






রামকৃষ্ণ হরি।
রামকৃষ্ণ হরি।
অনুষ্ঠানে আমার সঙ্গে উপস্থিত মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল শ্রী ভগৎ সিং কোশিয়ারিজি, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী উদ্ধব ঠাকরেজি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আমার সঙ্গী শ্রী নীতিন গড়করিজি, শ্রী নারায়ণ রানেজি, রাওসাহেব দানভেজি, রামদাস অটাওয়ালেজি, কপিল পাটিলজি, ডঃ ভগবৎ করাডজি, ডঃ ভারতী পাওয়ারজি, জেনারেল ভি কে সিং-জি, মহারাষ্ট্রের উপ-মুখ্যমন্ত্রী শ্রী অজিত পাওয়ারজি, মহারাষ্ট্র বিধানসভায় বিরোধী নেতা এবং আমার বন্ধু শ্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশজি, লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান রামরাজে নায়েকজি, মহারাষ্ট্র সরকারের সকল সম্মানিত মন্ত্রীগণ, সংসদে আমার সহযোগী সাংসদগণ, মহারাষ্ট্র বিধানসভার বিধায়কগণ, অন্যান্য সকল জনপ্রতিনিধি, এখানে আমাকে আশীর্বাদ প্রদানের জন্য উপস্থিত আমাদের সকল পূজনীয় সন্ন্যাসীগণ আর শ্রদ্ধাবান বন্ধুগণ!
দু’দিন আগে ঈশ্বরের কৃপায় আমার কেদারনাথে আদি শঙ্করাচার্যজির পুনর্নিমিত সমাধি সেবা করার সৌভাগ্য হয়েছে আর আজ ভগবান ভিঠঠলজির নিত্যনিবাস স্থান পনঢরপুর থেকে আপনাদের সবার সঙ্গে আমাকে যুক্ত করে নিয়েছেন। এর থেকে বেশি আনন্দের, ঈশ্বরের কৃপার সঙ্গে সাক্ষাৎকারের সৌভাগ্য আর কী হতে পারে? আদি শঙ্করাচার্যজি স্বয়ং বলেছিলেন –
“মহা-যোগ-পীঠে, তটে ভীম-রথ্যাম,
ওয়রম পুণ্ডরী-কায়, দাতুম মুনীন্দ্রৈঃ।
সমাগত্যয় তিষ্ঠন্তম, আনন্দ-কন্দং,
পরব্রহ্ম লিঙ্গম, ভজে পাণ্ডু-রঙ্গম।।”
অর্থাৎ শঙ্করাচার্যজি বলেছেন, পনঢরপুরের এই মহাযোগ ভূমিতে ভিঠঠল ভগবান সাক্ষাৎ আনন্দস্বরূপ বিরাজমান। সেজন্য পনঢরপুর তো আনন্দেরই প্রত্যক্ষ স্বরূপ, আর আজ আমাদের এর সেবার আনন্দের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সৌভাগ্য হল।
মলা অতিশয় আনন্দ হোত আহেং কী, সন্ত জ্ঞানবা মাউলি আণি সন্ত তুকবারায়াংচ্যা পালখী মার্গাচে আজ উদঘাটন হোতে আহে। ওয়ারকর ইয়ংনা অধিক সুবিধা তর মিলণার আহেতচ, পণ আপণ জসে মহণতো কী, রস্তে হে বিকাশাচে দ্বার অসতে। তসে পানঢারী-কডে জাণারে হে মার্গ ভাগবতধর্মাচী পতাকা আণখী পুঙচ ফডকভিণারে মহামার্গ থরতীল। পবিত্র মার্গাকডে নেণারে তে মহাদ্বার থরেল।
অর্থাৎ, আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে সাধক জ্ঞানোবা মাউলি ও সাধক তুকোবারায়ের পালখী মার্গ বা পালকি পথ আজ উদ্বোধন করা হচ্ছে। ওয়ারকারিরা আরও সুযোগ-সুবিধা পাবেন, কিন্তু আমরা যেমন বলি, রাস্তা উন্নয়নের দ্বার। একই ভাবে পানঢারীর দিকে যাওয়া এই রাস্তাগুলি হয়ে উঠবে ভগবত ধর্মের পতাকা আরও উঁচুতে উড়ানোর মহাসড়ক। এগুলি হবে পবিত্র পথে যাওয়ার প্রবেশদ্বার।
বন্ধুগণ,
আজ এখানে শ্রীসন্ত জ্ঞানেশ্বর মহারাজ পালখীমার্গ এবং সন্ত তুকারাম মহারাজ পালখীমার্গ-এর শিলান্যাস হয়েছে। শ্রীসন্ত জ্ঞানেশ্বর মহারাজ পালখীমার্গ-এর নির্মাণ প্রক্রিয়া এখনই আপনারা একটি ভিডিওর মাধ্যমে দেখেছেন। নীতিনজির ভাষণেও শুনেছেন। এই কাজটি পাঁচটি পর্যায়ে সম্পন্ন হবে এবং সন্ত তুকারাম মহারাজ পালখীমার্গ-এর নির্মাণও তিন পর্যায়ে সম্পূর্ণ করা হবে। এই সকল পর্যায় মিলিয়ে ৩৫০ কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ মহাসড়ক তৈরি হবে আর এই নির্মাণে ১১ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ খরচ করা হবে। এর সবচাইতে প্রধান বৈশিষ্ট্য হল যে এই মহাসড়কের উভয় দিকে পালখী (পালকি) যাত্রার জন্য পালকি কাঁধে নিয়ে যে ভক্তরা পায়ে হেঁটে যান, তাঁদের জন্য বিশেষ পায়ে হাঁটা পথও তৈরি করা হবে। তাছাড়া, আজ পনঢরপুরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনকারী প্রায় ২২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ জাতীয় মহাসড়কের শুভারম্ভ হয়েছে। জাতির উদ্দেশে অর্পণ করা হয়েছে। এটির নির্মাণে প্রায় ১,২০০ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। সাতারা, কোলহাপুর, সাংগ্লী, বিজাপুর, মারাঠওয়াড়ার এই অঞ্চলগুলি, উত্তর-মহারাষ্ট্রের নানা অঞ্চল, এই সকল স্থান থেকে পনঢরপুরে যে শ্রদ্ধাবান মানুষেরা আসেন, এই জাতীয় মহাসড়ক গড়ে ওঠার ফলে তাঁদের খুব সুবিধা হবে। একদিক থেকে দেখতে গেলে এই জাতীয় মহাসড়ক ভগবান ভিঠঠল-এর ভক্তদের পাশাপাশি এই গোটা পূণ্য ক্ষেত্রের উন্নয়নেরও মাধ্যম হয়ে উঠবে। বিশেষভাবে বলা যায় যে এর মাধ্যমে দক্ষিণ ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত হবে। এর মাধ্যমে এখন আরও বেশি ভক্ত এখানে সহজে আসতে পারবেন আর সমগ্র এলাকার উন্নয়ন সংক্রান্ত অন্যান্য গতিবিধিও ত্বরান্বিত হবে। আমি এই সকল পূণ্য কাজের সঙ্গে যুক্ত সকল ব্যক্তিকে অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই। এই সকল প্রচেষ্টা আমাদেরকে একটি আত্মিক সন্তোষ প্রদান করে, আমাদের জীবনে সার্থকতার আনন্দ এনে দেয়। আমি ভগবান ভিঠঠলের সকল ভক্তদের, এই অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত সকলকে পনঢরপুর এলাকার এই বিকাশ অভিযানের জন্য অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই। “মী সর্ব ওয়ারকরইয়াংনা নমন করতো, ত্যাংনা কোটি কোটি অভিবাদন করতো।” অর্থাৎ, আমি সংশ্লিষ্ট সমস্ত ওয়ারকরদের প্রণাম জানাই। আপনাদের সবাইকে কোটি কোটি অভিবাদন জানাই। আমি এই কর্মসম্পাদনের কৃপার জন্য ভগবান ভিঠঠল দেবজির চরণে প্রণাম জানাই, তাঁকে ষাষ্ঠাঙ্গ প্রণাম জানাই। আমি সমস্ত সন্ন্যাসীদের চরণেও আমার প্রণাম জানাই।
বন্ধুগণ,
অতীতে আমাদের ভারতে অসংখ্য হানাদাররা হামলা চালিয়েছে। ফলে প্রায় হাজার বছর ধরে এই দেশ দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ ছিল। অসংখ্য প্রাকৃতিক বিপর্যয় এসেছে, প্রতিকূলতা এসেছে, সমস্যা এসেছে কিন্তু ভগবান ভিঠঠল দেবের ওপর আমাদের আস্থা, আমাদের বিশ্বাস তেমনই অটল থেকেছে। আজও এই পনঢরপুর যাত্রাকে বিশ্বের সবচাইতে প্রাচীন আর সবচাইতে বড় জনযাত্রা রূপে, জনগণের যাত্রা রূপে দেখা হয়। আষাঢ় একাদশীতে পনঢরপুর যাত্রার প্যানারমিক ভিউ বা ‘বিহঙ্গম দৃশ্য’ কে ভুলতে পারে? হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ ভক্তের সমাগম। সবাই কোনও এক অদৃশ্য টানে ছুটে চলে আসেন, ছুটে চলে আসেন। একদিকে ‘রামকৃষ্ণ হরি’, অন্যদিকে ‘পুণ্ডলীক ভরদে হারি ভিঠঠল’ আর ‘জ্ঞানবা তুকারাম’-এর জয়ধ্বনি চলতে থাকে। একুশ দিন ধরে একটা অদ্ভূত অনুশাসন, একটা অসাধারণ সংযম পরিলক্ষিত হয়। এই যাত্রা ভিন্ন ভিন্ন পালখী মার্গ দিয়ে এগিয়ে চলে। কিন্তু সকলের গন্তব্য কিন্তু একটাই। এটা ভারতের সেই শ্বাশত শিক্ষার প্রতীক যা আমাদের আস্থা ও বিশ্বাসকে বেঁধে রাখে না, এর বিপরীতে মুক্ত করে দেয় যা আমাদের শেখায় যে পথ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে, পদ্ধতি আর ভাবনা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু আমাদের লক্ষ্য একটাই। অবশেষে সকল পন্থাই ভাগবৎ পন্থা। আর এজন্য আমাদের এখানে অত্যন্ত বিশ্বাসের সঙ্গে শাস্ত্রে লেখা হয়েছে –
“একম সৎ বিপ্রাঃ বহুধা বদন্তী।”
বন্ধুগণ,
সন্ত তুকারাম মহারাজজি আমাদের মন্ত্র দিয়েছেন আর তুকারাম মহারাজজি বলেছেন,
“বিষ্ণুময় জগ বৈষ্ণবাঞ্চা ধর্ম,
ভেদাভেদ ভ্রম অমঙ্গল পইকা জী তুমহী ভক্ত ভাগবৎ,
করাল তেং হিত সত্য করা।
কোণাহী জীবাচা ন ঘনো মৎসর, মর্ম সর্বেশ্বর পূজনাচে।।”
অর্থাৎ, বিশ্বে সবকিছু বিষ্ণুময়। সেজন্য জীবের সঙ্গে জীবের পার্থক্য করা, বৈষম্য করাই অমঙ্গল। পরস্পরের মধ্যে ঈর্ষা না থাকলে, দ্বেষ না থাকলে আমরা যদি সবাইকে সমান ভাবি – এটাই প্রকৃত ধর্ম। সেজন্য পনঢরপুর দিণ্ডীতে কোনও জাতপাত থাকে না, কোনও বৈষম্যও থাকে না। প্রত্যেক ওয়ারকারই সমান, প্রত্যেক ওয়ারকারই পরস্পরের গুরু ভাউ কিংবা গুরু বহিন। সবাই একই ভিঠঠলের সন্তান। সেজন্য সকলের একটাই জাতি, একটাই গোত্র – ভিঠঠল গোত্র। ভগবান ভিঠঠল-এর দরবার প্রত্যেকের জন্য সমানভাবে খোলা আর যখনই আমি ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস’-এর কথা বলি, তখন এর পেছনেও এই মহান পরম্পরার প্রেরণা থাকে, এই ভাবনা থাকে। এই ভাবনা আমাদের দেশের উন্নয়নের জন্যও প্রেরণা যোগায়, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে, সকলের উন্নয়নের জন্য প্রেরণা যোগায়।
বন্ধুগণ,
পনঢরপুরের আভা, পনঢরপুরের অনুভূতি এবং পনঢরপুরের অভিব্যক্তি – সবকিছুই অলৌকিক। “আপণ মহন্ত না! মাঝে মাহের পন্ধরী, আহে ভিওরেচ্যা তীরী।”
অর্থাৎ, তুমি না মহন্ত! পনেরো মাসের মধ্যে, ভিওরের তীরে ফিরে ফিরে আসো! প্রকৃতপক্ষেই পনঢরপুর মায়ের বাড়ির মতো। কিন্তু আমার সঙ্গে পনঢরপুরের আরও দুটি অত্যন্ত গভীর সম্পর্ক রয়েছে আর আমি এই শ্রদ্ধেয় সন্ন্যাসীদের সামনে বলতে চাই, আমার বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। আমার প্রথম সম্পর্ক হল গুজরাটের দ্বারকার। সবাই জানেন, ভগবান দ্বারকাধীশই এখানে এসে ভিঠঠল রূপ ধারণ করে বিরাজমান হয়েছেন, আর আমার দ্বিতীয় সম্পর্কটি হল কাশী-সংশ্লিষ্ট। আমি কাশীর জনপ্রতিনিধি, আর এই পনঢরপুর কে আমাদের ‘দক্ষিণ কাশী’ বলা হয়। সেজন্য পনঢরপুরের সেবা আমার জন্য সাক্ষাৎ শ্রী নারায়ণ হরির সেবা। এটা সেই ভূমি যেখানে ভক্তদের জন্য ভগবান আজও প্রত্যক্ষ বিরাজমান। এটা সেই ভূমি যার সম্পর্কে সন্ত নামদেবজি মহারাজ বলেছিলেন, পনঢরপুর তখন থেকে রয়েছে যখন ব্রহ্মাণ্ডেরও সৃষ্টি হয়নি। এটা এরকম কারণ, পনঢরপুর শুধু ভৌতিক বা প্রাকৃতিক রূপেই নয়, ভাবনা রূপেও আমাদের মনে চিরস্থায়ীভাবে বসবাস করে। এটা সেই ভূমি যেখানে সন্ত জ্ঞানেশ্বর, সন্ত নামদেব, সন্ত তুকারাম এবং সন্ত একনাথ-এর মতো কতো না সন্ন্যাসী যুগ-সন্ন্যাসী হয়ে উঠেছেন। এই ভূমি যুগে যুগে ভারতকে একটি নতুন প্রাণশক্তি দিয়েছে। ভারতকে বারবার চৈতন্য দিয়েছে আর ভারতভূমির বৈশিষ্ট্য হল নানা সময়ে, নানা এলাকায় এমন মহান বিভূতিরা অবতীর্ণ হয়েছেন আর দেশকে পথ দেখিয়ে গেছেন। আপনারা দেখুন, দক্ষিণে মধ্যাচার্য, নিম্বার্কাচার্য, বল্লভাচার্য ও রামানুজাচার্য জন্ম নিয়েছেন। পশ্চিমে নরসী মেহতা, মীরাবাঈ, ধীরো ভগৎ, ভোজা ভগৎ ও প্রীতম জন্ম নিয়েছেন। উত্তরে জন্ম নিয়েছেন রামানন্দ, কবীরদাস, গোস্বামী তুলসীদাস, সুরদাস, গুরু নানকদেব ও সন্ত রবিদাস। পূর্বে চৈতন্য মহাপ্রভূ আর শঙ্করদেবজির মতো এরকম অনেক সন্ন্যাসীরা তাঁদের ভাবনায় দেশকে সমৃদ্ধ করেছেন। ভিন্ন ভিন্ন স্থান, ভিন্ন কালখণ্ড কিন্তু উদ্দেশ্য একটাই। সবাই ভারতীয় জনমানসে একটি নতুন চেতনার সঞ্চার করেছেন। গোটা ভারতকে ভক্তির আর শক্তির পরিচয় দিয়েছেন। এই মনোভাব, এবং এই নির্দিষ্ট ভাব থেকেই আমরা এটাও দেখি যে মথুরার কৃষ্ণ, একদিন গুজরাটের দ্বারকাধীশ হয়ে ওঠেন, আবার উড়ুপিতে বালকৃষ্ণ হন আর পনঢরপুর এসে ভিঠঠল রূপে বিরাজমান হন। তেমনই ভগবান ভিঠঠল দক্ষিণ ভারতে পলকদাস আর পুরন্দরদাস-এর মতো সন্ন্যাসী কবিদের মাধ্যমে প্রতিটি মানুষের ভাবনার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন আর কবি লীলাশুক্রের কাব্য থেকে কেরালাতেও প্রকট হন। এটাই তো ভক্তি যার শক্তি সমন্বয়ধর্মী। এটাই তো ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’-এর সর্বোত্তম দর্শন।
বন্ধুগণ,
ওয়ারকারী আন্দোলনের আরেকটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, আর তা হল, পুরুষদের সঙ্গে পায়ে পা মিলিয়ে ওয়ারীতে চলতে থাকেন আমাদের বোনেরা। দেশের মাতৃশক্তি, দেশের স্ত্রী-শক্তি! পনঢরওয়ারীরা সমস্ত সুযোগের ক্ষেত্রে সাম্যের প্রতীক। ওয়ারকারী আন্দোলনের ধ্যেয় বাক্য হল – ‘ভেদাভদ অমঙ্গল!’ অর্থাৎ, বৈষম্যই হল অমঙ্গল। এই সামাজিক সাম্যের ঘোষণা আর এই সাম্যে স্ত্রী এবং পুরুষের সাম্যের কথাও অন্তর্নিহিত রয়েছে। অনেক অনেক ওয়ারকরী স্ত্রী এবং পুরুষ পরস্পরকে ‘মাঊলী’ নামে ডাকেন। ভগবান ভিঠঠল আর সন্ন্যাসী জ্ঞানেশ্বর একে অন্যের রূপ পরস্পরের মধ্যে দেখতে পান। আপনারাও জানেন যে ‘মাঊলী’র অর্থ হল ‘মা’। অর্থাৎ, এটা মাতৃশক্তিরও গৌরবগাথা। এখানে মাতৃশক্তিরও গৌরব গান গাওয়া হয়।
বন্ধুগণ,
মহারাষ্ট্রের মাটিতে মহাত্মা ফুলে, দামোদর বীর সাভারকর-এর মতো অনেক পুরোধা পুরুষ তাঁদের কর্মকে সাফল্যের যে গন্তব্য পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পেরেছেন, সেই যাত্রায় ওয়ারকারী আন্দোলন যে জমি তৈরি করেছিল তারও অনেক বড় অবদান রয়েছে। এই ওয়ারকারী আন্দোলনে কারা ছিলেন না! সন্ত সাওতা মহারাজ, সন্ত চোখা মহারাজ, সন্ত নামদেব মহারাজ, সন্ত গরবা মহারাজ, সন্ত সেনজি মহারাজ, সন্ত নরহরি মহারাজ, সন্ত কানহো পাত্রা – এই সন্ন্যাসীরা ক্রমে সমাজের প্রত্যেক সম্প্রদায়কে ওয়ারকারী আন্দোলনের অংশ করে তুলেছিলেন।
বন্ধুগণ,
পনঢরপুর মানবতাকে শুধুই ভক্তি এবং রাষ্ট্রভক্তির পথ দেখায়নি, ভক্তির শক্তির সঙ্গেও মানবতার পরিচয় করিয়েছে। এখানে অধিকাংশ মানুষ ভগবানের কাছে কোনও কিছু চাইতে আসেন না। এখানে ভিঠঠল ভগবান দর্শন, তাঁর নিষ্কাম ভক্তিই জীবনের ধ্যেয়। “কায় বিঠঠু মাঊলীচ্যা দশনানে দোলয়াচে পারণে হিটতে কী নাহী?” অর্থাৎ, ভিঠঠু মাঊলির দর্শন কি চোখে পড়ে নাকি? তবেই তো ভগবান এখানে নিজে ভক্তদের আদেশে যুগ যুগ ধরে কোমড়ে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছেন। ভক্ত পুণ্ডলীক তাঁর মা-বাবার মধ্যে ঈশ্বরকে দেখেছিলেন। নরসেবাকেই নারায়ণ সেবা রূপে মেনে নিয়েছিলেন। আজ পর্যন্ত সেই আদর্শ আমাদের সমাজে জীবিত রয়েছে। সেবা-দিণ্ডীর মাধ্যমে জীবমাত্রের সেবাকে সাধনা মনে করে এগিয়ে চলেছেন। প্রত্যেক ওয়ারকারী যে নিষ্কাম ভাব নিয়ে ভক্তি করেন, সেই ভাব থেকেই নিষ্কাম সেবাও করেন। ‘অমৃত কলস দান – অন্নদান’-এর মাধ্যমে দরিদ্র নারায়ণের সেবার প্রকল্প তো এখানে চলতেই থাকে। শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যক্ষেত্রে আপনাদের সকলের সেবা, শক্তির একটি অদ্বিতীয় উদাহরণ। আমাদের এখানে আস্থা এবং ভক্তিকে কিভাবে দেশসেবা এবং দেশভক্তির সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে, সেবা-দিণ্ডী তারও একটা অনেক বড় উদাহরণ। গ্রামের উত্থান, গ্রামের প্রগতির ক্ষেত্রেও সেবা-দিণ্ডী একটি অত্যন্ত বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে। দেশ আজ গ্রামোন্নয়নের জন্য যত সঙ্কল্প নিয়ে এগিয়ে আসছে, আমাদের ওয়ারকারী ভাই-বোনেরা এক্ষেত্রে অনেক বড় শক্তির উৎস। দেশ যখন থেকে স্বচ্ছ ভারত অভিযান শুরু করেছিল, আজ বিঠঠলওয়ার ভক্তরা ‘নির্মল ওয়ারী’ অভিযানের মাধ্যমে তাতে আরও গতি সঞ্চার করেছেন। এভাবে আমাদের ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ অভিযান, আমাদের জল সংরক্ষণের যত প্রচেষ্টা, আমাদের আধ্যাত্মিক চেতনাই আমাদের রাষ্ট্রীয় সঙ্কল্পগুলিকে প্রাণশক্তি প্রদান করছে আর আজ যখন আমি আপনাদের মতো ওয়ারকারী ভাই-বোনেদের সঙ্গে কথা বলছি, তখন আপনাদের কাছ থেকে আশীর্বাদস্বরূপ তিনটি জিনিস ভিক্ষে চাইব। চাইতে পারি তো? হাত ওপরে তুলে বলুন, চাইব? আপনারা দেবেন? দেখুন, যেভাবে আপনারা সকলে হাত উঁচু করে আমাকে আশীর্বাদ দিচ্ছেন, যেভাবে আপনারা সব সময়ে আমাকে এত ভালোবাসা দিয়ে আসছেন, আমি নিজেকে আর সংযত রাখতে পারিনি। প্রথম আশীর্বাদ হিসেবে আমার চাই – আমরা যে শ্রীসন্ত জ্ঞানেশ্বর মহারাজ পালখী মার্গ তৈরি করছি, আমরা যে সন্ত তুকারাম মহারাজ পালখী মার্গ গড়ে তুলছি সেগুলির কিনারায় যে বিশেষ পায়ে চলার পথ তৈরি হচ্ছে, তার দু’দিকে কয়েক মিটার পরপর ছায়াদায়িনী বৃক্ষ অবশ্যই লাগাবেন। এই গাছ লাগানোর দায়িত্ব আপনাদের। আমার তো ‘সবকা প্রয়াস’ মন্ত্র রয়েছে। যখন এই পথ তৈরি হয়ে যাবে, ততদিনে এই গাছগুলিও এত বড় হয়ে যাবে যে গোটা পায়ে চলা পথ ছায়াদায়িনী হয়ে উঠবে। এই পালখী পথগুলির পাশে যে গ্রামগুলি রয়েছে, সেই গ্রামগুলির বাসিন্দাদের আমি এই গণ-আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার অনুরোধ জানাই। প্রত্যেক গ্রামের মানুষ, আপনাদের এলাকা দিয়ে যতটা পালখী মার্গ তৈরি হবে তার দু’পাশে ছায়াদায়িনী গাছ লাগানো ও সেগুলি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণ করুন। দ্রুত গাছ লাগান। তবেই দ্রুত কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
বন্ধুগণ,
আপনাদের কাছ থেকে আমার দ্বিতীয় আশীর্বাদ চাই। দ্বিতীয় আশীর্বাদ কী চাই? আমি চাই এই পায়ে হাঁটা পথে একটু পরপরই জলসত্র; যেখানে ক্লান্ত পথিক কিংবা তীর্থযাত্রীরা পরিশ্রুত পানীয় জল পেতে পারেন তারও ব্যবস্থা করা হোক। এই পথে এরকম অসংখ্য জলসত্রের ব্যবস্থা করতে হবে। ভগবান ভিঠঠল-এর ভক্তিতে লীন, শ্রদ্ধাভাজন ভক্তরা যখন পনঢরপুরের দিকে এগিয়ে যান, এই একুশ দিন তাঁরা নিজেদের সবকিছু ভুলে যান। এই জলসত্রগুলি এ ধরনের ভক্তদের খুব কাজে লাগবে আর আপনাদের কাছ থেকে আজ আমার যে তৃতীয় আশীর্বাদটি চাই, অবশ্যই চাই, আর আমি জানি আপনারা আমাকে কখনও নিরাশ করবেন না। তৃতীয় যে আশীর্বাদটি চাই তা পনঢরপুরের জন্য চাই। আমি ভবিষ্যতে পনঢরপুর কে ভারতের সবচাইতে পরিচ্ছন্ন তীর্থস্থান রূপে দেখতে চাই। ভারতের দিকে যখনই কেউ তাকাবে, আর জিজ্ঞাসা করবে যে ভাই, সবচাইতে পরিচ্ছন্ন তীর্থস্থান কোথায়? তখন যেন সবার আগে আমার ভিঠঠওয়ার নাম আসে, আমার ভিঠঠল-এর ভূমির নাম আসে, আমার পনঢরপুরের নাম উঠে আসে। এটা আমি আপনাদের কাছে চাই। এ কাজ গণ-অংশীদারিত্বের মাধ্যমেই হবে। যখন স্থানীয় মানুষ পরিচ্ছন্নতা আন্দোলনের নেতৃত্ব নিজেদের কাঁধে নেবেন, তখনই আমরা এই স্বপ্নগুলি বাস্তবায়িত করতে পারব। আর আমি সর্বদাই যে বিষয়ের ওকালতি করি, যাকে আমি ‘সবকা প্রয়াস’ বলি, তার অভিব্যক্তি এমনটাই হবে।
বন্ধুগণ,
আমরা যখন পনঢরপুরের মতো আমাদের তীর্থগুলিকে বিকশিত করে তুলি, তখন এর মাধ্যমে কেবলই সাংস্কৃতিক প্রগতি হয় না, গোটা এলাকার উন্নয়নেরও শক্তি বাড়ে। এখানে যে সড়কপথগুলি প্রশস্ত করা হচ্ছে, যে নতুন মহাসড়ক প্রকল্প মঞ্জুর করা হয়েছে, এগুলির মাধ্যমে একদিকে যেমন ধার্মিক পর্যটন বৃদ্ধি পাবে, অন্যদিকে তেমনই নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে আর সেবা অভিযানেও গতি সঞ্চার হবে। আমাদের সকলের শ্রদ্ধেয় অটলবিহারী বাজপেয়ীজি মনে করতেন, যেখানে মহাসড়ক পৌঁছয়, যেখানে সড়ক পৌঁছয়, সেখানে উন্নয়নের নতুন ধারা প্রবাহিত হতে শুরু হয়। এই ভাবনা নিয়ে তিনি স্বর্ণিম চতুর্ভুজ প্রকল্প শুরু করিয়েছিলেন। দেশের প্রতিটি গ্রামকে সড়কের মাধ্যমে যুক্ত করার অভিযান শুরু করেছিলেন। আজ সেই আদর্শ নিয়েই দেশে আধুনিক পরিকাঠামো নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। দেশে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে উৎসাহ যোগানোর জন্য গ্রামে গ্রামে ওয়েলনেস সেন্টার খোলা হচ্ছে। জেলায় জেলায় নতুন মেডিকেল কলেজ খোলা হচ্ছে। ডিজিটাল ব্যবস্থাকে সম্প্রসারিত করা হচ্ছে। দেশে আজ নতুন নতুন মহাসড়ক, সড়কপথ, জলপথ, নতুন রেলপথ, মেট্রো লাইন, আধুনিক রেলওয়ে স্টেশন, নতুন নতুন এয়ারপোর্ট, নতুন এয়ার রুটস-এর একটি বড় বিস্তৃত নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। দেশের প্রত্যেক গ্রামে গ্রামে অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক পৌঁছে দেওয়ার কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। এই সকল প্রকল্পকে আরও ত্বরান্বিত করতে, এগুলির মধ্যে আরও সমন্বয় আনতে পিএম গতি শক্তি ন্যাশনাল মাস্টার প্ল্যানও চালু করা হয়েছে। আজ দেশ ১০০ শতাংশ কভারেজের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে চলেছে। প্রত্যেক গরীবকে পাকা বাড়ি, প্রত্যেক বাড়িতে শৌচালয়, প্রত্যেক পরিবারকে বিদ্যুৎ সংযোগ, প্রত্যেক বাড়িতে নলের মাধ্যমে পরিশ্রুত পানীয় জল আর আমাদের প্রত্যেক মা ও বোনেদের জন্য রান্নার গ্যাস সংযোগ – এই স্বপ্নগুলি আজ বাস্তবে পরিণত হচ্ছে। সমাজের গরীব, বঞ্চিত, দলিত, পিছিয়ে পড়া ও মধ্যবিত্তরা এগুলির মাধ্যমে সবচাইতে বেশি উপকৃত হচ্ছেন।
বন্ধুগণ,
আমাদের অধিকাংশ ‘ওয়ারকারী গুরুভাউ’রা তো কৃষক পরিবারেরই মানুষ। গ্রাম ও গরীবের উন্নয়নের জন্য দেশের প্রচেষ্টার মাধ্যমে আর সাধারণ মানুষের জীবনে কিভাবে পরিবর্তন আসছে, আপনারা সবাই তা দেখতে পাচ্ছেন। আমাদের গ্রামের গরীবরাও মাটির সঙ্গে যুক্ত থাকেন। তাঁরাই আমাদের অন্নদাতা। তাঁরাই গ্রামীণ অর্থ ব্যবস্থার সারথী আর সমাজের সংস্কৃতি এবং রাষ্ট্রীয় একতারও নেতৃত্ব তাঁরাই দেন। ভারতের সংস্কৃতিকে, ভারতের আদর্শগুলিকে শতাব্দীর পর শতাব্দীকাল ধরে এই মাটির সন্তানরাই জীবিত রেখেছেন। একজন প্রকৃত অন্নদাতা সমাজকে যুক্ত করে, সমাজকে বাঁচিয়ে রাখেন, সমাজের জন্য বাঁচেন। আপনাদের প্রগতির মাধ্যমেই সমাজের প্রগতি হবে। সেজন্য স্বাধীনতার অমৃতকালে দেশের সঙ্কল্পে আমাদের অন্নদাতারা আমাদের উন্নতির বড় আধার। এই মনোভাব নিয়ে দেশ এগিয়ে চলেছে।
বন্ধুগণ,
শ্রীসন্ত জ্ঞানেশ্বরজি মহারাজ আমাদের সবাইকে একটি অসাধারণ কথা বলে গেছেন। শ্রীসন্ত জ্ঞানেশ্বর মহারাজজি বলেছেন –
“দূরী তানচে তিমির যাব।
বিশ্ব স্বধর্ম সূর্যে বাহ।
যো যে ওয়াংচ্ছিল তো তেঁ লাহো, প্রাণীজাত।”
অর্থাৎ, বিশ্বে অন্যায়ের অন্ধকার নষ্ট হোক, ধর্মের, কর্তব্যের সূর্য গোটা বিশ্বে উদয় হোক আর সমস্ত জীবের ইচ্ছা পূরণ হোক। আমাদের সম্পূর্ণ বিশ্বাস যে আমরা সকলের ভক্তি, আমরা সকলের প্রচেষ্টায় শ্রীসন্ত জ্ঞানেশ্বরজির এই মনোভাবগুলিকে, তাঁর ইচ্ছাগুলিকে অবশ্যই বাস্তবায়িত করতে পারব। এই বিশ্বাস নিয়ে, আমি আরেকবার সকল সন্ন্যাসীদের প্রণাম জানিয়ে, ভিঠঠওয়ার চরণে প্রণাম জানিয়ে আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।
জয় জয় রামকৃষ্ণ হরি!
জয় জয় রামকৃষ্ণ হরি!