে আলাপচারিতায় প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয় যে তাঁর সংস্থা কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করতে কাজ করে চলেছে। তারা প্রযুক্তিগত সমাধান তৈরি করেছে, যা কৃষকদের ডিজিটাল ও ভৌত উপায়ে সাহায্য করে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী জানতে চান যে, তাঁর স্টার্ট-আপের সঙ্গে যুক্ত কৃষকদের মাটি পরীক্ষার সুবিধা দেওয়া হচ্ছে কিনা। প্রধানমন্ত্রীকে মাটি পরীক্ষা করার উপায় সম্পর্কে অবহিত করা হয় এবং কৃষকদের সঙ্গে ডিজিটালভাবে সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়ে প্রতিবেদন ভাগ করে নেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীকে এও জানানো হয় যে, তারা জৈব ও কীটনাশক সারের বিষয়ে কাজ করছেন। প্রধানমন্ত্রী কৃষকদের মধ্যে প্রাকৃতিক চাষাবাদের বিষয়ে আগ্রহ সম্পর্কে জানতে চান। স্বচ্ছ সর্বেক্ষণে ইন্দোরের উৎকর্ষতা লাভের মতো, ইন্দোর জেলার কৃষকদেরও রাসায়নিকমুক্ত চাষের ক্ষেত্রে উদাহরণ সৃষ্টি করা উচিত বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
সমাবেশের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তরুণ শক্তির মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে নতুন গতি এসেছে। একটি সক্রিয় স্টার্ট-আপ নীতি যেমন রয়েছে, তেমনি দেশে পরিশ্রমী স্টার্ট-আপ নেতৃত্ব রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন যে, ৮ বছরের স্বল্প সময়ে দেশের স্টার্ট-আপ ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। তিনি স্মরণ করেন, ২০১৪ সালে যখন তাঁর সরকার গঠিত হয়েছিল, তখন দেশে স্টার্ট-আপের সংখ্যা ছিল প্রায় ৩০০-৪০০। আজ প্রায় ৭০ হাজার স্বীকৃত স্টার্ট-আপ রয়েছে। তিনি বলেন, এ দেশে প্রতি ৭-৮ দিন পর পর একটি নতুন ইউনিকর্ন তৈরি হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী স্টার্ট-আপ ক্ষেত্রে একাধিক বৈচিত্র্যের কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, প্রায় ৫০ শতাংশ স্টার্ট-আপগুলি টিয়ার II (টু) ও টিয়ার III (থ্রি) শহর থেকে উঠে এসেছে। এগুলি একাধিক রাজ্য ও শহরে ছড়িয়ে রয়েছে। ৫০টিরও বেশি শিল্পের সঙ্গে এই স্টার্ট-আপগুলি যুক্ত। তিনি বলেন, স্টার্ট-আপগুলি বিশ্বের একাধিক বাস্তব সমস্যার সমাধান করছে। আজকের স্টার্ট-আপগুলি আগামীর বহুজাতিক সংস্থা হয়ে উঠবে। তিনি জানান, ৮ বছর আগে স্টার্ট-আপের বিষয়ে চিন্তাভাবনা মাত্র কয়েকজনের মধ্যে আলোচিত হত। এখন এটি সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোচনার অঙ্গ হয়ে উঠেছে। শ্রী মোদী বলেন, এই পরিবর্তন শুধুমাত্র অপ্রত্যাশিত সাফল্যই নয়, বরং সুচিন্তিত কৌশলের ফল।
তিনি ভারতে উদ্ভাবনী ক্ষেত্রে সমাধানের বিষয়ের উপর আলোকপাত করেন। তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিপ্লবের গতিতে উৎসাহের অভাব এবং সুযোগকে কাজে লাগানোর ব্যর্থতার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। এক দশকের বেশি সময় দুর্নীতি আর বিশৃঙ্খলায় মধ্যে দিয়ে নষ্ট হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। শ্রী মোদী বলেন, ২০১৪ সালের পর সরকার তরুণদের উদ্ভাবনী শক্তির প্রতি আস্থা ফিরিয়ে এনেছে এবং একটি সহায়ক ইকো ব্যবস্থাপনা তৈরি করেছে। চিন্তাভাবনা থেকে উদ্ভাবন, সেখান থেকে শিল্প পর্যন্ত একটি রোডম্যাপ তৈরি করে এগিয়ে যাওয়ার জন্য তিনমুখী পদ্ধতির কথা তুলে ধরেন তিনি। শ্রী মোদী জানান, এই কৌশলের প্রথম অঙ্গ হল ধারণা, উদ্ভাবন, ইনকিউবেট এবং শিল্প সম্পর্কে চিন্তাভাবনা। এই প্রক্রিয়াগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠানগুলিকে নির্মাণ ও শক্তিশালী করা হয়েছে। দ্বিতীয় কৌশল হল, সরকারী নিয়ম বিধি সহজ করা। তৃতীয় কৌশলটি হল, একটি নতুন ইকো ব্যবস্থাপনা তৈরি করে উদ্ভাবনের জন্য মানসিকতায় পরিবর্তন নিয়ে আসা। এই বিষয়গুলির কথা মাথায় রেখে হ্যাকাথনের মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়। স্টার্ট-আপের জন্য একটি ইকো ব্যবস্থাপনা তৈরি করা হয়। এই হ্যাকাথন আন্দোলনে ১৫ লক্ষ প্রতিভাবান তরুণকে যুক্ত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, ৭ বছর আগে স্টার্ট-আপ ইন্ডিয়ার সূচনা হয়েছিল, সেই চিন্তাভাবনা থেকে যাতে ধারণাগুলিকে উদ্ভাবনে পরিণত করা এবং তা শিল্পে রূপান্তর করা যায়। এক বছর পরে, উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিদ্যালয় এবং ইনকিউবেশন সেন্টারে অটল টিঙ্কারিং ল্যাব তৈরির মাধ্যমে অটল উদ্ভাবন মিশন চালু করা হয়। ১০ হাজারেরও বেশি বিদ্যালয়ে এই টিঙ্কারিং ল্যাব রয়েছে এবং ৭৫ লক্ষেরও বেশি শিক্ষার্থী এধরণের উদ্ভাবন পরিবেশে যুক্ত হয়েছে। একইভাবে জাতীয় শিক্ষানীতিও উদ্ভাবনের বিষয়কে উৎসাহিত করেছে। উদ্ভাবন ক্ষেত্রে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ছে বলেও তিনি জানান।
শ্রী মোদী বলেন, মহাকাশ ক্ষেত্রে সংস্কার, ম্যাপিং, ড্রোন তৈরি ইত্যাদি স্টার্ট-আপগুলির জন্য নতুন সুযোগের দরজা খুলে দিয়েছে। স্টার্ট-আপগুলির পণ্য বাজারে নিয়ে আসা সহজ করে তুলতে GeM পোর্টাল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। GeM পোর্টালে ১৩ হাজারটিরও বেশি স্টার্ট-আপ নথিভুক্ত হয়েছে এবং পোর্টালে ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে। ডিজিটাল ইন্ডিয়া স্টার্ট-আপের বিকাশ সাধন এবং নতুন বাজার তৈরির জন্য এটি একটি বড় পদক্ষেপ । তিনি বলেন, পর্যটন ক্ষেত্রের উন্নয়নে স্টার্ট-আপগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। স্টার্ট-আপগুলি ভোকাল ফর লোকালকে উৎসাহিত করতে সাহায্য করছে। এমনকি স্টার্ট-আপগুলি উপজাতি সম্প্রদায়ের হস্তশিল্প ও পণ্য বাজারে আনতেও সাহায্য করতে পারে। তিনি বলেন, সরকার গেমিং শিল্প এবং খেলনা শিল্পের জন্য একটি বড় পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। তিনি সীমান্ত প্রযুক্তি ক্ষেত্রে স্টার্ট-আপের সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করেছেন। ৮০০টিরও বেশি ভারতীয় স্টার্ট-আপ ক্রীড়া ক্ষেত্রে যুক্ত রয়েছে বলেও শ্রী মোদী উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন যে "আমাদের ভারতের সাফল্যে নতুন ধারা এবং সম্মান নিয়ে আসতে হবে। আজ ভারত জি-২০ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির অর্থনীতির মধ্যে দ্রুত বিকাশশীল অর্থনীতির দেশ”। তিনি বলেন, ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। স্মার্টফোন ও ডেটা খরচের দিক থেকে ভারত প্রথম স্থানে রয়েছে। এমনকি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী দেশগুলির মধ্যে ভারত দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। বিশ্বব্যাপী খুচরা সূচকে ভারতের স্থান দ্বিতীয়। ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম শক্তি গ্রাহক দেশ এবং বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম উপভোক্তা বাজার এদেশে রয়েছে। ভারত এ বছর ৪৭০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করে একটি নতুন রেকর্ড তৈরি করেছে। পরিকাঠামোগত ক্ষেত্রে নজিরবিহীন বিনিয়োগ হয়েছে। ভারতে সহজে ব্যবসা করার পাশাপাশি সহজে বসবাসের উপর অভূতপূর্ব জোর দেওয়া হয়েছে। এই তথ্য প্রত্যেক ভারতীয়কে গর্বিত করে এবং একটি বিশ্বাস তৈরি করে যে, এই দশকে ভারতের বৃদ্ধি নতুন শক্তিতে এগিয়ে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী জানান, অমৃতকালে আমাদের প্রয়াস দেশের দিশা নির্দেশ করবে এবং আমরা আমাদের সম্মিলিত প্রয়াসে দেশের আশাআকাঙ্খা পূরণ করব।